অনুরাগের_প্রহর #মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি #পর্ব_০২

0
437

#অনুরাগের_প্রহর
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০২
_________________
-“তারপরেও না আসলে পারতেন।”

-“আমি আসায় কি আপনি বিরক্ত হয়েছেন?”

-“বিরক্ত হওয়ার তো কিছু নেই।”

শেহরেয়ার ড্রাইভ করতে করতে মেহরিনের দিকে এক পলক চোখ বুলিয়ে বললো,

-“চুলগুলো খুলে রাখলে আরো বেশি সুন্দর লাগলো।”

মেহরিন শেহরেয়ারের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,

-“আমি স্টুডেন্ট হিসেবে না ম্যাডাম হিসেবে যাচ্ছি।”

-“কিন্তু আপনাকে স্টুডেন্টদের থেকেও ছোট লাগছে।”

মেহরিন চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে শেহরেয়ারের দিকে।শেহরেয়ার আড়চোখে দেখে মুচকি হেসে বললো,

-“এতো চিকন কেনো আপনি?খাওয়া-দাওয়া করেন না?”

-“দেখেন আপনি এখন এইসব বলে আমার মনোযোগ নষ্ট করবেন না।”

-“সত্যি কথা বললে সবারই গায়ে লাগে।”

মেহরিন চোখ রাঙিয়ে শেহরেয়ারের দিকে তাকিয়ে আছে।যা দেখে শেহরেয়ার হেসে দিল।

ভার্সিটির সামনে গিয়ে শেহরেয়ার গাড়ি থামালো।গাড়ি থেকে নেমে মেহরিন বললো,

-“ধন্যবাদ।”

-“হবু বরকেও কেউ ধন্যবাদ দেয়?”

মেহরিন আর কিছু না বলে চলে যেতে গেলে শেহরেয়ার বললো,

-“আমি কিন্তু এখানে আপনার জন্য অপেক্ষা করবো।”

মেহরিন আবার গাড়ির কাছে ফিরে এসে বললো,

-“দরকার নেই।আমি চলে যেতে পারবো।”

-“আমি তো আপনাকে জিজ্ঞেস করেনি।আমি আসবো সেটা জানিয়েছি মাত্র।”

মেহরিন আর কিছু না বলে হেঁটে চলে গেল।শেহরেয়ার মুচকি হেসে গাড়ি স্টার্ট করলো।

____________________
অন্ধকারাচ্ছন্ন রুমে একটি ছেলেকে হাত-পা-চোখ-মুখ বেঁধে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়েছে।সে মুখ দিয়ে গোঙাচ্ছে।এ ছাড়া তার আর কিছু করার নেই।দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করলো এক ব্যক্তি।সে এসে ছেলেটির সামনে বসে বললো,

-“কেমন লাগছে মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড?”

ব্যক্তিটিকে দেখার সাথে সাথে ছেলেটির গোঙানি আরো বেড়ে গেলো।ব্যক্তিটি ইশারা করায় পাশে থেকে একটি লোক এসে ছেলেটির মুখের থেকে কাপড়টি খুলে দিল।

-“প্লিজ শেহরেয়ার,আমাকে ছেড়ে দে।আমি আর এমনটা কখনোই করবো না।”

শেহরেয়ার উচ্চস্বরে হেসে দিল।আচমকা হাসি থামিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

-“কিন্তু তুই এমনটা করেছিস।”

-“মানুষ মাত্রই তো ভুল হয়।শেষবারের মতো সুযোগ দে আমাকে।”

শেহরেয়ার ঠা*স করে ছেলেটির গালে একটা থা*প্পড় মেরে বললো,

-“ও কি ক্ষতি করে ছিল?ওর সাথে এমনটা করতে একবারও তোর বুক কাঁপল না!”

