#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা:ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৪
৬.
সকাল থেকেই আকাশে মেঘ জমেছে।অর্ষা বিছানায় শুয়ে শুয়ে গেমস খেলছিলো তখনই রুশান এসে হাজির।অর্ষা ভ্রু কুচকে বিরক্তিকর কন্ঠে বলে,,,
—“এই অসময়ে আমার রুমে কি করছিস তুই”
—“অর্ষা দেখ না বাইরে কতো সুন্দর কালো কালো মেঘ জমেছে,বাতাস বইছে।চল না একটু ঘুরে আসি।একা যেতে ভালো লাগছে নাহ”
অর্ষা জানালা দিয়ে বাইরে তাকায় আসলেই আকাশে ঘন কালো মেঘের ছড়াছড়ি।শীতল বাতাস বইছে।অর্ষার বৃষ্টি আসার আগ মুহুর্তটা বেশ পছন্দের।সে রাজি হয়ে যায়।অর্ষা সাদা নীলের মিশ্রনে চুড়িদার পরে চুল খোলা রেখে, চোখে কাজল পরে,হাতে সাদা নীল চুড়ি পরে বের হয় রুম থেকে।রুশান অর্ষাকে দেখে মাথায় থাপ্পড় মেরে বলে,,,
—“এতো সাজিস না বইন তোর ওই পা’গল স্যারই কপালে আছে।”
অর্ষা রুশানের চুল টেনে ধরে বলে,,,
—“ভালো হইছে।ইরহাম স্যার যদি পাগল হন তাহলে আমিও পা’গলের ডাক্তার কিভাবে তার পাগলামি ঠিক করতে হয় তা খুব ভালো করেই জানি আমি”
রুশান মুখ ভেংচি কেটে বলে,,,
—“ওররররররে আমার ডাক্তার রে হইছে আপনি চোপেন আর চলেন।”
—“কি হলো তোরা কি কোথাও বের হচ্ছিস”
রুশানের আম্মু মৌ রহমান রুশান অর্ষাকে বের হতে দেখে কথাটা বলেন।রুশান ইনোসেন্ট ফেস করে বলে,,,
—“হ্যা আম্মু দেখো না এই অর্ষাটার নাকি এখন ঘুরতে মন চাইছে তাই আরকি একটু ঘুরতে বের হচ্ছি দুজন মিলে।”
মৌ রহমান ভ্রু কুচকে বলেন,,
—“এই দুপুর বেলায় বের হওয়ার প্রয়োজন নেই অর্ষা মা।তুই বরং ছাদে গিয়ে বসে থাক আমি কফি পাঠাচ্ছি।”
অর্ষা কটমট চোখে রুশানের দিকে তাকিয়ে তারপর মৌ রহমানকে জড়িয়ে ধরে আহ্লাদী কন্ঠে বলে,,,
—“ও ছোট মা যাই না প্লিজ দুই ভাই বোন মিলে একটু ঘুরেই আসবো পাক্কা।প্লিজ প্লিজ যাই”
মৌ রহমান হাসেন।মেয়েটাকে বড্ড ভালোবাসেন তিনি।একটা মেয়ের অনেক শখ ছিলো কিন্তু হলো না তার আর।দুটোই ছেলে তার রুশান,রুহান।ছোট বেলা থেকে অর্ষাকে সেই কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে।তাই কোনো আবদার ফেলতে পারে নাহ।অর্ষার কপালে চুমু দিয়ে বলে,,,
—“ঠিক আছে যাবি যা কিন্তু রুশান আমার মেয়ে যেনো ঠিকমতো বাড়ি ফিরে।”
—“হ্যা ও তো তোমারই মেয়ে আমি তো কেউ না।যাও তুমি থাকো তোমার মেয়েকে নিয়ে গেলাম আমি।”
রুশান গাল ফুলিয়ে হনহন করে বের হয়ে যায় বাড়ি থেকে।অর্ষা মৌকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,
—“ধন্যবাদ ছোট আম্মু।শোনো আম্মু আর আব্বুকে একটু সামলে নিয়ো।আমার কিউটি ছোট আম্মুটা।বাই বাই”
অর্ষা দৌড়ে বেরিয়ে যায়।মৌ হেসে বলেন,,,,,
—“পাগলি মেয়েটা আমার”
অর্ষা বাইরে এসে বাইকে উঠতেই রুশান বাইক স্টার্ট দেয়।শীতল বাতাস অর্ষাকে ছুঁয়ে দিচ্ছে।অর্ষা উপভোগ করছে।রুশান শহর থেকে অনেকটা দূরে চলে আসে।গ্রাম্য এলাকা।অর্ষা তো চারপাশের প্রকৃতি উপভোগ করছে।কিছু একটা দেখে চিল্লিয়ে বলে,,,
—“ওই রুশাইন্না বাইক থামমমমমমমমমা”
রুশান ভয়ে আরেকটু হলে গাছের সাথেই মেরে দিতো।বাইক থামাতেই অর্ষা দৌড়ে কোথাও চলে গেলো।রুশান নিজেই নিজের কপাল চাপড়ায় নিজের কাজে।সে কোন দুঃখে যে একে নিয়ে বের হলো।সে তো ভুলেই গিয়েছিলো এই মেয়ের অভ্যাসই উল্টোপাল্টা কাজ করা।
