অমানিশায়_সেই_তুমিই #লেখায়_তেজস্মিতা_মর্তুজা ১৩.

0
500

#অমানিশায়_সেই_তুমিই
#লেখায়_তেজস্মিতা_মর্তুজা

১৩.

মাঝরাত। রুমে মৃদূ লাল আলো জ্বলছে। বাইরে খুব বেশি নয় তবে হালকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে মাঝেমধ্যে। আর তাতে খোলা জানালার পর্দাগুলো নড়েচড়ে উঠছে বারবার।
মেঘালয়া সোফার ওপর চিত হয়ে শুয়ে ঘাঁড় কাঁত করে উদাসীন চোখে তা দেখতে নিমগ্ন। চোখে ঘুম নেই। সে ঘুমানোর চেষ্টা করছেও না। বরং হাওয়ায় দুলতে থাকা ওই চঞ্চল পর্দার মাঝে কিছু খোঁজার চেষ্টায় রত সে।

ইরাজকে রাত এগারোটার দিকে ওষুধ খাইয়ে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে। অসুস্থ শরীর, সে নিশ্চয়ই ঘুমে আচ্ছন্ন! একদমই নয়। বরং সে মেঘালয়ার ঘুমিয়ে পড়া নিয়ে ভাবছে। ঘড়ির কাঁটা যখন রাত দেড়টা পার করতে অগ্রসর হয়, ইরাজ খেয়াল করে, অনেকক্ষণ যাবৎ সবকিছু শান্ত একদম। নিশ্চয়ই মেঘালয়া শুয়ে পড়েছে! সে শোয়া থেকে আস্তে করে উঠে বসল। না চাইতেও কেশে উঠল দুবার, সাথে সর্দি টেনে নিলো। আধো-অন্ধকার রুমে ধীর গতিতে চোখ ঘুরাল, মাথাটা কেমন চক্কর দিয়ে ওঠে এবার।
মেঘালয়া ইরাজের কাশির শব্দে দ্রুত ঘাঁড় ঘুরিয়ে সেদিকে তাকায়। তড়িঘড়ি উঠে বসল। উঠে দাঁড়িয়ে আন্দাজ করে হেঁটে গিয়ে রুমের আলো জ্বালিয়ে দিল। দ্রুত পায়ে বিছানায় গিয়ে ইরাজের পাশে বসে উত্তেজিত কণ্ঠে শুধায়,

‘খারাপ লাগছে আপনার? কেমন লাগছে? উঠে বসেছেন কেন! কিছু লাগবে..

ইরাজ হাত উঁচিয়ে ধরল। মেঘালয়া থেমে যায়। ধীর-স্থীর স্বরে নিশ্চিন্ত করে, ‘বিশেষ কিছু হয়নি, তুই ঘুমাস নি?’

মেঘালয়া কেবল চেয়ে রয় ইরাজের ঘুরিয়ে রাখা শুকনো মুখের দিকে। করুণ চোখে অনিমেষ চেয়ে রইল কিছুক্ষণ। অতঃপর অদ্ভুত কণ্ঠে, আবেশি গলায় প্রশ্ন করল,

‘আপনার নিরবতা প্রতি মুহূর্তে পুড়িয়ে ফেলছে আমায়। অভিযোগ গুলো চেপে কেন রেখেছেন? কিসের এই নিষ্ঠুর নিরবতা?’

মেঘালয়ার এই উত্তেজনায় ইরাজ ঠোঁট এলিয়ে মলিন হাসল। ইশারা করল বালিশটা পিঠের পেছনে দিতে। অতঃপর তাতে পিঠ ঠেকিয়ে আধশোয়া হয়ে বসল। সামনের দেয়ালে দৃষ্টি স্থির রেখে শান্ত স্বরে বলল,

‘মানুষ নিরব হয়ে যায় কখন জানিস? ভাষাগুলো যখন আর্তনাদে পরিণত হয়। আর আর্তনাদ তো বুকের
র ক্তক্ষরণ! যা নিতান্তই ভেতর চিরে বয়ে যায় ভেতরেই। তা লোক-সম্মুখে প্রকাশ করার নয়, মেঘ!’

