-“আমার পাঁচ বছরের একটি ছেলে আছে।আপনি যদি তাকে মেনে নিয়ে বিয়ে করতে চান তাহলে করতে পারেন।”
মেহরিনের কথা শুনে চায়ের কাপে চুমুক দিতে গিয়েও থেমে গেল শেহরেয়ার।চরম আশ্চর্যের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে সে।নিশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করে বললো,
-“আপনার কি আগে একবার বিয়ে হয়েছিল?”
-“বাচ্চা থাকার মানেই কি আগে বিয়ে হয়েছে?”
-“বিয়ে ছাড়া বাচ্চা বিষয়টা আশ্চর্যের নয় কি?”
-“দেখুন আপনাকে আমি এতোকিছু বলতে পারবো না।আমার ছেলে গুড্ডুকে মেনে নিয়ে যদি বিয়েটা করতে পারেন তাহলে করবেন!”
-“গুড্ডু!নামটা তো বেশ সুন্দর।এটা কি ওর আসল না?”
-“ওর নাম রায়ান রাহমান।আদর করে ও-কে আমি গুড্ডু বলে ডাকি।”
-“তবে মা তো আপনার এই ছেলের বিষয়ে আমাকে কিছু জানায়নি।”
-“আন্টিকে আমি বলেছিলাম।হয়তো আন্টি জানানোর প্রয়োজন বোধ করেনি।উনি হয়তো আমার কথা বিশ্বাসই করেননি।তবে আমি তো জানিয়ে দিলাম।”
-“আমি আবারও জিজ্ঞেস করছি।ছেলেটা কি আপনার?”
-“হ্যাঁ আমার।”
দুজনের মাঝে নিরবতা।শেহরেয়ার চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আড়চোখে মেহরিনকে পর্যবেক্ষণ করলো।এমন একটা কথা জানাতে এসেছে তবে তার মধ্যে বিন্দুমাত্র ইতস্তত বোধ নেই।
-“আমাকে পর্যবেক্ষণ করা শেষ হলে আপনার সিদ্ধান্তটা জানান।”
শেহরেয়ার ভালো করেই বুঝতে পারলো মেহরিন বেশ চালাক মেয়ে।
-“বাহ্!নিচের দিকে তাকিয়ে থেকেও বুঝে গেলেন আমি আপনাকে পর্যবেক্ষণ করছিলাম?”
-“এইসব বোঝা কোনো ব্যাপারই না।আমার আবার গুড্ডুকে স্কুল থেকে আনতে যেতে হবে।আপনার সিদ্ধান্ত জানালে খুশি হতাম।”
-“আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি।আর আপনার ছেলেকেও মেনে নিলাম।”
মেহরিন চমকে গিয়ে শেহরেয়ারের দিকে তাকালো।কারণ রায়ানের কথা শোনার পরে কোনো ছেলেই তাকে বিয়ে করতে রাজি হয়নি।কিন্তু শেহরেয়ার কেনো রাজি হলো!
-“আপনি হয়তো ভাবছেন আমি কেন রাজি হলাম?”
মেহরিন মাথা নাড়িতে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল।
-“আমি আপনার ছেলেকে একজন বাবা দিতে চাই।”
শেহরেয়ারের কথায় হাসি ফুটলো মেহরিনের মুখে।
-“আচ্ছা তাহলে আজকের মতো আসি মি.মির্জা।”
-“মি.মির্জা নয়।শেহরেয়ার!শুধু শেহরেয়ার বলে ডাকবেন।আর চলুন আমি আপনাকে আপনার গুড্ডুর স্কুলে নিয়ে যাই।তারপরে সেখান থেকে আপনার বাসায় পৌঁছে দিবো।”
-“না থাক।আমি একা চলে যেতে পারবো।”
-“পারবেন তো আমিও জানি।কিন্তু এটা আমার দায়িত্ব মিস.মেহরিন।”
মেহরিন আর বারণ করলো না।শেহরেয়ার মেহরিনকে নিয়ে রায়ানের স্কুলে গেলো।তাদেরকে দেখে রায়ান মেহরিনকে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো।শেহরেয়ারকে দেখে চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো,
-“এটা কে মামুনি?”
শেহরেয়ার রায়ানকে কোলে নিয়ে বললো,
-“আমি হলাম তোমার পাপা।”
-“আমার পাপা?”
-“হ্যাঁ।আমি তোমার পাপা।”
রায়ান খুশি হয়ে শেহরেয়ারকে জড়িয়ে ধরলো।
-“শেহরেয়ার আপনার এটা বলা ঠিক হয়নি।”
-“কেনো আপনি কি বিয়ে না করে পালিয়ে যাওয়ার প্লান করছেন?”
