#অমানিশায়_সেই_তুমিই
#লেখায়_তেজস্মিতা_মর্তুজা
২৩.
বিকেলে বৃষ্টি হওয়ার ফলে পরিবেশটা স্যাতস্যাতে হয়ে আছে। তবুও এক সজীবতা জুরে আছে চাঁদহীন আকাশ ও গাছের সবুজ পাতায়। মেঘালয়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখছে ভেজা প্রকৃতি। কিছুক্ষণ আগে গোসল করায় চুলগুলো ভেজা। ছড়িয়ে দেয়া পিঠে। মৃদূমন্দ বাতাসে উড়ছে তা। আজকাল তার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। অল্পতেই হাপিয়ে ওঠে। মাথাটা ঝিমঝিম করে, কখনও কখনও চারদিক অন্ধকার হয়ে ঘুরে ওঠে মাথা।
এডমিশন কোচিংয়ে ভর্তি করিয়েছে ইরাজ তাকে। প্রথম কিছুদিন নিয়মিত ক্লাস করলেও ক’দিন শরীরের এমন দুর্বলতাকে কেন্দ্র করে আর নিয়মিত কোচিংয়েও যাওয়া হয় না। তবে পড়ালেখা যথাসম্ভব, খুব বেশিই করছে মেঘালয়া। সঙ্গে ইরাজ আছে দিন রাত পড়তে বসার তাগাদা দেয়ার জন্য। মেঘালয়ার কাছে জীবনটা আবারও রঙিন লাগতে শুরু করেছে। ইরাজের ঘাঁড় ত্যাড়ামির কাছে দিন দিন তার দুর্বলতা কেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে! ইরাজকে হারানোর কথা ভাবলেও বুক মুচড়ে ওঠে। ইরাজকে নতুনভাবে চিনছে, জানছে। ইরাজের ছায়াতলে মেঘালয়া আজকাল আবারও বড়ো আহ্লাদি হয়ে উঠেছে যেন!
ভেবেই মুচকি হাসল। ইরাজের ত্যাড়া কথা, বেপরোয়া চলন, রাগী মেজাজ আবার অদ্ভুত এক শীতলতা, কখনও কখনও যত্নশীল মন-মাতানো এক প্রেমিক হয়ে উঠতে ইরাজের জুরি নেই। সেখানে আর কোন পুরুষকে কল্পনা করাও সম্ভব নয়। খুব অনুতাপ হয় মাঝেমধ্যে মেঘালয়ার— এই পাগল ছেলেটাকে ঠুকরে সে নিজের সিদ্ধান্তে চলতে গিয়েছিল! হাহ! নিজের ওপর তাচ্ছিল্য করে ওঠে। কিছুদিনের মাঝে তাদের সম্পর্ক, ইরাজের চালচলন, মেঘালয়ার মনের অবস্থা; সবকিছুতেই অদ্ভুত পরিবর্তন এসেছে।
বারান্দা থেকে রুমে চলে এলো। দাঁড়িয়ে থাকতে শরীর সায় দিচ্ছে না। গতকাল হেলাল সাহেব এসেছিলেন মেয়েকে দেখতে। সঙ্গে এনেছিলেন মেঘালয়ার পছন্দসই বহু খাবার। দুপুরে খাওয়া হয়নি তার। খাওয়ার কথা ভাবলেও বমি ঠেলে আসছে। এখন ভাবল, কিছু খাবে। অথচ রুচিতে আসল না। এতক্ষণের ফুরফুরে মনটা হুট করে বিষন্ন হয়ে পড়ল। আর কিছুই ভালো লাগছে না তার আশেপাশের। দেহে রাজ্যের ক্লান্তি এসে ভর করেছে।
