#বর্ষার_প্রণয়ের_কথা
#পর্ব_০৭
#নুর_নবী_হাসান_অধির
ল্যামপোস্টের ঝাপ্সা আলোয় মেঘকে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়৷ ভয়ে মেঘ চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে৷ আঁখি মেলে সৌরভকে দেখতে পাই৷ সৌরভ মুচকি হেসে বলল,
“ভয়ের কিছু নেই৷ আমি থাকতে অন্য কেউ আমার মেঘ বালিকার দিকে হাত বাড়াতে পারবে না৷”
মেঘ ক্ষেপে বলল,
“অসভ্যতামী অন্য জায়গায় করবি৷ এখানে অসভ্যতামী চলবে না৷ আমি তোকে কেনদিন ভালোবাসতে পারব না৷”
“আমার ভালোবাসায় কোন কমতি নেই৷ আমি জানি তুই আমার ভালোবাসার সাড়া দিবি একদিন৷ তুইও আমায় ভালোবাসিস। আমি তোকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছি৷ ভালো না বাসলে অনেককিছু করতি৷”
মেঘ নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে৷ কিন্তু পুরুষের শক্তির কাছে হার মানে৷ বেশি বাড়াবাড়ি করলে অন্যকিছু হতে পারে। তাই মেঘ বিনয়ী স্বরে বলল,
“সৌরভ আমাকে ছেড়ে দে৷ আমার সাথে এমন করিস না৷ অন্য কেউ দেখে নিলে আমার নামে বদনাম রটে যাবে৷”
“আমার শক্তির সাথে পেরে উঠতে পারলি না৷ আমায় একবার ভালোবেসে দেখ তোকে মাথায় করে রাখব৷ কখনও তোকে ছেড়ে যাব না৷”
মেঘের কপালে ঠোঁট স্পর্শ করে ছেড়ে দেয়৷ মেঘকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সৌরভ হনহনিয়ে চলে যায়৷ রুমে এসে মেঘের সমস্ত রাগ ছোঁয়ার উপর তুলে৷
ছুটির মধ্যে পাঁচ বন্ধু মিলে চন্দিমা উদ্যান, ধানমন্ডি লেগ, থ্রি আর্ট গ্যালারি, জাতীয় জাদুঘর সবকিছু ঘুরে দেখে৷ রাতের সেই ঘটনার পর থেকে মেঘ সৌরভের যেন দূরত্ব একটু বেড়ে গেছে৷ মেঘ ভয়ে লজ্জায় সৌরভের কাছে যায়না৷ সৌরভ হুটহাট করে এসে মেঘের কানে ফিসফিস করে বলে, “ভালোবাসি মেঘ বালিকা৷” এভাবে কেটে যায় ছুটির দিনগুলো৷
________________
ছুটিগুলো আনন্দের সাথে কেটে গেলেও রাজশাহীতে আসার সাথে সাথে নতুন বিপদের সম্মুখীন হয় সকলে৷ ডিপার্টমেন্টের প্রধানকে উনার ডেক্সে হত্যা করেছেন কে জানি? ডেক্সের উপর রক্ত দিয়ে লেখা ❝N❞. পুলিশ অনেক তদন্ত করেও কোন প্রমাণ পেল না৷ পাঁচ বন্ধুর মনে এবার ভয়টা তীব্রভাবে নাড়া দিল৷ কারণ তুহিনের গলায় সব সময় ❝N❞ অক্ষরটি ঝুলে থাকত৷ তুহিন মা-রা গেছে৷ তাহলে কে করছে এসব কাজ?
পড়ন্ত বিকেলে ক্যান্টিনে চা আড্ডা দিচ্ছে রঙ্গন, ঋতু৷ সৌরভ, মেঘ৷ দৌড়ে ছোঁয়া ক্যান্টিনে প্রবেশ করে৷ কথা বলতে পারছে না৷ সামনে থাকা গ্লাস থেকে পানি নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিল৷ নিজেকে শান্ত করে বলল,
“তোদের সাথে আমার গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে৷ কিন্তু এখানে বলা যাবে না৷ এমন জায়গায় কথাগুলো বলতে হবে যেন আমাদের পাঁচ জনের মধ্যে এই কথা থাকে৷”
পাঁচ বন্ধু মিলে শিল্পকলা জয়নাল আবেদীন ভবনের দিকে গেল৷ সেদিনটা সবথেকে নিরিবিলি। শুধু প্রেমিকরাই সেদিকে যায় পড়ন্ত বিকেলে। ঘাসের উপর গোল হয়ে বসল৷ ছোঁয়া সবার উদ্দেশ্য বলল,
“আমি খুঁজ পেয়েছি কে ম্যামকে হত্যা করেছে?”
