#অনুরাগের_প্রহর
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_১৫
_________________
মুনিয়া’ মেহরিনের পাশাপাশি হাঁটতে লাগলো।শেহরেয়ার মেহরিনের হাত ধরে হাঁটছে দেখে হাসি দিয়ে মুনিয়া বললো,
-“বাহ্ কি রোমান্টিক কাপল।”
শেহরেয়ার মুচকি হেসে বললো,
-“আমি রোমান্টিক হলেও তোমার বোন রোমান্টিক না।”
শুভ মুনিয়ার পাশে হাঁটতে হাঁটতে বললো,
-“কাকে কি বলছিস ভাইয়া!মুনিয়া পাখি নিজেই তো রোমান্টিক না।”
শেহরেয়ার ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“শুভ তুই ও-কে মুনিয়া পাখি বলে ডাকছিস কেনো?তোর সাথে ওর তো এমন কোনো সম্পর্ক নেই।রেসপেক্ট করতে শিখ।এইসব কিন্তু আমার পছন্দ না!”
শুভ চুপ হয়ে গেল।হামিদ যা দেখে মুচকি হাসলো।
সবাই মিলে নদীর পাড়ে গিয়ে নৌকায় উঠলো।শেহরেয়ার মেহরিনের কাঁধে হাত দিয়ে বললো,
-“হামিদ আমাদের একটা ছবি তুলে দে তো।আমাদের দুজনের একসাথে কোনো পিক নেই।”
হামিদ সুন্দর করে শেহরেয়ার আর মেহরিনের একটা ছবি তুলে দিল।তারপরে মুনিয়ার পাশে গিয়ে বসে বিড়বিড় করে বললো,
-“আমাদেরও এমন একটা কাপল পিক তোলা উচিত।”
-“শুভর সাথে যেটা হয়েছে আপনি কি চান আপনার সাথে সেটা হোক?”
হামিদ ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“শুভ তোমার আশেপাশে থাকলে যে তুমি সেটা পছন্দ করো না,আমি তা ভালো করেই বুঝতে পারি।আর আমি পাশে থাকলে তো তুমি খুশিই হও।”
-“বেশি বুঝলে যা হয়!উনি পাশে থাকলে নাকি আমি খুশি হই!”
মুনিয়া কথাটা বলে মুখ ভেঙচি কাটলো।
মেহরিন ভ্রু উঁচিয়ে শেহরেয়ারের দিকে তাকালো।মেহরিনকে ওভাবে তাকাতে দেখে শেহরেয়ার বললো,
-“এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো?”
-“তখন আমাকে তুমি অপমান করেছো!”
-“কখন আবার অপমান করলাম?”
-“মুনিয়ার সামনে আমাকে আনরোমান্টিক বলছো!”
-“তা তুমি রোমান্টিক নাকি?রোমান্টিক হলে কি সবার সামনে হাত ধরা নিয়ে সমস্যা হতো তোমার?”
-“আমি কিন্তু আজ সকালে বাড়ির সবার সামনে তোমার হাত ধরেছিলাম।”
-“আসলেই তো।আমি একদম ভুলে গেছিলাম।তাহলে তোমাকেও রোমান্টিক বলা যায়।”
শেহরেয়ারের কথা শুনে মেহরিন খিলখিল করে হেসে দিল।শেহরেয়ার মুগ্ধ হয়ে তা দেখছে!শুভ শেহরেয়ারের মুখের সামনে গিয়ে তুড়ি মেরে বললো,
-“ভাইয়া নৌকায় অনেকে আছে।”
শেহরেয়ার ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“তাতে কি হয়েছে?আর তুই আমার মুখের সামনে তুড়ি মারলি কেনো?তোর ভাবি কি সুন্দর হাসছিল,আর আমি তা মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম।”
শেহরেয়ারের কথায় মেহরিন তার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালো।যা দেখে শেহরেয়ার মুচকি হাসলো।শুভ হাত নাড়িয়ে বললো,
-“বাহ্!”
ঘোরাঘুরি শেষ করে সবাই বাড়িতে গেল।বাড়িতে গিয়ে হেনা সাহেবার মুখোমুখি হতে শেহরেয়ারের মেজাজ বিগড়ে গেল।সে সেখান থেকে চলে যেতে গেলে হেনা সাহেবা বললেন,
-“আমাকে কি মাফ করা যায় না বাবা?”
