তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম #তাহিরাহ্_ইরাজ #পর্ব_৫৪

0
468

#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৫৪

” আদ্রিয়ান স্যার। আপনারা এত রাতে এখানে! ”

লেকের ধারে দাঁড়িয়ে তূর্ণ। তার বক্ষস্থলে পৃষ্ঠ ঠেকে মাইরা’র। একে অপরের সান্নিধ্যে মনোরম মুহূর্ত উপভোগ করছে তারা। একান্ত জনের হস্তদ্বয়ে বন্দী দুয়া’র কোমল গাত্র। বদ্ধ দু’জনার আঁখি পল্লব। ঝিরিঝিরি হাওয়া ছুঁয়ে যাচ্ছে কায়া। জাগতিক হুঁশ হারিয়ে তারা এখন প্রণয় বসুধায়। মগ্ন একে অপরেতে। ঠিক সে মুহূর্তে শোনা গেল সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত কণ্ঠস্বর। ঘোর কেটে গেল তূর্ণ, দুয়া’র। আঁখি মেলে তাকালো। তড়িঘড়ি করে দুয়া সরে যেতে উদ্যত হলো। তবে পুরোপুরি সফল হলো না। ওর ডান হাতটি মুঠোয় নিয়ে পিছু ঘুরে তাকালো তূর্ণ। চমকালো তিয়াশকে দেখে! শুধু তিয়াশ একা উপস্থিত নয়। পাশে অবাক নেত্রে তাকিয়ে মিহাদ! মিহাদ শীঘ্রই অবাকতার রেশ কাটিয়ে দুষ্টু হেসে দিলো। তূর্ণ মৃদু গম্ভীর স্বরে শুধালো,

” তোমরা এখানে? ”

” হাঁ ভাইয়া আমরা। তবে তোমরা এখানে কি করছো? ভাবির সাথে হ!টিনটি টাইম স্পেন্ড করছিলে বুঝি? আমরা এসে খুব ডিস্টার্ব করে ফেললাম? ”

মামাতো ভাইয়ের কথা শুনে লাজে আর’ক্ত হলো দুয়া। শেষমেশ ভাইয়া এমন করে লজ্জা দিচ্ছে! সে দৃষ্টি অবনত করে মিনমিনে গলায় ডেকে উঠলো,

” ভাইয়া! ”

মিহাদ দাঁত কেলিয়ে হাসলো। জিভ কা মড়ে হাসি মুখে বলে ফেললো,

” ওপস্ সরি সরি। ভাবিজি লজ্জা পাচ্ছেন। ”

তূর্ণ চোখ পাকিয়ে তাকালো। প্রশ্নবিদ্ধ চাহনিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

” তুই এত রাতে এখানে কি করছিস? বি ড়ি টানতে এসেছিস?”

তৎক্ষণাৎ নেতিবাচক মাথা নাড়লো মিহাদ। চোখ বড় বড় করে বলে উঠলো,

” আসতাগফিরুল্লাহ্! না না। ছিঃ! আমি ওসব খাই নাকি? ”

” খাস কিনা বললি নাকি জিজ্ঞেস করলি? ”

মিহাদ ঢিমি স্বরে বললো, ” আমি ওসব ছাইপাশ খাই না। ”

” গুড। তাহলে এত রাতে এখানে কি করছিস? আমি না হয় বউয়ের সাথে হ!টিনটি টাইম স্পেন্ড করছিলাম। কিন্তু তুই? তুই এখানে কি করছিস? আমাদের ফলো করতে করতে এসেছিস? ”

স্যারের মুখে এমন বেশরম উক্তি শুনে তিয়াশ লজ্জায় পড়ে গেল। কোন আক্কেলে যে এখানে আসতে গিয়েছিল? এখন অহেতুক বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। ইশ্! মিহাদ ভাইয়ের কথার পৃষ্ঠে থেমে থেমে বললো,

” আসলে ভাইয়া। আমার ঘুম আসছিল না। তার ওপর তুমি রুমে ছিলে না। তাই হাঁটতে হাঁটতে এদিকটায় চলে এলাম। পথে অবশ্য ওর সাথে আই মিন তিয়াশের সাথে দেখা হলো। ও-ও নিদ্রাহীন হয়ে ইতিউতি করছিল। তাই হাঁটতে হাঁটতে… ”

” বড় ভাইয়ের কোয়ালিটি টাইমে বাগড়া দিতে চলে এলি? তাই তো? ”