সাড়ে নয়টার দিকে ইরাজ এলো। তার এই আজব পরিবর্তন। আজকাল বাড়ি ফিরতে দশটাও বাজে না তার। রুমে ঢুকেই প্রথম মেঘালয়ার দিকে নজর গেল। বিষন্ন চিত্তে মনমরা হয়ে বসে আছে সোফার কাছে মেঝেতে। চঞ্চল পায়ে হেঁটে গিয়ে বসল মেঘালয়ার সম্মুখে। একহাত মেঘালয়ার কপালে ঠেকিয়ে অপর হাতে হালকা বন্ধনে জড়িয়ে নিল মেঘালয়াকে। অশান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“এভাবে বসে আছিস কেন? কী হয়েছে, কেমন লাগছে? এবার ইচ্ছে কী করছে জানিস? ঠাস করে একটা চড় মেরে দাঁতগুলো নড়িয়ে দেই। কতদিন ধরে বলছি, চল ডাক্তারের কাছে। মাতব্বর হয়ে গেছিস?ʼʼ
মেঘালয়া চোখ তুলে তাকাল এতক্ষণে ইরাজের দিকে। একটু নড়েচড়ে বসে ইরাজের শার্টের বোতামগুলো আলগা করতে লাগল। ইরাজ ভ্রু কুঁচকে তা দেখছে কেবল। মেঘালয়া শান্তস্বরে বলল আস্তে করে, “এখন আপাতত ফ্রেস হয়ে আসুন। আর সবকিছুতে উত্তেজিত হতে নেই।ʼʼ
ইরাজ ভ্রু কুঁচকে বলল, “জ্ঞান দিচ্ছিস, পুচকি মেয়ে!ʼʼ
মেঘালয়া শার্টটা খুলে তা হাতের কনুইতে রেখে, চোখ তুলে তাকিয়ে বলল, “সে আপনি যতই হাত-পা ওয়ালা লম্বা, বয়সে বড়ো হন না কেন, মেনে তো চলতে হবে আপনাকে এই পুচকির কথাই!ʼʼ
ইরাজ কপালটা জড়িয়ে ঘাঁড় বাঁকাল, সন্তর্পণে সামান্য হাসল। উঠতে উঠতে জিজ্ঞেস করল, “আম্মা কোথায় রে? আর তোর হয়েছে কী সে ব্যাপারে তুই খেয়াল করবি নাকি আমাকে করতে হবে? আমি করলে কিন্ত ওভার হয়ে যাবে, তুই নিতে পারবি না।ʼʼ
বলে হাতটা বাড়িয়ে দিল মেঘালয়ার দিকে। মেঘালয়া ইরাজের হাতটা চেপে ধরে উঠে দাঁড়াল টলমলে পায়ে। ক্ষীণ স্বরে বলল, “মামনি বোনের বাড়ি গিয়েছে। আমি খাবার দিচ্ছি চলুন।ʼʼ
ইরাজ ক্ষেপা নজরে তাকাল এবার। একহাতে জড়িয়ে নিল মেঘালয়াকে। মুখ ভেঙচিয়ে বলল, “আমি খাবার দিচ্ছি চলুন!ʼʼ
এরপর ধমকে বলল, “চল ডাক্তারের কাছে। শরীরে তো মশার অতখানি জোরও নেই। এভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলে তোর বাপ আবার আমার বদনাম করে বেড়াবে?ʼʼ
“এছাড়া, আপনার কিছু না?ʼʼ—বিছানায় বসে বলল কথাটা মেঘালয়া।
ইরাজ ওকে বসিয়ে দিয়ে টান হয়ে দাঁড়াল। গায়ের স্যান্ডো গেঞ্জিটা খুলে মেঘালয়ার কোলে ছুড়ে মারল। একটু ঝুঁকে দাঁড়াল মেঘালয়ার দিকে। নিচু আওয়াজে বলল, “আমি বউহারা হয়ে যাব। এর চেয়ে চিন্তার আর কী আছে?ʼʼ
মেঘালয়া নাক ফুলিয়ে চেয়ে রইল দুষ্ট হাসি ছড়িয়ে থাকা ঠোঁটের দিকে। হঠাৎ ইরাজ সিরিয়াস হয়ে বলল, “মেঘ! আমরা ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি। ‘না’ বললে, কানটা গরম হয়ে যাবে।ʼʼ
বলেই বাথরুমের দিকে চলে গেল ইরাজ। মেঘালয়া সেদিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। শিক্ষিত মেয়ে সে। শরীরের অবস্থা সম্বন্ধে যথেষ্ট বুঝ ও ধারণা রয়েছে তার। এই বদমেজাজি, একরোখা লোককে কী করে বোঝাবে সেসব!
