#তোর_শহর_রাঙাতে_এসেছি
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৭
২১.
আজকে তানাজ আর তানিম এসেছে গ্রামে।তানাজের রেজাল্ট দেওায়ার পরপরই ওরা রওনা দিয়েছিলো গ্রামের উদ্দেশ্য।জমিদার বাড়ির সামনে এসেই দুজনে নামে।বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই সবাই ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে।তারপর ওরা ফ্রেশ হতে চলে যায়।তানাজ এখনো তানিমের সাথে তেমন কথা বলে না।
আর তানিম সে তো তার একটা মাত্র বউয়ের অভিমান ভাঙানোর জন্য সব করছে।কিন্তু তবুও সে তানাজের অভিমান ভাঙাতে পারেনি।বেচারা সেই দুঃখে শেষ।
ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতেই তানাজ তার বাবা মাকে দেখে ছুটে জড়িয়ে ধরে। তারপর কথা বলে সবাই একসাথে রাতের খাবার খেতে বসে।আজকে তনাজের বাবা মা এখানেই থাকবে।
খেতে খেতে সিফাত বলল,,,”ভাইসাহেব কি বলেন তানাজ আর তানিমের বিয়েটা আবার করা হোক তাহলে”
তানাজের বাবাও এতে সায় দেন। সেও চাইছিলেন তার মেয়েটা সুখে থাকুক তানিমের সাথে।হয়তো ওরা এতোদিন আলাদা ছিলো কোনো এক অজানা কারণে তাও তিনি চাইছেন ওরা এক হক।
তানাজ কিছু বলতে পারে না কারণ কি বলবে সে,সে নিজেও তো তানিমকে ছাড়া থাকতে পারবে না।হয়তো তিনটা বছর ছিলো কিন্তু তানাজের যে কত কষ্ট হয়েছে তা সে জানে।তাই চাইছে না আর কিছু হক তাদের মধ্যে।
২২.
দেখতে দেখতে তানাজ আর তানিমের বিয়ের দিন চলে আসলো।খুব ভালো করেই ওদের বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হলো।আরশি তানাজকে তানিমের ঘরে বসিয়ে দিয়ে গেলো।তনাজ চুপটি করে বসে রইল।তার ভয় করছে কেনো জানো।দরজা খোলার শব্দ হতেই সে বিছানার চাদর খামচে ধরল।বুক ধুকপুক করছে।
তানিম এসে ওর পাশে বসে বলে,,,”আমি জানি আমি সেদিন ভুল করেছিলাম কিন্তু দেখো তার জন্য কিন্তু উপকারও হয়েছে তুমি কিন্তু তার পর থেকেই পড়াশোনায় সিরিয়াস হয়েছিলে।তাই তো তুমি এখন কতো ভালো রেজাল্ট করেছো। আর তুমি যদি আমার সাথে থাকতে তাহলে কোনো না কোনো বাহানা দিয়ে আমার কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করতে আর পড়ালেখা তোমার কিছুই হতো না”
তানিম থেমে আবার বলে,,,,”আমি বলছি কি তুমি যাই হোক না কেনো আমরা হাসবেন্ড ওয়াইফ। বউ প্লিজ যা হয়েছে ভুলে যাও আবার আমরা একসাথে হয়ে যাই প্লিজ বউ”
তনাজ মৃদু হেসে বলে,,,,”আমি ভালোবাসি আপনাকে তাই চাইলেও আপনাকে নিজের থেকো দূরে সরাতে পারবো না প্রিয়”
তানিম খুশি হয় অনেক ও বলে,,,,”সত্যি বউপাাখি আই লাভ ইউ সো মাচ”
তানাজ মুচকি হাসে।ফ্রেশ হয়ে আসে দুজনই।তারপর তানিম তানাজকে বলে,,,,”চলো ছাদে যাই আজ রাতটা দুজন ছাদে চাঁদ দেখে কাটিয়ে দেই”
তানাজ মাথা নাড়ায়।তানিম তানাজকে নিয়ে ছাদে আসে।রাত ১২ টা বাজতেই ছাদের লাইট জ্বলে উঠে।আর সবাই একসাথে বলে,,,,
“শুভ জন্মদিন তানাজ”
তানাজ হা করে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকে।ও তো বিয়ের কারণে ভুলে গিয়েছিল আজকে ওর জন্মদিন।সবাই হাসে ওর অবস্থা দেখে।তানিম ওকে নিয়ে কেকের কাছে যায়।কেক কেটে সবাইকে খাইয়ে দেয়।তারপর সবাই একে একে তানাজকে উপহার দিতে থাকে।তানাজও মুচকি হেসে নেয়।
সবাই ওদের দুজনকে একা রেখে চলে যায়।তানিম আর তানাজ দোলনার উপর গিয়ে বসে।তানিম দোলনাটাকে খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজিয়েছে।তানাজ তানিমকে বলে,,,,
“আমরা আবার কবে ঢাকা চলে যাবো”
তানিম বলে,,,”এই তো আর কিছুূদিন থেকেই চলে যাবো।আমার ও অফিস করতে হবে গিয়ে।”
ওরা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকে।তানাজ কিছু বললেই হাসছে।এই হাসির শব্দে তানিমের বুকে ঝংকার তুলছে।সে তার প্রিয়তমার কথা মন দিয়ে শুনতে থাকে।
২৩.
