#দাম্পত্য_জীবন
#মেহু_আপু
#পর্ব_১৫
রিয়ার আর্তনাদে চারদিকে কলরব পড়ে যায়। তোমাদের কারো ভালো হবেনা। আজকে আমাকে যে পরিস্থিতিতে আপনারা ফেলছেন তার জন্য আপনাদের পস্তাতেই হবে।
প্রতিবেশীরা বলে নষ্টা মেয়ে কোথাকার তোর মুখে বড় বড় কথা মানায় না এই বলে কালির পানিতে মুখ ঢুকিয়ে দেয়।
রিয়া চিৎকার করে। ইমরান এমন সময় রিয়ার বাড়িতে ঢোকে। হোয়াট দ্যা ননসেন্স কি হচ্ছে এসব। কেয়া দৌড়ে যেয়ে ইমরানকে বলে আমাদের বাঁচান।
প্রতিবেশিরা বলে এইতো এই ছেলেকেই পত্রিকাতে দেখছি ধর এটাকে দুজনকে বেঁধে ফেলে জুতার মালা দিয়ে সাড়া গ্রাম ঘুরাবো।
ইমরান বলে এত বড় সাহস কার দেখি? আমার রিয়াকে আর আমাকে টার্চ করে দেখে কে?
রিয়া বলে ইমরান তুমি এখানে এসেছো ক্যান? তোমাকে এরা মেরে ফেলবে চলে যাও।
আমি এতো কাপুরষ নই রিয়া। আমার জন্য তোমাকে, এই সমস্যায় পড়তে হয়েছে। আমাকেই প্রতিকার করতে হবে।
আর এই গ্রামবাসী শুনেন আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি। ভালোবাসা কি অপরাধ?
গ্রামবাসী বলে ভালোবাসার নামে অবৈধ সম্পর্ক করা পাপ।তোমরা ভালোবাসা শব্দ টিকে কলুষিত করেছেন।
রিয়া বলে আমরা এরকম কিছু করি নাই। কতবার বলবো আমাদের কেউ ইচ্ছে করে ফাঁসাইছে।
গ্রামবাসী বলে প্রমাণ আমাদের সামনে তবুও অস্বীকার করবা ।
সব প্রমাণ সবসময় সত্যি হয়না রিয়া বললো।
গ্রামবাসী বললো এরা বাড়াবাড়ি করবেই ধরুন দুটার মুখে চুন কালি লেপে জুতার মালা দিয়ে সাড়া গ্রাম ঘোরালে শিক্ষা হবে।
কেয়া দৌড়ে যেয়ে তার বড় বাবার আর চাচিআম্মার জ্ঞান ফেরায়।
গ্রামবাসী তেড়ে যায় রিয়া + ইমরানের উপর রিয়া আর ইমরান দুজন দুজনকে শক্ত করে ধরে।
এমন সময় আকাশ,নীলা,ঈশান, উষশীর আগমন হয় সাহেব বাড়িতে।
আকাশ চিৎকার করে। গ্রামবাসী স্তব্ধ হয়ে যায়।আকাশ বলে কে আপনারা। কোথায় থেকে এসেছেন। আপনাদের সাহস কি করে হয় অন্যর ছেলে মেয়েকে সাজা দেওয়ার।
গ্রামবাসী বলে এই গ্রামে চলতে হলে,শালীনতা বজায় রেখে বাস করতে হবে। আর এই দুটি ছেলে মেয়ে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করেছে। তাই এদের শাস্তি দিতে হবে।
আকাশ বলে আপনার কে? সাধারণ জনগন। বিচার করার অধিকার দিলো কে আপনাদের। আমরা মেয়ের বাবা মায়ের সাথে এর সমাধান দিবো?
গ্রামবাসী বলে এইরকম মেয়ে থাকলে আমাদের ঘরের মেয়েরা এরকম কাজে লিপ্ত হবে। আর আপনি কে সমাধান করার। জামাই জামাইয়ের মতো থাকবেন।
আমি হলাম এ বাড়ির বড় জামাই + ছেলের ভাই। তাই এদের বিষয়ে আমার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে।
গ্রামবাসীরা আকাশের কথা শুনতে নারাজ।
তখন নীলা রেগে যেয়ে বলে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে পুলিশ ডেকে নিয়ে আসবো। সবকয়টাকে গারদে ভরবো।
গ্রামবাসী বলে পুলিশের ভয় দেখালে হবে, তোমার বোনকে এই কেলেঙ্কারির পর কে বিয়ে করবে?