ছেলেটি গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে।নোমান এসে শেহরেয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

-“স্যার আপনি বললে ও-কে এখনি শেষ করে দেই।”

-“নাহ্।নোমান তুমি ভালো করেই জানো আমি প্রাণ নিতে পছন্দ করিনা।কারণ কাউকে প্রাণ দেওয়ার সাধ্য আমার নেই।আমার কাজ শুধু সঠিক পথে আনা।যদি সঠিক পথে না আসে তাহলে…………”

এটুকু বলে থেমে গেল শেহরেয়ার।তারপরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

-“এক ভুল আমি বারবার করতে চাই না।”

আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে সেখান থেকে বের হয়ে আসলো শেহরেয়ার।তার চোখের কোণে বিন্দু পানি জমে আছে।সে তা মুছে নিজেকে সামলে নিল।তারপরে হাসি মুখে গাড়ি স্টার্ট করে ‘মির্জা ইন্ডাস্ট্রি’র দিকে গেল।

__________________
-“দেখুন আপনার মেয়ের সাথে আমি আমার ছেলের বিয়ে দিতে চাই না।”

হেনা সাহেবার কথায় অবাক হলো রিয়াজুল রাহমান।কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,

-“কিন্তু শেহরেয়ার তো বিয়েটা করতে রাজি হয়েছে।”

-“ওর কথা বাদ দেন।ও এতো কিছু বুঝে নাকি!নাহলে কখনোই এমন চরিত্র*হীনা মেয়েকে বিয়ে করতে চাইতো না।”

রিয়াজুল রাহমান এবার বেশ চটে গেলেন।তাও ভদ্রতা বজায় রেখে বললেন,

-“আপনাকে কে বলেছে আমার মেয়ে চরিত্র*হীনা?না জেনেশুনে মন্তব্য করবেন না।”

-“চরিত্র*হীনা না হলে বিয়ে ছাড়া বাচ্চা হয় কি করে?”

-“সেটা আমি আপনার মতো মহিলাকে বলার প্রয়োজন বোধ করছি না।আপনি এই মুহুর্তে আমার বাড়ি থেকে চলে যান।আর আপনি কি বিয়ে দিবেন না!আমিই আমার মেয়েকে আপনার ছেলের সাথে বিয়ে দেবো না।”

-“মেয়ে এইসব করে বেড়ায় আর বাপের ভাব দেখো!”

কথাগুলো বলে পান চিবাতে চিবাতে হনহন করে হেঁটে মেহরিনদের বাড়ি থেকে চলে গেলেন হেনা সাহেবা।হেনা সাহেবা চলে যেতে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন রিয়াজুল রাহমান।

_________________
-জানো মনি আজকে আমাকে সামিদ মেরে*ছে।”

রায়ানের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকালো মুনিয়া।রায়ানের পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে বললো,

-“লাগেনি তো কোথাও তোর?”

-“আরে না!আমি ছেড়ে দিয়েছি নাকি?আমিও তো মে*রে এসেছি।”

-“সাব্বাশ বেটা।”

মুনিয়া রায়ানের হাত ধরে হাঁটছে আর গল্প করছে।হঠাৎ করে তাদের সামনে এসে একটা গাড়ি থামলো।ঠিক সময়ে ব্রেক না কষলে মুনিয়া আর রায়ানের সাংঘাতিক এক্সিডেন্ট হয়ে যেতো।হামিদ গাড়ি থেকে নেমে তড়িঘড়ি করে তাদের কাছে আসলো।মুনিয়া চোখ রাঙিয়ে বললো,

-“দেখে গাড়ি চালাতে পারেন না?রাস্তা রেখে আউটসাইড দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন কেনো?”

-“সরি!আসলে মোবাইলে কথা বলতে বলতে কখন যে আউটসাইডে চলে এসেছি খেয়াল করতে পারিনি!”

-“গাড়িতে বসে এতো প্রেম করা লাগবে কিসের জন্য?”

-“এক্সকিউজ মি।কে গাড়িতে বসে প্রেম করছিল?”

-“আপনি ছাড়া আবার কে!নাহলে আবার কেউ ড্রাইভ করতে করতে মেবাইলে কথা বলে নাকি?”

-“আমি একটা জরুরি কাজ নিয়ে আলোচনা করছিলাম।এইসব প্রেম করার টাইম নেই আমার।”

মুনিয়া হামিদকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বললো,

-“আপনাকে দেখতেই তো গোমড়ামুখো,আপনার সাথে এমনিও কোনো মেয়ে প্রেম করবে না।”

হামিদ চোখ রাঙিয়ে মুনিয়ার দিকে তাকালো।মুনিয়া ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে রায়ানের হাত ধরে সেখান থেকে চলে গেল।

__________________
মেহরিন ভার্সিটি থেকে বের হয়ে দেখলো শেহরেয়ার গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,

-“আপনি সেই আসলেন?”

