তোর_শহর_রাঙাতে_এসেছি🤍 #ইশা_আহমেদ #পর্ব_৪

0
380

#তোর_শহর_রাঙাতে_এসেছি🤍
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৪

১১.
আরশিকে ডাকতে এসেছে তুনান আর তানিমের কাজিননের বউ নুরা।আরশি বসে ছিলো।তুনান অনেক আগেই বেরিয়ে গিয়েছিলো।নুরা আরশিকে বলে,,,,”আরশি নিচে চলো সবাই খেতে বসেছে”

আরশি বলে,,,”আসলে আমি জানি না আপনি কে তাই কি বলে ডাকবো তাও জানি না।বলছি কি আমার বোন কোথায় ওর কাছে নিয়ে যাবেন আমায়।”

নুরা বলে,,,”ওহ আমি ভুলে গিয়েছিলাম তানিমেরও কালকে বিয়ে হয়েছে।হুট করে বিয়েটা হলো তো তাই আরকি।আচ্ছা চলো আমার সাথে”

আরশিকে নিয়ে নুরা তানিমের রুমের সামনে আসে।নুরা নক করতেই তানাজ দরজা খোলে।তানাজকে দেখে নুরা চোখ বড়বড় করে তাকায়।তানাজ আরশিকে দেখে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,”আপাই তুমি কোথায় ছিলে জানো এই লোকটা প্রচুর বাজে কেমন করে কথা বলে শুধু”

নুরা আর আরশি তানাজকে নিয়ে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়।নুরা তানাজকপ বলে,,,,”তুমি এমন ফ্রক কেনো পরে আছো”

তানাজ বলে,,,”আমি তো সবসময় এমন ফ্রক আর প্লাজু পরে থাকি কেনো কোনো সমস্যা”

নুরা বলে,,,”হায় আল্লাহ তুমি এখন এই জমিদার বাড়ির ছোট বউ তোমাকে এমন ফ্রক পরতে দেখলে তো সবাই ছি ছি করবে”

তানাজ বোকার মতো প্রশ্ন করে,,,”কেনো জমিদার বাড়ির বউ হলে কি ফ্রক পরা যায় না সেইটা কোনো কথা”

আরশি বলে,,,,”তানাজ চুপচাপ শাড়ি পরে নে বোন তোর এখন বিয়ে হয়েছে তো”

তানাজ হেসে বলে,,,,”আমি কি বলেছি আমি শাড়ি পরবো না আমি তো শুধু জিজ্ঞেস করলাম।”

নুরা আর আরশি মিলে তানাজকে সাজাতে থাকে।আজ প্রথম শাড়ি পরেছে তানাজ।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে নেয় তাকে কেমন বউ বউ লাগছে।আসলে সে তো বউই।তানিমের বউ লাল টুকটুকে বউ তানিমের।তানাজ লজ্জা পেলো সেও এখন কারো বউ এই ভেবে।তানাজ মুচকি হাসে আয়নার দিকে তাকিয়ে।নুরা তা দেখে বলে,,,,”ছোট বউয়ের হয়তো মনে রং লেগেছে”

তানাজ লজ্জা পায় এতে আরশি আর নুরা জোরে জোরে হাসতে থাকে।তার ভেতরেই রুমে তানিম ঢোকে।তানিমকে দেখে নুরা ঘোমটা টেনে দেয় একটু বেশি।আরশিকে নিয়ে বের হয়ে যায় রুম থেকে।তানাজ তখনও আয়নায় নিজেকে দেখছিলো।তার তো কোনো ধ্যানই নেই রুমে কেউ ঢুকেছে।তানিম সামনে তাকিয়ে থমকে যায়।তার সামনে যে ঘোমটা দিয়ে একটা লাল পরি দাঁড়িয়ে আছে।সে তানাজকে গভীর দৃষ্টিতে দেখতে থাকে।

আগে কোনো মেয়ের দিকে এভাবে তাকানো হয়নি।আজকে তাকাচ্ছে প্রথম।তানিমের চোখ যায় তানাজ ফর্সা পেটে যা উন্মুক্ত। তানিমের ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছা তারপর নিজেকেই গালি দেয় কি ভাবছে সে।তাও এই পিচ্চি মেয়েকে নিয়ে।তানাজ ততক্ষণে তানিমকে দেখেছে ও লজ্জা পায় কেনো জেনো!নিজেই জানে না এতো লজ্জা কোথা থেকে আসছে বুঝতে পারছেনা তানাজ।

