#শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#আলিশা
#পর্ব_১৭
জোহান নামের ছেলেটা ক্লোরোফর্ম দিতেই আমার নাকে মুখে স্প্রে করা হলো। কিডনাপের ধরণ, চলণ দেখে হতবাক আমি হতবুদ্ধি। নিজেকে বাঁচানোর কথা মাথায় আসার পূর্বেই তারা স্প্রে করে দিলো ক্লোরোফর্ম। ক্রমেই চোখে আধার নেমে ঢুলে পরলাম মাটিতে। অতঃপর কতটা সময় অতিবাহিত হয়েছে তা আমার অজানা। যখন চোখের পল্লব খুলে গেলো তখন সামনে দাড়িয়ে ছিল সেই চারটে ছেলে। এবার মুখ উন্মুক্ত। মাস্ক বিহীন। তাদের ছেড়ে দৃষ্টি আরো একটু সামনে দিতেই চোখে ভেসে উঠলো সাগরের উত্তাল ঢেউ। হীম হীম দমকা হাওয়া গায়ে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে। আমার লম্বা চুলগুলো উন্মুক্ত হয়ে আমাকেই বিরক্তির সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছে। এ পরিস্থিতি ঠিক সহ্য সীমার বাইরে চলে গেলো। কোন কিডনাপার এমন মগা, রোগা লোক পাঠিয়েছে? শুধু বৈদ্যুতিক খুটির মতো সরু আর লম্বাই যেন। বুদ্ধি এখনো কচু গাছের গোঁড়ায় ঝুলছে। মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে রেখেছে, হাতেও স্কচটেপ দিয়েছে। ভয় ভীতের ছিটেফোঁটা মনে অনুভব করছি না। আমি অনুভব করছি বিশালাকারের এক বিরক্তি। মহা বিরক্তি। অগ্নিঝড়া চক্ষু নিয়ে তাকালাম চারটে মানুষ রূপী বৈদ্যুতিক খুঁটি গুলোর দিকে। ইশারায় বোঝাতে চাইলাম মুখ মুক্ত করে দিতে। কিন্তু তারা শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। এবার আমার অতি রাগে চোখে জলের আগমন ঘটলো। টুপ করে এক ফোঁটা অশ্রুবিন্দু বালির ওপর পতিত হতেই অনুভব করলাম কেউ আমার পেছনে দাড়িয়ে আছে। শুধু দাড়িয়ে থাকাতেই সে সীমাবদ্ধ নয়, অতি যত্নে মুখের স্কচটেপ খুলে দেওয়ার মগ্ন হয়েছে সে। আমি ঝট করে মুখ উর্ধ্বে তুলে দৃষ্টি রাখতে চাইলাম আগন্তুকের পানে। আলো আঁধারে মিলন মেলায় চোখে ফুটে উঠলো চিরচেনা মুখের অবয়ব। আমার চোখে চোখ পরতেই সে অবিলম্বে সরল কৌশলে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। অবাক আমি, বিস্ময়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম স্মরণের পানে। স্মরণ আমাকে কিডন্যাপ করলো? কোন হেতুতে? আসমান জামিনের দূরত্ব ঘুচিয়ে ফেললাম শুধু হেতু খুঁজে। কিন্তু বিফল আমি খুঁজে পেলাম না খড়কুটোর মতো তুচ্ছ কোনো বিষয়ও।
— যেতে পারো তোমারা।
চারটা ছেলের উদ্দেশ্যে একথা ছুড়ে দিতেই তারা হনহন করে প্রস্তান করলো। আমার বিস্ময় ফুরোয়নি। ফ্যালফ্যাল করে তার পানে তাকিয়ে আমি কারণ খুজতে ব্যাস্ত। তাকে বুঝে ওঠার লড়াইয়ে মত্ত।
— দারুণ ওয়েদার।
সে মন্তব্য রাখলো প্রকৃতিকে ঘিরে। আমি অন্তরালে ক্ষিপ্ত হলাম তার এমন ‘কিছু হয়নি’ ভাব দেখে। চড়াও হয়ে কন্ঠস্বর কঠিন করে বললাম
— আমাকে এভাবে এখানে নিয়ে আসার কারণ? আপনি কি ভাবছেন কি নিজেকে? দেখুন আমিও একটা মানুষ। আমারও সহ্য সীমা আছে। আপনাকে মুক্তি দিয়ে আমি চলে এসেছি। এখন আবার কি চান আপনি?