-“কেনো আপনি কি ভেবেছিলেন আমি এমনিই বলে গিয়েছি?”

মেহরিন আর কিছু বললো না।শেহরেয়ার গাড়ির দরজা খুলে দিতে গেলে মেহরিন বললো,

-“আমি পারবো তো!আমি তো আর বাচ্চা না।”

শেহরেয়ার দরজা খুলে দিয়ে বললো,

-“আপনি তো বাচ্চাই।”

মেহরিন চোখ রাঙিয়ে শেহরেয়ারের দিকে তাকালো।

-“আচ্ছা এরপরে থেকে আপনি নিজে খুলে নিয়েন।”

শেহরেয়ার গাড়িতে উঠে বসলো।মেহরিনও তার সাথে উঠে বসলো।শেহরেয়ার গাড়ি স্টার্ট করে বললো,

-“তা প্রথম দিন ম্যাডাম হিসেবে কেমন কাটলো?”

-“অনেক ভালো।আমি খুবই এনজয় করেছি।”

-“আপনার মতো শিশুকে সবাই ম্যাডাম বলে মেনে নিলো?”

-“দেখুন আপনি কিন্তু সকাল থেকে এইসব বলে আমাকে ইনসাল্ট করে চলেছেন।”

মেহরিনের কথায় মুচকি হাসলো শেহরেয়ার।মেহরিন গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো।কিছুক্ষণ পরে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামালো শেহরেয়ার।গাড়ি থেকে নেমে বললো,

-“গাড়ি থেকে কি নিজেই নামবেন নাকি আমি কোলে করে নামাবো?”

মেহরিন গাড়ি থেকে নেমে বললো,

-“এখানে গাড়ি থামালেন কেনো?”

-“বিকেল হয়ে গেছে প্রায়।কিছু খাওয়া হয়েছে আপনার?”

মেহরিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

-“নাহ্!”

-“আমিও কিছু খাইনি।চলুন দুজনে একসাথে লাঞ্চ…..এটুকু বলে থামলো শেহরেয়ার।ভাবান্নিত ভঙ্গিতে বললো,

-“এটাকে তো লাঞ্চ বলা যায় না।যাই হোক কিছু একটা তো হবে।”

শেহরেয়ারের কথায় মুচকি হাসলো মেহরিন।খাবার অর্ডার দিয়ে বসে আছে দুজনে।

-“ভার্সিটিতে তো ক্যান্টিন আছে।তাহলে আপনি লাঞ্চ করেননি কেনো?”

-“অফিসেও তো ক্যান্টিন আছে।তাহলে আপনি কেনো লাঞ্চ করেননি?”

মেহরিনের কথায় মুচকি হেসে শেহরেয়ার বললো,

-“আপনি আসলেই অনেক চালাক।”

-“হ্যাঁ।আর আমি সেটা জানিও।”

দুজনে একসাথে হেসে দিল।

___________________
সন্ধ্যা নেমে এসেছে চারিদিকে।মাগরিবের নামাজ পড়ে এসে রিয়াজুল রাহমান দেখলেন মেহরিন রায়ানের সথে খেলছে।তিনি ধীর পায়ে মেহরিনের দিকে এগিয়ে গেলেন।রিয়াজুল সাহেবকে দেখে মেহরিন বললো,

-“বাবা তুমি এসেছো!তোমার ছোট মেয়ে সবার জন্য পিজ্জা বানিয়েছে।চলো গিয়ে টেস্ট করে দেখি।”

-“মা তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।”

মেহরিন এতোক্ষণে খেয়াল করলো রিয়াজুল রাহমান বেশ চিন্তায় আছেন।

-“কি হয়েছে বাবা?”

রিয়াজুল রাহমান দীর্ঘশ্বাস ফেলে সব ঘটনা মেহরিনকে বললেন।মেহরিন সবকিছু শুনে থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সে নিজেকে সামলে বললো,

-“কিন্তু আজকে বিকেলেও তো আমি আর শেহরেয়ার একসাথে লাঞ্চ করলাম।কই উনি তো আমাকে কিছু বললেননি!”

-“আমি এতোকিছু জানি না।তোর সাথে শেহরেয়ারের বিয়ে আমি দিবো না।তাই ওর থেকে দূরত্ব রেখে চল।”

#চলবে____

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here