৫টা বছর কেটে গেলো আরো।তানাজ আর তানিম আজ দেশের বাইরে থেকে আসবে তাদের একমাত্র ছেলে তাশাতকে নিয়ে।সবাই অধীর আগ্রহে বসে আছে।তিনটা বছর ওরা বাইরে ছিলো কারণ হলো ওদের ছেলে তাশাত।ওদের ছেলের অসুস্থতার চিকিৎসা করতেই তিন বছর বাইরে ছিলো।আজকে আসছে বাড়িতে।
আরশি একহাতে সব সামলাচ্ছে। এখন যে সেই এই বাড়ির জমিদার গিন্নি।তার তো অনেক দায়িত্ব।সে সব দিক সামলাতে কিছুটা হিমশিম খায়।কিন্তু সে নিজের দায়িত্ব গুলো ঠিক মতো পালন করে।আরসুও ভীষন চুপচাপ স্বভাবের মেয়ে।
মায়ের মতো হয়েছে একদম।মেয়েটা শান্তশিষ্ট ভদ্র আরশি যা বলে ভালো মেয়ের মতো তাই করে।আরসুকে এখন সে তাশাতের রুম সাজাতে দিয়ে এসেছে।আরসুও তার ভাইয়ের ঘর সাজাতে ব্যাস্ত তার সাথে একজন সার্ভেন্টকে পাঠিয়েছে আরশি।ছোট মানুষ কি করে কে জানে তাই সে সার্ভেন্ট পাঠিয়েছে।
২৪.
ছোট্ট আরসু তার মন মতো রুম সাজাচ্ছে।আজকে তার মামনি আসছে।কতো বছর দেখে তার মামনি আর চাচ্চুকে।আর সাথে তার মিষ্টি ভাই তাশাত।আরসু প্রায়ই তাশাতের সাথে কথা বলতো ভিডিও কলে।তখনই সে তাশাতের পছন্দ শুনেছিল।
সার্ভেন্ট আরসুকে বলে,,,,”আরসু মামনি তুমি এখন একটু বিশ্রাম নাও আমি বাকিটা সাজিয়ে দিচ্ছি”
আরসু তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,,,,”না না আন্টি তোমার সাজাতে হবে না আমি নিজেই সাজিয়ে নিচ্ছি তুমি শুধু আমার ধরে দাও জিনিসগুলো”
সার্ভেন্টটা আরসুর গাল টিপে দিয়ে বলে,,,”তুমি খুব ভালো তাশাত মামনি”
আরসু মুচকি হাসে।আরসু নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরে।তার এখন অনেক কাজ।তার ভাইয়ের জন্য রুমটা সাজিয়ে সে গোসল করতে যাবে।লাল টুকটুকে জামা পরবে।
২৫.
তানাজ আর তানিম বাংলাদেশে পৌছালো কিছু সময় হলো।তাশাত তানিমের কোলে।এয়ারপোর্ট থেকে বের হতেই তারা তুনানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।তানিম তানাজের হাত ধরে নিয়ে তুনানের কাছে যায়।তুনান হেসে তানিমকে জড়িয়ে ধরে।
বাড়ি আসতেই সবাই হামলে পরে ওদের উপর।ওরা সবার সাথে কথা বলে রুমে যায়।আর আরসু সে তো তাশাতকে নিয়ে তার জন্য সাজানো রুম দেখাতে ব্যাস্ত।তানাজ ফ্রেশ হয়ে এসে বসে বেলকনিতে।তানিম ফ্রেশ হয়ে এসে তানাজকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
তানাজ মুচকি হাসে।সে জানে লোকটা আর কেউ নয় তানিম।তানিম তানাজের খোলা চুলে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে বলে,,,”আমার শহরটা রাঙানোর জন্য ধন্যবাদ প্রিয়তমা।তুমি যেমন আমার শহর রাঙায়েছিলে আমিও কিন্তু #তোর_শহর_রাঙাতে_এসেছিলাম।”
তানাজ মুচকি হেসে তানিমের বুকে মাথা রাখে।এই জায়গাটা শান্তির বড্ড শান্তি পায় সে এখানে মাথা রেখে।সেও বিড়বিড় করে বলে,,,আমিও আপনায় খুব ভালোবাসি।আপনাকেও ধন্যবাদ আমার শহর রাঙানোর জন্য।
সমাপ্ত….!
Motamuti valo lgse,,,,,, khub besi na