#অনুরাগের_প্রহর
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_১১
_________________
-“দেখুন আপনি আগে শান্ত হন মেহরিন।আমি আপনাকে সবটা বুঝিয়ে বলতেছি।”
মেহরিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বন্দুকটা ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে বললো,
-“বলুন!”
শেহরেয়ার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলো,
-“আমি এক সময় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করতাম!তবে আমার একটা ভুলের জন্য আমার চাকরিটা চলে যায়।”
মেহরিন অবাক হয়ে বললো,
-“কি ভুল?”
-“আমার বোনের খু*নীদের ধরতে গিয়েছিলাম।তাদের স্বীকারোক্তি শুনে ওদের উপর এতোটাই রাগ উঠে গিয়েছিল যে আমি ওদেরকে গু*লি করে মে*রে ফেলি!আর জানেনই তো নিজের ইচ্ছা হলেই গু*লি করা যায় না এই কর্মস্থলে।এই কারণেই আমার চাকরিটা চলে যায়।”
হাফসার কথা মনে হতে শেহরেয়ারের চোখ থেকে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।মেহরিনের শেহরেয়ারের কাঁধে হাত রাখলো।
-“রাজকে মারেন নি কেনো তখন?”
-“ও-কে খুঁজে পাইনি।আর যখন খুঁজে পাই তখন ও-কে আটকে রেখে কিছুদিন শাস্তি দিয়েছিলাম।কিন্তু ওর লাক ভালো তাই পালিয়ে বাড়িতে চলে এসেছিল।তারপরের সব তো আপনি জানেনই!”
-“আপনাকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো ভাষা আমার জানা নেই।তারপরও বলবো নিজেকে সামলে নেন।”
শেহরেয়ার কিছুক্ষণ মেহরিনের দিকে তাকিয়ে থেকে তাকে জড়িয়ে ধরলো।মেহরিন শেহরেয়ারের এহেন কাজে বেশ অবাক হলো।মেহরিন শেহরেয়ারের পিঠে হাত বুলিয়ে দিল।শেহরেয়ার কিছুক্ষণ পরে মেহরিনকে ছেড়ে দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো,
-“তোমাকে হাগ করে সব কষ্ট এক নিমিষে শেষ হয়ে গেছে।”
মেহরিন ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“তোমাকে!আপনি থেকে তুমি হয়ে গেল?”
-“হুম হয়ে গেল।আমার আর আপনি বলতে ভালো লাগে না।”
-“আপনি যখন তুমি করে বলা শুরু করলেন তাহলে আমারও তো তুমি করে বলা উচিত!”
শেহরেয়ার মেহরিনের কিছুটা কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো,
-“আমি তো শুনতে চাই।”
-“এতো কাছে আসলেন কেনো?”
-“নিজের বউয়ের কাছে এসেছি।সমস্যা কি?”
-“দেখুন…….”
মেহরিনকে কিছু বলতে না দিয়ে শেহরেয়ার বললো,
-“দেখুন না দেখো!”
-“আচ্ছা হয়েছে তো।এখন সরো!আমার কাজ আছে।”
শেহরেয়ার মুচকি হেসে বললো,
-“এটলাস্ট!”
মেহরিন আর কিছু না বলে শেহরেয়ারকে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেল।
-“যাক অল্পতেই সবটা ঠিক হয়ে গেল।যা ভয় পেয়ে গেছিলাম!”
–
–
–
মেহরিন রায়ানকে রুমে নিয়ে এসে দেখলো শেহরেয়ার ঘুমিয়ে আছে।মেহরিন রায়ানকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে দিতে শেহরেয়ারের দিকে তাকিয়ে রইলো।মুচকি হেসে বললো,
-“আমি কখনো ভাবিনি তোমার মতো কেউ আমার জীবনে আসবে শেহরেয়ার।তোমাকে পেয়ে আমি নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করি!বিয়ের এতোদিন হয়ে গেল,এতোদিনেও তুমি একবারও আমার ছেলেকে নিয়ে কোনো প্রশ্ন করোনি।তবে আমি নিজেই তোমাকে সবটা জানাবো।সবটা জানার অধিকার তোমার আছে।”
হঠাৎ মেহরিনের মোবাইলে একটা কল আসলো।সে তাকিয়ে দেখলো রিয়াজুল রাহমান কল করেছেন।সে মোবাইলটা নিয়ে বেলকনিতে চলে গেল।সে চিন্তিত হয়ে কলটা রিসিভ করে বললো,
-“এতো রাতে কল করলে যে বাবা?তোমার শরীর ঠিক আছে?মুনিয়া ঠিক আছে?”