আকাশ বলে আমি তো তখন থেকে আপনাদের বলতে চাইছি, আমার ভাই যেহেতু অপরাধী। সে এই মেয়েকে বিয়ে করবে। বিয়ে করলে তো আপনাদের সমস্যা মিটে যায় তাহলে বাড়াবাড়ি করছেন কেনো?
গ্রামবাসী বলে মুখের কথা ভরসা করি না। বিয়ে করলে আজকেই করতে হবে।
আকাশ বলে ঠিক আছে আজকেই বিয়ে। কেউ কাজী ডাকার ব্যবস্থা করেন।
রিয়া + ইমরান অবাক হয়ে যায়। আকাশ বলে রিয়া তোমার এই সিদ্ধান্তে কোনো আপত্তি নাই তো। রিয়া ইমরানের চোখের দিকে তাকায়। ইমরান মাথা নেড়ে হ্যা সূচক সম্মতি দেয়।
গ্রামবাসী শান্ত হয়ে যায়। ওদের মধ্যে কেউ একজন কাজী ডাকার ব্যবস্থা করে দেয়।
নীলা, কেয়া ও রিয়া, লিটন আর তানিয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে। লিটন অপ্রাসঙ্গিক অবস্থায় পড়ে কাঁদতে কাঁদতে রুমে চলে যায়।
গ্রামবাসী কাজী এনে ছেলে মেয়েকে ধরে বিয়ে পড়িয়ে দেয়। বিয়ে দেওয়া শেষে একেকজন তাদের নিজ নিজ বাড়িতে চলে যায়।
তানিয়া বেগম অনবরত কাঁদতেই আছে রিয়াকে নিয়ে। বাড়িতে একটা গুমট পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
নীলা আকাশকে যেয়ে বলে বাড়িতে এই সম্পর্ক কি মেনে নিবে।
বিয়ে দেওয়া ছাড়া উপায় ছিলোনা। আর ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে এখানে করার কিছু নাই।
আকাশ বলে মা আপনার এক মেয়ে যেমন সুখে আছে কথা দিলাম আপনার মেঝো মেয়েও ওরকম সুখে থাকবে।
তানিয়া বললো বাবা আমার ভরসা আছে। তোমরা একটু দেখে রাইখো। এই বর্বর গ্রামবাসীর জন্য এরকম ঘটনা ঘটলো। যার সাক্ষী থাকলাম সপরিবারে।
রিয়া বলে চাচিআম্মা বড়বাবা কই আমাকে বিদায় দিবে না।
তুমি এখন যাও পরে তোমার বাবার অভিমান ভাঙলেই একাই তোমাকে দেখতে যাবে।
আমি এভাবে যেতে চাইনা
তানিয়া বললো ইমরান আমার মেয়েটিকে তাড়াতাড়ি নিয়ে যাও আমি আর সহ্য করতে পারছিণা ওর করুণ মুখ
নীলা বললো চল বাবা একাই চলে আসবে আমাদের দেখতে ওনি একটু একরোখা জানিস তো।
এরপরে উষশী রিয়ার হাত ধরে গাড়িতে উঠিয়ে দেয়। ইমরান আর ইশান ওই গাড়িতেই উঠে পড়ে।
আকাশ আর নীলা কেয়াকে বলে বাবা মাকে দেখতে। এই বলে চলে যায় ওই বাড়ি থেকে।
গাড়িতে আকাশ বলে ওদের এসমস্ত ঘটনা ঘটাইলো কে নীলা?
কে আবার তোমার বোনজামাই হামজা।
ওর এসব করে কি লাভ?
হামজা চায় আমাদের পরিবারের ধংস্স।
অনেক হয়েছে আর না এইবার ওকে শাস্তি দিতেই হবে।
তার আগে আমাদের প্রমাণ করতে হবে এই ঘটনার পেছনে ও দায়ী।
কিভাবে?
তুমি অপেক্ষা করো প্রমান বাড়িতেই হবে আজকে?!!
চৌধুরী মঞ্জিলে সবাই আসলো আর্জিনা, শায়লা রিয়া চুন কালি পড়া মুখ দেখে থমকে যায়। আর্জিনা বলে এটা কে ইমরান তোর সাথে পেতনীর মতো দেখতে।
আকাশ তখন বলে মা ও পেতনী না। ও তোমাদের ছোট বউমা রিয়া।
শায়লা বেগম বলে হোয়াট? এ অবস্থায় কেনো?
