দাম্পত্য_জীবন #মেহু_আপু #পর্ব_১৪

0
237

#দাম্পত্য_জীবন
#মেহু_আপু
#পর্ব_১৪

সবাই আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো? কি করেছি আমি? ইমরান বললো

ইমরানের বাবা বললো নিলজ্জ বেহেয়া ছেলে এসব কি? তোমরা দুই ভাই বোন কি আমাদের সম্মানের সহিত বাঁচতে দিবানা।

আকাশের বাবা বললো, লাই দিয়ে তোকে অনেক মাথায় তুলেছি আর না। খবরের কাগজ হাতে নিয়ে বললো নষ্টামি করবি ঠিক আছে। তোর নাহয় মান সম্মান নাই এই চৌধুরী বাড়ির সবার কথা ভাববি না একবারো। আর যার মেয়ের অনিষ্ট করছিস তাদের পরিবারেই বা কি হবে?

ইমরান বললো আমি এমন কি করেছি বড়বাবা, বাবা।

শায়লা সুস্থ হয়ে টিপি টিপি পায়ে হেটে ইমরানের দুই গালে দুইটা চড় বসিয়ে দেয়। এই দিন দেখার জন্য তোকে আমি পেটে ধরেছিলাম। আগে যদি জানতাম তুই চৌধুরীর পরিবারের সম্মানহানির কারণ হবি তোর মুখে দুধ না বিষ উঠিয়ে দিতাম।

নীলা আকাশকে বললো কি হচ্ছে, আমি কিছু বুঝতেছি না? তুমি কি কিছু বুঝছো আকাশ?

আকাশ বলে চুপ থাকো পরে একাই বুঝতে পারবা। এখন কিছু মুখ ফসকে বলে দিলে আমাদেরো রাগ দেখাবে।

তাই বলে আমরা দুজন চুপ করে বসে থাকবো। তুমি জানো না আমাদের পিছনে হামজা বিপদ উত পেতে রয়েছে। প্রথমত ও তোমাকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় ভাসালো। দ্বিতীয়ত মেঘকে মুরগীকে বানিয়ে বিয়ে দিলো। তৃতীয়ত আমাকে টুকলির দায়ে ফাঁসানোর প্রচেষ্টা। এইবার ও যে ইমরানের পিছনে লেগে নাই আমার ডাউট হচ্ছে। তাই শুনতে হচ্ছে আসল ঘটনা কি?

আকাশ বলল’ আমিতো একবারো এই কথা ভাবি নাই। দাঁড়াও দেখছি।

ইমরান বললো ” তোমাদের হয়েছে টা কি? কি এমন অপরাধ করেছি আমি যা না জেনেই এতগুলো কথা শুনছি।

শায়লা এবার চিৎকার করে বলে, তুই বাড়ি থেকে বের হয়ে যা আজ থেকে ভাববো আমাদের এক ছেলে মারা গেছে। শুধু আকাশ,ইশান আমাদের ছেলে তুই না।

ল্যান্ডলাইন বেজে উঠে, উষশী ফোন ধরতে যায়। তা দেখে আজগর চৌধুরী বলে নিশ্চিত ও বাড়ি থেকে ফোন এসেছে। বউমা দাঁড়াও আমি ধরছি ফোন।

উষশী দাড়িয়ে যায়.

________

আজগর চৌধুরী ফোন ধরে। ফোনের ওপাশে লিটন সাহেব বলে উঠে, কি হবে বিয়াই আমার মেয়েটার জীবন এভাবে নষ্ট করার মানে কি? আজগর চৌধুরী ফোনটা ধরে শুধু এই কথা বলে সলুশন হাতে নিয়েই রওনা দিচ্ছি চিন্তা করবেন না। ফোন কেটে দিলো।

লিটন সাহেব ফোন রেখে রিয়াকে বললো, কোন অভাব রেখেছি তোমাদের।
হাতের সামনে যখন যা চাইতা তখন তাই হাজির করে দিতাম। তোমাদের বাবা সেই ছোটবেলায় মারা গেছে তখন থেকে তোমাদের এতো যত্নে মানুষ করলাম তার প্রতিদান এইভাবে দিলা তুমি। কখনো বাবার অভাব বুঝতে দিবো না বলে আমি আর কোনো বাচ্চা নেইনি। তোমাদের চাচিআম্মা কখনো আপত্তি করে নাই। তোমাদের মায়ের ভালোবাসা দিয়ে বড় করছে। তোমার নিজ মা যখন অন্য পুরুষের সাথে সংসার পাতলো তখন তোমাদের বয়স মাত্র ০৩/০৪করে।
তোমাদের চাচিআম্মা তার প্রতিদান এইভাবে পেলো।