মিহাদ কিছু বলার পূর্বেই দুয়া স্বামীকে আটকালো। কর্ণ কুহরে অধর ঠেকিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,

” তুমি থামবে? কিসব বলছো? ছোট ভাই, স্টুডেন্ট ওরা। একটু তো বুঝেশুনে কথা বলো। সবসময় সব জায়গায় ঠোঁটকা-টা কথা বলতে নেই। ”

তূর্ণ বক্র হেসে সম্মোহনী স্বরে বললো,

” তবে কি শুধু বউয়ের কাছেই ঠোঁটকা-টা নির্লজ্জ অবতার নেবো? ”

লাজে আড়ষ্ট রমণী স্বামীর বাহুতে আলতো চাপড়
মে রে দ্রুত কদম ফেলে সেথা হতে প্রস্থান করলো। অর্ধাঙ্গীর গমন পথে তাকিয়ে তৃপ্তিময় হাসলো তূর্ণ। তিয়াশ স্বচক্ষে অবলোকন করলো বন্ধুর সংসার জীবন। আসলেই দুয়া খুব ভালো আছে, সুখে আছে। আদ্রিয়ান স্যার বিহীন অন্য কেউ ওর মতো পা,গলীকে এত সুন্দর রূপে আগলে রাখতে পারতো না। এরা দু’জনে প্রকৃত রূপে একে অপরের পরিপূরক!

পরেরদিন। সূর্য মামার আলোক রশ্মিতে উজ্জ্বল ধরিত্রী। বিছানায় বসে তাহমিদা। দু হাঁটু ভাঁজ করে ডান পার্শ্বে এলিয়ে রাখা। কোলে শুয়ে তার কনিষ্ঠ কন্যা দুয়া। উনি মাতৃস্নেহ বুলিয়ে চলেছেন মেয়ের কেশের ভাঁজে ভাঁজে। আজ আদুরে কন্যার মেহেদী অনুষ্ঠান। আর মাত্র ক’দিন। স্বামীর সনে দ্বিতীয়বারের মতো পবিত্র এক বাঁধনে বাঁধা পড়তে চলেছে মেয়েটা। ওনার ছোট সে-ই আদুরে মেয়েটা দেখতে দেখতে সময়ের পরিক্রমায় কত বড় হয়ে গেল। এখন পড়াশোনা, ঘরসংসার দু-ই সামলাতে শিখে গেছে। এই মেয়েকে নিয়েই তো ওনার চিন্তার অন্ত ছিল না। ছোট থেকেই গুলুমুলু মেয়েটা সবার আদরের। অল্পতেই মন জয় করতে জানে‌। মিশুক স্বভাবের। বড় মেয়ে যেখানে স্বল্পভাষী সেখানে ছোট মেয়ে ছিল ননস্টপ রেডিও। সকলের মাঝে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার অসীম কারিশমা রয়েছে ওর মধ্যে। তবে বড় আলসে ছিল। মাঝেমধ্যে ভীত হয়েও পড়তো। নিজের কাজ নিজে করতে চাইতো না। উনি এবং তানজিনা ই ওর কাজগুলো করে দিতেন। দিনে দিনে মেয়েটা যেন আরো আলসে, পরনির্ভরশীল হয়ে পড়ছিল। এজন্য ওনার চিন্তার শেষ ছিল না। মেয়ের বিয়ের বয়স হয়েছে। যেকোনো সময় যেকোনো জায়গা থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসতে পারে। বিয়ের পর এই আলসে মেয়েটা করবে কি? নিজের কাজ করা তো পরের কথা, শ্বশুরবাড়ির লোকগুলোকে আগলে রাখতে পারবে তো? তবে স্রষ্টার অসীম কৃপায় ওনার চিন্তা হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। মেয়ে হলো বড় বোনের পুত্রবধূ। সেথায় আদরে ভালোবাসায় ওনার অবুঝ, দুষ্টু মেয়েটা বুঝদার হতে শুরু করলো‌। আজ সে বেশ সংসারী হয়ে উঠেছে। ক’দিন পর বিবাহিত জীবনের এক বর্ষ পূর্ণ হবে। সুখেশান্তিতে রয়েছে ওনার সে-ই অবুঝ পা*গলী মেয়েটা। বিয়ের পর সব মেয়েরা বুঝি এভাবেই বুঝদার হয়ে যায়। ঘরসংসার আগলে রাখতে শিখে যায়। এজন্য কোনো প্রশিক্ষণ কিংবা পূর্ব অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় না। স্বয়ংক্রিয় ভাবে স্রষ্টার রহমতে হয়ে যায়। মুচকি হেসে মেয়ের কেশের ভাঁজে চুম্বন এঁকে দিলেন উনি। আঁখি পল্লব বুজে থাকা মেয়েটি মাতৃস্নেহ উপলব্ধি করে তৃপ্তিময় হাসলো।
.

