#কি_নেশায়_জড়ালে
#পর্ব_১৩ (বোনাস)
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
সাজ্জাদ গাড়ির ভেতর গিয়ে দেখে আহনাফ নেই।
সাজ্জাদ চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা শ্বাস নিলো৷ গাড়ি স্টার্ট দিলো।
আহনাফ নিজের আগের বাসায় চলে এসেছে৷
ছাঁদে গিয়ে একের পর এক সিগারেট টানা শুরু করেছে।
অনেকক্ষন পর নিজের পাশে কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে তাকালো রিধি চোখ বড় বড় করে আহনাফ এর দিকে তাকিয়ে আছে।
রিধি কে এখন এখানে দেখে আহনাফ এর রাগ জেনে কমার বদলে বেড়ে গেলো৷
রিধি কিছু বলার আগেই আহনাফ ছাঁদ থেকে বড় বড় পা ফেলে নেমে গেলো।
____________
সময় কারো জন্য থেমে থাকে না।
সময় নিজের আপন গতিতে চলতেই থাকে।
সুবর্ণা বেগম রূপার আম্মুর সাথে কথা বলে অবাক হলেন।
আজ এক সপ্তাহ পর রূপা বিয়েতে রাজি হয়ে গেছে।
আর সে চাই খুব জলদি বিয়ে হোক।
সুমাইয়া সেই কথা শুনেই এক ছুটে চলে আসলো সাজ্জাদের রুমের সামনে।
সাজ্জাদ এর কড়া নিষেধ ওর রুমে কেউ অনুমতি ছাড়া যেনো প্রবেশ না করে৷
সুমাইয়া দু বার কড়া নাড়লো। ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজা ধাক্কা দিলো।
ভেতরে ঢুকে এদিকে ওদিকে সাজ্জাদকে খুঁজে দেখলো সাজ্জাদ ব্যালকনিতে ফোনে কথা বলছে।
সুমাইয়া গিয়ে ভাইয়ের পেছনে দাঁড়ালো।
সাজ্জাদ ফোনে কথা বলে পেছন ফিরে অবাক হলো। সুমাইয়া কখনো ওর অনুমতি ছাড়া রুমে আসে না। সাজ্জাদ কে খুব ভয় পায়।
সাজ্জাদ সুমাইয়া কে দেখে বললো,’ কি হয়েছে চোরের মতো লুকিয়ে আছিস কেনো…?’
সুমাইয়া দুই হাত কোমরে রেখে বলে উঠলো, ‘ কি ভাই তুমি আমাকে চোর বললা। যাও ভেবেছিলাম তোমাকে একটা দারুন তাজা খবর দিবো কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এই খবর তোমাকে বাসি হলে দেওয়া দরকার।
সাজ্জাদ বোনের দিকে তাকিয়ে হাসলো। পিচ্চি বোনটা এখন কতো বড় হয়ে গেছে। বোনকে নিজের কাছে এনে বলে উঠলো, ‘ আচ্ছা ঠিক আছে বলা লাগবে না। এটা বল রুমে কেনো এসেছিস..?’
সুমাইয়া বেশি সময় কথা পেটে চেপে রাখতে পারে না তাই বলে দিলো,’ ভাইয়া ভাবি বিয়েতে রাজি হয়ে গেছে… ‘
সাজ্জাদ একদম অবাক হলো না।সে তো জানতো এমন কিছুই হবে।
তবুও সুমাইয়া সামনে খুশি হয়ে বললো,’ সত্যি..? ‘
সুমাইয়াঃ হুম ভাইয়া। এবার আমার ট্রিট দাও।
সাজ্জাদঃ কিসের ট্রিট..?