-“দেখুন আপনার বাবা-মা যদি এটা না মেনে নেয়?”
-“শেহরেয়ার মির্জা কারো মর্জি মতো চলে না।সে যেটা ভালো বুঝে সেটাই করে।তাই আমি যখন হ্যাঁ বলেছি তার মানে হ্যাঁ।এক আল্লাহ ছাড়া আর কেউ না করাতে পারবে না।”
শেহরেয়ার রায়ানকে চকলেট আর আইসক্রিম কিনে দিয়ে তাদের নিয়ে মেহরিনদের বাড়িতে গেল।
-“ভিতরে চলুন।”
-“আজকে আর যাবো না।কিছুদিন পরে তো এমনিই আসতে হবে।”
মেহরিন রায়ানকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেল।
__________________
-“মেহরিনের নাকি ছেলে আছে?”
শেহমীর মির্জার কথায় কোনো পাত্তা না দিয়ে হেনা সাহেবা বললেন,
-“আমাকে বলেছে।তবে আমি পাত্তা দেইনি।হয়তো মজা করেছে।”
-“উনার সত্যিই ছেলে আছে মা।”
শেহরেয়ারের কথায় চমকে গেলেন হেনা সাহেবা।তিনি কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে বললেন,
-“কি বলছিস এইসব তুই?তোকে কে বলেছে?”
-“মিস.মেহরিনই আমাকে বলেছেন।আর এটাও বলেছেন এই বিয়ে করতে হলে উনার ছেলেকে আমার মেনে নিতে হবে।”
-“অসম্ভব!এমন কিছুই করবি না তুই।”
-“কিন্তু আমি তো রাজি হয়ে গিয়েছি।”
-“মানে?কি বলে এসেছিস তুই ওই মেয়েকে?”
-“এটাই যে আমি উনাকে বিয়ে করবো এবং উনার ছেলেকেও মেনে নিয়েছি।”
শেহরেয়ারের কথায় মৃদু হেসে রুমের দিকে চলে গেলেন শেহমীর মির্জা।
-“তুই কি পাগল হয়ে গিয়েছিস বাবা?”
-“না মা।আমি একদমই ঠিক আছি।”
-“তাহলে তুই ওই মেহরিনকে বিয়ে করবি না।”
-“মা তুমি ভালো করেই জানো আমি যা একবার বলি তাই করি।শুধু শুধু আমাকে বারণ করো না।”
শেহরেয়ার’ হেনা সাহেবাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তার রুম চলে গেল।হেনা সাহেবা রাগের কারণে হাত মুথো করে চেয়ারে বসে পান চিবানো শুরু করলেন।
-“নাহ্!এই বিয়ে যে করেই হোক ভাঙতে হবে।আমি এ কোন মেয়ে দেখে আসলাম আমার ছেলের জন্য?”
____________
-“আপু সত্যিই শেহরেয়ার ভাইয়া রায়ানকে মেনে নিয়েছে?”
-“হ্যাঁ।কিন্তু আমি ভাবছি উনি কেনো মেনে নিলেন?”
-“উফ আপু!উনি মেনে নিয়েছেন এটাই হলো বড় কথা।”
মুনিয়ার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো মেহরিন।রিয়াজুল রাহমান এসে মেহরিনের মাথায় হাত দিয়ে বললেন,
-“তোর সত্যিটা জানানো উচিত ছিল শেহরেয়ারকে মা।”
-“আমি যা জানিয়েছি সেটাই সত্যি বাবা।গুড্ডু আমার ছেলে।এটাই ওর আসল পরিচয়।”
___________
শেহরেয়ার ওয়াশরুম থেকে এসে দেখলো তার মোবাইলে খল আসছে।কলটা রিসিভ করে সে বললো,
-“কাজটা কি হয়েছে নোমান?”
-“একটু সময় লাগবে স্যার।”
-“সবটা যেন ঠিকভাবে হয়।কোনো কিছু আবার ভুল করে বসো না যেন!”
-“আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন স্যার।”
কলটা কেটে বাঁকা হাসি দিয়ে শেহরেয়ার বললো,
-“এবার তো আসল গেম স্টার্ট হবে।”
হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে সেদিকে তাকালো শেহরেয়ার।সে দেখলো দরজার সামনে শেহমীর মির্জা দাঁড়িয়ে আছেন।
-“বাবা ভিতরে আসো।তুমি ওখানে কেনো দাঁড়িয়ে আছো!”
