#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা:ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৯
ইরহাম গোসল সেরে বের হয়।পরনে রুশানের কালো রঙা টিশার্ট আর ট্রাউজার।দেখতে ভীষণ সিগ্ধ লাগছে ইরহামকে।চুল থেকে পানি পরছে টপটপ করে।চোখে চশমা নেই।দেখতে বেশ লাগছে।অর্ষা ড্যাব ড্যাব করে কিছুক্ষণ চেয়ে রই।অতঃপর নিজেকেই গালি দেয় এভাবে তাকানোর জন্য।
—“অর্ষা কন্ট্রোল ইউর সেল্ফ এই অসভ্য পুরুষ মানুষের উপর ক্রাশ খাওয়া মোটেও যাবে না।তার উপর অন্যকাউকে ভালোবাসে।”
অর্ষা মনে মনে নিজেকে কথা গুলো বলে ধমকায়।ইরহাম চুল মুছে অর্ষার দিকে তাকায়।অর্ষা দেওয়ালের দিকে তাকে একমনে কিছু একটা ভাবছে।ইরহাম পাত্তা না দিয়ে চশমা চোখে দিয়ে বিছানার উপর বসে।ফোন বের করে ফোন ঘাটতে শুরু করে।
অর্ষা একমনে ভাবছিলো সকাল থেকে ঘটে যাওয়া কাহিনীগুলো।অর্ষার ঘুম এসেছে অনেক।তাই লাইট অফ করে এসে শুয়ে পরে।ইরহাম এক নজর তাকিয়ে নিজের কাজে মন দেয়।অর্ষার একটা ছেলের সাথে থাকতে একটু অস্বস্তি হলেও কিছু করার নেই।ইরহাম তার স্বামী এখন থেকে থাকতেই হবে।
১৯.
সকাল আয়রা এসে ইয়াদের ঘরে দরজায় নক করে।আয়রা বুঝতে পারছে না ইয়াদ কেনো কালকে কাউকে না জানিয়ে চলে এসেছিলো।এতে অবশ্য বেশ বিরক্তই হয়েছে সে।রাতে কয়েকবার নক করলেও দরজা খুলেনি ইয়াদ।আয়রা ভেবেছিলো ইয়াদ হয়তো ঘুমিয়ে পরেছিলো।ইয়াদ এলোমেলো অবস্থায় গিয়ে দরজা খোলে।
ছেলের অবস্থা দেখে আয়রার বুক ধক করে ওঠে।ইয়াদকে আগে কখনো এমন অবস্থায় দেখেনি সে।ইরহাম যতটা না গম্ভীর ইয়াদ ততটাই হাসিখুশি।সবাইকে মাতিয়ে রাখতে পছন্দ করে।আয়রা ভেতরে ঢুকলো দ্রুত।ইয়াদ বিছানায় বসে আছে।আয়রা ইয়াদে কাছে গিয়ে বলে,,,
—“কি হয়েছে ইয়াদ তোকে এমন কেনো দেখাচ্ছে বাবা”
ইয়াদ মায়ের কথায় চোখ তুলে তাকায়।আয়রা থমকে যায়।ইয়াদের চোখগুলো লাল হয়ে ফুলে আছে।আয়রা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,,,
—“আমি না তোর বেস্টফ্রেন্ড বল বাবা কি হয়েছে।তুই কেঁদেছিস কেনো?”
ইয়াদ মাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কেদে ওঠে।আয়রা বুঝতে পারে না তার ছেলেটার হলো কি।মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নরম কন্ঠে বলল,,,
—“বাবা বল কি হয়েছে।মাকে না বললে বুঝবে কি করে”
—“মামনি আআআআই ললললাভ অর্ষা”
আয়রার মাথায় আকাশ ভেঙে পরে।স্তব্ধ হয়ে যায়।তার মানে ইয়াদ তাকে অর্ষার কথায় বলেছিলো।ইয়াদ আয়রাকে নিজের বেস্টফ্রেন্ড মনে করে।তাই সব কথাই বলে।ইয়াদ রাজশাহী ভার্সিটিতে পরে।যার কারণে তার সেখানেই থাকতে হয়।মাঝখানে একবার এসে আয়রাকে ইয়াদ বলে আমি একজনকে ভালোবাসি।
আয়রা ভীষণ খুশি হয়েছিল শুনে।সে তার ছেলে মেয়েকে কখনোই এসবে মানা করেনি।সবারই কাউকে পছন্দ করার অধিকার আছে।সে নিজেও ইসফাক চৌধুরীর সাথে প্রেম করে পরিবারকে রাজি করয়ে বিয়ে করেছেন।
—“বাবাই বাবাই তাকা আমার দিকে,মামনি জানতো না অর্ষাই সেই মেয়ে।তুই আমায় কেনো বললি না ইয়াদ”