-“আমি আর মুনিয়া দুজনই ঠিক আছি।আমি একটু পরে চট্টগ্রাম যাচ্ছি মিটিংয়ের জন্য।এটা জানাতেই তোকে কল করলাম।মা রে তুই ভালো আছিস তো?”
-“হ্যাঁ বাবা আমি খুব ভালো আছি।”
-“হেনা সাহেবা……..”
রিয়াজুল রাহমানের পুরো কথা শেষ হওয়ার আগে মেহরিন বললেন,
-“বাবা উনি আমাকে আর রায়ানকে মেনে নিয়েছেন।”
রিয়াজুল রাহমানের মুখে হাসি ফুটলো।আরো কিছুক্ষণ মেয়ের সাথে কথা বলে কল কাটলেন।
____________________________
সকাল বেলা ঘুম ভাঙতে শেহরেয়ার দেখলো মেহরিন রুমে নেই।তারপরে রায়ানের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে গালে হাত দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।শেহরেয়ার মৃদু হেসে রায়ানের গালে একটা চুমু দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল।
-“বউমা,শেহরেয়ার কোথায়?”
-“আমি যখন নিচে এসেছি তখন তো ঘুমিয়ে ছিল মা।”
-“ওহ্ আচ্ছা।ঠিক আছে বউমা তুমি চা-টা বানাও।আমি ব্রেকফাস্ট বানিয়ে ফেলেছি প্রায়!”
-“একটা কথা বলি মা?”
হেনা সাহেবা মৃদু হেসে বললেন,
-“আবার প্রশ্ন করা লাগে নাকি?”
-“মা আপনার মুখে বউমা ডাকটা শুনতে খুব মধুর লাগছে!”
হেনা সাহেবা হাসি দিয়ে মেহরিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।মেহরিন চা বসিয়ে বললো,
-“মা আর কি করতে হবে বলুন।”
-“আর কিচ্ছু করতে হবে না।তুমি গিয়ে রায়ান ভাইকে রেডি করো।ওর তো স্কুলে যেতে হবে।”
-“মা ওর স্কুল বন্ধ।গ্রীষ্মকালের ছুটি দিয়েছে।”
-“যাক তাহলে তো ভালোই হয়েছে।”
-“কি ভয়ঙ্কর দৃশ্য!বউ-শ্বাশুড়ি একসাথে রান্নাঘরে!”
শেহমীর মির্জার কথায় হেনা সাহেবা বললেন,
-“এই দৃশ্য এখন থেকে প্রতিদিনই দেখতে পাবে।”
মেহরিন মৃদু হাসলো হেনা সাহেবার কথায়।
-“যাক ভালোই হলো তাহলে!”
শেহমীর মির্জা হাসি দিয়ে সোফায় বসতে যাবে এমন সময় সেতারা বেগম এসে বললেন,
-“বাপ আজকে আমগো দেশে যাওন লাগবে।দেশ থেকে ফোন কইরা যাইতে কইছে।জমির কিছু কাজ বাকি আছে।”
-“আচ্ছা মা তাহলে আমি আর তুমি আজ রাতে যাবো।”
শেহরেয়ার নিচে নেমে সব কথা শুনতে পেল।
-“আমরা বাড়ির সবাই গেলেই তো হয়।কত দিন হলো গ্রামে যাওয়া হয় না!আর মেহরিনও আমাদের গ্রামের বাড়ি দেখে আসতে পারবে।ওর কলেজ আর রায়ানের স্কুল তো বন্ধই!”
মেহরিন এক্সাইটেড হয়ে বললো,
-“ভালো কথা বলেছো তো তুমি!শ্বশুর মশাই আমিও যাবো।”
-“কোথায় যাবি তোরা আপু?”
মুনিয়ার কথায় দরজার দিকে তাকালো মেহরিন।সে দেখলো মুনিয়া সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।মেহরিন হাসি দিয়ে বললো,
-“মুনি!”
