#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_১১
ইশান তীরকে ওর বাড়িতে রেখে নিজের ঘরে এসে গায়ের কোর্টটা খুলে সোফাতে রাখে। কোর্টটা সোফাতে রাখার সাথে সাথে পকেট থেকে হলুদ রং এর একটা পেকেট নিচে পড়ে। ইশান পেকেটটা তুলে নিয়ে বেডে বসে। ইশান পেকেট থেকে এক জোড়া পাথরের কানের দুল বের করে। যে কানের দুলটা শপিংমলে দেখেছিলো সেই কানের দুলটা কিনে এনেছে ওই সময়। ইশান কানের দুলটা হাতে নিয়ে মুচঁকি হেসে বলে।
–আচ্ছা এই কানের দুলটা পড়লে তকে কেমন লাগবে তীর? এই প্রথম কোনো মেয়ের জন্য এসব মেয়েলি জিনিস কিনেছি। আচ্ছা তর কি পছন্দ হবে দুলটা। অবশ্যই পছন্দ হবে তর কিন্তু দিবো কি করে তকে এটা। ভাইয়ার বিয়ের দিন কি এটা দিবো তকে। হুমমম ভাইয়ার বিয়ের দিনেই তকে এটা দিবো উপহার হিসেবে।
ইশান কিছুক্ষন কানের দুলগুলার দিকে তাকিয়ে থেকে ওয়াশরুমে চলে যায়।
_____
তীর আড়মোড়া ভেঙ্গে ঘুম থেকে উঠে বসে। সকাল হয়ে গেছে চারিদিকে সূর্যের আলো চিকচিক করছে। ফেব্রুয়ারি মাস শীতের প্রোকোপ কমে এসেছে এখন। তীর বেড থেকে নেমে ড্রেসিং টেবিলের বড়ো আয়নার সামনে দাঁড়ায়। এখনো গতকাল শপিং এ যাওয়ার পোশাক গায়ে আছে। তীর ভ্রু-কুচকে বলে।
–এই পোশাকেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু আমি তো গাড়িতে ছিলাম তাহলে এখানে আসলাম কি করে? তার মানে কি আমি আবারও ইশান ভাইয়ার কোলে চড়ে ঘরে এসেছি। হায় খোদা!
তীর ঠাস করে চেয়ারে বসে পড়ে বলে।
–ইদানিং এমনটা হচ্ছে কেন বার বার আমার সাথে? যতই লোকটার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছি ততই কাছে চলে যাচ্ছি। ধ্যাত!
_____
আজ ইহানের গাঁয়ে হলুদ, মেহন্দি, সঙ্গীত এক সাথেই হবে। সকালে গাঁয়ে হলুদ আর সন্ধ্যায় মেহেন্দি আর রাতে সঙ্গিত। সকাল থেকেই আত্মীয় পরিজন আসা শুরু করছে “ফরাজি” ভিলাতে। সারা বাড়ি গমগম করছে মানুষে। সারা বাড়ি সুন্দর করে প্যান্ডেল করা হয়েছে, নানা রকম বাহারি রঙের প্লাস্টিকের ফুল আর ঝারবাতি দিয়ে ভরপুর চারিদিক। বিয়ে বাড়ি একে বারে জমে উঠছে।
আর এসবের মাঝে তীর পড়েপড়ে ঘুমাচ্ছে উঠার নামেই নেই। ইশা অভিকে অনেক বার পাঠিয়েছে তীরকে তাঁড়া দেওয়ার জন্য। কিন্তু তীরের কোনো পাত্তা নেই। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই ইশা তীরদের বাড়িতে আসে। রুমে এসে দেখে তীর কি সুন্দর হা করে ঘুমাচ্ছে। ইশার মেজাজটা পুরা খারাপ হয়ে যায়। ইহানের বিয়ে নিয়ে কতশত প্লেন করছে দুজনে আর এখন ও কিনা পরে পরে ঘুমোছে। ইশা এক গ্লাস পানি এনে ঢেলে দিলো তীরের মুখে। তীর থরফরিয়ে উঠে বলে।
–মা আমার রুমের ছাদ ভেঙ্গে গেছে গো দেখো কেমন করে বৃষ্টি পড়ছে আমার উপরে।
ইশা তীরের এমন আবাল মার্কা কথা শুনে ধমকে উঠে।
–এই চুপ! কি ছাদ ভেঙে গেছে বলে চিৎকার করছিস। আমি তর মুখের উপর পানি ঢেলেছি আমি।
তীর ইশার কথা শুনে রাগে বলে।
–কেন ঢেলেছিস পানি তুই আমার উপরে?
