শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি #আলিশা_আঞ্জুম #শেষ_পর্ব ( প্রথমাংশ)

0
347

#শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#আলিশা_আঞ্জুম
#শেষ_পর্ব ( প্রথমাংশ)

রোদে উজ্জ্বল দিন হলো আজ। তাপটা সহনীয়। একে একে দশটা রোজা ফুরিয়ে গেছে। আজ স্মরণকে রিলিজ দেওয়া হবে। একদিন আমার বাসা থেকেই দৌড়ঝাঁপ করলাম। ছোঁয়াও আমার কাছেই থেকে গেলো। স্মরণের সাথে আমার সম্পর্ক হয়ে উঠলো এ’কদিনে অনেকটাই সহজ। তবে মাঝে মাঝে তার কিছু একটা হয়। হুটহাট বলে বসে,

” খেয়া, ইউ সুড গো। আমার নিজেকে সেলফিশ সেলফিশ লাগে। ”

স্বাভাবিক ভাবেই আমার মেজাজ সপ্ত আসমানে চড়ে বসে। কখনো রেগে তার সামনে থেকে চলে আসি। কখনো বলি, আমি ভালোবাসি বলে ভালোবাসার মানুষের পাশে আছি। এখানে আপনার নিজেকে সেলফিশ ভাবার তো কোনো কারণ নেই? স্মরণ চুপসে যায়। নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে।

.
সব গুছিয়ে নিয়ে সকলে প্রস্তুত। বাবা ব্যাস্ত রিলিজ হওয়ার আগ মুহূর্তে টাকা দিতে। ছোঁয়া ব্যাস্ত অঙ্কনের সাথে এতো এতো রুগী পরিদর্শন করা নিয়ে। মোট পাঁচ দিন হসপিটালে থাকতে হলো স্মরণের। এমন একটা দিন ছিলো না যে ছোঁয়া আসেনি। এসে স্মরণের পাশে বসেছে কম, অঙ্কনের গলায় ঝুলে থেকেছে বেশি। তার দারুণ কৌতুহল ডাক্তারদের ছুড়ি, কাচি, অস্ত্রর প্রতি।

স্মরণ মোটামুটি প্রস্তুত বাসায় যাওয়ার জন্য। হাঁটা চলা করা নিষেধ বিধায় সে হুইল চেয়ারকে সঙ্গী করেছে বিষন্ন মনে। একজন নার্স চেয়ার ঠেলে সামনে অগ্রসর হচ্ছিলো। চলে যাচ্ছে সে। আমি এই রুমের দরজার নিকট দাড়িয়ে আছি। স্মরণ যখন দরজার খুব নিকটে পৌঁছালো তখন হঠাৎ স্থির করতে বললো গতিময় চেয়ারটা। বিণাবাক্যে শান্ত চোখে এক হাত বাড়িয়ে দিলো আমার উদ্দেশ্যে। বুকটা ধ্বক করে উঠলো আমার। আবার কিছুটা লজ্জা ঠাঁই পেলো মনের মাঝে। আড়চোখে নার্সটার দিকে তাকালাম। ওমনি যেন মেয়েটা আমার মনের অবস্থা বুঝে চলে গেলো আমাদের ছেড়ে। স্মরণ তখন ভীষণ ভাব নিয়ে বলতে ব্যাস্ত

— এবারও কি রিজেক্ট করবে?

আমি হেসে উঠলাম। তবে ভাব নিতে ভুলে বসলাম না। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললাম

— এতোটা সস্তা নয় খেয়া। ভালোবাসি বলে সবকিছু করতে পারবো না। নেভার।

— আমিও কম কিসে? এবার রিজেক্ট করলে এই যে হাত গুটিয়ে নেবো আর বাড়িয়ে দেবো না। সোজা বাসায় গিয়ে আরেকটা বিয়ে করে সংসার করবো।

আমি হতভম্ব হলাম স্মরণের কথা শুনে। বলে কি এই লোক? খপ করে তার গুটিয়ে নিতে চাওয়া হাতটা ধরে ফেললাম। বেশ রেগেই বললাম

— বেশ সাহস তো আপনার? জেনে রাখুন আপনার এপাড়ের বউটা মোটেও সুবিধার নয়। আমি অথৈয়ের মতো কিছুতেই বলবো না আমি মরলে আপনি বিয়ে করবেন। আর আমি বেচে থাকতেই আপনি বিয়ে করতে চান? মাথা ফাটিয়ে দেবো একদম।

— নাহ! বাদ দাও। এতো ভাবওয়ালী মেয়ের সাথে…. উহু! তার ওপর আমি বাচ্চার বাবা। তোমার সাথে আমার যায় না হয়তো। আমি না হয় আমার একটা বেস্ট ফ্রেন্ড আছে ওকে বিয়ে করে নেবো। ও আমাকে আগে থেকেই আবার পছন্দ করে। আমাদের আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা ভালো হবে।