রিয়া কিছু না বলেই অনবরত কেঁদেই চলেছে। তখন কেয়া বলে উঠে বড় আব্বু রিয়া ওই ছেলেকে ভালোবাসে। আর আমি এটা জানতাম কিন্তু ওরা যে এরকম কান্ড ঘটাবে জানতাম না।

তানিয়া বেগম বলে আচ্ছা ও বাড়ির লোক কি বললো লিটন?

ওরা কি বলবে, তুমি তোমার মেয়েদের যথেষ্ট শাসন করো না বলে আজ এইরকম বেহাল দশা। রাগে কটমটে তানিয়াকে মারলো লিটন সাহেব। কেয়া রিয়া বাঁচানোর চেষ্টা করতে রিয়াকেও দুই গালে দুই চড় দিলো লিটন।

লিটন সাহেব বললো ভালোবাসা পযন্ত সম্পর্ক ঠিক ছিলো কিন্তু এই পিকে তোমাদের ভালোবাসার দৃশ্য নাই। আমার এসব দেখতেও ঘৃণা লাগছে। কিভাবে একটি মেয়ে বিয়ের আগে একটি ছেলেকে কিস করে। জড়িয়ে ধরে। কাঁধে মাথা রেখে বসে থাকে। বোতাম ঠিক করে দেয়। তোমাকে আমার মেয়ে বলতেও লজ্জা লাগছে।

এমন সময় প্রতেবেশীর লোক হাঙ্গামা করতে সাহেব বাড়িতে আগমন ঘটায়। কারণ হামজা তার বন্ধু নবীরকে হাত করে প্রতিবেশীকে উস্কে দেওয়ার কাজে লাগায়।
_______

[সিন কাট হয়ে চৌধুরী বাড়িতে আসে]

আকাশ বলে বাবা আমি কিছু বুঝতে পারছিনা। কি হয়েছে সবার সামনে একটু ক্লিয়ার করবেন?

আজগর চৌধুরী এরপরে নিউজের ব্যাপরে সবটা সবাইকে বলে।

ইমরান মাথায় হাত দেয়। কে করলো তাদের সাথে এমন।

নীলা এই কথা শোনামাত্রই টেনশনে হাত পা ছুড়তে থাকে। আকাশ ওই বাড়িতে কি হচ্ছে। আমাদের যেতে হবে। বাবা এমনি হাই প্রেশারের রোগী।

আকাশ বললো চুপ থাকো ইমরানের কাছে সবটা শুনছি আসলে ব্যাপার কি? তারপরে রওনা দিচ্ছি।

ইমরান বললো কে এরকম করলো আমাদের সাথে। আমরা এসব মূহুর্তে কখনো ছিলাম না কেউ ইচ্ছে করে আমাদেরকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে। বিশ্বাস করো তোমরা আমরা এতো কাছাকাছি ভাবে কখনো সময় কাটাই নাই। কেউ আমাদের সাথে একটা খেলা খেলছে নোংরা খেলা।

হামজা বললো চৌধুরী বাড়িতে হামজা ঢুকেছে সুখের ঘুম হারাম করার জন্য। আমি যা পাইনাই প্রতিশোধে তা মিটাবো বলেই এই বাড়িতে আমার আগমন। সবটা মনে মনে বলে আর মেকি হাসি দেয়।

আজগর চৌধুরী বললো কার সাথে তোমার শত্রুতা আছে যে তোমার সাথে এরকম করবে। উল্টো বুঝাতে আসবে না নাহলে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বেড় করে দিবো।

শুকর বললো ভাইয়া এক্ষুনি এই বেহেয়া ছেলেকে বের করে দাও। একে আমাদের ছেলে বলতে রুচিতে বাধে। যে সমাজ বলে কিছু আছে তা বুঝেই না। এই সমাজে এখন দুই পরিবার মুখ দেখাবে কি করে?