তখন ইশান সবটাই বুঝিয়ে বলে। এ সমস্ত ঘটনা শুনে ওরা শোকাহত। আজগর চৌধুরী রিয়াকে নিয়ে ভিতরে যেতে বলে ইমরানকে।
ইমরান রিয়াকে নিয়ে ভিতরে চলে যায়।
নীলা বলে বাবা আমি আর সহ্য করতে পারছি না।
আজগর বলে কি হয়েছে বউমা।
নীলা বললো কি করে যে বলি। আকাশ তখন বলে সবাইকে জেনে দেওয়া উচিত। বলো সবাইকে।
নীলা বলে বাবা আমি কিছু কথা বলতে চাই সেইখানে মেঘ ও হামজাকেও লাগবে।
আজগর চৌধুরী বলে উষশী ওদের নিয়ে আসো।
হামজা আর মেঘ এসে বলে বাবা আমাদের ডেকেছেন।
শুকর বলে আমি না নীলা বউমা তোমাদের ডেকেছে।
হামজা মনে মনে বলে নীলা কি বলতে চায়।
নীলা বলে বাবা এই হামজা আমার পূর্ব পরিচিত। এর সাথে আমার তিন বছরের সম্পর্ক ছিলো। আপনাদের ছেলেকে আমি প্রথমদিনেই জানাইছি। এই হামজা আমাকে ভালোবেসেছে আমার বাবার সম্পত্তির জন্য। যখন আমি জেনে যাই তখন ওকে ওর লোভ থেকে বঞ্চিত করি। এরপরে আপনার ছেলেকে সবটা জানাই। এরই প্রতিশোধে আকাশকে ফাসায় শ্লীলতাহানির অভিযোগে। আমি সেই অভিযোগ থেকে আকাশ বের করে আনি।
হামজা বলে ভাবী এসব কি বলছেন আপনি?
নীলা বলে আমার কথা এখনো বলা শেষ হয়নি মাঝখানে কথা বলবা না।
আজগর বলে বলো বউমা তুমি।
এরপরে আমার জন্য মেঘকে মুরগী বানিয়ে বিয়ে করে নেয়। এটাও আমার কারণে হইছে। এরপরে আমার এমএসসি টেষ্ট পরীক্ষায় আমাকে টুকলির দায়ে ফাঁসানোর প্রচেষ্টা।
সেকি বউমা তুমি তো আমাদের একবারো বললা না।
মেঘ অবাক হয়ে যায় কি বলছো ভাবী তুমি।
আকাশ বলে তোকে কষ্ট দিতে চাই নাই এর জন্য আমরা এই কথাটি চাপিয়ে যাই।
উষশী বলে তারপরে নীলা নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করলো কিভাবে?
আকাশ তখন সবটাই খুলে বলে।
আজগর কথা বলতে যাবে তখনি নীলা বলে বাবা আমার কথা শেষ হয় নাই।
আজকে ইমরান আর রিয়ার এই মূহুর্তের জন্য দায়ী হামজা।
হামজা এবার মুখ খোলে। খবরদার ভাবি আমার নামে যা তা বলবেন না।
আমি যে ইমরান আর রিয়ার সাথে এরকম করছি তার প্রমাণ দিতে পারবেন।
নীলা তখন সাংবাদিক কে ডাকে। সাংবাদিক কে দেখে হামজা থতমত খেয়ে যায়। সাংবাদিক কে নীলা প্রশ্ন করল আজকের হেডলাইনের ইমরান আর রিয়ার অন্তরঙ্গ মূহূর্ত নিয়ে। সাংবাদিক বলে ছবি গুলা হামজা ভাই কালেক্ট করে আমাকে টাকা দিয়ে এসব করাইছে। আমার স্ত্রী অসুস্থ তার অপারেশনের জন্য টাকা দরকার ছিলো। সেই মূহুর্তে কোনো অপশন না পেয়ে হামজা ভাইয়ের কথাতে রাজি হয়ে এই নিউজ করছি। আমাকে মাফ করবেন।
হামজা বলে এ কোথাকার সাংবাদিক একে তো আমি চিনিনা। বাবা বড়বাবা নীলা ভাবি আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।
নীলা বললো আমি জানতাম তুমি এরকম কিছু বলবে। সাংবাদিক মেমোরি কার্ড টা দ্যান। সাংবাদিক মেমোরি কার্ড টা দিলো। নীলা মেমোরি কার্ড লাগিয়ে সাংবাদিকের সাথে হামজার কথোপকথন ও পিক দেওয়ার দৃশ্য দেখালো।