আমি বেজায় রেগে গেলাম এপর্যন্তে। বুকে অসহ্য এক ব্যাথা নাড়া দিয়ে উঠলো। বাজখাঁই গলায় বললাম

— কই আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড দেখি ডাকেন। অসুস্থ হলেন একবারও তো সেবা করতে এলো না। এই শুনুন, রেগে যাচ্ছি আমি এখন। আমাকে রেগে দেবেন না ওকে? চার বছর হলো ভালোবাসি। মাঝখানে ভুলেই গেছিলাম প্রায় তারপর হুট করে বিয়ে করে আনলেন। তারপর আমার হার্টের ওপর অনেক অত্যাচার করেছেন। তারপর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম চলে যাবো। তারপর আবার আপনি….

— আমি ভালোবাসলাম। তারপর আপনি আমার হার্টের ওপর অত্যাচার শুরু করলেন। কেন গো? আপনারা দুই সতিন কি শুধু আমার প্যানিক অ্যাটাকের কারণই হতে পারেন? আমার চিরস্থায়ী সুখের কারণ হতে পারেন না?

আমার রাগ আচমকা ধুপ করে যেন মাটিতে পতিত হলো। দেহ মন শান্ত হলো চোখের পলকে। স্মরণ আমার হাতটা আগের তুলনায় একটু শক্ত করে ধরতেই যেন আমার ভেতর হতে কিছু কথা ছুটে বাইরে চলে এলো

— আমি তো সেদিন থেকেই চেয়েছি আপনার সাথে সারাজীবন পার করতে। যেদিন জেনেছি আপনিই আমার মনের মানুষ।…… তবে ওভাবে গুরুত্বহীন হয়ে থেকে যেতে চাইনি। আমিও একটু ভালোবাসা চেয়েছিলাম। এখন যখন আপনি বলছেন আমি আপনার প্রিয়জন প্রয়োজন দু’টোই তখন আমি আর আপনার প্যানিক অ্যাটাকের কারণ হতে চাই না।

— সরি আমরাও লুকিয়ে আপনাদের ভালোবাসা দেখতে চাই না। হসপিটাল যে প্রেমের জায়গা এটাও জানতাম না। সরি এগেইন।

হঠাৎ তৃতীয় ব্যাক্তির কন্ঠস্বর কনে এলো। আমি চমকে উঠে স্মরণের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলাম। সামনে তাকাতেই নজরে বন্দী হলো প্রিয়া, নীলিমা, শান্ত আর সজিব। ইশ! কি লজ্জার বিষয়! প্রিয়া কথাগুলো বলেই মিটিমিটি হাসতে ব্যাস্ত। স্মরণ যেন আমার চাইতেও দু’ধাপ ওপরের অস্বস্তি নিয়ে বসে রইলো। হুটহাট তার শুরু হলো কাশি। আমিও সুযোগ বুঝে তার চেয়ার টেনে ফ্রেন্ড নামক ভয়ংকর মানুষগুলোকে পেছন ফেলে একরকম পালিয়ে যেতে চাইলাম। পথে শুরু করে দিলাম আজ স্মরণের সাথে মিষ্টি ঝগড়া।

— আপনি একটা সভ্য ছাড়া লোক। বেসভ্য!

— আজব! আমি কি করলাম। তোমারই তো প্রেম প্রেম পাচ্ছিলো।

— কিন্তু আপনি আগে প্রেম প্রেম কথা বলা শুরু করেছিলেন।

.

সেদিন এক মিষ্টি ঝগড়ার পর স্মরণের সাথে আবারও এই বাড়িতে আসা। তবে একটু ভিন্নভাবে। মুখে হাসি নিয়ে। তারই চাওয়াতে।

স্মরণের বেডরুম এখন আমার কারণেই উজ্জ্বল থাকে। অথৈয়ের শাড়িগুলো আমি ছুয়ে দেখে আমিই রেখে দিয়েছি আলমারির অন্য তাকে। যে অথৈকে কেন জানিনা সম্পর্কের শুরুতে দেখার জন্য ভীষণ আগ্রহী ছিলাম সেই অথৈয়ের ছবি স্মরণ নিজে আমাকে দেখিয়েছে। আমার মাঝে মাঝে স্মরণের প্রতি ভীষণ ভালোলাগা কাজ করে। মন থেকে সম্মান আসে। প্রথম ভালোবাসা সত্যিই ভোলার মতো হয় না। স্মরণ যে খুব সহজে আমাকে মেনে নেয়নি এটা প্রমাণ করে মানুষ টা সত্যি করে ভালোবাসতে জানে। যে পুরুষ প্রথম বউ হারিয়ে ফেলে তৎক্ষনাৎ দ্বিতীয় বউকে মনে জায়গা দিতে জানে আমি বলবো সে পুরুষ সত্যি করে কাউকে ভালোবাসতে জানে না। পরদিন দ্বিতীয় বউ মৃত্যুকে বরণ করে নিলে আগামীতে সে তৃতীয় নারী ঘরে তুলতে পারবে খুব সহজে।

.