—“মামনি আমার বুকে ভীষণ ব্যাথা করছে।রক্তক্ষরণ হচ্ছে মামনি।আমি সয্য করতে পারছি না”
অয়রার চোখে পানি চলে আসে।তার হাসিখুশি ছেলেটার এই অবস্থা মেনে নিতে পারছে না সে।যদি জানতো এটাই ইয়াদের ভালোবাসার মানুষ তাহলে অয়রা কখনোই ইরহামের সাথে বিয়ে দিতো না।আল্লাহ হয়তো এটাই চেয়েছিলেন।
—“বাবাই শোনো আল্লাহ আমাদের ভালোর জন্যই সব করেন।দেখো হয়তো আল্লাহ অর্ষার সাথে ইরহামের জুটি বেঁধে রেখেছিলো তাই অর্ষা ইরহামের হয়েছে।আল্লাহ উত্তর পরিকল্পনা কারী।উনি অবশ্যই তোমার জন্য সামনে ভালো কিছু রেখেছেন।”
ইয়াদ মন দিয়ে কথাগুলো শুনলো।মেনে নেওয়ার চেষ্টা করলো।আয়রা ছেলের মুখ দেখে বুঝে যান।ইয়াদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,,,
—“বাবাই ভালোবাসলেই যে তাকে পেতে হবে তার কোনো কথা নেই।তুমি না হয় দূর থেকে ভালোবাসো।কিন্তু হ্যা কখনো ইরহাম অর্ষা আলাদা করার কথা ভাববে না।আমি জানি আমার ছেলে কেমন তবুও মানুষের মন তো কখন কি মনে চায় বলা যায় না”
—“উহু আমি কখনোই ওদের ক্ষতি করার কথা মাথায় ও আনবো না আম্মু।আমি ভালোবাসি দুজনকেই।দুজনই আমার প্রিয় ভীষণ প্রিয়।”
আয়রা ছেলের কপালে চুমু দিলেন।ইয়াদ মাকে বসিয়ে কোলে মাথা রেখে বলল,,,
—“মামনি একবারে তো ভোলা সম্ভব নয় তবে আমি অর্ষাকে ভোলার চেষ্টা করবো।অর্ষা না হয় আমার অপ্রাপ্তির খাতার থাকুক।”
আয়রা চলে গেলো।ইয়াদের চোখ থেকে টুপটাপ পানি পরে যাচ্ছে।এমন অসয্য অনুভূতি যেনো কারো না হয়।ইয়াদ বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পরে।চোখ বন্ধ করতেই ইরহাম আর অর্ষার হাসি মুখ ভেসে ওঠে চোখের সামনে।যা মনে করতেই অসয্য রকম যন্ত্রনা হয় ইয়াদের।
ইয়াদ সারারাত ঘুমাতে পারেনি।পুরুষ মানুষ নাকি সহজে কাঁদে না,আর যার জন্য কাঁদে সে সত্যিই প্রচুর ভাগ্যবান।ইয়াদ হয়তো সত্যি ভালোবেসে ছিলো অর্ষাকে।কিন্তু ভাগ্যে ছিলো না বলে পেলো নাহ।ইয়াদ নিজের দোয়াতে রেখেও পেলোনা তার প্রেয়শীকে আর ইরহাম কোনো সাধনা ছাড়াই পেলো গেলো।ইয়াদ ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।
২০.
কারো ধাক্কায় ইরহাম নিচে পরে যায়।ঘুমের মাঝে নিচে পরায় বেশ ব্যাথা পেয়েছে সে।চোখ খুলে নিজের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করে।বিছানার উপরে চোখ যেতেই অর্ষাকে এলোমেলো অবস্থায় ঘুমিয়ে থাকতে দেখে ইরহাম।প্লাজু হাঁটুর উপরে উঠে গিয়েছে,টিশার্ট উঠে ফর্সা পেট দেখা যাচ্ছে।ইরহাম চোখ সরিয়ে নেয়।
ইরহামের বুঝতে বাকি নেই অর্ষাই ঘুমের ঘরে তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে।ইরহাম বিরক্ত হয় বেশ।মেয়েটা ঠিকমতো ঘুমাতেও পারে না।এমনি তো জেগে থাকলে তাকে সারাদিন জ্বালিয়ে মারে এখন ঘুমিয়েও শান্তিতে থাকতে দেবে না।ঘুমের ভেতরেও জ্বালাচ্ছে।
ইরহাম ফ্রেশ হতে চলে যায়।অর্ষা ঘুম ভাঙতেই নিজেকে একা রুমে আবিষ্কার করলো।উঠে বসে কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে রইলো।এটা অর্ষার অভ্যার।ঘুম থেকে উঠার পর কিছুক্ষণ বসে থাকা।ইরহাম ওয়াশরুম থেকে বের হয়।অর্ষা ইরহামকে দেখে চমকে উঠে,ইরহাম এখানে কেনো ভাবে।
