#অনুরাগের_প্রহর
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০৭
_________________
শেহরেয়ার যে তার হাত জোড়া ধরে আছে সেই দিকে সে ভ্রু উঁচিয়ে তাকালো।শেহরেয়ারের এমন প্রশ্নে শুনে সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-“হঠাৎ এই কথা বলার কারণ?”
শেহরেয়ার মেহরিনের হাত জোড়া ছেড়ে দিল।সে বুঝতে পারলো এতে মেহরিন অস্বস্তিতে পড়েছে।
-“মা বিয়েটা করাতে চায় না সেটা তো জানেনই।আর আমি যদি বিয়ে করি আপনাকেই করবো।তাই আজকে করা আর এক সপ্তাহ পরে করার মধ্যে কি পার্থক্য?”
-“আপনার মা যখন চায় না তখন………..”
মেহরিনের কথা শেষ হওয়ার আগেই শেহরেয়ার বললো,
-“মেহরিন আমি এই কথা শুনতে চাই না।আচ্ছা একটা জিনিস বলেন আপনি কি আমাকে বিয়ে করতে রাজি আছেন?”
-“হ্যাঁ আমি রাজি আছি।তবে এভাবে বিয়ে করবেন!”
-“বেঁচে থাকলে পরে অনুষ্ঠান করে বিয়ে করতে পারবো।আপাতত কাজী অফিসে চলুন।আজই আমরা বিয়ে করবো।”
-“কি বলছেন আপনি এইসব?”
-“দেখুন আপনি যদি এভাবে বিয়ে করতে বারণ করেন তাহলে আমাদের বিয়েটা আর হবে না।কারণ মা এই বিয়েতে রাজিও হবে না।আর আমাদের বিয়েটাও ভেঙে যাবে!”
মেহরিন কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো।মেহরিনকে চুপ থাকতে দেখে শেহরেয়ার বললো,
-“কি করবেন বলুন।”
-“আচ্ছা চুলন।”
শেহরেয়ার মেহরিনকে নিয়ে কাজী অফিসের দিকে রওয়ানা হলো।পথে হামিদ আর রিয়াদকে স্বাক্ষী হিসেবে আসতে বলেছে।
কবুল বলার মাঝে দিয়ে দুজনের বিয়ে সম্পূর্ণ হলো।মেহরিন শাড়ির আঁচল আঙুল দিয়ে প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে ভাবছে-
-“কি হবে এখন?আদোও কি শেহরেয়ারের মা আমাকে মেনে নিবে?”
শেহরেয়ার এসে মেহরিনের কাঁধে হাত রাখলো।মেহরিন শেহরেয়ারের দিকে তাকাতে সে মৃদু হাসলো।তবে শেহরেয়ারকে দেখে কেনো যেন মেহরিনের আজ মনে হচ্ছে সে ভালো নেই!প্রতিদিনের মতো তার মুখে আজ প্রাণ খোলা হাসিটা নেই।
মেহরিন হালকা কেশে বললো,
-“আপনার কি কিছু হয়েছে শেহরেয়ার?”
শেহরেয়ার কিছু বলার আগে সেখানে হামিদ আর রিয়াদ আসলো।
-“তোদের দুজনকে অনেক থ্যাংকস।বাবাকে বলতাম তবে আজকে তার যা মনের অবস্থা!”
হামিদ চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো,
-“রিয়াজুল আঙ্কেলকে তো জানাতে পারতি!”
-“আমার শ্বশুর মশাইকে সারপ্রাইজ দিব।”
রিয়াদ হাসি দিয়ে বললো,
-“আচ্ছা তোরা যা সারপ্রাইজ দিতে।আমার একটু কাজ আছে।আমার এখন যেতে হবে।”
শেহরেয়ার রিয়াদকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“সবটা যেন ঠিকঠাক হয় ভাই।”
-“তোর কোনো চিন্তা নেই।”
রিয়াদ চলে গেল।রিয়াদ চলে যেতে হামিদ বললো,
-“ওকে তোরা তাহলে যা।”
-“তুই চল আমাদের সাথে।”
মেহরিন মৃদু হেসে বললো,
-“হ্যাঁ ভাই চলুন আপনি।”
-“পরে একদিন যাবো ভাবি।আজ রাতে আমার একটা মিটিং আছে।”
হামিদকে বিদায় জানিয়ে শেহরেয়ার আর মেহরিন গাড়িতে উঠলো।গাড়ি স্টার্ট করার আগে মেহরিন বললো,
-“আপনি কিন্তু আমাকে বললেন না আপনার কি হয়েছে শেহরেয়ার!”