ইরাজ বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখল, মেঘালয়া খাবার নিয়ে বসে আছে। মাথা গরম হয়ে উঠল। ভারী পায়ে হেঁটে গিয়ে বলল, “আমার কথায় মন লাগে না তোর? শরীরের দিকে মনোযোগ দিতে ব্যাথা পাস? বললাম না ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি আজ ফাইনাল! সিঁড়ি ভেঙে নেমে খাবার আনতে চলে গিয়েছিস! এত কর্তব্যপরা..
মেঘালয়া ইরাজের হাত টেনে ধরে বসাল সামনে। যথাসম্ভব তেজী গলায় বলল, “আর একটাও কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে নিন। আমার শরীরের ব্যাপারে আমি বুঝি না? এসেছে আমার খেয়াল রাখতে।ʼʼ
মুখের সামনে খাবার ধরল ইরাজের। ইরাজ ভ্রুত কুঁচকে চেয়ে আছে; সবে মাত্র সে তার বউয়ে ধমক খেল। এবং সেই ধমকের আঁছড়ে এবার খাবারটুকুও খেল চুপচাপ। আজকাল মেঘালয়ার কাছে মাঝেমধ্যেই সে এমন ধমক, ধামকি-ধুমকি পায়। এবং চুপচাপ মেনেও নেয়। বউয়ের সামনে নাকি বাহাদুরী চলে না; ইরাজ এ কথা টের পাচ্ছে আজকাল খুব।
মেঘালয়া ইরাজকে খাইয়ে নিজেও সামান্য কিছু খেয়ে নিল। খাবারির প্লেটটা আর রেখে আসার ব্যাপারে শরীর সায় দিল না। বেড-সাইড টেবিলের ওপরে রেখে ওমনি বসে রইল কিছুক্ষণ। এর মাঝে ইরাজ আস্তে করে উঠে যাচ্ছে তার নিত্যকর্মে। মেঘালয়ার দিকে চোখ যেতেই দেখল, সে চোখ ছোটো ছোটো করে চেয়ে আছে। সাফাই গাওয়ার সুরে বলে উঠল,
“আরে, দেখ সারাদিন একটাও টান দেইনি। এখনও না দিলে রাগ করবে তো? একটাই তো, বেশি না। দেখ এ প্যাকেটে আছেও আর একটাই।ʼʼ
“বউয়ের চেয়ে সিগারেটের রাগের প্রাধান্য বেশি?ʼʼ
ইরাজ আস্তে করে বসল বিছানায়। কপট রাগে সিগারেটের প্যাকেটটা ছুড়ে দিল মেঘালয়ার দিকে। মেঘালয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, “একদম তাই। কারন যখন বউ ছিল না, সিগারেট ছিল সাথে। এখনও যদি বউ ভাগে, সিগারেট কিন্ত ছেড়ে যাবে না আমায়! বউয়ের আগে সিগারেট এসেছে আমার জীবনে। আমি নতুন কাউকে পেয়ে ওর সাথে বেইমানী করতে পারব না। আফটার অল, আ’ম লয়াল!ʼʼ
মেঘালয়া অতিষ্ট ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল। পেটের মধ্যে গুলিয়ে আসছে। আচমকা মাথাটা ঘুরে আসল, পেটের সবকিছু যেন বেরিয়ে আসবে এখনই। মেঘালয়া দ্রুত পায়ে নেমে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল। বমির করার উপক্রম হলে মুখ চেপে ধরল হাত দ্বারা। ইরাজ দৌড়ে পাশে এসে দাঁড়ায়। ধরে দাঁড় করাল, মেঘালয়া তো শান্ত, অথচ ইরাজ অস্থির হয়ে উঠেছে মুহূর্তের মাঝে। বাথরুমে গিয়ে ওকে দাঁড় করিয়ে ধরে দাঁড়িয়ে রইল। বেশ কিছুক্ষণ বমির ভাব হলেও বমি হলো না। ইরাজ ওকে বিছানায় এনে শুইয়ে দিয়ে, প্রস্তত হতে অগ্রসর হয় ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য। মেঘালয়া হাত চেপে ধরল। পাশে বসল ইরাজ, উত্তেজিত হয়ে কিছু বলার আগেই মেঘালয়া বলে,
