প্রনয়ের_দহন #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_৬

0
952

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৬

গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে। তীর জড়োসড়ো হয়ে ইশানের পাশের সিটে বসে আছে। কারোর মুখে কোনো কথা নেই। তীর ভেবে রেখেছিলো ইশান হয়তো ওকে একটা রাম ধমক দিবেই দিবে। কিন্তু না তীরের ভাবনা সর্ম্পূন ভুল প্রমান করে দিয়ে ইশান কিছু বলে নি। চুপচাপ সামনের দিকে তাকিয়ে এক মনে ড্রাইভ করেই যাচ্ছে। তীর বার বার আড় চোখে ইশানের দিকে তাকাছে। তীরের ঠিক হজম হচ্ছে না ইশানের শান্ত হয়ে থাকা এই রুপটা। তাই মনে মনে ইশানকে নিয়ে নানা রকম চক কষছে।

রিকশা করে বাড়িতে গেলে পাচঁ থেকে দশ মিনিটের মতো লাগে কিন্তু গাড়ি করে বাড়িতে গেলে বিশ থেকে পচিঁশ মিনিট তো নিম্নে লাগবেই। রিকশা ছোট রাস্তা দিয়ে অনায়াসেই যেতে পারে কিন্তু গাড়ি তো আর যেতে পারবে না ওই ছোট রাস্তা দিয়ে। তাই গাড়িতে প্রায় পনেরা মিনিট যাবত বসে আছে তীর আর আড় চোখে বার বার ইশানের দিকে তাকাচ্ছে।‌ এক বার আড় চোখে ইশানের দিকে তাকাতে গিয়ে ইশানের সাথে চোখাচোখি হয়ে যায় সাথে সাথে তীরের বুকটা ধক করে উঠে ভয়ে। এরপর থেকে আর সাহস পাচ্ছে না তীর ইশানের দিকে আড় চোখে তাকাতে।

হঠাৎ করেই তীরের গা গুলিয়ে উঠে, পেটটা কেমন পাকিঁয়ে উঠছে বারং বার। মনে হচ্ছে যেন পেটের ভেতরের সব কিছু বের হয়ে যাবে এক্ষুনি। তীর সাথে সাথে মুখে চেপে ধরে। কিছুতেই গলার ভেতরের খাবার গুলা আটকিয়ে রাখতে পারছে না। ইশান তীরের এমন অবস্থা দেখে চিন্তিত স্বরে বলে।

–কি হয়েছে তীর? শরীর খারাপ লাগছে।

তীর কিছু বলছে না। শুধু হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। ইশানের আর বুঝতে বাকি রইলো না তীরের কি হয়েছে। সাথে সাথে গাড়ি সাইডে করে গাড়ি থামায়। গাড়ি থামনোর পরপরেই তীর গাড়ির দরজা খুলে গাড়ি থেকে নেমে গড়গড় করে বমি করে দিলো। একটু আগে পেটে যা যা পাচার করেছিলো সব নাক, মুখ দিয়ে বের হয়ে গেছে। গলা জ্বলে যাচ্ছে বমি করে। ইশানও সাথে সাথে তীরের কাছে আসে তীরর এমন বেহাল অবস্থা দেখে ইশানের মন চাইছে তীরকে ঠাটিয়ে একটা চড় মারতে তাহলে যদি শিক্ষা হয় মেয়েটার। তীরের শরীর দুর্বল হয়ে আসছে চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে মনে হচ্ছে এখনেই কেউ ওকে না ধরলে পড়েই যাবে ধপাস করে।

তীরের বেহাল অবস্থা দেখে ইশান তীরের বাহু ধরে ফেলে। তীরও কারোর ভরসা পেয়ে চোখ বন্ধ করে সাথে সাথে মাথাটা হেলিয়ে দেয় ইশানের বক্ষ স্থলে। ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছি তীর। কিন্তু ওদিকে কারো মনে যে ঝড় উঠে গেছে সেটা তীর বুঝতে পারছে না। তীর এতটা কাছে আসাতে ইশানের হৃদস্পন্ধ বেড়ে গেছে, ভারি হয়ে আসছে নিশ্বাসের বেগ, এই ঠান্ডার মাঝে শরীর গরম হয়ে আসছে ইশানের। ইশান নিজের আবেগ গুলা কন্ট্রোল করার জন্য চোখ বন্ধ করে জোরে কয়েক দফা শ্বাস নিয়ে দাতে দাত চেপে বলে।

–ইচ্ছে করছে তকে মাথার উপর তুলে একটা আছার মারতে তাহলে যদি তর একটু শিক্ষা হয় বেয়াদব মেয়ে।