দেখতে দেখতে দিন কেটে রোজা ফুরিয়ে চলে এলো ঈদ। পেরিয়ে গেলো সেও । ধেয়ে এলো অঙ্কন আর প্রিয়ার বিয়ে। ঈদের দুদিন পর প্রিয়াকে তুলে নেওয়া হলো অঙ্কনের বাসায়। এরই মাঝে তাদের হানিমুনের ব্যাবস্থাটাও করা সারা। হঠাৎ একদিন প্রিয়া এসে হাজির আমার ঘরের চৌকাঠে। খুব ভোরে। ঈদের দশ দিনের মাথাতেই। ভীষণ অবাক আমিকে খচ্চর মেয়েটা আরো অবাক করে দিয়ে সোজা আমার আলমারির নিকট চলে যায়। আমি প্রশ্ন করতে গেলে বাধা হয়ে দাড়িয়ে জুড়ে দেয় শশুর বাড়ির গল্প। এই ঈদে মহারাণী মেহেদী দেয় নি৷ বিয়ের আগের দিন দিয়েছে। তবে রহ্যজনক ভাবে। এক হাত তার ফাঁকা ছিল। সে হাত বাসর রাতে অঙ্কনের সামনে মেলে দিয়ে বলেছিল তার বাচ্চাকালের বাসনা, বাসর রাতে বর তাকে মেহেদী দিয়ে দেবে। অতঃপর অঙ্কন প্রিয়ার হাতে মেহেদী দিয়ে দিয়েছে। ভীষণ সুন্দর করে মেহেদীর ছোঁয়ায় লিখেছে

” মাথামোটা একটা ”

প্রিয়ার আবেগের মূল্য বেচারা এভাবে দিলো? ভাবতেই আমার হাসি পায়।

.
প্রিয়ার ওমন করে হুটহাট আগমনের কারণ হলো আমার আর স্মরণেরও যেতে হবে ওদের সাথে। এটা প্রিয়ার শখ, জেদ বা জোরাজোরি। আমার মন যাওয়ার জন্য একটু আধটু আনচান করলেও স্মরণের কানে একথা তোলার সাহস করে উঠতে পারলাম না। দু’দিন হলো সে ভালো নেই। তার মন বড্ড খারাপ। হয়তো অথৈয়ের কারণে। তবে আমার ওপর তার কোনো প্রভাব সে ফেলে না। দিব্যি সাঝে ছোঁয়াকে কোলে নিয়ে আমাকে পাশে রেখে গালগল্প করে। চায়ে চুমুক দেয়। পায়ের অবস্থাও মোটামুটি ভালোর দিকে। ব্যান্ডেজ খুলে আনা হয়েছে তিনদিন আগে। প্রিয়া বড্ড সাহস নিয়ে স্মরণ কে বলে, বাড়ির বাইরে গিয়ে অঙ্কনের সাথে গাড়িতে বসতে। এই সকালে সকলে মিলে একটু হাওয়া খেয়ে আসবে। স্মরণ মেয়েদের সাথে কম কথা বলে কিনা তাই সে ঈষৎ বিরক্ত নিয়ে সাবধানে হেঁটে চলে যায় অঙ্কনের কাছে। তার যেতে খুব একটা অসুবিধা হলো না। হসপিটাল থেকে ফেরার পর নিচ তলায় একটা রুমেই ছোঁয়া আমি আর স্মরণ থাকছি। স্মরণ চলে গেলে প্রিয়া আমার হাত টেনে বলল জলদি চল। ট্রেনে যাবো আমরা। সকাল আটটায় ট্রেন। আমি দিশেহারা হয়ে ওর কথাতে তাল, লয়, সুর সব দিয়ে তড়িঘড়ি করে ছোঁয়ার কিছু জামা আমার ব্যাগে নিয়ে নিলাম। সাথে স্মরণের তিনটা করে শার্ট প্যান্ট আর তার ওষুধের বক্সটা নিয়ে ছুটলাম। ঘুমন্ত ছোঁয়াকে প্রিয়া তুলে নিয়ে এক প্রকার দৌড় শুরু করলো। আমার মন হুটহাট এক অজানা আনন্দ পাওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে রইলো।

চলবে….

( ১৭০০ শব্দ লিখেছি। আর একটু লিখলে শেষ হয়ে যেতো৷ কিন্তু আমার মা বিকেলে আমাকে এক প্রকার দৌড়ানি দিয়ে আকিকার অনুষ্ঠানে নিয়ে এসেছে 🙂💔
অর্ধেক অংশ পোস্ট করলাম। বাকিটুকু ইনশাআল্লাহ আগামী দিন দিয়ে গল্প করে দেবো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here