স্মরণ সমুদ্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। দাঁড়ালো আমার চোখে চোখ রেখে মুখোমুখি। দমে নেই আমিও। অনমনীয় মন নিয়ে তার চিত্তগ্রাহী অক্ষিতে দৃষ্টি ফেলে রাখলাম। কাটলো সময় এভাবে মিনিট দুয়েক। শুধু চলছিল সমুদ্রের গর্জন আর বাতাসের শা শা ধ্বনি। নিস্তব্ধতা ভেঙেছে স্মরণের একটা বাক্যে।
— আমিও চেয়েছিলাম কল্প জগতে বা বাস্তবে আর কোনোদিন কখনো তোমার সাথে আমার দেখা না হোক কিন্তু আমার খা খা করা মরুভূমি হৃদয়ে তুমি বৃষ্টি ঝড়ালে।
যেন এক সেকেন্ডের জন্য আমার তনু মন স্তব্ধ হয়ে গেলো স্মরণের এ কথা শুনে। অশ্বের চাইতেও দ্রুত গতিতে আমি তাকালাম তার চোখের দিকে। খোলা আকাশে পূর্ণ চাদের কিরণে চোখে ভেসে উঠলো স্মরণের নিরূপায় মুখ। আমি সব কথা ভুলে গেলাম। মস্তিষ্ক অসাড় হলো যেন। এ আমার জন্য এক বিড়াট ঝটকা। স্মরণ দু কদম বামে সরে একটু পেছন পথ ধরলো। তার পথচলার সাথে চলল আমার দৃষ্টিও। আরো একটা বিস্ময় আমাকে গুলিয়ে দিলো আমি স্বপ্ন জগতে নাকি বাস্তবে? জলন্ত ক্যান্ডেলের মেলা। বাতাসের দাপটের কাছে হার না মেনে বেঁচে আছে। ক্যান্ডগুলো বিন্যস্ত লাল গোলাপের পাপড়িতে লেখা কিছু অক্ষর কে ঘিরে। কেউ ভীষণ যত্ন করে লিখেছে
” I need you in my life ”
অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে একবার স্মরণের পানে তাকিয়ে আবার তাকালাম আবেগের স্পর্শ পাওয়া লেখাগুলোর পানে। স্মরণ নিজের অবস্থান হতে আমাকে জানিয়ে দিলো
— খেয়া, ফিরে চলো। আমরা বাবা মেয়ে তোমাতে আসক্ত হয়ে গেছি। আমি কখনো তোমাকে অথৈয়ের জায়গা দিতে পারবো না। তবে তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না। দমবন্ধকর পরিস্থিতি থেকে একটু হলেও বেরিয়ে এসেছি তোমার জন্য। আমার ভীষণ বাঁচতে ইচ্ছে করে। সুস্থ হয়ে বাচতে ইচ্ছে করে। আমার তো কোনো দোষ নেই। আমি তো চাইনি তোমাকে। কিন্তু তুমি এমন কিছু করেছো যার জন্য তুমি বাড়ি ছাড়ার কথা বললে আমার বুক কেঁপে উঠেছিল। মেনে নিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ঠিক হয়ে যাবে দু’দিন পর। সেই রাতে আসামি ধরতে আমি সৈকতে আসি। পরদিন পর্যন্ত ইনভেস্টিগেশন চলে। এই সুযোগে তুমি উধাও। ব্যাস, বুকে একটা ব্যাথা শুরু হলো। সেই ব্যাথা সময়ের সাথে বাড়তেই লাগলো বাড়তেই লাগলো। টেবিলে খাবার দিচ্ছে না কেউ, আমার ঘরে উঁকি দিচ্ছে না কেউ, হুটহাট রান্না ঘরে ভুলবশত এটা ওটা ফেলে দিয়ে শব্দ করছে না কেউ।