তানাজ আয়নার সামনে থেকে সরতে গেলে শাড়িতে পা বেঁধে পরে যেতে নেয় তখনই তানিম তানাজকে ধরে ফেলে।কোমরে হাত দিয়ে বাঁচায়।তানিমের ইচ্ছাটা পূরণ হয়ে গেলো।তানাজ কেঁপে উঠলো।তার এমন কেনো হচ্ছে।ও তাড়াতাড়ি সরে দাঁড়ালো।

তানিম গম্ভীর কন্ঠে বলল,,,,”ঠিকমতো হাঁটতে পারো না তাহলে কেনো শাড়ি পরেছো”

তানাজ কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,,,”এখন শাড়ি পরেছি বলে বলছেন শাড়ি পরেছি।আর না পরলে বলতেন জমিদার বাড়ির বউ তুমি শাড়ি পরোনি কেনো?”

শেষের কথাগুলো কিছুটা ভেঙ্গিয়ে বলল।তানিমের কিছুটা রাগ হলো কিন্তু ও সেইটা প্রকাশ না করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

১২.
নুরা আরশি আর তানাজকে নিয়ে নিচে নামে।নুরা নিচে নামার আগে তানাজকে শাড়িটা উঁচু করে পরিয়ে দেয়। যেন কুচিতে বেঁধে না পরে যায়।নুরা তানাজ আর আরশিকে নিয়ে খাবার টেবিলের সামনে আসে।ওখানে আগে থেকেই তুনান আর তানিম সাথে সামিহা আর জমিদার সিফাত খানও উপস্থিত ছিলেন।তানাজ আর আরশিকে নুরা চেয়ারে বসতে বলে।

তানাজ ধপ করে বসে পরে তানিমের পাশের চেয়ারে।এতে সবাই ওর দিকে তাকিয়ে পরে।ও সবার দিকে তাকায়।সামিহা মিষ্টি হাসে সে জানে এই চঞ্চল মেয়েটাই তার গম্ভীর ছেলেটাকে ঠিক করতে পারবে।সিফাত প্রথমে তানাজ আর তানিমের বিয়েটাতে একটু বিরোধিতা করলেও পরে সামিহার কথায় রাজি হয়।

সামিহা মিষ্টি হেসে বলে,,,,”শুভ সকাল দুই মামনি”[লেখিকা ইশা আহমেদ]

তানাজ মিষ্টি হেসে ঝটপট উত্তর দিলো,,,,”শুভ সকাল আন্টি”

আরশি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,,,,”শু.ভ স..কাল”

সামিহা তানাজকে বলে,,,,”আমি এখন তোমার আন্টি নই তুমি আমাকে মামনি বলে ডাকবে তানাজ।আর আরশি মামনি তুমি কি আমাকে ভয় পাচ্ছো ভয় পাওয়ার দরকার নেই।নিজের বাড়ি মনে করো মামনি”

আরশি মাথা নাড়ায়।পাশ থেকে তুনান হাসে।সে জানে মেয়েটা প্রচন্ড লাজুক।তার অবশ্য তানাজকে খুব ভালো লেগেছে।তানিমের জন্য একদম ঠিক আছে ও।তানিম নিজের মতো খেয়ে যাচ্ছে।তানাজও কারো দিকে না তাকিয়ে খেয়ে যাচ্ছে।

১৩.
আজকে তানিম ঢাকায় চলে যাবে।ওদের বিয়ের আজকে ৫ দিন হলো।তানিম মোটেও তানাজকে নিতে চায় না তার সাথে কিন্তু সামিহা জোড় করে তার সাথে তানাজকে পাঠাচ্ছে। তানাজ সেই খুশি শহরে যাবে।কিন্তু আরশির সাথে দেখা হবে না জেনে একটু কষ্ট হচ্ছে।

