#কান্নাভেজা_রাত
#১১তমো_পর্ব
#অনন্য_শফিক
‘
‘
‘
রাতুল বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে।ও বেরিয়ে যাবার পর থেকেই আমার বুকের ভেতরটায় কেমন যেন একটা পাখি ডানা ঝাপটাচ্ছে মনে হচ্ছে।মনে হচ্ছে, এই পাখিটিই আমার ভেতরে থাকা ভয়। সে বেরিয়ে যেতে চায়।আর আমাকে নির্ভীক করে দিতে চায়।যেন আমি জিততে পারি। নতুন জীবন ফিরে পেতে পারি?
আচ্ছা রাতুলের অধ্যায় শেষ হলেই কী আমার জীবনে সুন্দর কোন অধ্যায় আসবে? দূর হবে কি আমার কান্নাভেজা রাতগুলো?
জানি না। কিছুই জানি না আমি।আমি শুধু জানি, বাঁচার মতো বাঁচতে হবে আমায়।মুক্তি পেতে হবে রাতুলের করতল থেকে।
সত্যি সত্যিই আমার আর ভয় লাগছে না এখন।জানলার সবকটি ডালা খুলে দিয়ে ঘরে শুদ্ধতার আলো ঢুকতে দিলাম। তারপর চুল ঠিক করে নিয়ে উঠে গেলাম টেবিলের কাছে। টেবিলের উপর রাখা ব্রাশ এবং টুথপেস্ট। টুথপেস্ট থেকে সামান্য পেস্ট নিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে করতে রাতুলের মায়ের সামনে দিয়ে যখন মেহেরুনের ঘরের দিকে যাচ্ছি তখন তিনি বললেন,’ কোথায় যাও?’
আমি একটু সামনে গিয়ে বাইরে থুথুটা ফেলে এসে বললাম,’ আমি কোথায় যাই এই কথা জিজ্ঞেস করবার আপনি কে?’
রাতুলের মায়ের চোখ কপালে উঠে গেল। তিনি চমকে ওঠা গলায় বললেন,’ তোমার এতো বড় সাহস হলো কি করে এভাবে কথা বলবার? আমি কি তোমার গুরুজন না?’
আমি হাসলাম। হেসে তার কাছে গিয়ে বললাম,’ আপনার কিভাবে এতো বড় সাহস হয়েছিল আপনার ল*ম্পট ছেলের জন্য আমার বাবাকে ধোঁকা দিয়ে আমায় যে বিয়ে করিয়ে আনবার? এর জবাব আছে আপনার কাছে?’
মেহেরুন তখনই বেরিয়ে এলো ওর ঘর থেকে। তার মুখ হাসিহাসি। সে এসে বললো,’ জেসি, তুমি আমার সঙ্গে আছো তো?’
আমি একবাক্যে বললাম,’ আছি। তোমায় সর্বাত্মক সাহায্য করবো আমি। যেভাবেই হোক তুমি এর বি*নাশ করো । যেভাবে তুমি তোমার স্বামীকে শে*ষ করেছিলে এভাবে ওকেও শে*ষ করবে।’
এই কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে ঘাবড়ে গেল রাতুলের মা। চেহারা কেমন যেন মলিন হয়ে উঠেছে মুহূর্তে। ভ*য় পাচ্ছে খুব।বসা থেকে উঠে হঠাৎ সামনের দিকে হাঁটা ধরলো। মেহেরুন সঙ্গে সঙ্গে খপ করে পেছন থেকে রাতুলের মায়ের একটা হাতে ধরে ফেললো। তারপর একটানে নিয়ে গেল মাঝখানের অপরিত্যাক্ত ঘরটিতে। আমিও পেছন পেছন গেলাম।
মেহেরুন তখন আমায় বললো, দরজাটা ভেজিয়ে দিতে।খিল যেন না লাগিয়ে দেই। তার কথামতোই দরজা ভেজিয়ে দিলাম।
মেহেরুন এবার ওকে পেছনের দিকের জানালার গ্রীলের কাছে নিয়ে গেল।আমায় বললো, রশি খুঁজে দিতে।আমি তাড়াহুড়ো করে রশি খুঁজে বের করলাম। মেহেরুন সেই রশি দিয়ে শক্ত করে গ্রীলের সঙ্গে রাতুলের মাকে বেঁধে ফেললো।
রাতুলের মা ভ*য়ে থরথর করে কাঁপছে। কিন্তু তর্জন গ*র্জন করছে না। চিৎকার দিচ্ছে না।
আমি মেহেরুনকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ মহিলা, চিৎকার চেঁচামেচি করছে না কেন?’