মুনিয়া এসে মেহরিনকে জড়িয়ে ধরলো।মেহরিন তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“কেমন আছিস?”
-“এইতো ভালোই।কিন্তু তুই তো বললি না কোথায় যাবি?”
-“শেহরেয়ারদের গ্রামের বাড়িতে যাবো!”
হেনা সাহেবা এসে মুনিয়ার গালে হাত দিয়ে বললো,
-“মা তুমিও চলো আমাদের সাথে।”
হেনা সাহেবার সাথে তাল মিলিয়ে শেহরেয়ার বললো,
-“হ্যাঁ শালিকা তুমিও চলো।শুধু তুমি না,আমার শ্বশুর মশাইকেও নিয়ে যাবো।”
মুনিয়া শেহরেয়ারের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“বাবা যেতে পারবে না ভাইয়া।বাবা অফিসের মিটিংয়ের জন্য চট্টগ্রাম গিয়েছে।”
মেহরিন পাশে থেকে বললো,
-“হুম বাবা কাল রাতে চট্টগ্রাম গিয়েছে।আমাকে কল করেছিল।”
শেহমীর মির্জা বললো,
-“আচ্ছা উনি না হয় পরে যাবেন।তুমি চলো এখন মুনিয়া।”
সবার জোরাজুরিতে মুনিয়া যেতে রাজি হলো।
_________________________
সন্ধ্যাবেলায়,
সবাই গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।হঠাৎ করে হামিদ এসে বললো,
-“আমি চলে এসেছি।চলো যাওয়া যাক!”
হামিদকে দেখে মুনিয়া চমকে গেল।হামিদ মুনিয়ার চমকিত মুখ দেখে তাকে চোখ মারলো।মুনিয়া হামিদের দিকে চোখ রাখিয়ে তাকালো।
-“তোর আসতে এতো সময় লাগলো কেনো হামিদ?”
শেহরেয়ারের কথায় হামিদ বললো,
-“তুই তো গাড়ি আনতে নিষেধ করলি।সিএনজিতে আসতে গিয়ে জ্যামে আটকে গেছিলাম!”
-“ওহ্ আচ্ছা।এখন চল তাহলে।”
শেহমীর মির্জা বললেন,
-“আমরা বরং ড্রাইভারের সাথে যাই।তোরা একসাথে যা।অল্পবয়সী ছেলে-মেয়ে!আনন্দ করতে সুবিধা হবে তোদের।”
শেহমীর মির্জার কথা শুনে হামিদ হাসি দিয়ে বললো,
-“আঙ্কেল তুমি আসলেই অনেক বুঝদার!”
শেহমীর মির্জা হাসি দিয়ে গাড়িতে উঠলেন।ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট করলো।
শেহরেয়ার ড্রাইভিং সিটে বসলো।হামিদ জোর করে মেহরিনকে তার পাশে বসিয়ে দিল।তারপরে পিছনে গিয়ে মুনিয়া আর রায়ানের পাশে বসলো।রায়ানের পাশে বসে তার গাল টেনে আদর করলো।মুনিয়া চোখ রাঙিয়ে হামিদের দিকে তাকিয়ে আছে।শেহরেয়ার গাড়ি স্টার্ট করলো।
রাত বারোটার দিকে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামলো।সবাই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে কিছু খাবার খেয়ে নিল!
শেহরেয়ার গাড়িতে হেলান দিয়ে চাঁদ দেখছে।মেহরিন গিয়ে তার পাশে দাঁড়ালো।মেহরিনকে দেখে শেহরেয়ার মুচকি হেসে বললো,
-“একটা প্রশ্ন করি?”
-“হুম করো!”
-“চাঁদের সাথে তোমার কোনো রক্তের সম্পর্ক আছে?”
মেহরিন অবাক হয়ে বললো,
-“কি সব বলছো তুমি?”
-“নাহলে তুমি চাঁদের সৌন্দর্যের ভাগ পেলে কি করে!”
শেহরেয়ারের কথায় ভ্রু উঁচিয়ে মেহরিন বললো,
-“ফ্লার্ট করা তো তোমার থেকে শেখা উচিত।”
মেহরিনের কথায় শেহরেয়ার মুচকি হাসলো।
#চলবে____
[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]