“এখন ভালো লাগছে। যদি যেতেই হয় কাল সকালে যাব। এখন দরজা লাগিয়ে দিন, আর এসির টেমপারেচার কমান একটু, গরম লাগছে। তারপর ভদ্রলোকের মতো এসে শুয়ে পড়ুন।ʼʼ
ইরাজ কপাল কুঁচকে সন্দিহান কণ্ঠে বলল, “মেঘ! তোর ভাবসাব কিন্ত ভালো না।ʼʼ
—
সকালে টুকটাক বৃষ্টি হয়েছে। আকাশ মেঘলা হয়ে আছে। পরিবেশটাও ঠান্ডা। মেঘালয়ার ঘুম ভাঙল নয়টার দিকে। অথচ পাশে তাকিয়ে দেখল, ইরাজ নেই। শরীরটা ওর বহুরূপী হয়ে উঠেছে। এখন বলা চলে, তুলনামূলক ভালো লাগছে। আস্তে করে উঠে, বাথরুমে গেল। হাত-মুখ ধুয়ে বের হয়ে মুখটা মুছলোও না। তোয়ালে ইরাজ কোথায় ছুরে ফেলে গেছে আল্লাহ পাক জানে। এরকম অগোছালো হয় পুরুষ মানুষ, তা অজানা ছিল মেঘালয়া। আব্বুকে সফসময় পরিপাটি দেখেছে সে। অথচ ইরাজ! নিজেকে পরিপাটি রাখলেও তার অভ্যাস বাজে রকমের এলোমেলো। বাইরে থেকে এসে শার্ট খুলে এক প্রান্তে ছুড়ে মারে তো প্যান্ট খুলে অপর প্রান্তে। সেভাবেই এখন তোয়ালে কোথায় রেখেছে, তা খোঁজার ইচ্ছেটুকু হলো না মেঘালয়ার।
নরম পায়ে হেঁটে নেমে এলো বসার রুমে। ইমতিয়াজ সাহেব সোফায় বসে সকাল সকাল টিভি ছেড়ে খবরের চ্যানেল চালু করে রেখছেন। অথচ নজর তার খবরের কাগজে। খবর যখন কাগজেই পড়বে, তাহলে টিভিতে খবরের চ্যানেল চালিয়ে রাখার মানেটা কী? তার চেয়ে বড়ো কথা টিভিটাই চালু করে রাখার মানে কী? মেঘালয়ার মেজাজ আজকাল চরম খিটখিটে। আর এই খিটখিটে মেজাজেই কথাগুলো ভেবে ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে গেল সোফার দিকে।
“বাবাই, তোমার জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ পাচ্ছে, বেশি করে বুদ্ধি বাড়ার ওষুধ খাবে।ʼʼ
মেঘালয়ার কথায় ইমতিয়াজ সাহেব থমকে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ, অতঃপর ফিক করে হেসে ফেললেন। মেঘালয়া তা দেখে কপালটা আরও জড়িয়ে ফেলল।
“হাসছ কেন? জোকস বলেছি?ʼʼ— কথাটা বলেই রিমোটটা হাতে নিয়ে চট করে টিভিটা বন্ধ করে দিল। ইমতিয়াজ সাহেব কৃত্রিম গম্ভীর স্বরে বললেন, “এখনই বাড়ির খরচে সাশ্রয় শুরু করেছিস? ক’দিন পর তো সোফায় বসার ভাড়া আদায় করবি!ʼʼ
মেঘালয়া থমথমে মুখে বলল, “এটা কোন কথা?ʼʼ
ইমতিয়াজ সাহেব মেঘালয়ার এই খিটখিটে রূপে বেশ মজা পাচ্ছেন। মনেমনে হাসলেন, মুখে সিরিয়াস হয়ে বললেন, “তোর শরীর নাকি ভালো যাচ্ছে না, কী হয়েছে মেঘা!ʼʼ
মেঘালয়া সোফায় বসে বলল, “এ খবর কী কাগজে ছাপা হয়েছে নাকি টিভিতে দেখাচ্ছে?ʼʼ
ইমতিয়াজ সাহেব বললেন, “দুটোর কোনটাই না, বরং রাজের মুখে ঘোষিত হয়েছে। আর বুঝলাম, তোর শারীরিক না বরং মেজাজ খিটখিটের রোগ হয়েছে।ʼʼ
মেঘালয়া অতিষ্ট হয়ে বলে ওঠে, “উফফ,বাবাই!ʼʼ
ইমতিয়াজ সাহেব ঢং করে বললেন, “আ’ম হেয়ার, মাই প্রিন্সেস!ʼʼ
মেঘালয়া হেসে ফেলল এবার, “তোমার ক্যাকটাস, থুক্কু ক্যাকটাস আমার। তোমার বাঁদর কই?ʼʼ
“আস্তে বল। আজ বাঁদরের হাতে আমাদের পেট।ʼʼ
“মানে! রান্না করছে? করতে জানে তোমার..