ইশানের বলা কথাটা শুনে তীরের আভিমান হলো সাথে কষ্ট হলো ওর এই অবস্থা আর লোকটা তীরকে এভাবে বকছে। নাক, মুখ কুচকে নেয়। তীরের নাকের কাছে মিষ্টি একটা ঘ্রাণ এসে বারি খাচ্ছে। ঘ্রাণের উৎস কোথায় থেকে ভেসে আসছে বুঝার জন্য তীর নিভুনিভু চোখে তাকায়। যখন বুঝতে পারে ওর মাথা ইশানের বুকে উপর সাথে সাথে তীর তড়িঘড়ি করে ছিটকে আসে ইশানের কাছ থেকে। তীরের ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে এটা ভেবে এতক্ষন ও ইশানের বুকের উপর ছিলো কি বিচ্ছির একটা কান্ড ইস!

তীর নিচের দিকে তাকিয়ে ছটফট করছে। ইশানের দিকে তাকাতে পারছে না ইশান কি ভাবছে এটা ভেবে। তীরের ভাবনা বুঝতে পেরে ইশান বলে।

–গাাড়িতে গিয়ে বস আমি পানি নিয়ে আসি।

তীর দুর্বল পায়ে হেটে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। অন্য দিকে ইশান কিছুটা দুরে থাকা একটা দোকান থেকে পানি কিনে নিয়ে আসে। ইশান গাড়িতে বসে তীরের দিকে পানির বোতলটা এগিয়ে বলে।

–চোখে মুখে একটু পানি দিয়ে নে তাহলে ভালো লাগবে।

তীরও বাধ্য মেয়ের মতো গাড়ির দরজা খুলে চোখে, মুখে পানি দিয়ে কিছুটা পানি খেয়ে নেয়। পেট পুরাই খালি যা যা খেয়েছিলো সকাল থেকে এতক্ষন পর্যন্ত সব বের হয়ে গেছে। তীর মনে মনে নিজেকে হাজারটা খালি দিয়ে ঠিক করেছে আর জীবনে এসব ছাইপাশ খাবে না। যা খেলে পেটে সয় না বরং অসুস্থ হয়ে পড়ে তা আর কোনো দিনও খাবে না মরে গেলেও মুখে তুলবে না। তীর গাড়ির দরজা বন্ধ করে দিয়ে সিটে মাথাটা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। ইশানও গাড়ি স্টার্ট দেয়, এসি বন্ধ করে দিয়ে গাড়ির গ্লাস গুলা নামিয়ে দেয় যাতে তীরের ভালো লাগে।

কিছুক্ষন পরে গাড়ি এসে থামে ফরাজী ভিলার সামনে। ইশান সিট বেল্টটা খুলে তীরের দিকে তাকাতেই দেখে তীর চোখ বন্ধ করে রেখেছে। ইশান তীরকে ডাক দেয় কিন্তু সাড়া দেয় না তীর। ইশান বুঝতে পারে তীর ঘুমিয়ে গেছে। ইশান তীরের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। ছোট ছোট চুল গুলা গালের সাথে লেপ্টে আছে মুখে পানি ঝাপ্টা দেওয়ার জন্য। ইশান হাত বাড়িয়ে তীরের গালে লেপ্টটানো চুলগুলো আলতো হাতে সরিয়ে দেয়। ক্ষেপে উঠে তীর ইশান সাথে সাথে হাতটা সরিয়ে ফেলে।

এক ধ্যানে ইশান তীরের দিকে তাকিয়ে আছে। নিজেকে খুব আলোমেলো লাগছে আজ। তীরের ডান গালে দুইটা তিল আছে তিল দুইটা পাশাপাশি। খুব ইচ্ছে করছে ইশানের তিলটা দুইটা ছোঁয়ে দিতে। হাত বাড়িয়ে তিল দুইটা ছুঁয়ে দেয় বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে। তীর সাথে সাথে ভ্রু-কুচ করে ফেলে। ইশান তীরের ভ্রু-কুচকানো দেখে হেসে দেয়। ইশানের মস্তিষ্কে এখন ঘুড়ছে অন্য চিন্তা তীরের তিল দুটো ছুঁয়ে দিয়ে মন ভরে নি ইশানের ইচ্ছে করছে তিল দুইটাতে নিজের ঠোঁটের ছোঁয়ে দিতে। ইশান মুখটা তীরের মুখের দিকে এগিয়ে নিতে যাবে পরক্ষনেই কিছু একটা ভেবে নিজের ইাচ্ছাটাকে সংযত করে তীরের থেকে দুরে সরে এসে বিরবির করে।