–যাতে তুই তোর মরার ঘুম থেকে উঠতে পারিস। কত বার পাঠিয়েছি অভিকে তকে ঘুম থেকে তুলার জন্য তার হিসাব আছে।
তীর ইশাকে ভালো করে দেখে বলে।
— আরে ব্যাস ইশু তকে তো সেই সুন্দর লাগছে হলুদের সাজে।
–তকেও সুন্দর লাগবে এমন করে সাজলে। তাই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।
–তুই যা আমি দশ মিনিটে রেডি হয়ে আসছি।
–শুন শাড়িটা কিন্তু গ্রামো স্টাইলে পড়বি। যেভাবে আমি পড়েছি।
তীর মুখটা কালো করে বলে।
–কিন্তু ওভাবে তো পড়তে পারি না।
ইশা তীরের মাথা ঘাট্টা মেরে বলে।
–মাথায় কি গোবর পোরা নাকি তর। না পারলে নানুর কাছে যাবি নানু পরিয়ে দিবে সুন্দর করে তাহলেই তো হয়।
–ঠিক আছে তুই যা আমি আসছি।
–হুম।
______
তীর গোসল সেরে শাড়ি, ব্লাউজ আর অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে শাপলা বেগমের রুমে জুটে যায় শাড়ি পড়ার জন্য। শাপলা বেগমও সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দিয়ে বলে।
–মাশআল্লাহ আমার দাদুটা আজকে ভীষন মিষ্টি লাগছে কারোর যেন নজর না লাগে।
তীর দাদুর কথাতে একটা মুচঁকি হাসি দিয়ে নিজের করে চলে আসে সাঁজার জন্য। হালকা মেকাপ করে নেয়, চোখে গাঢ় করে কাজল দিয়ে নেয়, হাতে হলুদ রঙের রেশমি চুড়ি, ঠোঁটে হালকা পিংক কালারের লিপস্টিক, কোমড়ে চিকন চেইনের একটা বিছে। সবশেষে চুল গুলা খেজুর বেনি করে তাতে কৃএিম কাঠগোলাপ গুজে নেয়। ব্যাস সাঁজ শেষ।
_____
ইশান সকাল থেকেই ভীষণ ব্যস্ত এদিক সেদিক ছুটাছুটি করতে করতে হাপিয়ে গেছে। তারপরও কি আর করার এক মাএ বড় ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা এতটুকু কষ্ট তো সইতে হবেই।
ইশান এক গ্লাস পানি খেয়ে সোফাতে হেলান দিয়ে বসে সদর দরজার দিকে তাকিয়ে আছে তৃার্ষ্ণাত দুটো আঁখি নিয়ে। কখন থেকে ইশান ছটপট করছে তীরকে দেখার জন্য কিন্তু তীরের দেখা পাচ্ছেই না বেচারা। এমন সময় সোহেল ফরাজী ছেলের সামনে এসে বলে।
–ইশান বাবা একটু রান্নার সাইডটা দেখে আসবি সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা।
–যাচ্ছি বাবা।
ইশান উঠে দাড়িয়ে আরও এক বার সদর দরজায় দিকে দৃষ্টিপাত করে কিন্তু যাকে দেখার জন্য মন ছটপট করছে তার দেখা নেই। একরাশ ভীষণ্নতা নিয়ে ইশান ঘরের পিছনের দরজার দিকে এগিয়ে যায়।
______
তীর সামনের গেইট দিয়ে “ফরাজি” ভিলাতে ডুকার চান্স পেলো না। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই পিছনের গেইট দিয়েই আসতে হলো “ফরাজি” ভিলাতে। পেছনের দিকটা অনেকটাই ফাকা শুধু রান্না করার লোকরাই আছে তাই এতটা কষ্ট হয় নি আসতে।
তীর সামনের সদর দরজা দিয়ে না ডুকে তাড়াতাড়ি করার জন্য পেছনের দরজা দিয়ে ডুকতে যাবে আর তখনেই ঘটে এক অঘটন। কারো সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে নিলেই চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে উঠে। কিন্তু শরীরে কোনো রকম ব্যাথা অনুভব না করে নিজের উনমুক্ত কোমড়ে কারো শীতল হাতের স্পর্শ পেয়ে পিটপিট চোখে তাকাতেই ইশানকে নিজের এতটা কাছে দেখে ভরকে যায়।
ইশান ঘোরলাগা চোখে তাকিয়ে আছে তীরের মায়াবী মুখশ্রীর দিকে। ইশানের এতক্ষনের অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হলো তীরের দেখা পেয়ে। ইশান তীরকে সোজা করে তো দাঁড় করায় কিন্তু তীরের কোমড়ে রাখা বা হাতটা সরায় না। কেমন নিষ্পলকভাবে তীরের দিকে তাকিয়ে আছে। তীরের চুড়ি পরিহিত হাত দুটো ইশানের বুকের উপর রাখা।