শেহরেয়ার এক পলক মেহরিনের দিকে তাকিয়ে বাড়িতে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা মেহরিনকে বললো।সবটা শুনে মেহরিন অবাক হয়ে বললো,
-“আপনার বোন ছিল?আর এই রাজটাই বা কে?বাড়ির এই অবস্থা তার মধ্যে আপনি আমাকে বিয়ে করলেন?”
মেহরিনের প্রশ্নগুলো শুনে নিঃশব্দে হেসে শেহরেয়ার বললো,
-“একসাথে এতো প্রশ্ন?”
মেহরিন কিউরিওসিটি দেখিয়ে বললো,
-“একটা একটা করে উত্তর দেন।”
-“হ্যাঁ আমার বোন ছিল।ওর নাম ছিল হাফসা।সে আমার থেকে থেকে পাঁচ বছরের ছোট ছিল।আর রাজ হলো আমার বাবা-মায়ের পালিত সন্তান(সত্যটা আপনাকে পরে জানাবো)।ওই রাজের লোভের জন্য আমার ছোট্ট বোনের প্রাণটা গেল!আর বাড়ির পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন,আপনাকে বিয়ে করে নিয়ে গেলে মা বাদে বাকি সবাই খুশি হবে।”
চোখের কোণে পানি থাকা সত্ত্বেও মুখে হাসি নিয়ে শেহরেয়ার মেহরিনের দিকে তাকালো।মেহরিনের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
-“কাঁদবেন না।এই কাজল কালো চোখে কান্না মানায় না।শুধু চোখে নয় আপনার এই মুখশ্রীতেই কান্না বড় বেমানান।এই মুখশ্রীর জন্য হাসিই শ্রেয়।”
কথাগুলো বলে শেহরেয়ার গাড়ি স্টার্ট করলো।দুজনের মাঝে নিরবতা।নিরবতা ভেঙে শেহরেয়ার বললো,
-“কি বলবেন খুঁজে পাচ্ছেন না নাকি?”
-“কিছু কি বলার থাকতে পারে আমার?”
-“নিজের বরের কাছে কিছু বলার নেই?”
শেহরেয়ারের প্রশ্নের কোনো উত্তর দিল না মেহরিন।সে গাড়ির জানালার বাইরে তাকালো।যা দেখে শোহরেয়ার মৃদু হেসে বললো,
-“লজ্জা পেলেন নাকি?”
-“এতো কথা না বলে ঠিকভাবে গাড়ি চালান।নাহলে এক্সিডেন্ট করবেন!”
-“আপনার মতো সুন্দরী মেয়ে পাশে থাকলে এক্সিডেন্ট হওয়া অসম্ভব কিছু না!”
মেহরিন চোখ রাঙিয়ে বললো,
-“চুপ করবেন আপনি?”
-“আচ্ছা চুপ করলাম।”
শেহরেয়ার মেহরিনদের বাড়ির সামনে গিয়ে গাড়ি থামালো।রিয়াজুল রাহমান শেহরেয়ারের মুখ থেকে সবটা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন।
-“এভাবে বিয়ে করার কি দরকার ছিল বাবা?”
-“এমনটা করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না আঙ্ক না মানে শ্বশুর মশাই।আমি আজই মেহরিন আর রায়ানকে নিয়ে যেতে চাই।”
রিয়াজুল রাহমান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“তোমার ইচ্ছা।আমার তো এখন আর কিছু বলার নেই।”
শেহরেয়ার রিয়াজুল রাহমানের হাত ধরে বললো,
-“চিন্তা করবেন না শ্বশুর মশাই।আপনার মেয়েকে আমি সবসময় ভালো রাখার চেষ্টা করবো!”
মেহরিন রুমে গিয়ে তার আর রায়ানের সব জিনিস গুছাচ্ছে।মুনিয়া গিয়ে মেহরিনকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“আপু তোদের অনেক মিস করবো।”
মেহরিন মুনিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“আমিও তোকে অনেক মিস করবো মুনি।আমার একমাত্র ছোট বোন বলে কথা!”
শেহরেয়ার মেহরিনের রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সবটা শুনে দরজায় কড়া নাড়লো।মেহরিন আর মুনিয়া একে অপরকে ছেড়ে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো শেহরেয়ার দাঁড়িয়ে আছে।মুনিয়া কিছুটা এগিয়ে গিয়ে বললো,
-“ভাইয়া ভিতরে আসুন।”
শেহরেয়ার রুমের ভিতরে ঢুকে মৃদু হেসে মুনিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
-“মুনিয়া তুমি শুধু মেহরিনের না আমারও ছোট বোন।তাই তোমার যখন ইচ্ছা হবে তখনই তুমি আমাদের বাড়িতে চলে আসবে।”
শেহরেয়ারের কথায় মুনিয়ার মুখে হাসি ফুটলো।
__________________
-“আপনি কি এই সদর দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে থাকতে চান মেহরিন?”