সকলে চকিত হয়ে সমস্বরে বলল,
“কি! কিভাবে খুঁজ পেলি?”
ছোঁয়া নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলল,
“এসব কাজ করেছে তুহিনের ভাই নিবিড়। নিবিড় ঢাকা কলেজের ছাত্র ছিল৷ মাস্টার্স শেষ করে রাজশাহীতে আসে৷ তারপর আমাদের সকলের খুঁজ নেয়৷ সে পিয়ন মামার কাছ থেকে আমাদের ডিপার্টমেন্টের চাবি নিয়ে নকল চাবি বানায়৷ সেসব কাজ তারই৷”
সৌরভ রেগে বলল,
“অনেক হয়েছে? এবার সে নিজেকে কিভাবে বাঁচাবে? আমি তাকে দেখে নিব৷”
মেঘ চোখ রাঙিয়ে বলল,
“সৌরভ তুই কিছু করবি না৷ যা করার আমরা পাঁচজন মিলে করব৷ তার মুখ থেকে সত্যি কথা বের করব৷ তারপর তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিব।”
রঙ্গন মেঘকে থামিয়ে বলল,
“তুই বললি আর নিবিড় নিজের মুখে স্বীকার করে নিল৷ দুনিয়া এত সহজ নয়৷ অনেক কঠিন৷ আমাদের অন্য উপায়ে ভাবতে হবে৷”
ঋতু হুট করেই বলে উঠল,
“আমরা নিবিড়কে কিডন্যাপ করব৷ তারপর তাকে ভয় দেখিয়ে তার মুখ থেকে সত্যি কথা বের করব৷ সবগুলো কথা রেকর্ড করে রাখব৷”
ছোঁয়া আবারও বলল,
“তাকে কিডন্যাপ করা সহজ৷ সৌরভ তুই সন্ধ্যার দিকে তোর বাবার গাড়ি নিয়ে আসবি৷ তোদের পুরাতন গোডাউনে তাকে আটকিয়ে রাখব৷ আর তাকে কিডন্যাপ করা আমার উপর ছেড়ে দে৷ কারণ সে আজ আমায় প্রপোজ করেছে৷ মানে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই প্রপোজ করেছে৷ তাকে অজ্ঞান করার দায়িত্ব আমার৷”
সবাই ছোঁয়ার কথায় মত দিল৷ যে যার মতো চলে গেল৷ সন্ধ্যা সকলে ক্যাম্পাসে এক হলো৷ ছোঁয়া নিবিড়কে ফোন দিয়ে ক্যাম্পাসে আসতে বলে৷ পরিকল্পনা মতো ছোঁয়া সৌরভদের গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ নিবিড় বাইকে করে ছোঁয়ার সামনে নামে৷ ছোঁয়া কিছু বলার আগেই নিবিড় বলল,
“চল তোমায় নিয়ে পদ্মা গার্ডেনে যাই৷”
ছোঁয়া হাসিমুখে বলল,
“হ্যাঁ যাওয়া যায়৷ তবে তোমার বাইকে যাব না৷ আমার গাড়িতে করে যাব৷ ভার্সিটির কেউ তোমার সাথে আমাকে দেখলে খারাপ ভাববে৷ সবাই জানে আমি সিঙ্গেল। তুই বরং গাড়িটা ক্যাম্পাসের ভিতরে রেখে আসো৷ আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি৷”
নিবিড় মাথা নাড়িয়ে চলে গেল৷ ছোঁয়া মনে মনে বলল,
“চান্দু আমাদের ফাঁদে পা দিয়েছো৷ তোমার জীবনে লাল বাতি জ্বলে উঠছে৷”
নিবিড় ছোঁয়ার হাত ধরে গাড়িতে উঠতেই ছোঁয়া চেতনানাশক নিবিড়ের মুখে চেপে ধরে৷ তারপর তাকে নিয়ে সৌরভদের পুরাতন গোডাউনে যায়৷ চেয়ারের সাথে হাত পা বেঁধে নিবিড়ের জ্ঞান ফিরায়৷ জ্ঞান ফিরতেই সৌরভ নিবিড়ের গলা চেপে ধরে বলল,
“আমাদের ম্যামকে কেন খুন করছিস৷ এখন তোকে কে বাঁচাবে?”
