পরাণ_দিয়ে_ছুঁই #পর্বঃ৯

0
669

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই
#পর্বঃ৯
#Jhorna_Islam

“সামওয়ান কলিং মি তিহা মি. ওয়াহিদ।”

হোয়াট মাম?

ফাতিহা এবার চোখ তুলে সৌন্দর্যের দিকে তাকায়। তারপর ছলছল চোখে তাকিয়ে বলে,, একটা আন্টি আজ আমাকে তিহা বলে ডেকেছে।সাথে আমার গাল ও টেনে দিয়েছে।এই দেখো এইভাবে বলেই ফাতিহা নিজের গাল ধরে টেনে সৌন্দর্য কে দেখাতে থাকে।

সৌন্দর্য এতো সময় ব্রু কোচকে ফাতিহার দিকে তাকিয়ে ছিলো।ফাতিহার গাল টানা দেখে নিজের হাসি টা অনেক কষ্টে দ’মিয়ে রেখেছে। এখন একদম হাসা যাবে না। নয়তো ফাতিহা বুড়ি বো*ম হয়ে সব উড়িয়ে দিবে। তাই কিছুতেই হাসা যাবে না। সৌন্দর্য মনে মনে বুলি আওড়াচ্ছে কনট্রোল সৌন্দর্য কনট্রোল।

ফাতিহা বসে বসে নাক টানছে একটু পর পর। সৌন্দর্য উঠে গিয়ে টিস্যু বক্স নিয়ে আসে।

“মাম এখানে আসো আমার কাছে। তোমার ঠান্ডা লেগে গেছে। এতো কেউ কাঁদে? ”

— আমাকে তিহা বলেছে আর আমি কাঁদবোনা?

— তোমার ঐ আন্টি টা হয়তো জানতো না তুমি তিহা বলা একদম পছন্দ করো না। বা ইমোশনাল হয়ে যাও। আচ্ছা তুমি বলোতো ঐ আন্টিটার কি কোনো দোষ আছে এখানে?

উহুু।

এটাই তো সে না বুঝে তোমায় বলে ফেলছে।এতে কারো কোনো দোষ নেই। আর তোমাকে নিজেকে অনেক শক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। নিজে এভাবে ভেঙে পরলে চলবে? তুমি না আমার ব্রে’ভ গার্ল?

ইয়েস।

এখন এইদিকে আসো আমি নাক পরিষ্কার করে দিচ্ছি। তুমি কথা বলতে পারছো না। সৌন্দর্যের কথায় ফাতিহা লাফ দিয়ে এসে সৌন্দর্যের কোলে বসে। সৌন্দর্য সুন্দর করে এক হাতে ফাতিহা কে আগলে ধরে আরেক হাত দিয়ে ফাতিহার নাক পরিষ্কার করে দেয়। স্কুল থেকে এসে ফ্রেশ ও মনে হয় হয়নি মেয়েটা।চুলগুলো সব অগোছালো হয়ে আছে। সব চুল নিজের হাতে সৌন্দর্য ঠিক করে দেয়। আসো আমি ফ্রেশ করিয়ে দিচ্ছি। ফাতিহা কে নিয়ে ওয়াশরুমে যাওয়ার আগে দাদি কে কল দিয়ে বলে যায় ফাতিহার জন্য খাবার পাঠানোর জন্য।

সৌন্দর্য ফাতিহা কে ফ্রেশ করিয়ে রুমে এসে দেখে টেবিলের উপর খাবার রাখা। মনে হয় সার্ভেন্ট এসে দিয়ে গেছে। খাবার নিয়ে ফাতিহার মুখের সামনে ধরতেই সৌন্দর্যের ফোনে কল আসে।এক হাতে কল রিসিভ করে আরেক হাতে ফাতিহা কে খাওয়াতে থাকে। তালহা কল দিয়েছে। রিসিভ করতেই তালহা বলে উঠে,,, ” কি হয়েছে সৌন্দর্য কিছুই তো বললি না।তখন অমন কল পেয়ে তাড়াহুড়ো করে চলে গেলি। বাড়িতে সব ঠিক আছে?

হ্যা সব ঠিকই আছে। তবে ফাতিহা,,,,,

ফাতিহা? কি হয়েছে ফাতিহার? ঠিক আছে তো??

— আগে আমায় বলতে দে ইয়ার।এতো প্রশ্ন করছিস কেন?