এবার তীরও চোখ তুলে ইশানের দিকে তাকায় বাসমতী কালারের পাঞ্জাবিতে আজকে একটু বেশি সুদর্শন লাগছে লোকটাকে তীরের কাছে। সবসময়েই লোকটাকে সুদর্শন লাগে তীরের কাছে কিন্তু আজকে একটু বেশিই নজরকাঁড়া সুদর্শন লাগছে। দুজনের চাওনি মিলিত হওয়াতে তীরের বুকটা ধক করে উঠে। মনে হচ্ছে কেউ যেন হাতুরি দিকে হৃদয়টা পিটাছে যার জন্য এতটা ফাস্ট হয়ে গেল হৃদস্পন্ধ। তীর সাথে সাথে নজর ফিরিয়ে নেয় ভীষণ লজ্জা লাগছে এখন ওর। এভাবে তাকানোর কি আছে বুঝতে পারছে না আগে কি কোনো দিন দেখে নি লোকটা ওকে। তীর কাপাকাপা গলায়।
–ছা.. ছাড়ুন।
তীরের গলার আওয়াজ শুনার সাথে সাথে তড়িৎ বেগে ছিটকে দুরে সরে যায় ইশান। তীর লজ্জায় তাকাতে পারছে না ইশানের দিকে। এত লজ্জায় পাওয়ার কি আছে তীর বুঝে উঠতে পারছে না। ইশান কিছু বলতে যাবে তার আগেই তীর দিলো এক দৌড়। যতক্ষন পর্যন্ত তীর চোখের আড়াল না হয়েছে ততক্ষন পর্যন্ত তীরের দিকে তাকিয়ে ছিলো ইশান। তীর চোখের আড়াল হতেই ইশান ডান হাত দিয়ে বুকের বা’পাশটা চেপে ধরে জোরে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলে।
–আর একটুর জন্য হার্ট অ্যাটাকটা হয় নি। কিন্তু আমি নিশ্চিত এই মেয়ের জন্য আমি এক দিন ঠিকেই হার্ট অ্যাটাক করবো। উুহু।
_____
তীর বুক চেপে ধরে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। একটু আগে ওর মনে হচ্ছিলো নিশ্বাস বন্ধ হয়ে মরেই যাবে। জিহ্বা দিয়ে নিজের ঠোঁটটা ভিজিয়ে নিয়ে ঢোক গিলে গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। তীর চোখ মেলে তাকিয়ে বলে।
–রিলেক্স তীর রিলেক্স। কিচ্ছু হয় নি এটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট এর বেশি কিছুই না। হু,, কিন্তু আমি তো রিলেক্স হতে পারছি না বারবার ওনার গভীর চোখ দুটো চোখের সামনে ভেসে উঠছে। সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে এই লোকটা আমার সবকিছু।
তীর কিছুক্ষন চুপ থেকে আবার বলে উঠে।
–আমি কি লোকটার প্রেমে পড়ে গেলাম। না না এসব কি ভাবছি আমি। এমন কিছুতেই হতে পারে না কিছুতেই না। কিন্তু!
তীর বিরবির করেই যাচ্ছে আর অন্যদিকে ইশা রেগে সিড়ি দিয়ে তীরকে বকতে বকতে নামছে।
–মেয়েটা এখনও আসে নি ইচ্ছে করছে তো ওকে…
তখনেই নজর যায় তীরের দিকে কেমন অস্থির হয়ে যায়। ইশা তীরের কাছে গিয়ে বলে।
–কি রে তুই এখানে দাঁড়িয়ে থেকে পাগলের মতো কি বিরবির করছিস?
তীর ইশাকে দেখার সাথে সাথেই ঝাপ্টে ধরে।
–আরে কি করছিস এভাবে গলা জড়িয়ে ধরে মেরে ফেলবি নাকি।
তীর ইশাকে ছেড়ে দিয়ে কাঁদো কাঁদো মুখশ্রী নিয়ে বলে।
–ইশু রে!
ইশা তীরের এমন অবস্থা দেখে বিচলিত কন্ঠে বলে।
–কি হয়েছে তর! এমন দেখাচ্ছে কেন তকে?
–আই থিংক আই এম ইন লাভ।
–হোয়াট? সত্যি কার প্রেমে পড়েছিস তুই?
–বুঝতে পারছি না আমি কি আসলেই তার প্রেম পরেছি নাকি পরে নি।
–আচ্ছা ঠিক আছে দাড়া দাড়া আমি তর সংশয় দুর করে দিচ্ছি।
–কিভাবে দূর করবি?
–আচ্ছা তাকে দেখলে কি তর হার্টবিট বেড়ে যায়, তার সামনে গেলে কি লজ্জা লাগে, নিজের সব কিছু কি এলোমেলো লাগে।
–হুম হুম।
–সিরিয়াসলি তুই কারো প্রেমে পড়ে গেছিস? কিন্তু তাহলে আমার ইশান ভাইয়ার কি হবে? ভাইয়া তো তকে তকে মনে মনে ভালোবাসে।
–যার প্রেমে পরেছি সেট তর ইশান ভাইয়াই।
ইশা আবাক চোখে তীরের নিচ থেকে উপর পর্যন্ত চোখ বুলায়। তীর ইশার এমন করাতে বলে উঠে।
–কি হয়েছে?
–তুই ভাইয়ার প্রেমে পরেছিস কবে, কখন, কিভাব?
–সব বলবো আমি তকে পরে। এখন চল না হলে লেইট হয়ে যাবে।
–পরে বলবি কিন্তু।
–হে রে বাবা বলবো।
#চলবে______