#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৯
–তুই এমন করলি কেন ভাইয়ার সাথে?
–কেমন করলাম?
–ভাইয়া তকে ডাকলো আর তুই ভাইয়ার ডাকে সাড়া না দিয়ে হনহন করে চলে আসলি কেন?
–তর ভাইয়া কে এমন যে তর ভাইয়ের ডাকে সাড়া দিতে হবে আমাকে।
–তীর আমি ঠিক বুঝতে পারছি না তর হয়েছেটা কি? তুই এ কদিন যাবত এমন অদ্ভুদ আচরণ কেন করছিস?
তীর ততমত খেয়ে ব্রেঞ্চে ঠিকঠাক হয়ে বসে বলে।
–আমি আবার কেমন অদ্ভুদ আচরণ করলাম?
–এই যে তুই ভাইয়ার সামনে পড়তে চাইছিস না, ভাইয়ার সাথে কথা বলতে চাইছিস না। হয়েছেটা কি তর বলবি একটু আমাকে?
–কিছু হয় নি আমার।
–জানিস ভাইয়া আজকে তকে দেখার জন্য এত সকালে ঘুম থেকে উঠেছে শুধু তকে এক নজর দেখার জন্য।
–কেন তর ভাই আমাকে দেখার জন্য এত সকালে উঠতে যাবে কেন?
ইশা তীরের মাথায় থাপ্প’ড় দিয়ে বলে।
–তুই কি কিছু বুঝিস না তীর!
–কি বুঝবো?
–ভাইয়া যে তকে ভালোবাসে।
ইশার মুখে ভালোবাসার কথাটা শুনে তীরের বুকটা ধক করে উঠে। তারপরও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে বলে।
–তর ভাই কি একবার বলেছে সে আমাকে ভালোবাসে তাই শুধু শুধু না জেনে একদম এসব কথা বলবি না।
–মুখে বলেই কি ভালোবাসা প্রকাশ করতে হবে। তুই কি বুঝে নিতে পারিস না।
–না বুঝে নিতে পারবো না আমাকে যদি ভালোবেসেও থাকে তাহলে সেটা মুখে এসে বলতে হবে আর তখনেই আমি বিশ্বাস করবো।
–তীর তুই এতটা…..
ইশা আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই ক্লাস রুমে টিচার এসে প্রবেশ করে।
_______
ইশান নিজের কেবিনে চেয়ারে মাথাটা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। মাএই ইশানের চোখের পাতা লেগে এসেছে এর মাঝেই দরজায় কেউ নক করে কেবিনে প্রবেশ করে। ইশান চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে রিফাত দু হাতে দুইটা কফির মগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে হাসি মুখে। ইশান রিফাতের দিকে এক নজর তাকিয়ে আবার চোখের পাতা এক করে নেয়। রিফাতও চুপচাপ টেবিলের উপর কফির মগ দুইটা রেখে চেয়ারে বসে বলে।
–কিরে শালা? এমন আশি বছরের বুড়ো বেডা মাইনষের মতো চিমুছিস কেন?
রিফাতের কথায় ইশান হেসে ওঠে। চোখ মেলে রিফাতের দিকে তাকিয়ে বলে।
–শালা তো ডাকচ্ছিস। আমি কিন্তু আমার আদরের বোনকে তর কাছে বিয়ে দিবো না যতই আমাকে শালা ডাকিস না কেন?
রিফাত নড়েচড়ে বসে একটু ভাব ধরে বলে।
–কেন আমার কাছে তর বোনকে বিয়ে দিবি না কেন? আমার মতো হ্যান্ডসাম একটা ছেলে কোথাও খুজি পাবি না বুঝলি।
–হুম সেটাতে আমি জানি।
–কি জানিস?
–কিছু না। তা হঠাৎ আমার অফিসে আসলি।
–এমনি আসলাম। ভাবলাম দেখে আসি আমার বন্ধু প্লাস শালা কি করে?
–একদম শালা ডাকবি না আর আমার বোনের দিকে একদম কু নজর দিবি না।
রিফাত বিরবির করে উঠে।
–নজর তো লেগেছে তবে কু নজর না “ভালোবাসার” নজর।
–কিছু বললি!