–কন্ট্রোল ইউর সেল্ফ ইশান ফরাজী কন্ট্রোল কর নিজেকে। নিজের আবেগটাকে কন্ট্রোল কর এভাবে দুর্বল হলে চলবে না।

ইশান জোরে কয়েকটা নিশ্বাস ছেড়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে তীরদের বাড়ির গেইটের সামনে আসে। তীরকে জাগাতে ইচ্ছে করছে না ইশানের কি সুন্দর ঘুমিয়ে আছে আরাম করে। আরামের ঘুমটা নষ্ট করতে চাইছে না। তাই নিজেই গাড়ি থেকে বের হয়ে তীরের সাইডের গাড়ির দরজাটা খুলে সিট বেল্টটা খুলে তীরকে পাজাকোলে তুলে নিয়ে এক পালক তীররের দিকে তাকিয়ে বাড়ির ভেতরে ডুকে পড়ে। সদর দরজা খোলাই ছিলো তাই ইশান সোজা ঘরে ডুকে পড়ে।

অভি ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছিলো তীরকে ইশানের কোলে দেখে চিৎকার করে বলে উঠে।

–ইশান ভাইয়া আপুর কি হয়েছে?

ইশান সাথে সাথে বলে উঠে।

–আস্তে অভি আস্তে তীর ঘুমাচ্ছে।

অভিও ইশানের কথা মতো আস্তে আস্তে বলে।

–কি হয়েছে আপুর?

ইশানের ঠোটের কোনে হাসি ফুটে উঠে অভির বাচামো দেখে। ইশান আর অভির কথাবার্তা শুনে আয়েশা সুলতানা রান্না ঘর থেকে এসে ইশানের কোলে তীরকে দেখে অবাক হয়ে যায়।

–কি হয়েছে ইশান তীর তোমার কোলে কেন?

–আন্টি পরে বলছি আমি সব, আগে তীরকে ওর রুমে রেখে‌ আসি।

ইশান সোজা সিড়ি বেয়ে তীরের রুমে তীরকে শুইয়ে দিয়ে আসে। আয়েশা সুলতানাও ইশানের পিছন পিছন তীরের রুমে যায়। মেয়েটার কি হলো বুঝতে পারছে না। এই মেয়েটাকে নিয়ে খুব চিন্তায় থাকে‌ সবসময় কথা একদম শুনেই না। আয়েশা সুলতানা ইশানকে আবারও প্রশ্ন করে।

–কি হয়েছে ইশান?

–আন্টি তীর ঘুমাক এতটা চিন্তিত হওয়ার দরকার নেই। আপনি নিচে চলুন আমি সব বলছি আপনাকে।

–ঠিক আছে চলো।

ইশান নিচে এসে সোফায় বসার সাথে সাথে আয়েশা সুলতানাকে বলে।

–আন্টি এক গ্লাস পানি হবে।

আয়েশা সুলতানা তাড়াতাড়ি এক গ্লাস পানি এনে ইশানকে দেয়। ইশান পানি খেয়ে বলা শুরু করে।

–আসলে আন্টি তীরের সাথে দেখা হয়েছে আমার মাঝ রাস্তায়। রাস্তার পাশের দোকানে বসে ফুচকা আর চটপট খাচ্ছিলো।

আয়েশা সুলতানা ফুচকা আর চটপট খাওয়ার কথা শুনা মাএই রেগে যান।

–কিহ ও আজকে ফুচকা আর চটপটি খেয়েছে।

–জি আন্টি আর ওকে নিয়ে গাড়িতে উঠার পরপরেই বমি করে দেয় তাই এখন দুর্বল হয়ে পড়েছে। বমি করাতে ভালোই হয়েছে আন্টি পেট থেকে সব বের হয়ে গেছে। আর এখন ওকে ডাকার দরকার নাই ঘুমাক। ঘুম থেকে উঠার পর কিছু খাইয়ে দিয়েন আমি বরং আসি আন্টি।

–আচ্ছা বাবা। কি বলে যে তোমাকে ধন্যবাদ দিবো আমি বুঝতে পারতাছি না আর মেয়েটা এত অবাধ্য হচ্ছে দিন দিন যা বলার বাহিরে।

–আচ্ছা আন্টি আমি আসি তাহলে।

–আচ্ছা।

ইশান বের হতে হতে অভিকে বলে।

–অভি চলো আমার সাথে তোমার আপুর ব্যাগটা নিতে হবে।

অভিও নাচতে নাচতে ইশানের পিছন পিছন যায়।

#চলবে_________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here