#বর্ষার_প্রণয়ের_কথা
#অন্তিম_পর্ব
#নুর_নবী_হাসান_অধির
নিবিড় গ্রেফতার হওয়ার পর সবাই একসাথে ভার্সিটিতে ফিরে আসে৷ রঙ্গন, ঋতু বাইকে করে চলে যায়৷ সৌরভ ছোঁয়াকে রিক্সায় করে পাঠিয়ে দেয়৷ ভার্সিটির প্যারিস রোড়ে পাশাপাশি হাঁটছে সৌরভ মেঘ। সৌরভ মেঘের গা ঘেষে তার হাত ধরার চেষ্টা করছে৷ অজানা ভয় বাসা বেঁধেছে সৌরভের মনে৷ সে হাত ধরতে গিয়েও ধরতে পারছে না৷ যা দেখে মেঘ মিটিমিটি হাসছে৷ অবশেষে মেঘ সৌরভের হাত ধরে৷ মুচকি হেসে বলল,
“সৌরভের হিরো হাত ধরতেই জিরো৷ সামনে এগিয়ে যাবে কিভাবে?”
কিছুটা ইতস্তত হয়ে বলল,
“আমার মেঘ বালিকা পাশে থাকলে আমি সব করতে পারব৷ এভাবে হাতে হাত রেখে আমার সাথে চলবে তো৷”
“তোর মেঘ বালিকা রাজশাহীতে বিয়ে করবে না৷ এতো দূরে থাকতে চাইনা তোর মেঘ বালিকা। এখানে চান্স না হলে ঢাকায় কোথাও ভর্তি হয়ে যেতাম৷ তোদের রাজশাহী ভালো না৷”
“তোদের ঢাকা খুব ভালো! প্রাণ জুড়িয়ে যায়৷ চোখ জুড়িয়ে যায়৷ তোদের ঢাকা থেকে হাজার গুণ বেশি সুন্দর আমাদের রাজশাহী। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। বসন্ত ঋতু আসতে না আসতেই কবিদের কন্ঠে ছন্দ উঠে৷ তোদের ঢাকায় কোন প্রাকৃতিক পরিবেশ আছে৷”
“তোদের রাজশাহী এতোই সুন্দর তো ঢাকার মেয়ের প্রেমে পড়লি কেন? রাজশাহীর কাউকে বিয়ে করে নিতেই পারিস৷”
“তুই আমার ভালোবাসা৷ আর সব জায়গায় সুন্দর। নিজেকে মানিয়ে নিতে পারলেই স্বর্গীয় সুখ আসে৷”
“তোর সাথে কথা বলার আমার কোন ইচ্ছা নেই৷ আমি বাসায় যাব৷ অনেক রাত হয়ে গেছে৷”
“তুই কোনদিন কি আমার ভালোবাসার সাড়া দিবি না? আমি তোকে কখনও ছেড়ে যাব না৷ আমাকে প্রয়োগ করে দেখে নিতে পারিস৷”
“সেজন্য তোর পরীক্ষা চলছে৷ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তারপর বলব৷ না হলে আমি অন্য কারো হয়ে যাব৷”
_______________
ভোর ছয়টায় মেঘের ফোনের রিংটোন বেজে উঠল। এতো সকালের রিংটোন বাজায় মেজায় গরম হয়ে যায়৷ ফোনের ওয়ালপেপারে ইভা নাম সেভ করা দেখে চকিত হয়ে যায়৷ ইভা কেন এতো সকালে ফোন দিল৷ একবার বেজে কেটে গেল৷ দ্বিতীয় বার বাজতেই কাঁপা কাঁপা হাতে রিসিভ করল৷ মেঘ কিছু বলার আগেই কান্নার স্বর ভেসে আসল। ইভা কান্না করছে কেন? মেঘ জড়তা কাটিয়ে বলল,
“ইভা আপু তুমি কান্না করছো কেন? সব ঠিক আছে৷”
ফোনের অপর পাশ থেকে ভেজা গলায় বলল,
“মেঘ আমায় ক্ষমা করে দিস৷ আমি তোকে ভুল বুঝেছিলাম৷ মাহবুবের চরিত্র ভালো নয়৷ সে রাতে ঠিকমতো বাসায় ফিরে না৷ একদিন রাতে তার লোকেশন ট্যাগ করে একটা হোটেলে যায়৷ যেখানে সে অন্য মেয়ের সাথ..”