–না কিছু না। আচ্ছা বাদ দে ওসব কথা এখন বল তর কি হয়েছে? দুই দিন যাবত কেমন যেন আপসেট হয়ে আছিস তুই।
ইশান কফিতে চুমুক দিতে দিতে বলে।
–কিছু হয় নি আমি ঠিক আছি।
–তীর খুব জ্বালাছে না।
ইশান বাঁকা হেসে বলে।
–তীর! ওর এই তীর নাম রাখাটা সার্থক হয়েছে কেমন ধনুকের তীরের মতো আমার বুকে গেঁথে আছে দেখ। যা ক্ষনে ক্ষনে আমাকে তার সেই বিষাক্ত ব্যাথা অনুভব করতে হয়।
–তুই ওকে বলে দে।
–কি বলবো?
–কি বলবি মানে তুই যে ওকে ভালোবাসিস তার কথা বলবি। আর তুই রিজেক্ট হওয়ার ভয় পাচ্ছিস কেন? তর মতো হ্যান্ডসাম একটা ছেলে প্রপোজ করেছে আর তীর তা ফিরিয়ে দিবে আমার বিশ্বাস হয় না। তাই তুই বলে তো দেখ কি হয়।
–ওর ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষাটা শেষ হোক তারপর না হয়।
–হে তুই আরও সময় নে পরে দেখবি পাখী অন্য খাচাঁয় গিয়ে বন্দি হয়ে আছে।
ইশান কফিতে চুমুক দিয়ে বলে।
–ও যদি আমার ভাগ্যে লেখা থাকে তাহলে ও আমারেই হবে।
_______
দেখতে দেখতে তীর আর ইশার টেস্ট পরীক্ষা শুরু হয়ে গেলো। তীর মাথা থেকে ইশানের যত চিন্তা ভাবনা আছে তা ছুড়েঁ ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে। টেস্ট পরীক্ষায় ভালো করতেই হবে না হলে বোর্ড পরীক্ষায় আটকে দিবে টিচারদের ভাষ্যমতে। তাই মাথা বেঁধে রাতে দিনে পড়াতে লেগে পড়েছে। ইশারও সেইম অবস্থা পরীক্ষার জন্য রিফাতকে ইগনোর করে আসছে। ইশার এই ইগনোর করার জন্য রিফাতের কি অভিমান। এই অভিমান ভাঙ্গতে ইশাকে কত কথাই না রিফাতকে বলতে হয়। ইশার মিষ্টি মিষ্টি কথা গুলো শুনে রিফাত হেসে সেই অভিমান উড়িয়ে দিয়ে ইশাকে পড়ার তাগিদ দেয়। রিফাতের মজাই লাগে ওর অভিমান ভাঙ্গাতে পুচকে মেয়েটা কত শত কথা বলে।
অন্য দিকে ইশান তীরকে দুর থেকে দেখেই নিজের চোখের তৃষ্ণা মিটায়। তীরের সামনে ইশান বেশি একটা পড়ে না বুঝতে পারছে মেয়েটাকে ওকে দেখলে কেমন একটা অস্তিত্বে পড়ে যায় তাই আর নিজ থেকে তীরের সামনে যায় না ইশান।
পরীক্ষাটা যেমন চোখের পলকে শুরু হয়েছিলো ঠিক চোখের পলকেই শেষ হয়ে গেছে। লাস্ট পরীক্ষাটা দিয়ে তীর বাসায় এসে চিত হয়ে শুয়ে পড়ে। পরীক্ষা মোটামুটি ওর ভালোই হয়েছে তাই আর পরীক্ষা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। তাই আজকে সারা দিন সারা রাত ঘুমিয়ে আর মুভি দেখে পার করবে প্লেন করে রেখেছে। কিন্তু তার আর হতে দিলো কই, ইশা সন্ধ্যার সময় এসে হাজির তীরদের বাড়িতে।
_____
সারা বিকাল কুম্ভকর্নের মতো ঘুমিয়ে সন্ধ্যার সময় তীর পপর্কন হাতে নিয়ে বসে পড়েছে মুভি দেখার জন্য। আয়েশ করে সোফায় পা তুলে বসে মনযোগ সহকারে Avatar মুভিটা দেখছে তীর। একটু আগেই আয়েশা সুলতানা এক বস্তা বকা দিয়ে গেছে তীরকে কিন্তু তাতে কোনো হেলদোল নেই ওর। বাবা অফিসে থাকায় সুবিধাটা একটু বেশি হয়েছে তীরের। বাবা থাকলে টিভির ধারে কাছেও যেতে পারে না। পাশে বসেই শাপলা বেগম পান চিবুতে চিবুতে বলে।
–এই তীর এসব কি সিনেমা দেখছিস? ভালো একটা বাংলা সিনেমা দে।