রুশান দৌড়ে অর্ষার কাছে চলে আসলো।অর্ষাকে বাচ্চাদের সাথে মজা করতে দেখে স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে।ছোট ছোট বাচ্চারা নদীতে মাছ ধরছে।লাফালাফি ও করছে।অর্ষার ভীষণ ইচ্ছে হয় ওদের সাথে তাই নিজেও নেমে পরে মাছ ধরতে।বাতাস এসে অর্ষার খোলা চুলগুলো উড়িয়ে দিচ্ছে।
কিছুক্ষণ মাছ ধরার পর নদীর কিনারে বসে পরে অর্ষা।রুশানও পাশে এসে বসে পরে।অর্ষা কিছুসময় বিশ্রাম নিয়ে ধানক্ষেতের কাছে আসে।বাতাসে ধানগুলো মিইয়ে পরছে।অর্ষা দৌড়াদৌড়ি করছে সাথে রুশানও।তারপর দুজন আবার কিছুক্ষণ বসে।ছোট ছেলে মেয়েদের কাছ থেকে জানতে পারে সামনে কিছুদূরে মেলা বসেছে।
অর্ষা লাফাতে লাফাতে রুশানকে বলে,,
—“রুশাইন্না চল চল মেলা থেকে ঘুরে আসি।অনেকগুলো চুড়ি কিনবো চল না”
—“তোর না ঝুড়ি ঝুড়ি চুড়ি আছে তুই আবারও চুড়ি কিনবি।এতো চুড়ি দিয়ে করবিটা কি তুই”
রুশান বেশ বিরক্ত হয়েই কথাটা বলে।চুড়ি ছাড়া এক মিনিটও চলতে পারে না এই মেয়ে।এতো চুড়ি পছন্দ,মাঝে মাঝে রুশান চুড়ি কেনার ঠেলায় বিরক্ত হয়ে যায়।অর্ষা রুশানের কথা শুনে ওকে কিল মেরে বলে,,,
—“আমার চুড়ি লাগবে তাও ওই মেলার চুড়ি না নিয়ে গেলে থাক আমিই যাচ্ছি।”
অর্ষা রাগ করে হাঁটা দেয়।রুশান হতাশ হয়।বাইক নিয়ে অর্ষার কাছে এসে বলে,,,
—“ওঠ হুট করে বৃষ্টি আসতে পারে তোকে মেলায় ঘুরিয়ে সোজা বাড়ি যাবো।”
অর্ষা আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে আসলেই আকাশের অবস্থা তেমন ভালো না।সে উঠে বসে।রুশান যেই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে তা এতো সুন্দর যা অর্ষা বলে বোঝাতে পারবে না।বিলের মাঝে রাস্তাটা।আকাশে কালো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে।বিলের ভেতরে নৌকা নিয়ে অনেকে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
অর্ষা মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে দেখে সব।তার ইচ্ছে করছে প্রকৃতির মাঝেই ডুব দিতে।গ্রামটা এতো সুন্দর।যেই অর্ষা সব কিছু ছবি তুলে ফোনে স্মৃতি হিসাবে রেখে দেয় সেও আজ গ্রামের অপরূপ সৌন্দর্যে হারিয়ে আছে।
মেলার সামনে এসে দুজন নেমে ভেতরে ঢোকে।রুশান অর্ষার হাত ধরে নেয়।মাঝে মাঝে সে ভাবে অর্ষা বড় হলেও সেই অর্ষাকে বড় ভাইয়ের মতো আগলে রেখেছে।দু’জন মেলায় কিছুক্ষণ ঘুরে অর্ষা চুড়ির দোকানে ঢুকে।লাল,গোলাপী,কালো,হলুদ,সবুজ রঙের ৫ জোড়া চুড়ি কিনে নেয়।
রুশান বিরক্ত হয়।কিছু বলতেও পারবে না।কিছু বলতে গেলেই মাইর ফ্রি।অর্ষা চুড়ি কিনতে পেরে বেশ খুশি তা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।দু ভাই বোন কিছুক্ষণ মেলায় ঘুরে বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হয়।
৭.
ইরহাম ছুটির দিনে নিজে একা বের হয় ঘুরতে।শুক্রবার দিনটায় সে নিজের প্রিয় জায়গায় যায়।জ্যামে আটকে থাকার কারণে গাড়িতে বসে বিরক্ত হচ্ছিল ইরহাম।বিরক্ত নিয়ে বাইরে তাকাতেই বিরক্ত হাওয়া হয়ে একরাশ মুগ্ধতা আর ভালো লাগা ভীর করে মনের আঙ্গিনায়।ইরহাম দূরে চুল খোলা এক নারীর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
ইরহামের অদ্ভুত এক অনুভুতি হয়।মেয়েটা পেছনে ফিরে একটা ছোট মেয়ের সাথে কথা বলছে চুলগুলো বাতাসে উড়ছে।হাত নাড়ানোর ফলে চুড়িগুলোও নড়ছে।মুখে মাস্ক পরার কারণে চোখ গুলো কয়েক সেকেন্ড দেখার সৌভাগ্য হয় ইরহামের।ভালো করে দেখবে তার আগেই গাড়ি চলতে শুরু করে।
—“আগে তো এমন অনুভূতি হয়নি।কে তুমি মেয়ে!এক দেখাতেই আমার হৃদয়ে ঝড় তুলে দিলে মেয়ে তুমি”
চলবে~