পরে মনে পরে যায় কালকেই বদ অসভ্য লোকটার সাথে তার বিয়ে হয়েছে।অর্ষা নিজের দিকে তাকাতেই চোখ বড় বড় হয়ে যায়।গায়ে ওড়না নেই।পাশ থেকে ওড়না নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নেয়।ইরহাম অবশ্য তার দিকে তাকায়নি তবুও অস্বস্তি হচ্ছে।
অর্ষা ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে এসে কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা রুশানের রুমে চলে আসে।এটা তার অভ্যাস।ছোট বেলা থেকেই দুজন একসাথে বড় হয়েছে,একসাথে খেলেছে খেয়েছে।সব কিছুই একসাথে তাদের।এখনও অর্ষা ঘুম থেকে উঠেই রুশানের রুমে এসে ওকে জ্বালাতন করে।
অভ্যাসগত কারণে আজও চলে এসেছে।রুমে এসে দেখে সবাই ফোন নিয়ে ফ্রি ফায়ার গেম খেলতে ব্যস্ত।অর্ষা ভীষণ বিরক্ত হয়।মোটেও পছন্দ না তার এই গেম খেলা।অর্ষা ওদের কাছে গিয়ে তিনটা ফোনই টেনে নিয়ে নেয়।আচমকা এমন হওয়ায় তিনজনই হতভম্ব হয়ে যায়।
রুশান বুঝে উঠতেই চিল্লিয়ে বলে,,,
—“সয়তান মাইয়া সমস্যা কি তোর।ফোন নিলি কেনো?”
অর্ষা কোমড়ে হাত দিয়ে রাগি দৃষ্টিতে তিনজনের দিকে তাকিয়ে বলে,,
—“তোদের না বাড়ন করেছিলাম ঘোড়ার ডিমের গেম না খেলতে তাও খেলছিস।”
রুশানের কিছু একটা মনে হতেই বাঁকা হেসে বলে,,,
—“অর্ষা জানটুস কেমন কাটালি কালকের রাতটা বল বল।”
রুশান ভেবেছিলো অর্ষা হয়তো লজ্জা পাবে কিন্তু অর্ষা সরাসরি উত্তর দেয়,,,
—“তোর আউল ফাউল কথা তোর কাছেই রাখ।তুই খুব ভালো করেই জানিস বিয়েটা আমি নিজের ইচ্ছায় করিনি।”
অর্ষা হনহন করে বেরিয়ে যায়।রুশান মুহিব কি হয়েছে বুঝতে পারে না।সব ওদের মাথার উপর দিয়ে গেলো।এই মেয়ের কখন কি মন চায় তা শুধু ওই জানে।তিনজনই কপাল চাপড়ায়।
২১.
অর্ষা রুশানের রুম থেকে বেরিয়ে নিচে ড্রয়িংরুমে আসতেই বাবা চাচা দাদ মিলে বসে গল্প করতে দেখে।অভ্যাসগত ভাবে এসে দুজনের মাঝখানে বসে পরে।অতঃপর আসিফ আহমেদের কাছ থেকে চা নিয়ে খেতে থাকে।আসিফ আহমেদ হাসেন পাগলি মেয়ে একটা তার।
বিয়ে হয়েছে কাল দেখে মনেই হচ্ছে না।এখনো সেই ছোটই আছে তার কাছে।ইরহামও নিচে নামে রুমে বশে বোরিং হচ্ছিল তাই নিচে নেমেছে।ইরহাম নামতে দেখে আসিফ ও আহিন ইরহামকে নিয়ে পরলো।অর্ষা বিরক্ত হলো।এতো আদিক্ষ্যেতা দেখানোর কি আছে ভেবে পেলো না।
আহিন এবং আসিফ আহমেদ ইরহামকে টুকটাক কথা জিজ্ঞেস করছে আর ইরহামও সুন্দর করে তার উত্তর দিচ্ছে।অর্ষা ভেংচি কেটে উঠে চলে যায়।রান্নাঘরে ঢোকার আগে পেছনে ফিরতেই একটা বড়সড় ক্রাশ খায় সে।ইরহাম হাসছে।হাসলে মারাত্মক সুন্দর লাগে।
অর্ষা রান্না ঘরে ঢুকতে ঢুকতে নিজেকে ধমক দিয়ে মনে মনে বলে,,,
—“অর্ষা বার বার কেনো ভুলছিস লোকটা ভালো নাহ।তার উপর অন্যকাউকে ভালোবাসে।ছি ছি ছি অর্ষা তুই এতো খারাপ হয়ে গেলি যে অন্যকারো জিনিসের দিকে তাকাচ্ছিস।কিন্তু উনি তো আমার বর”
চলবে~