মেঘালয়া সজল চোখে চেয়ে আছে এই নতুন ইরাজের দিকে। যে ইরাজকে সে এই মুহুর্তে আবিষ্কার করেছে, যাকে আগে কখনও দেখেনি। ইরাজের বলা কথাগুলোর গভিরতা কি মেঘালয়ার বোধগম্য হলো! কে জানে! তবে মেঘালয়া ঠোঁট বাঁকিয়ে সামান্য হাসল। সে হাসিতে কি বিষাদ ঝরে পড়ল না!

‘অভিমান জমেছে?’

‘নেই।’ ইরাজের এই সংক্ষিপ্ত জবাবে মেঘালয়া যেন ছটফটিয়ে ওঠে। মুখটা নত করে বিষন্ন হাসল একটু, হাসিমুখেই জিজ্ঞেস বলল, ‘তা ভালো।’ একটু থামল, আবার জিজ্ঞেস করল,

‘কখনও ভালোবেসেছেন?’

দেয়ালের দিকে নজর থামিয়ে ভরাট গলায় জবাব দেয় ইরাজ, ‘না।’

‘ঘৃনা করেছেন?’

‘করতে চেয়েছি, চাচ্ছি, তবে পারছি কতটুকু তা অজানা।’

মেঘালয়া চোখ তুলে তাকাল। চোখের পলক ঝাপটে তা সন্তর্পণে নামিয়ে নিল নিচে। কিছুসময় চুপ রইল। ইরাজ চোখ বুঁজে নেয়। হেলান দিয়ে শুয়ে রয় ওভাবেই। মেঘালয়া আবারও চোখ তুলে তাকায় ইরাজের দিকে। সে ইরাজকে বুঝেও যেন বুঝে উঠছে না! সে যা ভাবতে চায়, ইরাজের আচরণ তার উল্টোটা বলে সর্বদা। আজ অবধি কখনোই ইরাজকে তার দিকে অনুরাগের নজরে তাকাতে দেখে নি মেঘালয়া। দীর্ঘশ্বাস ফেলল আস্তে করে। জিজ্ঞেস করল,

‘কাল বৃষ্টিতে ভিজেছিলেন কেন?’

‘মেঘ ভিজিয়েছে।’

‘মেঘ আপনাকে কতটা ভিজিয়েছে?’

‘যতটা ভিজলে বুকের হাহাকার আরও বেড়ে যায়।’

মেঘালয়া অবাক চোখে তাকায়। এই ইরাজকে সে আসলেই গুলিয়ে ফেলছে। ইরাজের সঙ্গে মিলছে না মোটেই। তবে তার বোঝায় ভুল হয়েছে বলে মনে হয় না। সে সঠিক বুঝেছে, সে জানতে পেরেছে ইরাজের ভেতরে লুকায়িত আরেক ইরাজকে। অজান্তেই খানিকটা পুলকিত বোধ করল। সে অবাক হয় নিজের ভাবনার ওপর। চরম অপছন্দের মানুষটি তার সম্মুখে, যে– মেঘালয়ার সঙ্গে কখনও ভালো আচরণ করেনি, মিষ্টি করে কথা বলেনি, সর্বদা কড়া শাসন, কড়া আর খোঁচা দেওয়া কথা। নিদারুন অপছন্দের পুরুষ। অথচ আজ সেই পুরুষের ভেতরের লুকায়িত ক্ষোভকে খানিকটা জানতে পেরে এত খুশি কেন লাগছে!

‘মেঘকে ক্ষমা করবেন না?’

‘এ প্রশ্ন কেন উঠছে?’

‘ওঠা উচিত নয়?’

ইরাজ তাকাল মেঘালয়ার দিকে। মেঘালয়া চোখ সরায় না, সাহস করে চেয়ে রইল ইরাজের চোখের দিকে। ইরাজ নিজেই নজর ঘুরিয়ে নেয়। অসুস্থ শরীরেই তাচ্ছিল্য করে হেসে উঠল, দেখতে অদ্ভুত লাগে সেই হাসি।

‘বিজ্ঞের মতো কথা বলছিস দেখছি।’

‘জটিল মানুষগুলোর সাথে এত কাছাকাছি বাস করলে কতদিন সরল আর নির্বোধ থাকা যায়?’

