তোর_শহর_রাঙাতে_এসেছি🤍 #ইশা_আহমেদ #পর্ব_৫

0
389

#তোর_শহর_রাঙাতে_এসেছি🤍
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৫

১৪.
তানিম ঘুমন্ত তানাজের দিকে তাকালো।এই কয়েকদিনে সে এই মেয়েটার প্রতি দুর্বল হয়ে পরেছে।বাচ্ছা একটা মেয়ের প্রেমে কিনা পাগল হলো তানিম।নিজেই নিজেকে গালি দেয়।তানিম ঢাকায় তাদের বাংলোতে থাকে।তানাজকে নিয়ে সে বাংলোতেই এসেছে।তানিম তানাজকে কোলে তুৃলে নিলো।কলিংবেল বাজাতেই মেড এসে দরজা খুলল।তানিম তানাজকে নিয়ে সোজা তার রুমে গেলো।তানাজকে শুইয়ে দিলো।

তানাজ তানিমের শার্টের কলার ধরে নিজের কাছে আনলো ঘুমের ঘোরে।তানিমও উঠলো না কারণ সে যদি এখন উঠে তাহলে তানাজের ঘুম ভেঙে যাবে আর সে মোটেও তা চায় না।সে তানাজের কাছে শুয়ে তানাজকে দেখতে থাকে।এভাবে কয়েক দিন চললে হয়তো সে নিজের উপরে আর কন্ট্রোল রাখতে পারবে না।তাই সে ভেবেছে সে অন্যরুমে থাকবে।

তানাজের ঘুম ভাঙতেই সে নিজেকে একটা অন্যরুমে আবিষ্কার করলো।পাশে তাকাতেই দেখলো তানিম তার পাশে ঘুমিয়ে আছে তাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে। তানাজ হাসলো।এই গোমড়ামুখোর সাথে থাকতে ভালো লাগে তার।

১৫.
আজ দুই মাস হলো তানাজ আলাদা থাকে তানিম এর কাছ থেকে।তানিম তাকে সময় দেয় না মোটেও।তার কষ্ট হয় অনেক।তানাজ এতোদিনে বুঝতে পেরেছে সে তানিমকে ভালোবেসে ফেলেছে।আজকে সে কিছু একটা করবেই।তানিম তাকে স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছে ১০ শ্রেনীতে।তার মোটেও স্কুলে যেতে ভালো লাগে না।কিন্তু তানিমের কড়া আদেশ তাকে প্রতিদিন স্কুলে যেতে হবে।

বাসায় একটা টিচার এসে পরিয়ে দিয়ে যায় তাকে।আজকে ভালোবাসা দিবস তাই সে স্কুলে যাইনি।না যাওয়ার কারণ হচ্ছে তানিম সে আজকে তানিমকে পাগল করেই ছাড়বে।এটা তার ভাবা হয়ে গিয়েছে।সারাদিন কাটলো কি করবে ভেবে।এখন সন্ধ্যা ৭টা বাজে।সে একটা মহিলা সার্ভেন্টকে দিয়ে শাড়ি পরিয়ে নেয়।লাল টকটকে শাড়িটাতে তানাজকে যেনো লাল পরি লাগছে।নাকে ছোট একটা নাকেরটা কানে ছোট দুল।

সার্ভেন্টকে দিয়ে তানিমের রুমটাও সাজিয়ে নেয়।রাত ১০ টা বেজে গিয়েছে তানিম এখনো আসেনি।তানাজ অপেক্ষা করতে থাকে।তানাজের অপেক্ষার অবসান ঘটে ১১টায় তানিম দরজা খুলে রুমে ঢোকে।তানিম অবাক হয় রুমে ঢুকে।বিভিন্ন মোমবাতি আর ফুল দিয়ে সাজানো আর তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক লাল পরি।

তানিমের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।তানাজের শরীরের প্রায় অনেক অংশই দেখা যাচ্ছে।তানিম চোখ বন্ধ করলো।সে এখানে বেশি সময় থাকলে কিছু একটা করে বসবে।সে বেরিয়ে যেতে নিলেই তানাজ তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।তানিমকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলে,,,,”আ..মাকে কি সু..ন্দর লা..গ.ছে না তা….নিম”

তানিমের নিজের উপর আর কন্ট্রোল করতে পারে না।সে তানাজকে নিজের সাথে চেপে ধরে। তানাজ চমকে ওঠে।তানিম ঠোঁট মিলিয়ে দেয়।তানাজ তানিমের শার্ট খামচে ধরে।তানিম কিছু সময় পর ছেড়ে দেয়।তানিমের স্পর্শ গভীর হতে থাকে।তানাজ কাঁপতে থাকে। সে কি করেছে বুঝতে পেরেছে তার মোটেও এমন করা উচিত হয়নি।তানিম হুট করে তানাজকে ধাক্কা দেয়।তানাজ নিচে পরে যায়।

