প্রনয়ের_দহন #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_৩

0
1086

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৩

তীর বাড়িতে ডুকার সাথে সাথেই ওর মা আয়েশা সুলতানা বলে,

–কিরে এত তাড়াতাড়ি চলে এলি যে?

তীর হালকা চিৎকার করে,

–সেটা তোমার আদরের ইশানকে জিঙ্গাস করো গিয়ে কেন তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দিয়েছে।

–তুই এভাবে কথা বলছিস কেন তীর?

–মা ভালো লাগছে না কথা বলতে আমার, আমি উপরে গেলাম।

–কিছু খাবি বানিয়ে দিবো।

–না খাবো না। যে বকা খেয়ে এসেছি সেই বকা খেয়ে পেট ভরে গেছে আমার।

আয়েশা সুলতানা কিছু বলতে যাবে তার আগেই পিচ্চি অভি এসে বলে,

–আপু চকলেট খাবে।

তীর অভির হাতে চার-পাঁচ চকলেট দেখে কিছুটা খুশি হয়ে যায়। তীরর চকলেট ভীষন প্রিয়। কিন্তু পরক্ষনেই ভ্রু কুচকে বলে,

–এত চকলেট কে দিলো তকে বাবা তো কিনে দিবে না নিশ্চিত তাহলে কে দিলো তকে?

–ইশান ভাইয়া দিয়েছে।

ইশানের নামটা শুনে তীরর মেজাজটা আবার গেল গরম হয়ে রেগে অভিকে বলে,

–তর চকলেট তুই খা। ওই হিটলার বেডার দেওয়া কিছু জিনিস আমি খেতে চাই না।

বলে ধপধপ পায়ে সিড়ি বেয়ে নিজের ঘরে চলে যায় আর পিচ্চি অভি আবাক চোখে বোনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। এই চকলেটের জন্য কত ঝগড়া করে ও অভির সাথে আর আজকে অভি নিজে এসেছে বলেছে চকলেট খাবে কি না আর ওর আপু চকলেট না নিয়েই চলে গেলো। অভি ঠোট উল্টিয়ে মার উদ্দেশ্যে বলে,

–মা আপু কি রেগে আছে আমার উপর।

–কি জানি। হোমওর্য়াক শেষ করেছিস?

–না।

–তাড়াতাড়ি শেষ কর গিয়ে। আর সব চকলেট এক সাথে খাবি না বুঝলি।

–আচ্ছা।

অভি নাচতে নাচতে ঘরে চলে যায়। ভীষন খুশি ও আজকে চকলেট পেয়ে। ইশান ভাইয়া ওকে খুব আদর করে। ও যা চায় তাই দেয়। তার জন্য অভিও ইশান বলতে পাগল।

আয়েশা সুলতানা রান্না ঘরে ডুকতে যাবে তখনেই ওনার শাশুড়ি শাপলা বেগম বলে,

–বউ মা তোমার সাথে একটা কথা ছিলো!

শাশুড়ি মায়ের কথা শুনে আয়েশা সুলতানা শাশুড়ি মায়ের সামনে গিয়ে বলে,

–কি কথা আম্মা?

–আসলে আমি ভাবতেছিলাম যদি তীর আর ই……

বলেই থেমে যান। শাশুড়ি মায়ের কথা মাঝ পথে থেমে যাওয়াতে আয়েশা সুলতানা বলেন,

–কি হলো আম্মা বলুন?

–আজ কথাটা বলা ঠিক হবে না সময় আসুক তখন বলবো।

–আচ্ছা আম্মা।

আয়েশা সুলতানা কথাটা বলেই রান্না ঘরে যাওয়ার উদ্দেশ্য পা বাড়ালেন। আয়েশা সুলতানা শাশুড়ি মায়ের কথা বুঝতে পারে নাই তেমনটা না। ওনি ঠিকেই বুঝতে পেরেছেন শাশুড়ি মা কি বলতে চেয়েছেন কিন্তু ওনি নিরুপায় কারন কারো কাছে যে আগে থেকেই ওয়াদাবদ্ধ হয়ে আছে অনেক বছর আগ থেকেই।

_____

–কখন থেকে তকে ফোন করছি কার সাথে এত কথা বলছিলি তুই?

ইশান রেগে কথাটা বলে ফোনের অপর পাশে থাকা রিফাতের সাথে। রিফাত ইশানের হুংকার শুনে কানের কাছ থেকে ফোনটা একটু দুরে সরিয়ে নেয়। ইশান রাগে আবারও বলে উঠে,

–কি হলো! কথা বলছিস না কেন?

–এত রেগে আছিস কেন দোস্ত?