মেঘালয়ার কথায় ইরাজ এক ভ্রু উঁচিয়ে তাকায়। বাহ-বা দেওয়ার মতো করে ঠোঁট বাঁকাল সামান্য। তারপরেই মুখটা কুঁচকে ডানহাতে বুক চেপে ধরল। হাঁ করে জোরে টেনে নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করে। মেঘালয়া ব্যাস্ত হয়ে ওঠে, উত্তেজিত হয়ে কিছু বলতে উদ্যেত হয়। ইরাজ থামিয়ে দিল,

‘উমম! এভাবে নয়, এসব পোষায় না আমার।’
অতঃপর বুকের বামপাশে আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করল, ‘এখানে ব্যাথা লাগে। দুরেই ঠিক আছিস।’

মেঘালয়া অসহায়ের মতো নির্বাক চোখে চেয়ে রইল এই কঠিন, নির্দয় পুরুষটির দিকে। সে তার জবাব পেয়ে গেল যেন ইরাজের এই অভিব্যাক্তির মাঝে– মেঘকে ক্ষমা করা যায় না। একদমই না।

মেঘালয়া সোফায় এসে বসল। ইরাজ বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। নেমে দাঁড়াল, মাথা টলমল করছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে জ্বলে যাচ্ছে, চুলকানোর ফলে। গলাসহ ঠোঁটটা কেমন শুকনো লাগল। ওভাবেই পা ফেলল সামনে। কয়েক কদম এগোতেই মাথাটা চক্কর কেটে উঠল। পা ফসকে যায় ইরাজের, নিয়ন্ত্রন হারায় দেহের। পড়ে যেতে নিয়ে হাতের জোর দিয়ে খাটের একপাশ চেপে ধরল। প্রায় বসে পড়ে ইরাজ। চোখ অন্ধকার হয়ে আসে। ওভাবেই নিচু হয়ে বসে রইল চোখ বন্ধ করে।
ততক্ষনে মেঘালয়া এসে বাহু চেপে ধরল তার। ইরাজ মেঝের ওপর বসে পড়ল এবার। মেঘালয়া ঘাবরে যায়। কিছুসময় পর ইরাজ আস্তে করে মাথা তুলে তাকাল। মেঘালয়া ইরাজের হাতের ভেতরে নিজের হাত ঢুকিয়ে ইরাজের ভরটুকু নিলো। ইরাজ কিছু না বলে উঠে দাঁড়াল মেঘালয়াকে অবলম্বন করে। মেঘালয়ার অতিরিক্ত ভার অনুভূত হয়, ইরাজের অত বড়ো শরীরের পুরো ভরটাই তার ওপর পড়েছে। তবুও ছাড়ল না।

বুকটা হঠাৎ-ই কেমন যেন করে ওঠে। আজ প্রথমবার মেঘালয়া ইরাজের এত কাছে এসেছে। হৃৎপিণ্ডের ধুকপুকানি বেড়ে গেছে অনেকটা। ইরাজকে বাথরুমের দরজার সামনে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিল। ইরাজ দেয়াল ধরে ধীরপায়ে হেঁটে ভেতরে যায়। মেঘালয়া সঙ্গে সঙ্গে বুকটা চেপে ধরল হাত দিয়ে। কিছু একটা অনুভূত হচ্ছে গাঢ়ভাবে। ওভাবেই দাঁড়িয়ে অপেক্ষারত রইল ইরাজের বের হওয়ার।

_

দু’দিন কেটে গেছে এর মাঝে। ইরাজ এখন প্রায় সুস্থ তবে ইমতিয়াজ সাহেব কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন, অন্তত সপ্তাহখানেক ইরাজ বাইরে বের হবে না। ইরাজকে এভাবে বললে, সে বাইরে বের হওয়ার পর যা হয় তাই করত অবশ্য। খ্যাতিমান ঘাঁড় ত্যাড়া বলে কথা। ইমতিয়াজ সাহেব ছেলের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে, আদুরে গলায় স্নেহ জানিয়ে গেছেন। ইরাজ বাবার ওপর বড়োই দুর্বল কিনা!
অগত্যা মুখটা ভোঁতা করে বিছানার ওপর বালিশে হেলান দিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে। মেঘালয়া সোফায় বসে বই নাড়াচাড়া করছে। একসময় পদার্থবিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র খুলে কিছু অঙ্ক কষায় মনোযোগ দিল।