স্মরণ বিরতি নিলো যেন। বড় করে একটা শ্বাস টেনে পুনরায় শান্ত কন্ঠে বলল
— জানো, অথৈ আমাকে একটা কথা বলতো। ‘স্মরণ তোমার আরেকটা বিয়ে হবেই হবে। দেখে নিও তুমি।’ ওর এই কথা শুনে খুব রেগে যেতাম আমি। ও যুক্তি দেখাতো, ‘যারা দ্বিতীয় বিয়ে করতে চায় না তাদেরই বাধ্য হয়ে বিয়ে করে নিতে হয়। আর যারা বিয়ে করতে চায় তাদের কপালে বিয়ে থাকে না। আচ্ছা স্মরণ, আমি মারা গেলে তুমি আবার বিয়ে করবে?’ ওর এই কথা শুনে আমি ওর সাথে কথাই বলতাম না রাগে। ও তখন আমার হাত ধরে আমাকে বুঝিয়ে বলতো, ‘দেখো, বিয়ে করে দিও বুঝেছো? যদিও আমার কষ্ট হবে। কিন্তু আমি তোতখন কিছু দেখতে পারবো না। আমার কষ্টের চাইতেও তোমার কষ্ট আমাকে বেশি কষ্ট দেবে। আর শোনো, তুমি কিন্তু আমার চাইতে ওকে বেশি ভালোবাসতে পারবে না। বুঝেছো? তাহলে অনেক কষ্ট হবে আমার।’
স্মরণের গলার স্বর ক্ষীণ হয়ে গেলো। আমার আপন চোখে কখন যে জলের আগমন ঘটেছে তা আমি ঠাহর করতে পারিনি। গত পাঁচ মাসের বন্দি দুঃখ গুলো সে যেন আজ উন্মুক্ত করে দিয়েছে। আমি তৃষ্ণার্ত চোখে তাকিয়ে রইলাম। স্মরণ এবার আর অথৈ এবং তার মিষ্টি সম্পর্কের প্রসঙ্গে প্রবেশ করলো না। হেটে সোজা পথে চলে এলো আমার নিকট। ধুপ করে হাঁটু গেড়ে বসে পরলো আমায় বেঁধে রাখা চেয়ারের নিকট। আকুতিভরা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
— তুমি আর অঙ্কনের সাথে কথা বলো না কখনো। আমার সহ্য হয় না। আমি দ্বিতীয় বার একটা আশ্রয় খুঁজে পেয়েছি। এটা হারাতে চাই না। যে জিনিসটা আমার সেটা শুয়ে আমারই। আমার মানে শুধু আমার। তার একসিকিও কাউকে দিতে রাজি নই আমি।
আমি ভাবনার দরিয়ায় পরে গেলাম। স্মরণ ইতিমধ্যে পুনরায় আমাকে বলল
— খেয়া, আই নিড ইউ ইন মাই লাইফ। প্লিজ ফিরে চলো।
আমি এ প্রশ্নের জবাব দেওয়ার পূর্বে মিহি সুরে বললাম
— আমার হাতের স্কচটেপ খুলে দিন আগে।
স্মরণ প্রতিবাদ করে বলল
— আগে তুমি উত্তর দাও তারপর। আমি জানতাম এভাবে কিডন্যাপ করে না আনলে তুমি আমার একটা কথাও শুনতে না। এখন হাত খুলে দিলে কয়েকটা ঝাড়ি মেরে তুমি চলে যাবা।
চলবে….
#শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#আলিশা
#বোনাস_পার্ট
স্মরণ নিজের কথাকেই শেষ কথা করে নিয়ে আমাকে বদ্ধ অবস্থাতেই রেখে দিলো। সে মিথ্যা কিছু বলেনি। হয়তো সত্যিই আমি চলে যেতাম। বড্ড মন খারাপ বুকে চেপে তার বহু কথার এক কথাও না শুনে পারি জমাতাম নিজ গন্তব্যে।
— ওন্ট ইউ গো উইথ মি, খেয়া?