আঁধারিয়া রজনী। রিসোর্টের একাংশে ফাঁকা স্থানে আয়োজন করা হয়েছে চমৎকার আউটডোর মেহেন্দি সজ্জা। এ বহিরাঙ্গন মেহেদী অনুষ্ঠানের সাজ অত্যন্ত সুন্দর থিম, শৈলি এবং রঙের মিশ্রনে অপূর্ব লাগছে! চারিপাশ হতে হলদে কার্টেন গিয়ে সংযুক্ত হয়েছে, সামিয়ানা হিসেব মাথার উপরিভাগে থাকা হলদে কাপড়ে। আশপাশে অসংখ্য ফেইরি লাইটস আলো ঝলমলে পরিবেশ তৈরি করেছে। হলদে রঙা অপূর্ব ক্যাবানার অন্দরে বেশ চমৎকার আয়োজন করা হয়েছে। বসার জন্য বেশ কতগুলো হলদে মোড়কে আবৃত আসন। সেগুলোর ওপর কমলা রঙে রঙিন কুশন সমূহ। পাশে কিছু বেতের তৈরি সিঙ্গেল আসনও রয়েছে। সব মিলিয়ে সে এক মনোরম আয়োজন!

বরাদ্দকৃত স্থানে বসে দুয়া। পড়নে তার হলদে রঙা বন্ধনী আনারকলি। আনারকলি’র গোলাকার গলা এবং গলার ডিজাইনে পোটলি বোতাম। সাদা এবং হলুদ চিনন শিফন দোপাট্টা’তে দেহের উর্ধাংশ শালীনতার সহিত আগলে রাখা। চুলের মধ্যখানে লম্বা সিঁথি টানা। দীঘল কালো কেশ পৃ্ষ্ঠে লেপ্টে। মুখখানিতে হালকা কৃত্রিম প্রসাধনীর ছোঁয়া। দু কানে ঝুমকা। এতটুকুই সাজ। দেখতে অপরূপা লাগছে! মেহেদী অনুষ্ঠানে আজ পুরুষরা নিষিদ্ধ। শুধুমাত্র রমণীবৃন্দ সেথায় উপস্থিত। দুয়া’র হাতে ব্রাইডাল মেহেদী রাঙিয়ে দিচ্ছে মেহেদী আর্টিস্ট। পাশে বসে আলাপণে ব্যস্ত পুষ্পি, সিনথিয়া, বিন্দু, দিবা। দুয়া হাসিমুখে বসে তো রয়েছে। তবে তার অবাধ্য দৃষ্টি খুঁজে বেড়াচ্ছে একজনকে। কোথায় সে? কিয়ৎক্ষণ পূর্বে এখানেই তো উপস্থিত ছিল।
.

বাবা এবং চাচুর সঙ্গে প্রি ওয়েডিং ফাংশন নিয়ে আলাপণে লিপ্ত তূর্ণ। তারা দাঁড়িয়ে এই মুহূর্তে রিসোর্টের লনে। আঁধার পরিবেশে কৃত্রিম আলোর আচ্ছাদন। কথোপকথনে লিপ্ত তৃ পুরুষ। ঠিক সে মুহূর্তে সেথায় উপস্থিত হলো নিশাদ। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ওদের কথোপকথনে বাঁধা প্রদান করতে বাধ্য হলো। মৃদু স্বরে ডেকে উঠলো বন্ধুকে,

” তূর্ণ! ”

ওর ডাকে সাড়া দিয়ে তাকালো তূর্ণ, ” হুম বল। ”

” একটু এদিকে আয়। ”

তূর্ণ বন্ধুর কথায় অতটা পাত্তা না দিয়ে বললো,

” একটু দাঁড়া। কথা শেষ করে আসছি। ”

নিশাদ উদ্বিগ্ন কণ্ঠে তাড়া দেখিয়ে বললো,

” আরে ভাই। জলদি আয় না। লাইনে রয়েছে একজন। ”