ইরাজ ল্যাপটপে কোন জরুরী কাজ করছে তা নয়। সে মুভি ডাউনলোড করতে বসেছে। আচমকা মেঘালয়া এসে ধীর পায়ে দাঁড়াল পাশে। টের পেয়েও সেদিকে তাকাল না ইরাজ। সে এক পা গুটিয়ে অপর পা লম্বা করে মেলে বসে আছে। যেখানে মেঘালয়ার বসার জায়গাটা অবশিষ্ট নেই। মেঘালয়া দাঁড়িয়ে রইল, তবুও ইরাজ পা সরাল না। মেঘালয়া কঠিন কিছু বলতে যায়, আবার থেমে গেল। ডাকল, ‘শুনুন!’

ইরাজ তাকাল না, কিছুক্ষন পর জবাব দিল, ‘শুনছি।’

‘পা’টা সরিয়ে বসুন, আমি বসব।’

‘তাতে আমার কী?’

মেঘালয়া জবাব না দিয়ে ইরাজের পা’টা সরিয়ে দিল। তবে মনে হলো, ইরাজ নিজেই জেনো সরিয়ে নিয়িছে, নয়ত মেঘালয়ার ক্ষমতা ছিল না ইরাজের পা সরিয়ে দেয়। হাতে তার বই, খাতা, কলম। ইরাজ একবার তাকিয়ে দেখল তা, অতঃপর প্রতিক্রিয়াহীন আবারও ল্যাপটপে মনোযোগ দিল। মেঘালয়া বই, খাতা মেলে বসল ইরাজের সামনে। কিছু বলার প্রস্তুতি নিয়েও বলতে না পেরে বসে রয় ওভাবেই। একসময় ইরাজ বিরক্ত হয়ে তাকাল,

‘কি সমস্যা?’

মেঘালয়া জিজ্ঞেস করে, ‘আপনি পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র না?’

‘পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র হই অথবা অপদার্থবিজ্ঞানের। তোর ফাটছে কেন তাতে?’

মেঘালয়ার যেন সহ্য হলো না এবার। মাড়িতে মাড়ি চেপে চোখ বুঁজে নিলো। ভারী একটা শ্বাস ফেলে মুখটা বিকৃত করে জিজ্ঞেস করল, ‘জিলাপির দোকানে কাজ করতেন?’

‘করব সামনে।’

মেঘালয়ার তাচ্ছিল্য করে উৎসাহের সঙ্গে বলে ওঠে, ‘খুব ভালো জিলাপি বানাবেন আপনি, আশা করি। কারন, আপনার মগজটা তো স্বাভাবিক নয় বরং জিলাপির আকৃতিরই।’

ইরাজ কপাল কুঁচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ঘাঁড় বাঁকায়। মেঘালয়া শক্ত কণ্ঠে বলল, ‘একটা সোজা কথাকে ঘুরিয়ে পেচিয়ে মশার কয়েল বানিয়ে ফেলেন। এরকম জঘন্য মেধা আমদানী করেন কোথা থেকে?’

ইরাজ শান্ত চোখে চেয়ে শীতল জবাব দিল, ‘শুধু ভালো জিলাপি বানানোই না, উন্নতমানের থাপ্পড়ও মারতে পারি আমি।’

মেঘালয়া সায় দেয়, ‘হু হু নিশ্চয়ই। তা অন্তত আমার অজানা নয়।’

ইরাজ এবার বিরক্ত হয়ে বলল, ‘ফ্যাচফ্যাচ না করে, কাজের কথা থাকলে বল নয়ত বিদায় হ।’