শেহমীর মির্জা শেহরেয়ারের রুম প্রবেশ করে তার কাঁধে হাত রেখে বললেন,
-“নিজে যেটা ভালো বুঝবে সবসময় সেটা করবে।কখনো কারো কথায় কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিবে না।”
-“জ্বি বাবা।তোমার কোনো চিন্তা করতে হবে না।তুমি শুধু বিয়ের ব্যবস্থাটা তাড়াতাড়ি করো।”
শেহমীর মির্জা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে শেহরেয়ারের রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলেন।
___________
-“মামুনি তুমি এর আগে পাপার সাথে আমার দেখা করাওনি কেনো?”
-“কারণ তার দেখা তো এর আগে আমি নিজেই পাইনি।”
-“কি সব বলো তুমি?তোমার আর পাপার বিয়ের পরেই তো আমি হয়েছি।তাহলে তুমি পাপার দেখা কিভাবে না পাও?”
পাশে থেকে মুনিয়া বললো,
-“কি রে রায়ু!তুই এইসব জানিস কিভাবে?”
-“আমাদের ম্যাডাম বলেছে বাবা-মার বিয়ে হলেই বাচ্চা আসে পৃথিবীতে।কিন্তু বাচ্চাটা কি আকাশ থেকে পড়ে?”
রায়ান থুতনিতে হাত দিয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে কথাটা বললো।মেহরিন আর মুনিয়া দুজনেই হেসে দিলো।মুনিয়া হাসতে হাসতে বললো,
-“যাক আসল বিষয় তো আর জানে না।”
মেহরিন মুনিয়ার মাথায় একটা চাটি মারলো।
________________
-“তুই কি ভেবেচিন্তে এই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিস শেহরেয়ার?”
শেহরেয়ার চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে হামিদের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“তোর কি মনে হয় আমি কোনো বিষয়ে না ভেবেই সিদ্ধান্ত নেই?”
-“তারপরেও মেহরিনের একটা বাচ্চা আছে সেটা জানার পরেও তুই এই বিয়ে করবি!”
-“হ্যাঁ।ছেলেটা শুধু উনার নয় আমারও।”
হামিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“তুই যা ভালো বুঝিস তাই কর।”
হঠাৎ করে শেহরেয়ারের মোবাইলে একটা ম্যাসেজ আসায় সে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
-“হামিদ আমার একটা জরুরি কাজ আছে।পরে দেখা হবে।”
-“আচ্ছা যা।”
শেহরেয়ার হামিদের বাড়ি থেকে বের হয়ে নোমানকে কল করলো।
-“তোমরা সবাই ঠিক আছো তো?”
-“জ্বী স্যার।আপনি একদম নিশ্চিত থাকুন।কাজটা শেষ করে ফেলেছি।”
-“গুড জব।”
শেহরেয়ার কলটা কেটে মোবাইলটা পকেটে ঢুকালো।
______________________
-“আপু আজকে তোর ফাস্ট দিন ভার্সিটিতে শিক্ষিকা হিসেবে।”
-“খুবই টেনশন হচ্ছে আমার।এই ভার্সিটিতে আমি পড়েছি।আর আজকে এই ভার্সিটিতেই শিক্ষিকা হিসেবে ক্লাস নিতে যাচ্ছি।”
মুনিয়া মেহরিনকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“অল দ্যা বেস্ট আপু।”
-“রায়ানকে বাবা স্কুলে নিয়ে গিয়েছে।তোর তো ভার্সিটি বন্ধ।ও-কে গিয়ে নিয়ে আসিস।বাবার তো বয়স হয়েছে তাই-না!”
-“কোনো টেনশন নেই আপু।আমি গিয়ে রায়ুকে নিয়ে আসবো।”
মেহরিন মুনিয়ার মাথায় একটা চুমু দিয়ে বাড়ি থেকে বের হলো।বাড়ি থেকে বের হয়ে দেখলো শেহরেয়ার গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মেহরিন অবাক হয়ে বললো,
-“আপনি এখানে?”
-“আজ আপনার ভার্সিটিতে ম্যাডাম হিসেবে জয়েনিং,আমি না এসে পারি!”
শেহরেয়ার গাড়ির দরজা খুলে দিলে মেহরিন বসে বললো,
-“আপনার এতো কষ্ট করার কিন্তু কোনো দরকার ছিল না।”
শেহরেয়ার গাড়ি চালানো শুরু করে বললো,
-“আমার তো কোনো কষ্ট হয়নি।”
#চলবে____
#অনুরাগের_প্রহর
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০১
________________
[আসসালামু আলাইকুম।আবারও নতুন গল্প নিয়ে আসলাম।ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]