নিশাদের হাতে মোবাইল। কেউ কলে রয়েছে। নিজাম সাহেব এ লক্ষ্য করে ছেলেকে বললেন,

” তুই কথা বল। আমরা আসছি। ”

দুই ভাই সেথা হতে প্রস্থান করলেন। তূর্ণ বন্ধুর কাঁধ চাপড়ে শুধালো,

” কি হয়েছে বল। এত হাপুশ হুপুশ করছিলি কেন? ”

নিশাদ মোবাইল এগিয়ে দিলো। চিন্তিত স্বরে বললো,

” কথা বল। বুঝতে পারবি। ”

তূর্ণ ঠিক বুঝতে পারলো না। হাত বাড়িয়ে মোবাইল নিলো। ঠেকালো কর্ণ কুহরে।

” হ্যালো আসসালামু আলাইকুম। আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ স্পিকিং। ”
.

তৃষা ব্যস্ত পায়ে হেঁটে চলেছে রিসোর্টের করিডোর ধরে। এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। তৃষ্ণার্ত নয়ন জোড়া খুঁজে চলেছে একজনকে। তাকে না দেখা অবধি শান্ত হচ্ছে না অন্তঃস্থল। ঝড়ো হাওয়ায় ল.ণ্ডভণ্ড হয়ে যাচ্ছে সব। ভেতরে ভেতরে গুমড়ে উঠছে মেয়েটি। বরফের ন্যায় ঠাণ্ডা শীতলতা জেঁকে ধরছে আষ্টেপৃষ্ঠে। শরীরে বিদ্ধ হচ্ছে অবিরাম। র-ক্তাক্ত করে তুলছে ভেতরকার সবটুকু। অত্যন্ত ব্যথিত বদনে হেঁটে যাচ্ছিল মেয়েটি। হঠাৎ তার পদযুগল থমকে গেল। নয়নে ধরা দিলো অতি আকাঙ্ক্ষিত জন। তৃষা অমোঘ আকর্ষণে ব*শীকরণ হলো বোধহয়। দ্রুত পায়ে সেদিকে অগ্রসর হতে লাগলো।

দুশ্চিন্তায় মস্তিষ্কে ভ;য়াবহ গর্জন হচ্ছে। শুকনো বদনে দাঁড়িয়ে নিশাদ। দৃষ্টি নিবদ্ধ জমিনে। মাথার পেছনের চুলগুলো ডান হাতে আঁকড়ে ধরে অস্থির হয়ে রয়েছে। ঠিক তখনই শুনতে পেল হৃদয়ে লুকানো রমণীর কণ্ঠ,

” এসময়ে এখানে কি করছেন? ”

অসীম খুশিতে ভরে উঠল হৃদয়। তার প্রেয়সী! সে। সে স্বেচ্ছায় কথা বললো! তার খোঁজ করছে? পূর্বের ন্যায় সবটা থাকলে এ মুহূর্তে নিশাদের চেয়ে খুশি বোধহয় আর কেউ হতো না। তবে এখন সময়, পরিস্থিতি, প্রত্যাশা সবটাই ভিন্ন। তাই তো জোরপূর্বক নিজেকে দমিয়ে নিলো নিশাদ। মুঠো মুক্ত করলো চুল। হাতটি নামিয়ে নিলো। কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত বিহীন সেথা হতে চলে যেতে উদ্যত হলো। তবে বাঁধাপ্রাপ্ত হলো আচমকা।

” চলে যাচ্ছেন? জবাবটা দিলেন না তো। ”

তৃষা ঘাবড়ে রয়েছে। নিজে থেকে কথা তো বলতে এসেছে। তবে কি থেকে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। ভুলভাল বলে চলেছে। গণ্ডস্থল শুকিয়ে মরুভূমির ন্যায় শুষ্ক। খাঁ খাঁ করছে। শব্দমালা যেন পলায়ন করেছে ভূতুড়ে রজনীর বুকে। তৃষার এই অপ্রত্যাশিত আচরণ আর সইতে পারলো না মানুষটি। তৎক্ষণাৎ তেঁতে উঠলো। পিছু ঘুরে ওর চোখে চোখ রেখে কাঠিন্যতা মিশ্রিত স্বরে বলে উঠলো,

” জবাব দিতে হবে? কেন? হু আর ইয়্যু? আমার জিএফ, বউ নাকি বাগদত্তা? কোনটা? কোনোটাই নয়। তুই শুধুমাত্র আমার বন্ধুর বোন। সো স্টে ইন ইয়্যুর লিমিটস। ওকে? ”