একটু বেশিই ব্যাথা পেয়েছে।যার কারণে চোখ থেকে পানি পরতে থাকে।কাজল লেপ্টে যায় তানিম একবার দেখে চোখ ঘুরিয়ে নেয়।তারপর তানাজের দিকে ঝুঁকে ওর গাল চেপে ধরে বলে,,,,
“বেশি করছো তুমি তানাজ।আমি একটা ছেলে অবশ্যই আমার সামনে একটা মেয়ে যখন এমন অবস্থায় আসবে তখন তো আমার মাথা কাজ করবে না তাও যদি মেয়েটা আমার বিয়ে করা বউ হয়।আর তোমার বয়স কতো হ্যা বেশি পেকে গেছো তুমি তাই বলছি আমার সামনে কখনো আর এই অবস্থা আসবে না।ফল ভালো হবে না”

কথাটা বলেই তানিম চলে যায় রুম থেকে।তানাজের কোমড়ে অনেক ব্যাথা পায় তাই উঠতেও পারে।হাঁটুতে মুখ গুঁজে কাঁদতে থাকে।সে এমন চাইনি কখনোই।কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো।

১৬.
তিন বছর হয়ে গিয়েছে তানাজ আর তানিম আলাদা।পরেরদিনই তানাজ চলে যায় তার বাবার বাড়ি। কিন্তু তাকে কেউ কিছুই বলে না।তারপর থেকে সে নিজের পড়াশোনায় মনোযোগ দেয়।এইতো আজকেই তার এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে।এসএসসিতে খুব ভালো রেজাল্ট করেছিলো।তানিমকে মনে পরলেও সে কখনো তানিমকে ফোন করেনি।

তানাজ তানিমকে এখন আগের থেকেও প্রচন্ড ভালোবাসে।তানাজ এখন একা একা দাঁড়িয়ে আছে তাদের বাড়ির ছাদে।সে এখন আর আগের মতো ছোট ফ্রক পরে ঘুরে বেরায় না।কারণ সে তো এখন আর সেই ছোট ১৫ বছরের তানাজ নেই সে এখন ১৮ বছরের একটা মেয়ে।সবই বোঝে,চঞ্চল তানাজ তো সেদিন রাতেই মারা গিয়েছে। এখন সবাই তাকে শান্ত বলে।

তানিমের কি তাকে মনে পরে না সে তো তানিমের কথা না ভেবে থাকতেই পারে না।আচ্ছা তানিম কি তাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে।তানাজ কাঁদতে থাকে।তার মাঝেই আরশি ফোন দেয় তাকে।তানাজ চোখ মুছে নিজেকে শান্ত করে ফোন ধরে।

রিসিভ করতেই আরশি বলে,,,তানাজ তুই কালকেই এ বাড়িতে আয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।মামনি বলেছে সবাইকে আসতে”

তানাজ কিছুটা তাচ্ছিল্য ভাবেই বলে,,,,”আমার সাথে আবার গুরুত্বপূর্ণ কথা বাদ দাও আপু আমি যাবো না”

আরশি বলে,,,,,”প্লিজ তানু আয় তানিম ভাইয়াকেও ডেকেছে আর সেদিন কি এমন হয়েছিল যে তুই পরের দিন চলে এসেছিলি আজও তোরা কেউ বললি না।বাড়ির সবাই চায় তোরা আবার এক হ।কি হয়েছিলো বোন বল আমাকে”

“আরশি আপু এইসব কথা আমি বলার প্রয়োজন মনে করছি না।আমাদের স্বামী স্ত্রীর কথা তো আর তোমাকে বলা যায় না রাখছি আমি আর কালকে আসছি”

তানাজ ফোন কেটে দেয়।তানাজ নিজের রুমে চলে আসে।বের করে তাদের বিয়ের ছবিগুলো। দেখতে লাগে,একটা ছবিতে তানাজ হাসছিলো খুব আর তানিম গম্ভীর মুখে তাকিয়ে ছিলো তার দিকে।নিজের আগের কথা ভাবতেই তাচ্ছিল্য হাসলো তানাজ।

১৭.
তনাজকে সকাল সকালই তার বাবা তাকে নামিয়ে দিলো জমিদার বাড়ির সামনে।আজকে সে শাড়ি পরেছে তিন বছর পর।শাড়িটা সেদিনের পর থেকে আর পরা হয়নি তার।শাড়ি পরেছে কিন্তু লাল না কালো।সে মাথায় ঘোমটা দিয়ে জমিদার বাড়িতে পা রাখলো।তিনটা বছর পর সে এ বাড়িতে ঢুকছে।ছোট্ট একটা মেয়ে মামনি বলে ছুটে তার কাছে আসলো।তানাজ তাকে কোলে তুলে নিলো।মেয়েটার মুখে চুমু দিয়ে বলল,,,,”কেমন আছে আমার আরসু মামনি”

ছোট্ট মেয়েটা বলল,,,”আমি তো ভাতো তেমন আছো মামলি”

তানাজ আরসুর কথায় ফিক করে হেসে দিলো।সে তানাজকে আরো চুমু দিয়ে বলল,,,,”আমিও ভালো আছি আমার সোনা মা”

দূর থেকে তানিম তানাজের হাসি দেখে।সে তিনবছরে অনেকবারই লুকিয়ে দেখে গিয়েছে এই মেয়েটাকে কিন্তু যত বারই দেখেছে সে হাসিনি।সেই দিনের পরই থেকেই হয়তো ওর হাসি গায়েব হয়ে গিয়েছে।

চলবে,,,,,?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here