অনুরাগের_প্রহর #মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি #পর্ব_০৩

0
377

#অনুরাগের_প্রহর
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০৩
_________________
শেহরেয়ার তার বিছানায় শুয়ে আছে।ক্লান্ত শরীর,চোখে ঘুম ঘুম ভাব।হঠাৎ করে তার মোবাইলে একটা কল আসলো।আলসেমি লাগা সত্ত্বেও মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো মেহরিন কল করেছে।শেহরেয়ার ভ্রু জোড়া কুঁচকে বললো,

-“আমি স্বপ্ন দেখছি নাকি!”

শেহরেয়ার আর কিছু না ভেবে কলটা রিসিভ করলো।

-“কি ব্যাপার ম্যাডাম,কি মনে করে কল করলেন?”

-“আপনি কি কিছু জানেন না?”

-“কেনো কিছু জানার কথা নাকি?”

মেহরিন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,

-“আপনার মা এসে আমাদের বিয়েটা ভেঙে গিয়েছে।”

শেহরেয়ার শোয়া থেকে উঠে বসে বললো,

-“হোয়াট?”

-“এতো অবাক হচ্ছে কেনো?এটাই তো হওয়ার ছিল।আমি আগেই বলেছিলাম।”

শেহরেয়ার রাগে চোয়াল শক্ত করে ফেললো।গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

-“আমি আপাতত কলটা কাটছি।”

শেহরেয়ার কলটা কেটে সোজা হেনা সাহেবার খোঁজে নিচে নামলো।নিচে নেমে দেখলো হেনা সাহেবা বসে বসে পান চিবচ্ছেন আর টিভি দেখছেন।শেহরেয়ার এসে টিভিটা অফ করে দিল।শেহরেয়ারের এমন কাজে বেশ অবাক হলেন হেনা সাহেবা।হেনা সাহেবাকে অবাক হতে দেখে শেহরেয়ার বললো,

-“এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই।তোমার সাথে জরুরি কথা আছে তাই টিভিটা অফ করেছি।”

-“কি জরুরি কথা বাবা?”

-“তুমি আজকে যে মহা কাজ করে এসেছো তা কি ভুলে গেছো?”

হেনা সাহেবা বুঝতে পারলেন শেহরেয়ারের ইঙ্গিত।তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন,

-“আমি যা করেছি তোর ভালোর জন্যই করেছি।”

-“মা তুমি বারবার ভুলে যাও কেনো শেহরেয়ার মির্জা একবার মুখ থেকে যে কথা বলে তা সে করেই ছাড়ে।তাই এইসব করা বন্ধ করো।আমি যদি বিয়ে করি মেহরিনকেই করবো।এটা আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত!”

শেহরেয়ার কথাগুলো বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে বাগানের দিকে গেল।হেনা সাহেবা রাগে পানের ডালা ছুড়ে মারলেন।

____________________
শেহরেয়ার বাড়ির বাগানের বেঞ্চে বসে চাঁদ দেখছে।তার চোখ বেয়ে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেঞ্চে হেলান দিয়ে বসলো।

-“মানুষের জীবনের কোনো কিছুই দীর্ঘস্থায়ী নয়।মেহরিন আপনি শুধু আমার জীবনে চিরস্থায়ী হয়ে থাকিয়েন!আই উইশ এভাবেই বিয়ের পরে আপনার সাথে রাত জেগে চাঁদ দেখবো!”

শেহরেয়ারের মুখে হাসি ফুটলো।

-“এই মেয়েটার কথা ভাবলে মুখে হাসি না ফুটে পারে না।এই অল্পদিনেই আপনি আমার অতি প্রিয় হয়ে গেছেন মেহরিন ম্যাডাম।যাকে মনে করলে সব কষ্ট দূর হয়ে যায়।”

________________________
-“আপু কোথা থেকে কি হয়ে গেলো!”

মেহরিন ল্যাপটপ নিয়ে ভার্সিটির কাজ করছিল।কিন্তু কাজে তার মন বসছে না।মুনিয়ার কথায় সে আরও কিছুটা অস্বস্তিতে পড়লো।তাও নিজেকে সামলে বললো,

-“এটা তো হতোই।আমি আগেই জানতাম।বাচ্চাসহ মেয়েকে কেউ সহজে বিয়ে করতে চায় না!”