— আচ্ছা বল।

কার সাথে যেনো আজ দেখা হয়েছে। আর তিহা বলে ডেকেছে। তাই একটু ইমোশনাল হয়ে গেছে। তুইতো সব জানিস ই একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলে সৌন্দর্য।

আহারে বাচ্চা মেয়েটা। এখন ঠিক আছে?

— হুম।

এসবের চক্করে তোর সাধের সিঙ্গারা খাওয়া হলো না। আফসোস হচ্ছে কতো কিছু করলি সিঙ্গারা খাওয়ার জন্য। আমাকে জোর করে পাঠালি রান্না করতে। সব বাদ দিলাম নূর সিঙ্গারা বানালো তুই তো খেতেই পারলি না। কি টেস্ট ছিলো ভাই মুখে লেগে থাকার মতো।আমি এতো টেস্টি সিঙ্গারা আর খাইনি দোস্ত। উফফফ।

ভালো করেছিস। তুই কি ভেবেছিস এমন রস,কস লাগালে আমার লো’ল পরবে? হাউ ফানি!

তোর জন্য দুইটা তুলে রেখেছি, আজ কি আসবি? এসে খেয়ে যা। নাকি ফ্রিজে রেখে দিবো কোনটা?

শা,,,, সৌন্দর্য ব;কা দিতে গিয়ে ও থেমে যায়। কারণ ফাতিহা খেতে খেতে সৌন্দর্যের দিকেই তাকিয়ে আছে।
সৌন্দর্য নিজেকে সংযত করে মিনমিনিয়ে বলে,,, মজা করা বাদ দিয়ে ফোন রাখ।নয়তো তোর খবর আছে।

আমি মজা করিনি দোস্ত। আসলেই তোর জন্য আফসোস হচ্ছে এতো টেস্টি সিঙ্গারা খেতে পারলি না। আহারে,,,,

সৌন্দর্য তালহা কে আর কিছু বলতে না দিয়ে কল কেটে দেয়।

তুমি আমাকে না নিয়ে তালহা আঙ্কেলদের বাড়িতে গিয়েছিলে?

— আমার একটু কাজ ছিলো মাম।

— আমি খাবো না তুমি হাত সরাও। তুমি আমাকে না নিয়ে গেলে কেন?

— মাম পুরো টা শেষ করো খাবার। আমি ঐদিক দিয়ে আসার সময়ে তোমার তালহা আঙ্কেল আমাকে টেনে নিয়ে গেছে। আর তোমার তো ক্লাস ছিলো।তুমি স্কুলে ছিলে কি করে নিয়ে যাবো বলো?

–আমি রে’গে আছি।

— কি করলে রাগ ভাঙবে?

আমাকে ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে।

আচ্ছা।

পাক্কা?

হুম।তবে আজ না কাল নিয়ে যাবো।

ওকে। এন্ড লাভ ইউ মি.ওয়াহিদ।

লাভ ইউ টু মাম।

—————————————–
সকাল সকাল তৈরি হয়ে সোফায় বসে পা নাচাচ্ছে ফাতিহা। সে ঘুরতে যাবে।কি আনন্দ লাগছে তার।অনেকদিন কোথাও যাওয়া হয় না। আজ সে যাবে। কিন্তু অপেক্ষা তার সহ্য হচ্ছে না। সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে সৌন্দর্যের আসার কোনো নাম গন্ধ নেই।

সৌন্দর্যের দাদি ফাতিহার পাশেই বসে বসে পানের বাটা নিয়ে পান বানাচ্ছে। ফাতিহা তার দিকে তাকিয়ে বলে,,,উফফ বুড়ি তোমার জামাই এখনো আসছে না কেন? এতো টাইম লাগে? দেখো সাজতেছে নতুন বউ পেয়ে যাবে আর তোমাকে ভুলে যাবে।

দিন দিন পেকে যাচ্ছিস ফাতু বুড়ি। তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে তুই আমার থেকেও বয়সে বড়।

ফাতিহা মুখ ভেঙিয়ে অন্য দিকে তাকায়। এরমধ্যেই সৌন্দর্য গাড়ির চাবি হাতের আঙুলে ঘুরাতে ঘুরাতে শিষ বাজিয়ে ফাতিহার সামনে এসে দাঁড়ায়। ফাতিহা ঝটপট সোফায় উঠে দাঁড়ায়। সৌন্দর্য ঘুরে ফাতিহা কে কাঁধে তুলে নেয়। তারপর দুইজন চলে যায়।