আকাশ বললো সবাই চুপ থাকো আমি কথা বলতে চাই ইমরানের সাথে। ইমরান তুই কি রিয়াকে ভালোবাসিস?
হ্যা ভাইয়া প্রচুর ভালোবাসি তাঁকে।
তাহলে তার এরকম ক্ষতি করলি ক্যান তুই?
ভাইয়া শোন আমরা এইসব মূহুর্ত কখনো তৈরি করি নাই। কেউ ইচ্ছে করে আমাদের পিক তুলে ছবি ইডিট করে এরকম করছে।
কে তোমাদের সাথে এরকম করবে কার সাথে তোমার শত্রুতা আছে। তুমি কি রিয়াকে ভালোবাসোর আগে অন্য কোনো মেয়েকে ভালোবাসতা।
না আমার প্রথম ভালোবাসা / শেষ ভালোবাসা শুধুই রিয়া।
রিয়া কাউকে ভালোবাসতো?
আমার জানামতে না।
তুই এখন ওর বিপদের কারণ তুই কি করবি সিদ্ধান্ত নে? হয়তো এতক্ষণে ওর বাড়িতে গন্ডগোল লেগে গেছে। কারণ পরিবার ছাড় দিলেও সমাজ ছাড়বে না। আর এই সমাজ সবসময় একটা মেয়ের দিকে প্রথম আঙুল তুলবে।
আমি যেহেতু রিয়ার এই বিপদের কারণ সো আমি এর উপায় বের করবো বলেই গাড়ি বের করে রওনা হয় ইমরান।

বাড়ির লোক ডাকাডাকি করলে পিছন থেকে কাউকে পাত্তা দিলো না ইমরান।
_______

নীলা এবার আকাশকে বললো আমাকে ও বাড়ি যেতেই হবে আমার সাথে যাবে আকাশ।
“হুম অবশ্যই ”

এমন সময় ল্যান্ডলাইন বেজে উঠলো। ল্যান্ডলাইন উষশী ধরলো। কেয়া বলে উঠলো আমাদের বাড়িতে প্রতিবেশীরা হামলা চালিয়েছে পিলিজ কিছু একটা করেন? উষশী ফোনটা স্পিকারে দেয় সবাই এই কথা শুনে অবাক হয়ে যায়।

আজগর চৌধুরী বলে ইশান, আকাশ তোমরা যেয়ে পরিস্থিতি সামলাও। যা করবে দুই পরিবারের জন্য যেনো ভালো হয়।

নীলা বলে আকাশ চলো। তখন ইশান আর উষশী গাড়ি বের করে বলে আমরাও যাচ্ছি। আজগর বলে যেইটা সম্মানের সহিত হবে ওই সমাধান নিয়েই তোমরা আসবা। আমরা তোমাদের পাশে আছি।

হামজা মনে মনে বলে কি হলো ব্যাপারটা এরা আবার রিয়াকে এই বাড়িতে উঠানোর ধান্দা করছে নাকি 😓 কি ভেবে এসব করলাম আর কি হচ্ছে এখন?
_______

[সিন কাট হয়ে যায় সাহেব বাড়িতে ]

প্রতিবেশীর মহিলারা বলছে এমন মেয়েকে আমাদের সমাজে আমরা এলাও করবো না। যে মেয়ে বিয়ের আগে পরপুরুষের সঙ্গে গা ঘেষটাঘেছি করে সেই মেয়েকে আমাদের সমাজে রাখবো না। কারণ এই মেয়ের জন্য আমাদের মেয়েরা নষ্ট হয়ে যাবে।

লিটন সাহেব বলে আপনারা কে এসব কথা বলার। আমাদের বাড়িতে ঢোকেন কোন সাহসে।

তখন প্রতেবেশি মহিলারা বলে যার জন্মের ঠিক নাই মা জন্ম দিয়ে আরেক পুরুষের সাথে ভাগে তার স্বভাব এইরকম হবেই।

লিটন বলে খবরদার আমার মেয়েকে এসব বলার আগে দুবার ভাববেন নাহলে সবকয়টাকে জেলে পুড়বো।

আরেক মহিলা বলে এই ধরতো এই বেশ্যার মেয়েকে। চোরের মায়ের বড় গলা। এর মতো মেয়ে থাকলে আমাদের মেয়েরাও বিয়ের আগে এসব শিখবে। আচ্ছা মতো সাজা দিলে অন্য মেয়েরা ভয় পেয়ে ঠিক থাকবে। আমাদের মেয়ের সেফটির জন্য এই রিয়াকে শাস্তি দিতেই হবে।