সুমাইয়াঃ এই যে আমি তোমাকে সবার আগে খুশির খবরটা বললাম।
সাজ্জাদঃ আচ্ছা ঠিক আছে আজকে বিকালে শপিং এ নিয়ে যাবো।
সুমাইয়া খুশি হয়ে নাচতে নাচতে রুম থেকে চলে গেলো।
আদি চৌধুরী খুব খুশি হলেন। প্রথম যখন দেখেছে রূপাকে তখনি সাজ্জাদের জন্য ভেবেছিলো কিন্তু বউয়ের ভয়ে কিছুই বলেন নি।
বিয়ের কাজ খুব জলদি এগিয়ে গেলো। এই কয়দিন একবারও কেউ আহনাফ কে দেখেনি। আহনাফ মাঝে মাঝে বাসায় আসে না তাই কেউ এতো গুরুত্ব দেয়নি বিষয়টা। সাজ্জাদ ঠিক আহনাফ এর সব খবর রেখেছে ।
আজ বাদে কাল বিয়ে।
সকাল থেকে হলুদের আয়োজন করা হচ্ছে।
এক সারপ্রাইজে মধ্যে আরেক সারপ্রাইজ আরিফ ভাইয়ার বড় ভাই মাহতিম চৌধুরী আর এই বাড়ির ছোটো ছেলে আরিয়ান চৌধুরী দেশে ফিরেছে।
সবাই জেনো আনন্দের মধ্যে দিয়েই সময় চলে যাচ্ছে।
সবাই আরিয়ান চাচ্চু কে ঘিরে বসেছে আর কতো এবার তো বিয়ে করতেই হবে। মিশন হলো সাজ্জাদের বিয়েতে গিয়ে আরিয়ান চাচ্চুর জন্য বউ খুঁজে নেওয়া।
সুমাইয়া, আরিয়ান, মাহতিম সবাই হলুদের সব কিছু নিয়ে বউয়ের বাড়িতে আসার জন্য রেডি হয়ে বেরিয়ে পরলো।
সবাই আহনাফ কে কল দিয়েও পেলো না মোবাইল বন্ধ । হয়তো কাজে আটকে আছে৷
কিন্তু কি আজব বউয়ের বাড়ির সামনে গাড়ি থেকে সবাই নামার পর কই থেকে একটা বাইক এসে সবার সামনে থামলো।
সবাই ভ্রু কুঁচকে তাকালো৷ হেলমেট খোলে আরিয়ান চাচ্চুকে জড়িয়ে ধরলো আহনাফ। মাহতিম ও জড়িয়ে ধরলো।
সবাই রূপার বাসায় আসলো।
নাদিম সবাই কে নাস্তা দিয়ে বসালো।
ছাঁদে অনুষ্ঠান করা হয়েছে।
নাদিম বার কয়েক আঁড়চোখে সুমাইয়ার দিকে তাকালো। কিন্তু এতোগুলা বডিগার্ড এর ভিড়ে কথা বলতে পারলো না।
নাহিদা মুখ বার করে বসে আছে রুমে৷ সে আসবে না আসবে না নাদিম জোর করে নিয়ে এসেছে।
সোহা আর মাহি মিলে খুব সুন্দর করে হলুদের সাজে রূপাকে সাজালো।
ছাঁদে অনুষ্ঠান শুরু হতেই সবাই ছাঁদে আসলো। খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।
মাহতিম আরিয়ান চাচ্চুর কানে ফিসফিস করে বলে উঠলো, ‘ চাচি খুঁজে নাও এই সুযোগ। ‘
আরিয়ান চাচ্চু হাসলো। কেউ কি তার অতীত সম্পর্কে জানে..?নাহ কেউ জানে না। কাটা হৃদয়ে কেউ মলম লাগাতে আসবে না সবাই আসে শুধু লবন ছিটা দিতে।
রূপার অনেক প্রসংশা করলো মাহতিম। অনেকটা ভাব করে নিয়েছে।
আরিয়ান চুপচাপ বসে সবাইকে দেখে যাচ্ছে তখনি চোখ আটকে যায় রূপার পাশে বসা মেয়েটাকে দেখে।
একদম দেখতে তার মায়াবতীর মতো। হাসিটা, তাকানো সব। এতোটা মিল কি করে হতে পারে..?
পেছন থেকে আহনাফ বলে উঠলো, ‘ চাচ্চু এভাবে হ্যাঁ করে তাকিয়ে থাকলে মশা মাছি দুইটাই ঢুকে যাবে।
আরিয়ান রেগে আহনাফ এর দিকে তাকালো। আহনাফ হেঁসে চোখ মারলো৷
আরিয়ান চাচ্চু রাগ ভুলে হেঁসে উঠলো।
এভাবে খুব সুন্দর করে গায়ের হলুদ অনুষ্ঠান চলতে লাগলো।
আহনাফ হাতে হলুদ নিয়ে রূপার সামনে গেলো৷
রূপা শান্ত চোখে হাসি দিয়ে আহনাফ এর দিকে তাকালো।
আহনাফ হাঁটু ভেঙে রূপার সামনে ঝুঁকে গালে হলুদ লাগিয়ে বলে উঠলো, ‘ নিষেধ করে ছিলাম শুনলে না। প্রতিটা দিন ছটফট করবে এই জীবন থেকে মুক্তির জন্য । তোমার জীবন আমি জাহান্নাম বানিয়ে দিবো। ‘
রূপা হেঁসে আহনাফ এর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,’আমার জীবন জাহান্নাম বানাতে গিয়ে দেখো তুমি নিজেই না সেই জাহান্নামের আগুনে জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাও। ‘
আহনাফ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো, ‘ নতুন জীবনের জন্য শুভ কামনা ভাবি…’
মাহতিম বলে উঠলো, ‘ আমাদের ভাবি লাক্ষে একটা তা না হলে কি সাজ্জাদ ভাই এর মন গলে। ‘