হতবিহ্বল রমণীর অক্ষি ফেটে অশ্রু বিন্দু উপচে পড়তে চাইছে। চরমভাবে ধরাশায়ী অন্তঃস্থল। সর্বদা এ মানুষটির মিষ্টিমধুর শাসন পেয়ে এসেছে সে। কখনো এমন কঠিন স্বর শুনতে পায়নি। সেখানে আজ সামান্য, ক্ষুদ্র কারণে মানুষটি এভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে? অভিমান নাকি অপমান জানা নেই। টলমলে চোখে তাকিয়ে তৃষা। ক্ষীণ স্বরে প্রশ্ন করে বসলো,

” আ আপনি এমন করে বলছেন কেন? ”

” তাহলে কিভাবে বলবো? অস*ভ্য লোকেরা এর চেয়ে ভালো ভাষায় কথা বলে বুঝি? ”

” আ-আমি আসলে.. ”

ডান হাতের তেলো দেখিয়ে থামতে ইশারা করলো নিশাদ।

” স্টপ। মনমেজাজ এমনিতেই ভালো নেই। আগুনে আর ঘি ঢেলে দিস না। জাস্ট লিভ মি অ্যালোন। ”

সেথা হতে প্রস্থান করার ইশারা করলো নিশাদ। প্রেয়সীর অশ্রুসিক্ত বদন দেখেও সে যেন আজ ভাবলেশহীন। কঠিন‌। কিছুই এসে যায় না। চুপচাপ মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়ালো। এমন বিরূপতা সইতে পারলো না তৃষা। একরাশ যাতনা নিয়ে সেথা হতে ছুটে পালালো। পেছনে রয়ে গেল চিন্তিত এক মানব।
.

আনন্দে মুখরিত মেহেদী অনুষ্ঠান। সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলো। হবু কনের দু হাত রাঙা হলো মেহেদীর পরশে। মেহেদী রাঙা কোমল দু’টো হাত সাবধানে আগলে রেখে কক্ষের উদ্দেশ্যে রওনা হলো দুয়া। পৌঁছালো কক্ষে। নয়নতারায় আবদ্ধ হলো ননদের অবয়ব। বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে মেয়েটি। মুখ গুঁজে বালিশের আবরণে। ক্ষণে ক্ষণে কম্পিত হচ্ছে কায়া। সে দৃশ্য অবলোকন করে দুয়া সম্পূর্ণ ভাবলেশহীন ভাবে করে বসলো অনাকাঙ্ক্ষিত এক প্রশ্ন,

” নিশাদ ভাইয়ার সঙ্গে তোর কি চলছে? ”

ক্রন্দনে লিপ্ত রমণী হতবিহ্বল হলো। ভুলে গেল ক্রন্দন। অশ্রুসজল নয়নে পিছু ঘুরে তাকালো। দুয়া ওর দিকে না তাকিয়ে বিছানার এক ধারে গিয়ে বসলো। ডান হাতের তর্জনী ও মধ্যমা ব্যবহার করে কোনোমতে দেহ হতে ওড়না সরিয়ে নিলো। সিলিং ফ্যানের নিম্নে আরামে দেহ এলিয়ে দিলো হেডবোর্ডে। তৃষা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে। বোধগম্য হচ্ছে না কিছুই। কি বলবে, কেমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবে তা অজানা। প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে চক্ষু বন্ধ করে দুয়া পুনরায় শুধালো,

” চুপ করে আছিস কেন? বল। কবে থেকে মনের লেনাদেনা চলছে? ”

তৃষা সোজা হয়ে বসলো। কাট-কাট কণ্ঠে বললো,

” কিসের লেনাদেনার কথা বলছিস? কো কোনো লেনাদেনা নেই। ”

চক্ষু মেলে তাকালো দুয়া। ভ্রু উঁচু করে নিশ্চিত হতে শুধালো,

” আচ্ছা? ”

তৃষা অবনত মস্তকে জবাব দিলো, ” হুম। ”

” তাহলে তোমার চোখে অশ্রু কেন ললনা? কাঁদছিলেই বা কেন? ভাবির শোকে? ” দুয়ার কণ্ঠে উপহাসের ছাপ।