তানিয়া বেগম বলে কোন সমাজের কথা আসছে। আমরা না খেয়ে থাকলে আপনারা কি আমাদের ভাত দিয়ে যান। যে আপনারা আমাদের মেয়ের জন্য সিদ্ধান্ত নিবেন চলে যান এখান থেকে।

প্রতিবেশিরা বলে এরা এভাবে শুনবে না চল মিশন শুরু করে দিই। এই কথা বলার সাথেই পাথর দিয়ে ঢিল ছুড়ে দেয়। পাথরের আঘাতে লিটন সাহেব অজ্ঞান হয়ে যায়।

তানিয়া বেগম কেয়া আর রিয়াকে বুকে আগলে ধরে।

সেই বুক থেকে রিয়াকে বের করে তানিয়াকে পাথরের ঢিল মারে।

তানিয়া ও লিটনের কপাল বেয়ে রক্ত পড়ছে। দুজনেই অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পড়ে থাকে।

এমনসময় নবীরের ফোন বাজে নবীর ফোন ধরে। হামজা বলে কি খবর ওইদিকের। নবীর বলে মারাত্মক অবস্থা আপনি যা বলেছেন তাই হচ্ছে নিশ্চিতে থাকেন। হামজা বলে আপডেট দিতে থাকো ফোন কাটলাম। নবীর বলে ঠিক আছে।

এরপরে নবীর সবাইকে আরো উস্কে দেয় বলে এই মেয়েকে চুন কালি মাখিয়ে গোলায় জুতার মালা দিয়ে সাড়া গ্রাম ঘোড়াতে। এই দৃশ্য দেখবে সাড়া পৃথিবী তাতেই আমাদের গ্রামের মেয়েরা ভালো থাকবে।

এরপরে কেয়া অনেক বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে রিয়াকে বাঁচানোর জন্য কিন্তু কেয়ার নরম শরীরে থাবা মারে হায়েনার দল। ভীড়ের ভিতর থাবা বসায় কিছু দুষ্ট লোক তার স্তনে। কেয়া নিজেকে গুটিয়ে নেয়। আর চিল্লাতে থাকে।

এরপরে সবাই মিলে রিয়ার চুলের মুটি ধরে। রিয়ার অকাতর স্বরে নিরুপমায় হয়ে আল্লাহকে ডাকে শুধু। এরপরে সবাই মিলে পাতিলের কালি মুখে লেপে দেয়। রিয়া শুধু ছটফট করে নিজেকে বাঁচানোর জন্য। এমন সময় নবীর আরো উস্কে দেয় তখন গ্রাম বাসী অন্ধের মতো সবার পায়ের জুতার ঢিল মারে রিয়ার গায়ে। রিয়া শুধু আল্লাহ কে প্রানপনে ডাকছে। হে আল্লাহ কাউকে পাঠান নাহলে এরা আমাদের মেরে ফেলবো। কেয়া এরকম অবস্থা দেখে ধীর পায়ে যে নীলাকে ফোন দেয়।

“কি হচ্ছে ওখানে ”

তুই যদি আমাদের জীবিত দেখতে চাইস দ্রুত আয় এইটা বলতেই নবীর ফোন কেড়ে আচাড় মারে। কেয়া নবীরের গালে চড় দেয়। তখন নবীর কেয়াকে হায়েনার মতো মুখে আচড় দেয়। কেয়া অজ্ঞান হয়ে যায়।

এরপরে গ্রামবাসী জুতার মালা বানায়। এইসব দৃশ্য নবীর ভিডিও করে হামজাকে পাঠায়। হামজা বলে ব্যাশ ভালোই হয়েছে নবীর।
নবীর বলে আমার কাজ হয়ে গেছে চলে যাই ব্যাপারটা বিগড়ে যাওয়ার আগে।
নবীর চলে যায় গ্রামবাসীকে উসকে দিয়ে। গ্রামের লোক রিয়াকে জোতার মালা পড়ায়।

চলবে,,,,

গল্পটা কেমন হয়েছে নেক্সট না লিখে কমেন্টে জানাবেন সবাই 😓

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here