আবেগে যেন সিক্ত স্মরণের কন্ঠ। আমি দ্বিধার পাহাড় বেয়ে নেমে এলাম, দ্বন্দ্বের দেয়াল ভেঙে দিয়ে তার স্থির চোখে দৃষ্টি রেখে বললাম
— এম আই ইউর বিলাভ অর নিড?
আমার হঠাৎ করা প্রশ্নই দিলো স্মরণ মোটেও প্রস্তুত ছিল না এহেন পরিস্থিতির জন্য। আমি স্থির তাকিয়ে রইলাম। স্মরণ তৎক্ষনাৎ জবাব দিতে পারলো না। বেশ কিছু সময় সে অপলক দৃষ্টিতে দেখে গেলো আমাকে। আমার আঁখি জোড়া ছলছল করে উঠলো। স্মরণ হিমায়িত। সে হিম শীতল কন্ঠে জবাব দিলো
— কি মনে হয়? আমার অনুভূতি গুলো তো আমি বলে দিয়েছি। সেসব শোনার পর যদি তোমার মনে হয় তুমি শুধুই আমার প্রয়োজন তবে তাই।
বিষন্ন স্বরের কন্ঠ তার।
— ভালোবাসা বা না বাসা সম্পূর্ণই আপনার বিষয়। আমি কখনো জোর করে কারো ভালোবাসা চাই না। তবে আপনি কি জানেন? আমার ভালোবাসার সময়সীমা?
স্মরণ বিস্ফোরিত নয়নে তাকালো আমার দিকে। আমি তার দৃষ্টি অনুসরণ করে বললাম
— ক্লাস নাইন থেকে ভালোবাসি আমি আপনাকে। অনেক বেশি ভালোবাসি। কখনো ভাবিনি আপনাকে এভাবে পেয়ে যাবো। আবার পাওয়ার পর কখনো ভাবিনি আপনি এভাবে আমাকে কষ্ট দিয়ে এতোটা পর করবেন।
কখন যেন আমার গলার স্বরটা উদাসীনতায় নিমজ্জিত হয়েছে। চোখের জল গাড়িয়ে গেছে কোনো এক সময়। স্মরণের মুখাবয়ব স্পষ্ট বলে দিলো সে আমার কথায় দারুণ অবাক। বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ। আমি তার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে দূর সমুদ্রে চাইলাম। ভয়ঙ্কর বাতাস। জলন্ত মোমের অগ্নি শিখাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে।
— আমার পক্ষে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। সরি। কারো প্রয়োজন হতে আমার আপত্তি নেই। তবে পাশাপাশি প্রিয়জনও হতে চাই।
— প্রিয়জনই মানুষের প্রয়োজন হয়।
— উঁহু! প্রয়োজন মিটে গেলে প্রয়োজনের জিনিসটাকে ফেলে দেওয়া হয়।
স্মরণ স্তব্ধ হয়ে গেলো। সে আগেরই মতো করে বসে আমাকে পর্যবেক্ষণ করলো কিছু সময়। অতঃপর হঠাৎ বলল
— গুরুত্ব না দিয়ে দূরত্বটা বাড়াচ্ছ।
— আমার মনে হয় আমাদের মাঝে সবসময় দূরত্বটাই ছিলো।
— ঘুচে দিতে চাইলাম কিন্তু….