মেহেরুন হাসলো।বললো,’ ভ*য়ে।যদি মানুষ এসে সব জেনে ফেলে তবে তো এমনিতেই গণপি*টুনি খাবে। তাছাড়া তার ছেলেও আশেপাশে নাই।রাতের আগে তো আর ফিরবেও না।তো তার আর বাঁ*চার আশা কি!’
রাতুলের মা ভ*য়ে কাঁপছে। থরথর করে কাঁপছে তার শরীর। সে জোড় হাত করে মিনতি করছে।বলছে,’ আমার দোষ কি মায়েরা? আমি তো অপরাধ করিনি! আমার ছেলের মাথা ধরা।একটু পাগলামি করে!’
আমার মেজাজ খারাপ হলো।আমি বললাম,’ আপনার মাথা কি ঠিক? আপনি আপনার এরকম মাথা খারাপ ছেলের জন্য আমায় বিয়ে করিয়ে আনলেন কেন?’
রাতুলের মা ভ*য়ে ভ*য়ে বললো,’ ভাবলাম, আমার ছেলে বিয়ে করলে ঠিক হয়ে যাবে।’
আমার রাগ বাড়ছে। ইচ্ছে করছে ওর গলা চে*পে ধরি।
প্রচন্ড রকম রাগ নিয়েই আমি বললাম,’ আর বিয়ের পর পরই সন্তান নেয়ার কথা বলতেন কেন আমায়? কোন কারণে?’
মহিলা উত্তর দিচ্ছে না। মুখে হঠাৎ কুলুপ এঁটেছে।
আমি জোর গলায় বললাম,’ বলুন, শুনি।’
রাতুলের মা বললো,’ ভ*য়ে।যদি তুমি ঘর না করো আমার ছেলের। সন্তান পেটে এলে তো সব কিছু জানার পরেও তুমি ঘর সংসার করবা। সন্তানের মায়ায় হলেও করবা।’
মেহেরুন আমার মতো দিল নরম মেয়ে না। হয়তো এক সময় তার দিলও আমার মতো নরম ছিল।অল্পতেই মানুষের প্রতি মায়া কাজ করতো। কিন্তু নানান ঘাত প্রতিঘাতে এর পরিবর্তন এসেছে। এখন হয়তো সে শুধুই প্র*তিশোধের আগুনে জ্ব*লে।কারোর প্রতি আর সহজে মায়া দেখায় না। সে এই বয়স্ক মহিলার কাছে গিয়ে তার দু গালে শক্ত শক্ত দুটি চ*ড় ব*সিয়ে দিয়ে বললো,’ তুই একটা শয়তান মহিলা! তুই জেনেশুনে দুই দুইটা মেয়ের জীবন ন*ষ্ট করছস।তোরে আমি কোন ভাবেই ক্ষমা করবো না। পুরুষ মানুষ যদি মেয়ে মানুষের উপর অ*ত্যাচার অ*নাচার অ*বিচার করে তবে এটা ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দেয়া যায় যে এরা পুরুষ জাত। নারীকে ওরা বুঝতে পারেনি বলে এরকম করেছে। কিন্তু কোন নারী নিজেই যদি অন্য নারীদের সঙ্গে এরকম করে। তখন তাকে কিভাবে ক্ষমা করা যায়? ‘
মেহেরুন হাসলো। হেসে বললো,’ ভয়ের কিছু নাই। তোকে মারবো না। শুধু দুটো পা ভে*ঙ্গে দিবো। দুটো হাত ভে*ঙ্গে দিবো।অচল হয়ে পড়ে থাকবি রাস্তার পাশে।সারা জীবন ভিক্ষা করবি। মানুষের দানের উপর ভরসা করে একটা জীবন কাটাবি।আর তোর ছেলের কোন রে*হাই নাই। ওকে আমি আজ রাতেই মা*রবো। কিন্তু আফশোসের বিষয় হলো, তুই মা হয়েও কোন সাহায্য করতে পারবি না তোর ছেলেকে!’