এইটা ছিলো কালকের সিসিটিভি মূহুর্তের অংশ। এবার বলো অনাকে চিনো না।
হামজা বলে ইয়ে মানে এসব তোতলাতে থাকে।
মেঘ বলে তোতলাচ্ছো ক্যান চিটার? বাবা বড় বাবা ও এতকিছু করার সাহস পাচ্ছে আমার জন্য। আমি আর ওকে এভাবে মানতে পারছি না তোমরা যা শাস্তি দিবার দিয়ো। ও আমার ইমোশনের সঙ্গে খেলেছে কাঁদতে কাঁদতে উপরে চলে যায়।
শুকর বলে ভাইয়া তোর উপরে কোনোদিন সিদ্ধান্ত নেই নাই তুই যা শাস্তি দিবি জামাইকে তাতেই আমরা সহমত।
আজগর চৌধুরী বলে আকাশ আর নীলা তোমাদের এসব বলা আগে উচিত ছিলো। যদিও আমরা 50‰ জানতাম তবে সবকিছু বললে এতকিছু করার সাহস পেতো না ও।
আকাশ বলে সরি বাবা আমি নীলাকে মানা করেছিলাম।
আজগর বলে জামাই তোমাকে দ্বিতীয় বার সুযোগ দিছিলাম কিন্তু তুমিতো শুধরানোর না। বলো তো তুমি কি চাও? কিসের জন্য এমন করছো আমাদের সাথে।
হামজা বলে আমাকে মাফ করবেন বড় বাবা আমি মেঘের ভালোবাসার মূল্য দিতে পারলাম না। আসলে আমি এসব করেছিলাম এক প্রকার নীলার ফিরেয়ে দেওয়া ক্ষোভ থেকে। আপনারা এতকিছুর পরেও সুযোগ দিছিলেন কিন্তু আমি তার যোগ্য ছিলাম না আপনারা যা শাস্তি দিবেন আমি মাথা পেতে নিবো।
আজগর চৌধুরী বলে জামাই তোমার কি চাই!!!
তুমি বলেছিলা তোমার মা অসুস্থ পরে খবর নিয়ে দেখি ওনারা সুস্থ। তুমি ছেলে হয়ে ওদের খবর রাখো না। তাই আমি তোমার মা ও বোনকে বাজারের যাবতীয় দ্রবাদি দিয়ে এসেছি। এরপরেও তোমাকে কিছু বলি নাই আমাদের মেয়ের মুখের জন্য।
আচ্ছা আসলে তুমি কি চাও? তোমার চাহিদাটা ক্লিয়ার করো।
হামজা বলে বড়বাবা আমি কিছু চাইনা শুধু আপনাদের মেয়েকে ভালো রাখতে চাই এর জন্য আপনাদের কোম্পানিতে একটা জবের ব্যবস্থা করে দিন।
আজগর চৌধুরী বলে বাবা আমরা মেঘের জন্য আগে থেকেই ফ্লাট বানিয়ে রেখেছি যেইটা কেউ জানেনা বাড়ির। আমি আর শুকর ছাড়া।
আকাশ,ইশান অবাক হয়ে বলে বাবা এসব পাওয়ার ভরসার মতো ছেলে ও না।
আজগর বলে বাবাতো আমি, তোমরা চুপ থাকো।
এই নেও ফ্লাটের ঠিকানা আর ওই ফ্লাটে তোমাদের সংসার গুছিয়ে রাখছে তোমার মা ও বোন। মেঘের তো গাড়ি আছে ওই গাড়ি করেই মেঘ আর তুমি আজকেই ওই ফ্লাটে উঠবা। আর চাকরির ব্যবস্থা আমি করে দিবো। আর কতদিন এই বাড়িতে থাকবা।
আকাশ বলে বাবা কিন্তু ওকে এভাবে ছাড়বা কোনো শাস্তি নাই।
আজগর বলে আজকের পর নিজেকে পরিবর্তন করে নিবা হামজা। যা চাইছো নীলার বাবার কাছে সব তোমাকে দিয়ে দিলাম।
হামজা অবাক হয়ে যায় এসব কি সত্যি আর আমি এদের পিছনে এতদিন থেকে এভাবে লেগেছি। হামজা কান্না করে দেয়।
আর্জিনা,শায়লা মেঘের ল্যাগেজ নিয়ে মেঘকে হামজার হাতে তুলে দেয়।
হামজা সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে মেঘকে নিয়ে চলে যায় তাদের মেঘজা ভিলাতে।
চলবে,,,,
[ আপনাদের কি মনে হয় হামজা কি এসব পেয়ে নিজেকে শুধরে নিতে পারবে। নাকি ওকে আরো শাস্তি দেওয়া উচিত ছিলো ]