— আমার হাত খুলে দেন। চলে যাবো। রাত হচ্ছে।
স্মরণ কথা বাড়ালো না। তবে যেন ক্ষিপ্ত হলো প্রকাশ্যে। উপচে পরতে লাগলো তার রাগ। তবে বেশ শান্ত ভঙ্গিতে খুলে দিয়েছে আমার হাতের স্কচটেপ। মুক্তি পেয়ে আমি উঠে দাড়ালাম। শাড়ির আচল ঠিক করে একবারও স্মরণের পানে দৃষ্টি না দিয়ে হাঁটতে চাইলাম সম্মুখ পথে। ঠিক তখনই বাঁধা পরলো। আচমকা শাড়ির আচলে টান অনুভব করলাম। অসীম কৌতুহল মনে বসিয়ে পেছন ফিরে চাইতেই সে আমাকে উপেক্ষা করলো পুরোদমে। আমাকে এড়িয়ে দৃষ্টি নিয়ে গেলো সামনের কারো দিকে। কিছুটা উঁচু কন্ঠে হাঁক ছেড়ে বলল
— গাড়িতে একটা প্যাকেট আছে নিয়ে আসো।
আমি ততক্ষণে কপাল ভাজ অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছি। লোকটা হুটহাট কাজ করে বসে। আজ বেজায় বিরক্ত লাগছে তার এই কাজ। শারির আচল টেনে ধরার মানেটা কি? তার উদ্দেশ্য কি?
— ছাড়ু…
সম্পূর্ণ কথা ব্যাক্ত করার পূর্বেই সে হঠাৎ যেন একশো নিউটন বলে টেনে আমায় ধপাস করে ফেলে দিলো চেয়ারে। কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই পকেট থেকে বের করলো দু’টো চুড়ি। আমি সরু চোখে তাকিয়ে রইলাম।
— হাত দাও।
— কেন?
সে জবাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না। ফুঁসে উঠলো ভেতর থেকে। নিজ থেকেই আমার হাত টেনে নিলো নিজের কাছে। মোটা, ভাড়ি চুড়ি একে একে পরিয়ে দিলো হাতে। আমি বাজখাঁই গলায় বলতে চাইলাম কিছু। কিন্তু সে আমাকে দ্বিতীয় বারের মতো নিশ্চুপ করে দিয়ে আমার নাকের নাকফুলে হাত দিলো। আমার অন্তরাল এবার ছেয়ে গেলো বিস্ময় ও বিরক্তিতে।
— আমার নাকের ফুল খুলছেন কেন?
— প্রয়োজনে খুলছি বলবো নাকি প্রিয়জনকে সেইভ রাখার জন্য খুলছি বলবো? কোনটা বললে খুশি হবে? প্রয়োজন শব্দটা তো তোমার পছন্দ না।
আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম তার প্রতিক্রিয়ায়। প্রথমত তার নিশ্বাস আমার চোখে আছড়ে পড়ে অস্বস্তিতে ডুবিয়ে রেখেছে। দ্বিতীয়ত তার এমন কান্ডগুলো। আমার নাক ফুলখুলে সে নিজের আনানো নাকফুল পরিয়ে দিলো। অনেক বড়। নাকের পাটার অর্ধেকটা জুড়ে তার অবস্থান। হাতে মোটা দু’টো চুড়ি। অনেক মোটা। নাকে পুরু বড় নাকফুল।
— এবার যাও। পৃথিবীর যেখানে যেতে ইচ্ছে করে যাও। এবার অঙ্কনের মা কেন? যে কেউ দেখলে বুঝে যাবে তুমি বিবাহিত। তুমি ভাবতে পারো তুমি ফিরতে না চাওয়ার কারণে আমি ভেঙে পরবো দূরে চলে যাবো। অনেক অনেক দূরে। বাট আমি এটা করবো না। প্রশ্নই আসে না। আমি তোমার প্রতি আসক্ত হতে চাইনি। আর না চেয়েছিলাম তোমার জন্য বুকের মধ্যে একটা ব্যাথা। কিন্তু তুমি এগুলো জোর করে স্থাপন করলে। সো, এবার অনেক কিছুই হতে পারে।
কথাগুলোর ফাঁকে ফাঁকে যেন লুকিয়ে ছিলো তীব্র জেদ। আমি শঙ্কিত তার ভঙ্গিতে।
— জাহিন, দ্রুত খেয়ার জান্য মেয়ে গার্ডের ব্যবস্থা করো। আর আজ তুমি রেখে আসো।
কথাটা বলেই স্মরণ অগ্রসর হলো সমুদ্রের ঢেউয়ের দিকে। জাহিন নামের ছেলেটা আমাকে বলল
— ম্যাম প্লিজ আসুন।
চলবে….