-“দেখুন আপনাদের বাড়ির কেউ জানে না আমাদের বিয়ের বিষয়ে।আমার কিছুটা ভয় লাগছে!”
-“এতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই।আমি আছি আপনার পাশে।”
শেহরেয়ার’ মেহরিন আর রায়ানের হাত ধরে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো।হেনা সাহেবা বসে বসে পান চিবাচ্ছেন।হঠাৎ তাদের দেখে তিনি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন।অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
-“ওরা এখানে কেনো?”
-“আমি মেহরিনকে বিয়ে করেছি মা।”
শেহরেয়ারের কথায় চমকে উঠলেন হেনা সাহেবা।তিনি অগ্নি দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছেন।শেহমীর মির্জা সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় শেহরেয়ারের কথা শুনতে পেলেন।তিনি হাত তালি দিয়ে বললেন,
-“বাহ্!এই না হলে আমার ছেলে।”
শেহরেয়ার আর মেহরিন গিয়ে শেহমীর মির্জাকে সালাম করলেন।শেহমীর মির্জা মেহরিনের মাথায় হাত রেখে বললেন,
-“দোয়া করি মা তোমরা যেন সুখি হও।আজ এতো দুঃখের দিনে এই সুখের দেখা পেলাম।”
শেহরেয়ার আর মেহরিন’ হেনা সাহেবার দিকে যেতে গেলে তিনি সেখান থেকে চলে গেলেন।শেহমীর মির্জা এসে শেহরেয়ারের কাঁধে হাত রাখলো।শেহরেয়ার মৃদু হেসে বললো,
-“এটা তো আমার জানাই ছিল।তা দিদুন কোথায়?”
-“ঘুমিয়ে পড়েছে তোর দিদুন।মায়ের শরীরটা একটু খারাপ!”
-“কেনো কি হয়েছে বাবা?”
-“আজ এতোকিছু শুনে একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।ডাক্তার এসে দেখে গেছে।”
-“আমি গিয়ে তাহলে দেখা করে আসি।”
-“আজকে আর দেখা করতে হবে না।একেবারে কাল সকালে দেখা করিস।”
শোহরেয়ার মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।শেহমীর মির্জা রায়ানের কাছে গিয়ে মাথা হেলিয়ে বললেন,
-“কেমন আছো সোনা ভাই?”
-“আমি ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন?”
-“আপনি না তুমি!”
শেহমীর মির্জা রায়ানকে কোলে তুলে নিয়ে গালে একটা চুমু দিলেন।মেহরিনের মুখে হাসি ফুটলো।মেহরিনের মুখে হাসি দেখে শেহরেয়ার আস্তে করে বললো,
-“ভালো লাগছে?”
-“হ্যাঁ।আপনার বাবা যে মেনে নিয়েছে এতেই আমি খুশি।”
-“আমার বাবা আপনার কি হয়?”
মেহরিন মুচকি হেসে বললো,
-“শ্বশুর মশাই।”
দুজনে নিঃশব্দে হেসে দিল।শেহমীর মির্জা তাদের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“অনেক রাত হয়েছে।আমার সোনা ভাইকে নিয়ে তোমরা খেয়ে নেও।”
-“বাবা আমরা খেয়ে এসেছি।তোমরা সবাই খেয়েছো?”
-“হ্যাঁ আমাদের খাওয়া শেষ।তাহলে যা ঘুমিয়ে পড়।আর রাত করিস না।”
শেহরেয়ার মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।শেহমীর মির্জা উনার রুমের দিকে চলে গেলেন।শেহরেয়ার’ মেহরিন আর রায়ানকে তার রুমে নিয়ে আসলো।রুমে আসতেই ঘুমিয়ে গেল রায়ান।তাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখছে মেহরিন।শেহরেয়ার মুচকি হেসে বললো,
-“রুমটা কেমন লাগলো?”
-“সুন্দরই।তবে অগোছালো।”
শেহরেয়ার মেহরিনের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
-“এতোদিন তো গোছানোর মানুষ ছিল না।কিন্তু আজ তো সে চলে এসেছে।”
মেহরিন মৃদু হেসে ওয়াশরুমের দিকে যেতে গেলে শেহরেয়ার তার হাত টেনে ধরলো।মেহরিন ভ্রু উঁচিয়ে পিছনে ঘুরে তাকালো।শেহরেয়ার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“কখনো ছেড়ে যাবেন না তো আমায়?”
মেহরিন শেহরেয়ারের সামনে এসে দাঁড়িয়ে তার হাতটা শক্ত করে ধরে বললো,
-“এই জীবন থাকতে যাবো না।”
মেহরিনের কথায় শেহরেয়ারের মুখে হাসি ফুটলো।
#চলবে____
[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]