–উফ দাদু! ডির্স্টাব কর না তো। মুভিটা দেখো মজা আছে।
–এত মজা বুঝতে হবে না আমাকে তুই একটা শাবনার সিনেমা দে।
–পারবো না এসব শাবানা পাবানার সিনেমা দিতে। সেই তো এক কাহিনী সেলাই মেশিন নিয়ে গটরগটর।
–তাও তো ভালো আছে তর সিনেমার মতো তো আর না। কি জন্তু পন্তু দেখছিস কখন থেকে। কি এগুলা মানুষ নাকি অন্যকিছু কিছুই তো বুঝা যায় না।
–উফফ দাদু আর কথা বলো না তো এখন দেখো যুদ্ধ হবে।
–তুই তর যুদ্ধ দেখ আমি আর কিছুক্ষন এগুলা দেখলে নিশ্চিত পাগল হয়ে যাবে।
কথাটা বলেই শাপলা বেগম নিজের ঘরের দিকে চলে যায়। ঠিক এর কিছুক্ষন পরেই ইশা সেজেগুজে হাজির। ইশা ঘরের ভেতরে ডুকে সোজা টিভির সামনে এসে দাড়িয়ে পড়ে। তীর যেই সাইডেই গাড় ঘুরায় ইশাও সেই সাইডে গিয়ে দাড়ায়। এক পর্যায় তীর রেগে বলে উঠে।
–কি হচ্ছেটা কি এভাবে ব্যাঙের মতো লাফাছিস কেন? শান্তি মতো একটু মুভিটা দেখতে দে।
ইশা তীরের পাশে বসে বলে।
–পরে মুভি দেখবি এখন চল তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।
তীর ভ্রু-কুচকে ইশার দিকে তাকিয়ে বলে।
–রেডি হবো মানে! এখন কোথায় যাবো যে রেডি হতে হবে?
–শপিং করতে যাবো।
–এই সন্ধ্যার সময় কোন দুঃখে শপিং? আর আমি পারবো না যেতে তুই যায়।
ইশা ন্যাকা কান্না করে বলে।
–প্লিজ দোস্ত চল না ভাইয়াদের অনেক কষ্টে আমি রাজি করিয়েছি শপিং এ যাওয়ার জন্য। এখন তুই বেকেঁ যাস না প্লিজ।
–মুভি দেখছি ডির্স্টাব করিস না তো।
–এই মুভি আর কত দেখবি তুই? এখন নিয়ে হয়তো আট বার দেখে ফেলেছিস আর দেখতে হবে না এবার চল না প্লিজ আমার এই ইচ্ছেটা পূরন কর প্লিজজজজ।
–কিন্তু কি উপলক্ষে তুই শপিং করতে যাচ্ছিস বলবি একটু আমাকে?
–ইহান ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে। আর আমি আন্টির কাছ থেকে এসেই অনুমতি নিয়ে নিয়েছি তাই কোনো এক্সকিউজ দিবি না।
–মানে ভাইয়ার বিয়ে তো আরও পনেরো দিন পর আর তুই এখন থেকেই শপিং শুরু করে দিচ্ছিস তুই পারিসও বটে ইশু।
ইশা কিছুটা রাগ দেখিয়ে সিরিয়াস মুডে বলে।
–তুই যাবি কি না সেটা বল!
–আরে রেগে যাচ্ছিস কেন তুই?
–রাগ করছি কই তুই যাবি কিনা সেটা বল।
–আচ্ছা আচ্ছা বাবা রাগ করিস না আমি যাবো। তুই বস আমি পাঁচ মিনিটে রেডি হয়ে আসছি।
ইশা তীরকে জড়িয়ে ধরে বলে।
–উম্মাহহহ। আমার জানটুসটা।
–হয়েছে ছাড় এবার না হলে লেইট হয়ে যাবে।
–হুম তাড়াতাড়ি যা আর আমি নানুর সাথে গিয়ে দেখা করে আসি।
তীর উঠে সিড়ি বেয়ে উপরে নিজের ঘরে যেতে নিবে তখনেই কিছু একটা ভেবে ইশার কাছে এসে বলে।
–ওই ইশান ভাইয়াও কি যাবে আমাদের সাথে।
ইশা এক প্রকার টান দিয়েই কথাটা বলে।
–ইশান ভাইয়ায়য়য়া।
–হুম ইশান ভাইয়াও কি যাবে?
–না না ইশান ভাইয়া যাবে না তুই, আমি আর ইহান ভাইয়া যাবো শুধু।
–সত্যি বলছিস তো।
–হুম একদম সত্যি।
–ঠিক আছে আমি রেডি হয়ে আসছি।
তীর যেতেই ইশা স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে বলে।
–ঘসেটি বেগম একটা।
#চলবে_____