ইভা আর কিছু বলতে পারল না৷ তার আগেই কান্নায় ভেঙে পড়ল৷ ইভার কথা মেঘের কানে বারবার প্রতিধ্বনি হচ্ছে৷ কথা আটকে যাচ্ছে৷ তবুও অনেক কষ্টে বলল,
“ইভা আপু তুমি চিন্তা কর না৷ ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে৷”
“মাহবুব ভালো মানুষ নয়৷ আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে৷ আমার গায়ে হাত তুলে৷ তার নামে পুলিশ ক্রেস করি৷ তাকে পুলিশ আজ রাতে ধরে নিয়ে গেছে৷ তারা হাতে নাতে প্রমাণ পেয়েছে৷ টাকার জন্য আমাকে নির্যাতন করছিল৷ এমন সময় পুলিশ ইনকাউন্টারে এসে এসব দেখে গ্রেফতার করে৷ মাহবুবকে আমি ক্ষমা করতে পারব না৷”
“তুমি চিন্তা কর না৷ মাহবুবের মতো লোক এসবের যোগ্য। অনেক মেয়ের জীবন নিয়ে খেলা করছে৷ আজ যদি তুমি তাকে ছেড়ে দাও তাহলে সে আবারও অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করবে৷”
ইভা চোখের জল মুছে বলল,
“না। আমি কিছুতেই মাহবুবকে ক্ষমা করব না৷ তার সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করব৷”
“তুমি যদি না পার আমায় বলবে। আমি তাকে কখনও ক্ষমা করব না৷ আমি তার এমন ব্যবস্থা করব যে অন্য মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারবে না৷”
“আমার উপর ছেড়ে দে মেঘ৷ তার সুন্দর চেহারার জন্য আজ এমন হচ্ছে৷ তার চেহারাও থাকবে না৷ না থাকবে সে৷ তাকে আমি নরকের ঘুরিয়ে আনব৷ মেয়েদের অপমান করা বুঝিয়ে দিব৷ মেঘ আমায় ক্ষমা করে দিস৷”
“তোমার উপর আমার কোন অভিযোগ নেই৷ আজ আমার দিনটা খুব ভালো কাটবে৷ তুমি নিজের জীবন গুছিয়ে নাও৷ তুমি সময়ের আগেই সবকিছু জেনে গেছো৷”
মেঘ ফোন রেখে ভাবনার সাগরে তলিয়ে যায়৷ সে বুঝতে পারে সৌরভ একমাত্র তাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসে৷ মা বাবার পর একমাত্র সৌরভ তার কদর দিতে পারবে৷ ঠোঁটের কোণে যেন ভালোবাসার হাসি ফুটে উঠল।
______________
মেঘ নিজ থেকে সৌরভের পাশের সিটে বসল৷ ক্লাসে সাধারণত মেঘ, ঋতু, ছোঁয়া একসাথে বসে৷ সৌরভ চকিত দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকাল৷ মেঘ মুচকি হেসে বলল,
“অবাক হওয়ার কিছু নেই৷ আমি তোর মেঘ বালিকা৷ সেজন্য তোর পাশে বসেছি৷ তুই বললে উঠে যাব৷”
সৌরভ খুশিতে কথা বলতে পারছে না৷ মেঘ সৌরভের হাতের উপর হাত রেখে বলল,
“আমার একটা কথা রাখবি? আমি তোর কাছে আজ অনেক কিছু চাই।”
সৌরভ মেঘের কথায় ভয় পেয়ে যায়৷ মেঘের জীবন থেকে সরে যেতে বলবে না তো৷ সৌরভ ভয়ে ভয়ে বলল,
“ক্লাস শেষে তোর বাসায় যাব৷ আমায় নিয়ে যাবি তোর বাসায়৷ মিষ্টি সুভা কে খুব মিস করছি৷ তাকে একটু দেখতে চাই৷ বল আমায় নিয়ে যাবি৷”
সৌরভ হাফ ছেড়ে বাঁচল। এতক্ষণ কিনা কি ভেবেছিল৷ সৌরভ জানে মেঘ তার বাসায় গেলে নিশ্চিত তার প্রেমে পড়বে৷ সৌরভের ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি ফুটে উঠল। বিনয়ী স্বরে বলল,
“অবশ্যই মহারানী৷ আপনাকে আমার বাসায় নিয়ে যাব৷ আপনাকে সেখানে শাড়ী পড়ে যেতে হবে৷ এই পোশাকে আপনাকে আমাদের বাড়িতে যেতে দিবে না৷”
“তুই কোনদিন শাড়ী গিফট করছিস? যে শাড়ী পড়ে যাব৷ আগে আমাকে শাড়ী কিনে দে৷ তারপর শাড়ী পড়ে তোর সাথে তোর বাসায় যাব৷ আজ ক্লাস করতে হবে না৷ আজ তুই আমার সাথে সারাদিন থাকবি৷”