আবার হাসলো মেহেরুন।
রাতুলের মায়ের চোখ থেকে জরজর করে জল গড়িয়ে পড়ছে। সে আবার দু হাত জোড় করে অনুনয় করছে।বলছে,’ সব শা*স্তি আমায় দাও। আমার ছেলের কিছু করো না।ও ভালো হয়ে যাবে। ওকে একবার সুযোগ দাও।’
মেহেরুন রাতুলের মায়ের গলায় শক্ত করে চে*পে ধরলো। তারপর বললো,’ তোর ছেলে কোনদিনও ঠিক হবে না।ও একটা অ*মানুষ।তুই একটা অ*মানুষ জন্ম দিয়েছিস বুড়ি!’
প্রচন্ড রাগে কথাটা বললো মেহেরুন।
তারপর গলা থেকে নিজের ওড়নাটা একটানে খুলে নিয়ে রাতুলের মায়ের মুখে বেঁ*ধে দিলো শক্ত করে সে। তারপর বললো,’ এখন ইচ্ছে মতো তোর ছেলের জন্য প্রার্থনা কর।কেউ শুনবে না।কেউ না!’
বলে সে আমায় ইশারা করলো ঘর থেকে বেরিয়ে পড়তে।আমি বেরিয়ে আসার খানিক পর সে বেরিয়ে এলো। এসে দরজাটা বাইরে থেকে আটকে দিলো। কিন্তু তালা ঝুলিয়ে দিলো না এতে।
আমার হঠাৎ কেমন যেন ভ*য় ভ*য় লাগছে।গা ছমছম করছে ভ*য়ে । বুকটা খুব ধরফর করছে। কেন জানি মনে হচ্ছে, আমার সামনে ভ*য়াবহ রকমের বিপদ!
মেহেরুনকে আগে যা দেখেছি এখন মোটেও তাকে এরকম লাগছে না।ও যখন রাতুলের মাকে ধরে বেঁ*ধে ফেললো তখন ওকে দেখে মনে হলো এসব কাজ করতে করতে সে খুব অভিজ্ঞ।জীবনে অনেক বার এরকম কাজ না করলে হুট করে এভাবে কেউ কাউকে মুহূর্তে বেঁধে ফেলতে পারবে না।আমি তো পারবোই না।অন্য কেউও পারবে না।
আমার চেহারার দিকে তাকিয়ে মেহেরুন আমার কাছে এলো। এসে আমার একটা হাত ধরে বললো,’ ভয় পাচ্ছো?’
আমি কথা বললাম না।চুপ করে রইলাম।
সে আমার বুকের উপর হাত রাখলো। তারপর মৃদু হাসি হেসে বললো,’ ওমা, একি! তোমার দেখি বুক কাঁপছে ধুকপুক করে। এতো ভ*য় পাচ্ছো কেন তুমি? ভ*য়টা কাকে পাচ্ছো? আমাকে না রাতুলকে?’
আমি তখনও কিছু বললাম না।
মেহেরুন আমায় পেছন থেকে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। তারপর বললো,’ নিজেকে শান্ত করো।ভ*য় পাওয়ার কিচ্ছু নেই।’
আমি যেন কেঁদেই ফেললাম। কান্নাভেজা গলায় বললাম,’ আমাকে তুমি যেতে দেও।আমি চলে যেতে চাই এখান থেকে। এরপর তুমি যা ইচ্ছে করো বোন! আমি এখানে থাকলে এমনিতেই দম বন্ধ হয়ে ভয়ে ম*রে যাবো।’
মেহেরুন মুখ শক্ত করে বললো,’ এই মেয়ের কথা শুনো! তুমি যদি চলে যাও তবে তো পুরো প্লানটাই মাটি হয়ে যাবে। তোমাকে থাকতে হবে। তুমি ছাড়া এটা শেষ করা যাবে না যে!’
মেহেরুনের দিকে আমি তাকাতে পারছি না কিছুতেই। তাকালেই ভ*য় করছে।মনে হচ্ছে, ও কোনো পি*শাচ। মোটেও ভালো লোক নয়।ওর মাথায় খু*নের নেশা চড়েছে।আজ সব শে*ষ করে দিবে ও। হয়তো আমাকেও।
অথচ এই মেহেরুনের দিকে এক সময় তাকালেই মায়া কাজ করতো।কি মিষ্টি লাগতো ওকে দেখতে। আচ্ছা এখন ওকে এরকম ভ*য়ংকর দেখাচ্ছে কেন? নাকি মাথায় খু*ন চাপলে মানুষকে এরকম দেখায়?
‘
(এটা শেষ পর্বের একাংশ। বাকী টুকু কাল অথবা পড়শু দিন ইনশাআল্লাহ!)
‘
#চলবে
‘
১০ম পর্বের লিংক –
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/823207936067647/?mibextid=Nif5oz