–আগে এটা বল তুই এতক্ষন কার সাথে কথা বলছিলি? কখন থেকে ফোন করছি। তুই কি প্রেম করছিস রিফাত? ইদানিং তকে ফোন দিলে বিজি পাই।

–আজব তো এখন তকে কি কৌফত দিতে হবে নাকি। তুই কি আমার বউ লাগিস নাকি যে তকে সব কথা বলে বেড়াতে হবে আমাকে। আর প্রেম করতেই পারি আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলের সাথে যেকোনো মেয়ে প্রেম করতে চাইবে।

–তর সাথে মেয়েরা শুধু প্রেমেই করবে। বিয়ে করবে কিনা আমার সন্দেহ আছে তর যেই স্বভাব।

–আমার বিয়ে নিয়ে তকে ভাবতে হবে না তুই তরটা নিয়ে ভাব। এখনও তো নিজের মনে কথা বলতে পারিস নাই একটা পুচকে মেয়েকে আবার নিজেকে সাহসী বলে দাবি করিস।

ইশান গলার স্বর নিচু করে বলে,

–ভয় হয় যদি রিজেক্ট করে দেয়। ওর রিজেক্ট আমি সহ্য করতে পারবো না রে। এমনেইতে ও আমাকে দু চোখে দেখতে পারে না।

–শুন তুই না ওর সাথে একটু ভালো ব্যবহার করিস তাহলে যদি তর জন্য ওর মনে একটু জায়গা হয়। সবসময় তো সিংহের ন্যায়ে আচরণ করিস মেয়েটার সাথে। পুচকে একটা মেয়ে কোথায় একটু আদর ভালোবাসা দিবি তা না করে বকাচকা করিস আনরোমান্টিক একটা।

–একদম আপমান করবি না আমাকে। আমি ওর কার্যকলাপের জন্যই এমন রুক্ষ আচরন করি। মানে এমন এমন সব কাজ করবে ও যেটার জন্য রাগ হয় আমার।

–শুন তকে একটা বুদ্ধি দেই…..

কথার মাঝখানেই রিফাতে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। ফোনে কিছু একটা চেক করেই বিচলিত কন্ঠে ইশানকে বলে,

–ভাই তর সাথে আমি পরে কথা বলি। এখন যদি আমি তর সাথে কথা বলে যেতেই থাকি তাহলে কেউ আমাকে ছ্যাকা দিয়ে চলে যাবে তুই তো আর আামকে ছ্যাকা দিবি না তাই তর কলটা কাটলাম পরে কথা হবে বাই।

–আরে শুন আমার কথাটা।

ইশান ফোন কানের কাছ থেকে দুরে সরিয়ে বিরবির করে উঠে,

–মানেটা কি? এই ছেলেটা দিন দিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে।

_____

ইশা নাক ফুলিয়ে বসে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। বার বার কেউ ফোন করেই যাচ্ছে কিন্তু ইশা ধরছেই না। ও আজকে এই লোকের ফোন ধরবেই না যাই হয়ে যাক কেন এটাই ইশার পণ আজকে!

পাঁচটা কল কাটার পরে ফোনে একটা মেসেজ আসে। ইশা মেসেজটা চেক করে,

“প্লিজ জান! একবার কলটা ধরো এরপর থেকে তোমার সাথে কথা বলার সময় কারো ফোন ধরবো না প্রমিজ প্লিজ একবার ধরো ফোনটা”

ইশা ভেঙ্গছি কেটে বলে,

–হুম কত ডং।

এর কিছুক্ষন পরেই ফোনটা বেজে ওঠে। ইশাও চুপচাপ কলটা পিক করতেই ফোনের ওপাশ থেকে বলে উঠে,

–এত জেদ তোমার বাবা গো বাবা। তুমি যেমন তোমার ভাইটাও তেমন একে বারে কার্বন কপি।

–একদম আমার ভাইয়ের নামে বদনাম করবেন না।

–তোমার আর তোমার ভাইয়ের মাঝে পড়ে আমি একেবারে শেষ। একটু আগে তোমার ভাই ফোন করেছিলো।

–কিহ? আমি যখন কথা বলছিলাম তখন ইশান ভাইয়া কল করেছিলো।

–জি ম্যাডাম। আর সন্দেহও করেছে আমি প্রেম করি কি না তা নিয়ে। কিন্তু এখন তো ওর সন্দেহ আরও বেড়ে গেছে হয়তো যেভাবে ওর কলটা কেটেছি। যদি একবার ধরা পড়ি তাহলে কি হবে বুঝতে পারছো।