তানিম রুমে আসে।তানাজ নিজের মতো কাজ করছে পরনে তার কালো শাড়ি।পেটের একপাশ উন্মুক্ত।তানিম ঘোরে চলে যায়।তানাজের দিকে এগোতে থাকে।তানাজের কাছে গিয়ে ওর উন্মুক্ত পেটে হাত রাখে।তানাজ কেঁপে উঠে। ও পেছনে ঘুরে দেখে তানিম।নিজেকে ছাড়াতে চায় তানিমের কাছ থেকে কিন্তু তানিম শক্ত করে ধরে আরো।

তানাজ তানিমের তুলনায় অনেকটা খাটো হওয়ায় তানিম ওকে কোমড় জড়িয়ে নিজের মুখ বরাবর তোলে।ঠোঁটে আলতো করে কিস করে।তানাজ বরফ হয়ে যায়।কি করছে তানিম যে তানিম তাকে দেখতে পারে না সে তাকে কিস করছে এটাও ভাবা যায়।তানিম এবার তানাজকে ছেড়ে দেয়।হুশ ফিরেছে ওর।নিজের কাজে নিজেরই লজ্জা লাগছে।

এই মেয়ের ভেতর কি এমন আছে যে সে শাড়ি পরা দেখলেই মাথা কাজ করে না ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে খুব।তানিম রুম থেকে হনহন করে বেরিয়ে যায়।তানাজ ঠোঁটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তানিম ওকে কিস করলো ঠোঁটে ও বিশ্বাসই করতে পারছে না।তানাজ লাফিয়ে কিছু সময় নাচলো।তার ভেতরেই আরশি রুমে ঢোকে।তানাজকে থাকিয়ে বলে,,,,”কি করছিস তুই এমন ভাবে নাচছিস কেনো?”

তানাজ হাসতে হাসতে বলে,,,,”জানো আপাই আমার গোমড়ামুখো বুড়ো বরটা আমাকে কিস করেছে ঠোঁটে সেই খুশিতেই নাচছি”

আরশি লজ্জা পায়।এই মেয়ের একটুও লজ্জা নেই নাহলে বড়বোনকে কেউ এসব বলে।সে তানাজকে বলল,,,,”তুই কি পা’গ’ল হয়েছিস তানিম ভাইয়াকে বুড়ো কেনো বলছিস ভাইয়ার বয়স তো মাত্র ২৫ তাহলে।”

তানাজ বলে,,,,”বিয়ের রাতে উনিই তো বলেছিলেন উনি আমার থেকে ১০ বছরের বড় আর আমি উনাকে কেনো বিয়ে করলাম তাই বুড়ো বলছি”

আরশি বলে,,,”চুপ কর নে তোকে শাড়ি পরিয়ে দেই”

আরশি তানাজকে সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে দিলো।তানাজও আর কথা না বলে চুপচাপ শাড়ি পরে নিলো।শাড়ি পরা শেষ হতে নিজেকে একবার দেখে নিলো আয়নায়।তারপর বের হয়ে গেলো রুম থেকে।

১৪.
তানিম ঘুমন্ত তানাজের দিকে তাকালো।এই কয়েকদিনে সে এই মেয়েটার প্রতি দুর্বল হয়ে পরেছে।বাচ্ছা একটা মেয়ের প্রেমে কিনা পাগল হলো তানিম।নিজেই নিজেকে গালি দেয়।তানিম ঢাকায় তাদের বাংলোতে থাকে।তানাজকে নিয়ে সে বাংলোতেই এসেছে।তানিম তানাজকে কোলে তুৃলে নিলো।কলিংবেল বাজাতেই মেড এসে দরজা খুলল।তানিম তানাজকে নিয়ে সোজা তার রুমে গেলো।তানাজকে শুইয়ে দিলো।

তানাজ তানিমের শার্টের কলার ধরে নিজের কাছে আনলো ঘুমের ঘোরে।তানিমও উঠলো না কারণ সে যদি এখন উঠে তাহলে তানাজের ঘুম ভেঙে যাবে আর সে মোটেও তা চায় না।সে তানাজের কাছে শুয়ে তানাজকে দেখতে থাকে।এভাবে কয়েক দিন চললে হয়তো সে নিজের উপরে আর কন্ট্রোল রাখতে পারবে না।তাই সে ভেবেছে সে অন্যরুমে থাকবে।

চলবে……..?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here