সৌরভ কিছু বলতে পারল না৷ একপ্রকার মেঘ টেনে সৌরভকে নিয়ে গেল৷ শপিংমল থেকে মেঘকে নীল রঙের শাড়ী কিনে দিল৷ কাঁচের চুড়ি৷ সাথে কিছু জুয়েলারি। মেঘ বাসায় এসে সুন্দরভাবে সেজে সৌরভের সামনে আসে৷ সৌরভ অপলকভাবে তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে৷ মুখ সামনে এসে বলল,
“এভাবে তাকিয়ে থাকলে আমার নজর লাগবে৷ আমি চাইনা আমার স্বামী ছাড়া অন্য কেউ আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকুক৷ সেজন্য ভার্সিটিতে সাদামাটা হয়ে যেতাম৷ তাই বলে সাজতে পারিনা তাই নয়৷”
“তোকে খুব সুন্দর লাগছে৷ আমার মেঘ বালিকাকে আকাশের নীল পরীর মতো লাগছে৷”
“প্রশংসা হলে চল। আমি তোর গার্লফ্রেন্ড না যে এসব প্রশংসা শুনে গলে যাব৷ আমি ততটাও সুন্দর নয়৷”
“আমার চোখে তুই সবথেকে বেশি সুন্দর।”
“কথা না বাড়িয়ে চল৷”
মেঘ বাইকের পিছনে উঠে সৌরভকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে৷ মনের গহীনে ভালাে লাগা কাজ করল৷ মনের রঙিন প্রজাপতি বলছে ভালোবাসি তোমায়৷
ছয় তলা বিশিষ্ট সৌরভদের বাসা৷ সৌরভরা থাকে তিনতলায়৷ বাকী পাঁচতলায় ভাড়াটিয়া থাকে৷ মেঘকে নিয়ে তাদের বাসায় প্রবেশ করে৷ তিনতলায় গিফটের দরজা খুলতেই বেসে উঠল টাইলস করা মক্কার ছবি৷ দরজার উপরে লেখা, ❝লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।❞ মেঘের খুব ভালো লাগে৷ সুন্দর পরিপাটি করে সাজিয়েছে সৌরভদের বাসা৷ সৌরভের মা’কে মেঘ সালাম দিল৷ সৌরভের মা মেঘকে দেখে বললেন,
“মাশাল্লাহ খুব সুন্দর। তোমাকে কত দেখতে চেয়েছি৷ কিন্তু শয়তানটা তোমাকে দেখতে দেয়নি৷ তোমাকে শুধু ছবিতেই দেখেছি৷ আমার আগে সুভা তোমাকে দেখে নিয়েছে৷ তোমার কথা আমাকে বলছে৷”
মেঘ লজ্জায় কিছু বলতে পারল না৷ মাথা নিচু করে ফেলল৷ মেঘ ভাবতে পারেনি এভাবে তাকে আপন করে নিব। খুশিতে চোখের কোণে পানি চলে আসল৷ মেঘ ঘুরে ঘুরে সমস্ত বাসা দেখল। সৌরভের রুমের দেয়ালে মেঘের ছবি ভর্তি৷ দুপুরের খাবারের পর মেঘ সৌরভের সাথে ছাঁদে আসল৷ সৌরভের মা ছাঁদে কৃষি বান্ধব পরিবেশ বানিয়ে দেখেছে৷ সৌরভ পিছন থেকে মেঘকে জড়িয়ে ধরল৷ মেঘ নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রাগী গলায় বলল,
“আমার ছবি টানিয়ে রাখছিস কেন? তোকে টানানোর সাহস কে দিয়েছে?”
“যাকে ভালোবেসে মনে জায়গা দিছি সেখানে দেয়াল তো সামান্য। তুই দেয়াল থেকে ছবি সরাতে পারবি৷ আমার মন থেকে সরাতে পারবি না৷”
মেঘ সৌরভকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়৷ ভেজা গলায় বলল,
“আমাকে সারাজীবন এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখবি৷ কখনও ছেড়ে গেলে খু ন করব৷”
সৌরভও জড়িয়ে ধরে বলল,
“কখনও তোকে ছেড়ে যাব না৷ ভালোবাসি মেঘ বালিকা।”
কয়েক বছর কেটে যায়৷ আজও মেঘ ভালোবাসার কথা বলেনি৷ তবুও তারা এক ছাঁদের নিচে বসবাস করছে৷
সমাপ্ত …..
ভুল ত্রুটিগুলো মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন। পরীক্ষার জন্য গল্পটাকে শেষ করতে হলো৷ দুঃখিত, ফুটিয়ে তুলতে পারিনি৷