–সরি! আর এটা আগেই বলেই পারতেন যে ইশান ভাইয়া আপনাকে কল করেছে তাহলে তো আর আমি এমন করি না।

–ঠিক আছে যা হওয়ার হয়ে গেছে। আর হে পরের বার যেন এমন মেসেজ না আসে আমার ফোনে তোমার কাছ থেকে মনে থাকবে।

–সরি আর এমন মেসেজ দিবো না।

______

ফরাজি পরিবারের সবাই বসে রাতের খাবার খাচ্ছে আর নেহা বেগম খাবার পরিবেশন করতে করতে চিৎকার করে ইশাকে ডাকছে খাবার খাওয়ার জন্য। কিন্তু মেয়েটার কানে মায়ের কোনো‌ চিৎকারেই ডুকছে না, এই রাতের খাওয়া নিয়ে ইশা অনেক ডির্স্টাব করে যা বলার বাহিরে। ইশান মায়ের চিৎকারের মাঝেই বলে,

–মা তুমি আর ওকে ডেকো না আমি ডাকছি ওকে দাড়াও।

ইশান চিৎকার করে বলে উঠে,

–ইশা তুই যদি এক মিনিটের মাঝে নিচে না নামিস তাহলে আমি তর কান ধরে ডায়নিং টেবিলে নিয়ে আসবো।

ইশানের কথাটা কর্নপাত হওয়ার সাথে সাথে ইশা নিজের ঘর থেকে বের হয়ে দ্রুত পায়ে নিচে নেমে এসে ধপাস করে চেয়ারে বসে। ইশান ভ্রু-কুচকে ইশার দিকে তাকিয়ে বলে,

–এতক্ষন কি করছিলি তুই? মা কখন থেকে তকে ডাকছিলো কথা কানে যায় না তর।

ইশা চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে। তা দেখে ইশান দাত দাতে চেপে বলে,

–কি হলো কথা বলিস না কেন?

ইশার ছোট জবাব,

–পড়ছিলাম।

–তুই পড়ছিলি আমাকে বিশ্বাস করতে হবে। তুই যে এতক্ষন ফোন টিপছিলি তা আমার অজানা নয়।

ইশান এবার ইশার কানটা বা হাত দিয়ে ধরে বলে,

–আজ থেকে তর ফোন চালানো বন্ধ। এই ফোন তর পড়ালেখার বারটা বাজিয়ে দিয়েছে।

এবার ইশা রেগে উঠে। ইশানের কাছ থেকে নিজের কান ছাড়িয়ে বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলে,

–ভাইয়া তুমি সবসময় আবার সাথে এমন করো কেন? তোমরা কেউ আমাকে একটু ভালোবাসো না সবসময় শুধু বকা দাও।

ইশা নাক ফুলিয়ে ঘরে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে নিলেই ইহান বোনের হাত ধরে ফেলে আর বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে বোনের চোখের পানি মুজে বলে,

–ইশু সোনা! আমার আদরের ছোট্টো বোনটা এভাবে কান্না করে না। তকে আমরা সবাই খুব আদর করি বুঝলি। তুই হলি আমাদের সকলের নয়নের মনি।

–ও সব তোমাদের মুখের কথা।

–মুখের কথা হলে কি আমি‌ তর পরীক্ষার জন্য আমার বিয়েটা পিছিয়ে দেই বল।

–পিছাতে কে বলল তোমাকে আমি বলেছি।

–না তুই বলিস নি। কিন্তু আমার বিয়ে আর আমার আদরের বোনটা আমার বিয়েতে মজা করতে পারবে না পরীক্ষার জন্য তা আমি বড় ভাই হয়ে কি করে‌ বসে দেখবো বল। তাই তো বিয়ের তারিখটা পিছিয়ে দিয়েছি।

–থাক আর পাম দিতে হবে না।

বোনের নাক টেনে ইহান বলে,

–পাম দিচ্ছি না সত্যি বলছি আমি আমার ছোট্ট ইশুকে খুব ভালোবাসি।

ইশান ওদের দুজনের কথার মাঝে ফোড়ঁন কাটে,

–হয়েছে এবার খেতে বস চুপচাপ।

ইহান চোখের ইশারায় বোনকে চেয়ারে বসতে বলে। ইশাও বাধ্য মেয়ের মতো খেতে বসে পড়ে। নেহা বেগম আর সোহেল ফরাজি বসে বসে তিন ছেলে মেয়ের খুনশুটি দেখছিলো। এটা ওদের তিন ভাই বোনের দৈনন্দিন রুটিন। এক ভাই বোনকে বকাচকা করবে আরেক ভাই বোনকে সান্তনা দিবে।

#চলবে_______

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here