আহনাফ রূপার দিকে তাকিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়।
রূপা আহনাফ এর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,’ আমি তোমাকে প্রতিটা কথার একটা একটা করে উওর দিবো।প্রতিটা অপমানের বদলা নিবো।’
খুব সুন্দর করে গায়ের হলুদ অনুষ্ঠান শেষ হয়।
____
লাল টুকটুকে শাড়ি পরে বসে আছে রূপা। খুব সাধারণ ভাবে বিয়ে হচ্ছে৷ কিন্তু কেনো তা রূপার জানা নেই।
এতো বড় কোম্পানির মালিক বিয়ে করছে তাও এতো সাদাসিধা ভাবে নিশ্চয়ই কোনো কারন আছে না হয় কিছু লুকাতে চাচ্ছে।
পরিবারের সবার উপস্থিতিতে বিয়েটা হয়ে গেলো৷
বড় করে অনুষ্ঠান করবে বৌভাত এর অনুষ্ঠান এটা সুবর্ণা বেগম এর ইচ্ছে।
রূপা মা বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলো অনেক।
গাড়িতে উঠতেই সাজ্জাদ টিস্যু এগিয়ে দিলো৷
রূপা টিস্যু টার দিকে তাকাতেই সেই প্রথম সাজ্জাদের রুমাল এগিয়ে দেওয়ার কথাটা মনে পরলো।
টিস্যু না নিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রইলো৷
গাড়ি চৌধুরী বাড়িতে আসতেই সবাই বউ নিয়ে মেতে উঠলো৷
সুবর্ণা বেগম সব নিয়ম মেনে ছেলের বউকে ঘরে নিলেন।
সোহা নিয়ে রূপাকে সাজ্জাদের রুমে দিয়ে আসলো৷
আমেনা বেগম সাজ্জাদের বড় আম্মু এসে রূপাকে শাড়ি আর গহনা দিয়ে গেলেন কাল পড়ার জন্য ।
সুবর্ণা বেগম খাবার নিয়ে এসে রূপাকে খাইয়ে দিলেন৷
রূপা মনে মনে ভাবছে এতো এতো ভালোবাসা কি আমি ধরে রাখতে পারবো..?
সাজ্জাদ রুমের সামনে আসতেই সবাই ঘিরে ধরলো টাকার জন্য ।
সবাই কে বুঝিয়ে দিয়ে সাজ্জাদ রুমে আসলো।
দূর থেকে আহনাফ তাকিয়ে রইলো দরজার দিকে।
সাজ্জাদ রুমে এসে রূপাকে খুঁজতে লাগলো।
বিয়ের রাতে বউ ঘোমটা টেনে বসে থকে কিন্তু সাজ্জাদের বউ তো রুমেই নেই।
ওয়াশরুম থেকে শব্দ আসছে পানির হয়তো রূপা ওয়াশরুমে।
কিছু সময় পর রূপা শাড়ি চেঞ্জ করে নরমাল শাড়ি পড়ে বেরিয়ে আসলো।
সাজ্জাদ রূপার দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে বলে উঠলো ” মাশাল্লাহ ”
রূপা ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই সাজ্জাদ চোখ ফিরিয়ে নিলো।
রূপা নামাজ পড়ে নিলো। সাজ্জাদ ও ফ্রেশ হয়ে এসে নামাজ পড়ে নিলো।
রূপা ওর আম্মুর সাথে ফোনে কথা বলে ফিরতেই সাজ্জাদ গিয়ে রূপার সামনে দাঁড়ালো।
রূপাঃ কিছু বলবেন..?
সাজ্জাদঃ আমার বিয়ে, বউ, বাসর এইসব নিয়ে কখনো চিন্তা ভাবনা ছিলো না। তবে আজ হঠাৎ একটা ইচ্ছে জাগলো। তুমি কি আমার ইচ্ছেটা পূরণ করবে রূপা।
রূপার ভয়ে বুক কেঁপে উঠল। সাজ্জাদ কিসের ইচ্ছের কথা বলছে..?
সাজ্জাদ রূপার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো,’ ভয় পেয়ো না। ইচ্ছে টা খুবি ছোটো তোমার কাছে তবে আমার কাছে এটাই অনেক৷ আজ আমি তোমাকে নিয়ে এই রাতের শহর ঘুরতে চাই। প্লিজ যাবে আমার সাথে..?
রূপা শান্ত চোখে সাজ্জাদের দিকে তাকালো, ঠিক চোখের দিকে তাকালো সাথে সাথে চোখ নামিয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
সাজ্জাদ খুশিতে রূপার হাত ধরে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো খুব সাবধানে।
রূপা অবাক হয়ে নিজের হাতের দিকে তাকালো খুব যত্ন করে ধরে আছে সাজ্জাদ ।
ওরা বাসা থেকে বেরিয়ে যেতেই ছাঁদ থেকে ওদের দিকে তাকিয়ে সিগারেট এর ধোঁয়া আকাশে উড়িয়ে আহনাফ বলে উঠলো, ‘ কাল জমবে মজা। সাজ্জাদ চৌধুরী রেডি থাকো তোমার জন্য সারপ্রাইজ আসছে। আর মিসেস সাজ্জাদ তোমার মুখের হাসি আমি চিরতরে শেষ করে দিবো। যেমন আজ আমি হাসতে ভুলে গেছি ঠিক সেভাবে তুমিও ভুলে যাবে। ‘
চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।