কথা পুরো না করে উঠে গেল রান্নাঘরের দিকে। ইরাজ রান্না করছে। ঘেমে কাহিল অবস্থা তার। চোখ-মুখ লাল হয়ে গেছে। মুখটা মাত্রাতিরিক্ত গম্ভীর। ওভাবেই রান্না করছে দাঁড়িয়ে। ঘর্মাক্ত, বিরক্ত, রান্নায় ব্যস্ত ইরাজকে দেখে কোথাও একটা নরম অনুভূতি উঁকি দিল মেঘালয়ার মাঝে। যুবতী মেঘালয়ার সামনে দাঁড়ানো ওই ঘামে সিক্তদেহী পুরুষ কেমন আকর্ষণীয় ঠেকল তার কাছে। আস্তে করে কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল, “আমায় ডাকতেন, অমি সাহায্য করতাম। একা এভাবে হেনস্তা হওয়ার কী দরকার?ʼʼ
ইরাজ হাত ধুতে ধুতে বলল, “হুম ডাকতাম। তোর বাপে যে ননীর পুতুল মানুষ করে ঘাঁড়ে ঝুলিয়ে দিয়েছে, তাকে ডাকতাম রান্নার মতো কাজে। রান্না করেছিস জীবনে? খালি তো খেয়েছিস পায়ে পা তুলে। আর তার ওপর শরীর খারাপ, যা এখান থেকে। এখানে গরম, গিয়ে আব্বুর কাছে বস।ʼʼ
মেঘালয়া চোখ-মুখ জড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, “আপনি খোঁটা দিচ্ছেন আমায়? একদিন আপনার চেয়ে ভালো রাধুনী হয়ে দেখাব… ওয়েট ওয়েট, আপনি রান্না জানেন? জানেন তো, কীভাবে জানেন?ʼʼ
ইরাজ ঘুরে দাঁড়াল, মেঘালয়ার মুখে মৃদূ একটা থাপড়া মেরে বলল, “তোর মতো ন্যাকারাণী আর আহ্লাদি ছিলাম নাকি আমি? হলে থেকে পড়ালেখা করেছি।ʼʼ
মেঘালয়া মুখে হাত দিয়ে নাড়তে নাড়তে খোঁচা দিয়ে বলল, “হলে আপনি রান্না করতেন? নাকি অন্যকে ভয় দেখিয়ে তাদের দিয়ে রান্না করিয়ে নিয়ে গিলতেন! আপনি যে উন্নত জাতের কাঁটাভরা ক্যাকটাস!ʼʼ
ইরাজ সরু চোখে তাকাল, “চড় খেয়ে ফর্সা গালটায় ছাপ বসাতে না চাইলে ভাগ এখান থেকে।ʼʼ
মেঘালয়া মুখ বাঁকাল, “কোন ইচ্ছে নেই আপনার কাছে দাঁড়িয়ে থেকে ঝগড়া করার। দরকারে এসেছি।ʼʼ
ইরাজ রান্নায় খুন্তি নাড়তে নাড়তে বলল, “বলে ফেল।ʼʼ
মেঘালয়া একটু কাছে এসে দাঁড়াল, ফিসফিস করে বলল, “বাড়ি ফেরার সময় মনে করে একটা প্রেগন্যান্সি কিট আনবেন।ʼʼ
ইরাজকে থমকানোর সুযোগটুকু দিল না মেঘালয়া। বের হয়ে গেল রান্নাঘর থেকে। ইরাজ কেবল বিষ্ময়ে থমকে, ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়া বুকের ধুকপুকানির সাথে স্থির দাঁড়িয়ে রইল মেঘালয়ার যাওয়ার পথে নজর মেলে।
চলবে..
[ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করবেন]