-“আপু রায়ুর আসল পরিচয়টা বলে দিলেই তো হয়।”

মেহরিন চোখ রাঙিয়ে মুনিয়ার দিকে তাকালো।

-“গুড্ডু আমার ছেলে।এটাই ওর একমাত্র পরিচয়।এইসব কথা আমার সামনে আর বলবি না!”

মুনিয়া আর কিছু না বলে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

_______________________
জানালার কাঁচ ভেদ করে সূর্যের আলো রুমে ঢুকছে।যা চোখে পড়তে শেহরেয়ারের ঘুম ভেঙে গেল।উঠে বসে হাত-পা ছাড়িয়ে হাই তুললো।ক্যালেন্ডারের দিকে তাকাতে দেখলো আজ ছুটির দিন।তাই সে মুখের উপর বালিশ দিয়ে আবার শুয়ে পড়লো।চোখটা লেগে আসতে হঠাৎ উঠে বসলো শেহরেয়ার।

-“এখন ঘুমানো যাবে না।আগে গিয়ে রিয়াজুল আঙ্কেলের সাথে কথা বলে সবটা ঠিক করতে হবে।”

শেহরেয়ার বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে গেল।

-“শেহরেয়ার যেটা চাচ্ছে সেটা করুক।তোমার এইসবে না ঢুকাই উচিত।ও এখন বড় হয়েছে।”

শেহমীর মির্জার কথায় বেশ বিরক্তি প্রকাশ করলেন হেনা সাহেবা।প্রতিত্তোরে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলেন কারণ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন সেতারা বেগম।যিনি সম্পর্কে শেহমীর মির্জার মা!

হেনা সাহেবা দীর্ঘ সময় ধরে দরজার দিকে তাকিয়ে থাকায় সেদিকে ঘুরে তাকালেন শেহমীর মির্জা।সেতারা বেগমকে দেখে উনার মুখে হাসি ফুটলো।অতি দ্রুত গিয়ে সেতারা বেগমকে জড়িয়ে ধরলেন।

-“মা তুমি এসেছো!”

-“হ রে বাপ!কত্ত দিন পরে তোরে দেখলাম!”

হেনা সাহেবা ধীর পায়ে সেতারা বেগমের দিকে এগিয়ে গেলেন।জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললেন,

-“মা না জানিয়েই যে চলে আসলেন?”

-“ছেলের বাড়িতে আবার মা-কে জানিয়ে আসতে হবে নাকি!”

শেহমীর মির্জা গম্ভীর কণ্ঠে বললেন।পরিস্থিতি সামলাতে হেনা বেগম হাসি দিয়ে বললেন,

-“জানিয়ে আসলে আমি মায়ের সব পছন্দের খাবার রান্না করতাম।”

সেতারা বেগম অবাক হয়ে বললেন,

-“তুমি আবার আমরে কবে এতো আপ্যায়ন কইরা খাওয়াইলা মা জননী!আমার তো তা মনে পড়ে না।”

সেতারা বেগমের কথায় বেশ চ*টে গেলেন হেনা বেগম।তিনি আর সেখানে না দাঁড়িয়ে রুমের দিকে চলে গেলেন।শেহমীর মির্জা’ সেতারা বেগমকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে আসলেন।সেতারা বেগম চারিপাশে চোখ বুলিয়ে বললেন,

-“আমার নাতিডা কই রে!হেরে দি দেখি না কোথাও।”

-“আজকে ছুটির দিন তো তাই হয়তো এখনো ঘুমিয়ে আছে।চিন্তা করো না একটু পরেই চলে আসবে।”

সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে হঠাৎ শেহরেয়ারের চোখ পড়লো সোফায়।সেখানে সেতারা বেগমকে বসে থাকতে দেখে সে এক প্রকার দৌড়ে গিয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরলো।

-“কেমন আছো দিদুন?”

-“অনেক ভালা আছি।তোর কথাই জিগাইতে ছিলাম।”

শেহরেয়ার কিছুক্ষণ সেতারা বেগমের সাথে গল্প করে বললো,

-“দিদুন তুমি থাকো!আমার একটা জরুরি কাজ আছে।সেটা শেষ করে খুব শীগগির চলে আসবো।”

-“ছুটির দিনে আবার কিসের কাজ?”

