মুঠোভরা_চোরাবালি #আলিশা_আঞ্জুম #বোনাস_পর্ব

0
394

#মুঠোভরা_চোরাবালি
#আলিশা_আঞ্জুম
#বোনাস_পর্ব

জীবনের মোর ঘুরে যায় যেন সেকেন্ডের মাঝে। ঠিক আকাশের মতো রঙ পাল্টিয়ে নেয়। আবহাওয়া মতো বদলে যায়। তাসরিফ কখনো ভেবে রাখেনি জীবন তাকে এভাবে বিচ্ছেদ ঘটানোর জন্য বাধ্য করবে। ফাইজা কে দূরে সরিয়ে দেবে। ধুঁকে ধুঁকে মারতে চাইবে তাকে। আজ একমাস হতে চলল। ফাইজার কোনো খোঁজ সে নিতে পারে না। প্রথম সাতদিন সাদের থেকে ফোন করে খোঁজ নেওয়া হতো। কিন্তু এখন? সম্ভব হয় না। ওপাশ হতে সাদের ফোনে কেউ স্বচ্ছ কন্ঠে বলে দেয়, ‘ আপনি যাকে কল করেছেন, সে এই মুহূর্তে ব্যাস্ত আছে….. ‘ তাসরিফ ভাবতে গিয়ে একটুখানি হাসলো। ছেলেটা হয়তো তাকে ব্লক করেছে। ফাইজার থেকে সবটাই শোনা হয়ে গেছে ও বাড়ির সকলের। তবে তারা যে সবটা জানে সে সবটা কি আদৌও সত্যি?

— তাসরিফ? তুমি কি ঘুমোচ্ছো?

ভাবনার মাঝে হঠাৎ দরজায় করাঘাত। তাসরিফ বন্ধ ঘরের অন্ধকার ঠেলে দৃষ্টি ফেলল দরজায়। তাসলিমা খাতুন ডাকছেন। তাসরিফ চেয়ারে বসে ছিলো আনমনা হয়ে। উঠে দাড়ালো। রুমের বাতি জ্বালিয়ে সে দরজা খোলার জন্য এগিয়ে গেলো সামনের পথে।

— ডিনার করবে না?

কিছুটা ক্ষোভ মিশ্রিত কন্ঠ মায়ের। তাসরিফ তাকিয়ে দেখলো। হঠাৎ মিনিট দুয়েকের জন্য থমকে গেলো মায়ের মমতা ভরা মুখে। হবে হয়তো তার মা একটু রাগী। ফাইজাকে কম সহ্য করতে পারে। তাতে কি! মা তো! একবার তাকালে একটা উমরাহ হজের সাওয়াব লাভ করা করা যায়। তাসরিফ ভেবে নিলো হঠাৎ। জীবনে ফরজ হজের সুযোগ হয়ে উঠবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আজ থেকে বরং একবার করে মাকে দেখে একটা করে হজের সাওয়াব আদায় করে নেবে।

— কি হলো? চেহারার হাল কি তোমার? খাওয়া দাওয়া করো না কেন তুমি? আজ দুপুরে কিন্তু লান্স করোনি তুমি। ইদানীং একটু বেশিই ব্যাস্ততা দেখাচ্ছো। শুনলাম দুইটা ডিল একসাথে কনফার্ম করেছো। কত প্রেসার পরবে তুমি বুঝতে পারছো?

তাসরিফ মাথা নত করে নিলো। সাদা পাঞ্জাবি হালকা কুঁচকে ছিলো। গোটানো হাতার ভাজ অদৃঢ় হয়ে আছে। তাসলিমা খাতুন হঠাৎ ক্ষেপে গেলেন ছেলের এহেন দশা দেখে। পরিপাটি বৈ অপরিপাটি থাকা তার একদম পছন্দ হয় না। উদাস, অহেতুক মন খারাপ করাটাও তার কাছে অপছন্দের বিষয়।

— তাসরিফ….

লম্বা সুরে ডাকলেন তাসলিমা খাতুন। তাসরিফ মায়ের পানে চট করে চাইলো। চোখে সন্দিহান ভাব রেখে তাসলিমা বলে উঠলেন

— তোমার কিছু হয়েছে? তুমি কি অসুস্থ?

তাসরিফের বুকের মাঝে থাকা হৃদপিণ্ড যেন দাপিয়ে উঠলো। চোখ মুখ শুকিয়ে আসার যোগাড়। সে তবুও বিচলিত হতে চাইলো না। এক গোপন অধ্যায় লুকানো আছে। এই অধ্যায় মেলে ধরা সম্ভব না তাসরিফের পক্ষে। সে ঠোটে হালকা হাসি রেখে মায়ের পানে চেয়ে বলল

— নাহ। কিছু হয়নি। আসলে কাজের চাপ একটু বেশি।

তাসলিমা খাতুন কিয়ৎক্ষণ ছেলের পানে তাকিয়ে রইলেন। অপলক দৃষ্টিতে পরখ করে তিনি শেষ বারের মতো বলে গেলেন
” খেতে আসো”। তাসরিফ ‘হা’ বা ‘না’ এর কোনোটাই উচ্চারণ না করে দরজা লাগিয়ে দিলো নিশ্বব্দে। কিছু খাওয়া ইচ্ছে করে না। কিছু ভালো লাগে না তার।