গাড়ি নিয়ে সৌন্দর্য পার্কের ভিতর যাবে এরমধ্যে ফাতিহা হাওয়াই মিঠাই দেখে বায়না ধরে সে খাবে। যা বলবে বলবেই সৌন্দর্য বারণ করে ও মানাতে পারবে না। অগত্যা গাড়ি থেকে নেমে যায় হাওয়াই মিঠাই আনার জন্য। যাওয়ার আগে ফাতিহা কে বারণ করে যায় গাড়ি থেকে নামতে। ফাতিহা সম্মতি দেয় সে গাড়ি থেকে নামবে না।

ফাতিহা একটা বাচ্চা কে দেখে সৌন্দর্যের বলা গাড়ি থেকে না নামার কথাটা ভুলে যায়।মিষ্টি বাচ্চা মায়ের কোলে থেকে খিলখিলিয়ে হাসছে। এটা দেখে নেমে আসে। মহিলাটার পিছন পিছন যেতে থাকে। কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পরই বাচ্চাটা কে হারিয়ে ফেলে ফাতিহা।গাড়ি থেকে অনেকটা দূরে ও এসে গেছে।

ফিরে আসার সময় দুই তিনটি কুকুরের ঘেউ ঘেউ শুনে তাকিয়ে দেখে ওর দিকেই তে’ড়ে আসছে। ফাতিহা ভয় পেয়ে উল্টো দিকে দৌড়াতে থাকে। কিন্তু কুকুরের সাথে পেরে উঠছে না।

নূর আর ইসরাত কোচিং শেষ করে হেঁটেই বাড়ি ফিরছে।একটা বাচ্চাকে কুকুর দৌড়াচ্ছে এটা দেখে নূর দাঁড়িয়ে যায়। তারপর সে দৌড়ে যেতে থাকে। পিছন থেকে ইসরাত বারণ করছে যাওয়ার জন্য কিন্তু নূর শুনছে না। যেই মেয়ে টা দশ হাত দূরেও কুকুর দেখে ইসরাতের পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সে কিনা এখন দৌড়াচ্ছে।

নূর গিয়ে ফাতিহা কে কোমড় ধরে তুলে অন্য পাশে নিয়ে আসে।নিজেকে সামলাতে না পেরে ফাতিহা কে নিয়েই পরে যায়। ফাতিহা পাপ্পা বলে চিল্লিয়ে উঠে। নূর ফাতিহা কে ব্যাথা পেতে দেয়নি। দুইজন ই পরে গেছে। নূর একটু তাকিয়ে দেখে কুকুরগুলো ছুটে একটা ডাস্টবিনের কাছে চলে গেছে। এরমধ্যে সৌন্দর্য ও দৌড়ে এসে ওদের কাছে থামে। ফাতিহা কে প্রথমে নূরের উপর থেকে তুলে জিজ্ঞেস করে ঠিক আছে কিনা। ফাতিহা ভয়ে কিছু বলতে পারছে না শুধু কেঁপে চলেছে। সৌন্দর্য ফাতিহা কে বুকে জড়িয়ে নেয়। তারপর নূরের দিকে তাকায়। নিজের হাত বাড়িয়ে দেয় উঠার জন্য। এরমধ্যে ইসরাত ও ওদের কাছে এসে পরে। সৌন্দর্য কিছু না বলে ইসরাতের কোলে ফাতিহা কে দিয়ে দেয়। নিচে বসে নূরের হাত ধরে তুলে।নূরের কুনোই ছিলে র/ক্ত ঝরছে। সৌন্দর্যের স্পর্শে নূর কেঁপে ওঠে। নিজেকে সরিয়ে নিতে চায় কিন্তু সৌন্দর্য ছাড়ে না। হাত ধরে গাড়ির কাছে নিয়ে যায়।

গাড়িতে বসিয়ে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে নূরের পাশে বসে। ঔষধ দেখেই নূরের চোখের পানি ছলছল করতে থাকে। সৌন্দর্য তা ভালো করেই লক্ষ করে। চোখ দুটোকে মনে হচ্ছে কোনো গভীর সমুদ্র।

সৌন্দর্য মনে মনে আওড়ায়,,” চোখ তো না যেনো কাউকে ধ্বং’স করার ক্ষে’প’ণা’স্ত্র। ”

#চলবে,,,,

কার্টেসী ছাড়া কপি নিষেধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here