তৃষা দু হাতে তড়িঘড়ি করে অশ্রু বিন্দু মুছে নিলো। মৃদু শব্দে হাসলো দুয়া। চক্ষু বন্ধ করে কাব্যিক ভাবে বলতে লাগলো,

” ওহে ললনা! প্রণয় নামক বি!ষধর সাপ তোমায় দং*শন করে ফেলেছে। এবার যে তোমার প্রণয়াসক্ত বি’নাশ আসন্ন।”

মেয়েটির অক্ষি কোল গড়িয়ে অবিরাম অশ্রু ঝড়তে লাগলো। সে ডানে বায়ে মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে নিজেকে বুঝ দেয়ার ভঙ্গিতে বলতে লাগলো,

” না না। এ-এ হতে পারে না। ”

” ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। স্বীকার করতে শিখ তৃষ। অন্যথায় দেরি না হয়ে যায়। ”

দুয়া অনিমেষ নেত্রে তাকিয়ে। চোখে চোখ পড়তেই দৃষ্টি সরিয়ে নিলো তৃষা। পুনরায় বালিশে মুখ লুকিয়ে শুলো। যেন নিজেকে আড়াল করলো। গোপন করলো তার হৃদয়ে লুকানো অনুভূতির বহর। দুয়া তার প্রিয় বন্ধুসম ননদের পাশে দুঃখী চাহনিতে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে ভেবে নিলো কিছু ভাবনা।
.

তমস্র রাত্রি। বারিদের আড়ালে লুকায়িত সুদানিধি। লুকোচুরি খেলে চলেছে পেঁজো তুলোর ন্যায় বারিদের সনে। চারিপাশ আঁধারে ঘনিভূত। দূর আকাশে অবস্থিত সুদানিধি’রও বুঝি আজ মন খারাপ। তাই তো আঁধার নেমেছে প্রকৃতির বুকে। ছাদের একাংশে রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে তূর্ণ। থমথমে তার সুকান্ত মুখশ্রী। কপালে সরু এক ফালি ভাঁজ। মানসপটে চলছে অবর্ণনীয় দুশ্চিন্তা। অনাকাঙ্ক্ষিত এ কোন ঝড়ো হাওয়া বয়ে আসছে? ল*ণ্ডভণ্ড করে দিতে চাইছে সাজানো গোছানো সুখের সংসার। একসাথে প্রায় এক বর্ষ কাটালো দু’জনে। অবশেষে বিবাহ বার্ষিকীর দিন নতুন করে আরও একবার পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হতে যাচ্ছিল তারা। আর তো মাত্র ক’টা দিন। তন্মধ্যে এ ঝড়ের আভাস! এটা কি খুব দরকার ছিল? সবটা কি নির্বিঘ্নে সুষ্ঠু রূপে হতে পারতো না? হয়তো পারতো। তবে মহান রবের পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন কিছু। তাই তো এ অনাহুত বিপদের উঁকিঝুঁকি! আচ্ছা এ বিপদ কাটাতে তার কি করা উচিত? বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগী তো করবেই। এছাড়াও! এই বিপদে তার আপনজন, পরিবারের সদস্যরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না তো? তাদের কিছু হয়ে গেলে…! না না। এ কি ভাবছে সে! ওপর ওয়ালা রয়েছেন। উঁনি নিশ্চয়ই রক্ষা করবেন। সর্বশ্রেষ্ঠ রক্ষক যে উঁনি। মনের মধ্যে একঝাঁক চিন্তাভাবনা ডানা মেলে উড়ে বেড়াচ্ছে। খৈ হারিয়ে ফেলছে চেতনার বৈঠা। ওলোটপালোট কত কি ভেবে চলেছে। নির্ঘুম ছাদে সময় অতিবাহিত হতে লাগলো। কখনো মৃদু পবনে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে। কখনোবা হেঁটে বেড়াচ্ছে ছাদের এ প্রান্ত হতে ও প্রান্ত। একটুও স্বস্তি মিলছে না। একাকী রাত। সঙ্গীহীন একেলা বিরহে, দুশ্চিন্তায় পাড় হলো।

চলবে.

[ শেষের পথে তূর্ণয়া’র পথচলা। আর অল্প কিছু পর্ব। সমাপ্ত হতে চলেছে ‘ তুমি হৃদয়ে লুকানো প্রেম ‘. কেমন লাগলো আজকের পর্বটি? বেশ বড় একটি পর্ব দিলাম। শব্দসংখ্যা ২০০০+. গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here