নিবিড় মুচকি হেসে বলল,
“আমার চিন্তা না করে তোদের চিন্তা কর৷ তোদের কে বাঁচাবে৷ এতক্ষণে আমার লোক এখানে এসে পড়েছে৷”
রঙ্গন নিবিড়ের মুখে থাপ্পড় দিয়ে বলল,
“আমরা কাঁচা খেলোয়াড় নয়৷ তোর শার্ট, ক্যাম্পাসে শেখ কামাল স্কুলের সামনে যে পুকুর আছে সেখানে তোর ফোন দিছি৷ কেউ ট্যাগ করতে পারবে না৷ ”
এবার নিবিড়ের গলা শুকিয়ে আসল৷ সে ভাবতে পারেনি তারা এমন করবে৷ মেঘ অগ্নি মূর্তির ন্যায় বলল,
“নিবিড় সোনা৷ শুধু তোমাকে নয়৷ তোমার সাথে তোমার মা বাবা এবং তোমার আদরের ছোট বোনকেও কিডন্যাপ করেছি৷ আমাদের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিলে তোকে ছেড়ে দিব৷”
নিবিড় ভয়ে ভয়ে বলল,
“কি জানতে চাস তোরা? আমি তোদের সব বলব৷ তবুও তাদের কিছু করবি না৷”
ঋতু আর ছোঁয়া গোডাউনের বাহিরে রয়েছে৷ কেউ এদিকে আসলে তারা খবর দিবে৷ সৌরভ তার সামনে বসে বলল,
“ছয়টা কুকুর আর ম্যামকে কেন মারলি?”
নিবিড় ভয়ে বলতে শুরু করল৷ রঙ্গন চোখের ইশারায় মেঘকে সব রেকর্ড করতে বলে।
“আমি তোদের মারতাম না৷ তুই আর রঙ্গন আমার ভাই তুহিনকে বাসায় দিয়ে আসছিস৷ কিন্তু ঋতুকে বাঁচিয়ে রাখতান না৷ তার রুপে পাগল হয়ে আমার ভাই মা/রা গেছে। আমি ৬ টা কুকুর হত্যা করে সবাইকে ভয় দেখায়৷ যেন সবাই ভয়ে চলে যায়৷ তাই হলো৷ সবাই চলে গেল৷ আমার উদ্দেশ্য হলো সকল স্যারদের খু*ন করা৷ তাদের কাছে আমার ভাইয়ের কথা জানতে চাইলে তারা বলে রাজনীতি করলে এমন মার খাবেই৷ সেখানে আমাদের কোন হাত নেই৷ তাই একে একে সবাইকে মা-রার পরিকল্পনা করি৷ সবার আগে একটা পিয়নকে হত্যা করি৷ তারপর ছয়টা কুকুর, তারপর ম্যামকে হত্যা করি৷”
নিবিড় আর কিছু বলতে পারল না৷ তার আগেই সৌরভ তার মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দিল৷ সে চাইনা সৌরভ তাদের নাম নিয়ে কিছু বলুক৷ তারপর পুলিশকে ফোন দিয়ে গোডাউনে আসতে বলে৷ পুলিশ এসে সৌরভকে গ্রেফতার করে৷ সৌরভ চলে যাওয়ার সময় বলে উঠল,
“আমি আবার আসব তোদের মাঝে। কাউকে বাঁচতে দিব না৷
চলবে…….
পরীক্ষায় ঝামেলায় লেখা হচ্ছে না৷ এক বা দুই পর্বে শেষ করে দিব৷ গল্প দেওয়ার পরই পরীক্ষার নোটিশ পাই৷