ধীর পায়ে হেঁটে তাসরিফ চলে গেলো ফাইজার প্রিয় বেলকনিতে। আঁধার রাতের আকাশ। শতশত তারা। একটা মাত্র চাঁদ। মুগ্ধ করে দেওয়ার মতো পরিবেশ। তাসরিফ ফোঁস করে একটা চাপা নিশ্বাস কে বুক থেকে হঠাৎ বিদায় দিলো। গাঢ় হলো তার চোখের দৃষ্টি আকাশপানে। সুক্ষ্ম সুন্দর দুইটা চোখ তার হঠাৎই করে উঠলো ছলছল। তার বুকের বা পাশটা ফাঁকা। দেহের বা পাশে দাড়িয়ে থাকা ফাইজার স্থানটা ফাঁকা। ফাঁকা হতে যাচ্ছে হয়তো তার আয়ুর খাতা, রিজিকের খাতা। এহেন কথা তাসরিফের মনে সর্বদা যেন জাগ্রত থাকে। মায়ের মুখোমুখি হওয়ার ইচ্ছে করে না। বাবার পাশে চলতে গেলে পা থমকে যায়। নিষ্ঠুরভাবে নিজেকে অসহায় মনে হয়। বুকে ব্যাথা শুরু হয়। যে শ্বাসকষ্ট থেকে সেদিন ছুটতে হলো অফিস থেকে ফেরার পথে তাকে হসপিটালে। সেই শ্বাসকষ্ট মাথা চারা দিয়ে দলবল সহ হাজির হয়। তাসরিফ ভাবতে গিয়ে আবারও বেঁধে নিলো শ্বাসকষ্ট। তেড়ে আসছে যেন তারা। মাথা চেপে ধরলো তাসরিফ। অসহ্য যন্ত্রণা মাথাতেও শুরু হয়। রক্তক্ষরণ হয় দাঁতের মাড়ি থেকে। তাসরিফ ছটফট করে উঠলো। এখন রক্তপাতের পরিমাণ সামান্য। না জানি কবে, কখন, কিভাবে এই রক্তের প্রবাহ অধিক হবে। এমন হবে সেদিন, রক্তের ধারা থামবে না। পুরোপুরি ভাবে সেদিন থ্যালাসেমিয়া গ্রাস করে ফেলবে তাসরিফ কে। আর এই দশা যদি ফাইজা দেখে? বুক কেঁপে উঠে তাসরিফের। এই দশা যদি মা দেখে? ভাবনার পথে যেন তাসরিফের আচমকা পরে যায় বেরি বাঁধ।

.
ফাইজা এখন নিরপেক্ষ আছে। তাসরিফের স্মৃতি এসিড ধরে আর তার কাজের ব্যাস্ততা ক্ষার ধরে সে নিরপেক্ষ এক পরিবেশ তৈরি করে ফেলেছে। সৎ মায়ের কথার ফোয়ারা প্রহ্যহ চলমান থাকে। সেদিন বুলবুলি চাচি ঘরে যেন ধরিয়ে দিয়ে যায় আগুন। সবই উন্মুক্ত হয়। মিজান সাহেব মেয়ের মুখ হতে শুনে নেন সব কথা। আসমা যেন ফাইজার জীবন নিয়ে একটু বেশিই দুশ্চিন্তায় পরে যায়। ডিভোর্স হবে ফাইজার, আজীবন তার ঘরে থাকবে, তার না একটা বাচ্চা মেয়ে আছে? এই ছোট মেয়ের যখন বিয়ের বয়স হবে তখন কি হবে? আকাশ পাতাল দুশ্চিন্তা তার। মিরাজ সাহেব স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছে

” আমার মেয়ে আমার বাড়িতে থাকবে। বাবা থাকতে ওর ঘর, কাপড়, ভাত কোনোটারই অভাব হবে না। ফাইজা, তুই ভুলেও ও বাড়িতে যাওয়ার চিন্তা করবি না।”

ফাইজা আনমনে ভাবতে গিয়ে একটুখানি হাসলো। বাবা এই কথাগুলো বললেও সৎ মা মানতে নারাজ। সাদ ও মিরাজ সাহেবের অনুপস্থিতে তিনি ফাইজাকে আঘাত করে কথা বলতে ভোলেন না। সে কথা রাখা যাক। এমনটা হবেই, হওয়ারই কথা। তবে এমন করে বেশিদিন চলতে দেওয়া কি যায়? ফাইজা নিজের পথ সন্ধানে ব্যাস্ত আছে। গ্রামের কিছু ছোট বাচ্চাদের কিছু অল্প অর্থের বিনিময়ে সে পড়াচ্ছে। দূর্বিষহ রাত পার করার জন্য সে হাতে তুলে নিয়েছে কলম। হঠাৎ উপন্যাস রচনা করার সাধ হয়েছে। লেখালেখিকে নেশা করেছে।

চলবে…..

( ছোট হয়ে গেলো। সরি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here