শেহমীর মির্জার কথা শুনে শেহরেয়ার বললো,

-“মা গিয়ে কালকে বিয়েটা ভেঙে এসেছে।সেটাই ঠিক করতে যাচ্ছি।”

শেহমীর মির্জা অবাক হয়ে বললেন,

-“কি বলছিস তুই?আমি তো কিছুই জানি না।”

-“মা তো কাউকে কিছু না জানিয়েই কাজ করে বাবা।”

-“আসলে এই মহিলা যে কি শুরু করেছে!আচ্ছা চল আমিও যাই তোর আছে।”

-“কোনো দরকার নেই বাবা।ইনশাআল্লাহ আমি একাই সবটা সামলাতে পারবো।”

শেহরেয়ার মৃদু হেসে বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে গেল।

-“কি হইছে রে বাপ?আমি তো কিছুই বুঝলাম না।”

-“মা তোমার এইসব নিয়ে এখন ভাবতে হবে না।”

__________________
-“আঙ্কেল মা যেটা করেছেন সেটা ঠিক করেননি।তার জন্য আমি দুঃখিত।বিশ্বাস করুন আমি মেহরিনকে….শুধু মেহরিন না রায়ানকেও;আমি দুজনকেই সুখে রাখবো।প্লিজ আঙ্কেল আপনার মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে দিতে রাজি হয়ে যান।”

-“আমি তো রাজি ছিলাম বাবা।তোমার মা যা বলে গেছেন!”

-“বিয়েটা তো আমার মায়ের সাথে না আমার সাথে দিবেন।তাই আমার কথায় ভরসা রাখুন।আপনার মেয়েকে আর কেউ অপমান করতে পারবে না।’

রিয়াজুল রাহমান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,

-“আচ্ছা বাবা।আমি তোমার সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিবো।”

শেহরেয়ারের মুখে হাসি ফুটলো।পর্দার আড়াল থেকে সবকিছু শুনছিলো মুনিয়া।সে দৌড়ে গিয়ে সবটা মেহরিনকে জানালো।

-“মুনি তোর আড়িপাতার কি দরকার?সামনে গিয়ে বসে শুনলেই তো পারতি!”

-“ওফ আপু!আমি তো আড়িপেতে ভালো কথাই শুনেছি।”

মেহরিন আর কিছু না বলে নাস্তা রেডি করে নিয়ে গেল।শেহরেয়ারের সামনে রাখতেই সে এক প্লেট নিয়ে খেতে শুরু করে বললো,

-“কালকে রাত থেকে টেনশনে কিছু খেতে পারিনি।এখন তো সবটা ঠিক হয়েছে।তাই এখন নিশ্চিন্তে খেতে পারতেছি।”

শেহরেয়ারের কথা শুনে রুমে উপস্থিত সবাই হেসে দিল।শেহরেয়ার বিদায় নিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ করে রায়ান এসে শেহরেয়ারকে জড়িয়ে ধরলো।শেহরেয়ারও পরম যত্নে তাকে কোলে তুলে নিলো।

-“গুড্ডু কখন ঘুম থেকে উঠলো?”

মেহরিনের কথা শুনে পাশে থেকে মুনিয়া বললো,

-“এইতো কেবলই উঠলো রাজপুত্র!”

-“পাপা তুমি আমার আর মামুনির সাথে থাকো না কেনো?আমার সব ফ্রেন্ডদের পাপা-মামুনি তাদের সাথে থাকে।”

-“কিছুদিন পরে থেকে আমরা তিনজন একসাথে থাকবো।একটু ওয়েট করো বাবাই।আর তোমার চকলেট তোমার মামুনির কাছে দিয়েছি নিয়ে নিও।”

শেহরেয়ার রায়ানের গালে চুমু দিয়ে বাড়ি থেকে বের হতেই তার মোবাইলে নোমানের কল আসলো।কলটা রিসিভ করতেই নোমান বললো,

-“স্যার ‘ও’ পালিয়েছে।”

#চলবে____

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here