মেঘালয়া কপাল জড়িয়ে ফেলল। একটু সুস্থ হয়েছে কি-না, নিজস্ব রূপে ফিরে এসেছে, হাহ! বইয়ের নির্দিষ্ট পৃষ্ঠার মাঝে আঙুল দিয়ে রেখেছিল। তা খুলে মেলে ধরল বিছানার ওপর। ইরাজ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে দেখছে কেবল। মেঘালয়া বইয়ের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে জিহ্বা চালিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়।

‘এই সূত্রটা বুঝিয়ে দিন।’

ইরাজের জড়িয়ে থাকা ভ্রু আরও খানিকটা কুঁচকে গেল।

‘আমাকে তুই বিনামূল্যে একের ভিতর সব সমস্যার সমাধান পেয়েছিস?’

‘জি না।’

আর কিছু বলতে দিল না ইরাজ, নিজেই বলে উঠল, ‘একাডেমিকে কি করেছিস? এডমিশনে এসে যদি সূত্র পড়াতে হয়।’ একটু থেমে কিছু মনে করার ভঙ্গিতে বলল,

‘ওহহো! তুই তো প্রেমসূত্র মুখস্থে সময় ব্যায় করে ফেলেছিস সব।’

মেঘালয়া প্রতিবাদ করে ওঠে, ‘তাতে আপনার কী?’

ইরাজ নিরব হয়ে গেল হঠাৎ-ই। মেঘালয়ার হাত থেকে বইটা নিলো। জিজ্ঞেস করল,

‘আগে পড়েছিস অধ্যায়টা?’

‘পড়েছিলাম।’

‘মনে আছে কিছু?’

‘কিছুটা।’

‘কিছুটাতে কাজ নেই। আগে ব্যাসিক জানতে হবে।’

মেঘালয়া বাধ্যর মতো ঘাঁড় নাড়ল। ইরাজ বুঝাতে শুরু করল। মেঘালয়ার পড়ার চেয়ে ইরাজে মনোযোগ বেশি। দিন দিন সে নিত্য-নতুন ইরাজকে আবিষ্কার করছে। বারবার গুলিয়ে যায় ইরাজের এত এত জটিল রূপগুলো। কটু কথা শুনিয়ে আবার সেই কাজ যত্নসহকারে করে দেওয়া সমীকরণটা মেঘালয়া মেলাতে পারে না। অদ্ভুত মানুষ ইরাজ– এই ধারণাতেই আটকে যায় বারবার।

ইরাজ খাতা এগিয়ে নিয়ে কলম চাইল। মেঘালয়া কলম এগিয়ে দেয়। ইরাজ সূত্রগুলো আরও ভালোভাবে বুঝানোর উদ্দেশ্যে তা লিখতে শুরু করল। লিখতে লিখতে জিজ্ঞেস করল,

‘রেজাল্ট কবে বেরোবে?’

‘দু সপ্তাহখানেক পর।’

ইরাজ আর কিছু বলল না। মেঘালয়া নিজেই চিন্তিত কণ্ঠে বলতে থাকে,
‘আচ্ছা যদি ফেইল করি আমি, তাহলে কি হবে?’

ইরাজ ভাবলেশহীন জবাব দিল, ‘কি আর হবে? তোর বাপ কোন অটোরিক্সা ওয়ালার সাথে তোর বিয়ে দিয়ে দেবে।’

চোখ বড়ো বড়ো করে তাকাল মেঘালয়া, ‘হ্যাহ!’
কথাটা বুঝে নিজের অজান্তেই মুচকি হেসে ফেলল। বলল, বাপ আমায় বিয়ে তো দিয়ে দিয়েছে, তবে যার সাথে দিয়েছে সে আমি ফেইল করলে রিক্সা চালানো শুরু করলেই হয়।’

ইরাজ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল খানিকক্ষণ, এরপরই মাথাটা নিঁচু করে মৃদূ হেসে উঠল যেন! মেঘালয়া বিষ্মিত চোখে তাকিয়ে দেখল সেই হাসি। হঠাৎ-ই মনটা বেশ হালকা লাগল। আচমকা বলে উঠল,

‘আপনি হাসতেও জানেন নাকি আবার?’

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here