শেহরেয়ার’ হেনা সাহেবার দিকে তাকিয়ে বললো,
-“একদম আমাকে বাবা বলে ডাকবে না।তোমার এই অধিকার আর নেই।”
হেনা সাহেবাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে শেহরেয়ার রুমের দিকে চলে গেল।মেহরিন গিয়ে হেনা সাহেবার কাঁধে হাত রেখে বললো,
-“মা ও-কে একটু সময় দেন।”
________________________
পরের দিন সকালবেলা সবাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলো।শুভও তাদের সাথে এসেছে।গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে শেহরেয়ার বললো,
-“দিদুন আসলে ভালো হতো!দিদুনকে খুব মিস করবো।”
মেহরিন মন খারাপ করে বললো,
-“আসলেই!দিদু থাকলে বেশ মজা হয়।”
বাড়িতে পৌঁছাতে প্রায় রাত হয়ে গেল।শেহরেয়ার রুমের বেলকনিতে বসে চাঁদ দেখছে।তার শরীরটা তেমন ভালো লাগছে না!
-“ধ্যাত!এখনো আসছে না কেনো!”
মেহরিন রুমে এসে দেখলো শেহরেয়ার বেলকনিতে বসে আছে।মেহরিন বেলকনিতে গিয়ে শেহরেয়ারের পাশে বসলো।ভ্রু উঁচিয়ে বললো,
-“এতো রাতে বেলকনিতে বসে থাকার কারণ?”
শেহরেয়ার কিছুক্ষণ মেহরিনের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
-“আমার ঘরের চাঁদটা ছিল না তো তাই আকাশের চাঁদটা দেখে চোখের আরাম করতেছিলাম!”
মেহরিন চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে বললো,
-“তুমি পারোও শেহরেয়ার!”
-“কি করবো বলো!তুমি এতো সুন্দর!”
হঠাৎ করে মেহরিন খেয়াল করলো শেহরেয়ারের চোখ-মুখ কেমন যেন লাগছে!মেহরিন সোজা হয়ে বসে বললো,
-“শেহরেয়ার তোমার চোখ-মুখ এমন লাগছে কেনো?”
-“আরে এমনি শরীরটা ভালো লাগছে না।এতোক্ষণ ড্রাইভ করার কারণে ক্লান্ত লাগছে।”
-“আচ্ছা তাহলে ঘুমিয়ে পড়ো।”
-“নাহ্।”
-“তো কি করবে?”
-“চলো দুজনে মিলে কফি বানিয়ে আনি।তারপরে সারারাত গল্প করে কাটিয়ে দিবো।”
-“শরীর খারাপ লাগছে না তোমার?এইসবের দরকার নেই আজকে।যাও ঘুমাও।”
শেহরেয়ার আবদারের সুরে বললো,
-“প্লিজ!”
মেহরিন আর না করতে পারলো না।নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
-“আচ্ছা তুমি বসো।আমি বানিয়ে আনতেছি।”
-“না দুজনে একসাথে বানাবো!”
মেহরিন কিছু বলতে গেলে শেহরেয়ার তা না শুনেই জোর করে তাকে নিয়ে রান্নাঘরে গেল।মেহরিন কফি বানাচ্ছে আর শেহরেয়ার তাকে জিনিসপত্র এগিয়ে দিচ্ছে।
-“শেহরেয়ার তোমার কিছু করা লাগবে না।”
-“আমি জানি আমার কোনটা করা লাগবে আর কোনটা করা লাগবে না!”
-“কথা তো আপনি শুনবেন না।আল্লাহ এই ঘাড়ত্যাড়াকে আমার কপালেই জোটালো!”
মেহরিনের কথা শুনে শেহরেয়ার জোরে হেসে দিল।মেহরিন মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে আছে।কফি বানানো শেষ হলে দুজনে রুমে গেল।কফির কাপে চুমুক দিয়ে মেহরিন বললো,
-“তারপরে বলো বিয়ের আগে কয়টা প্রেম করেছো?”
মেহরিনের কথায় মুচকি হেসে শেহরেয়ার বললো,
-“হিসাব নেই।”
মেহরিন চোখ রাঙিয়ে বললো,
-“মানে?”
-“মানে হলো এতো জনের সাথে প্রেম করেছি তার কোনো হিসাবই নেই আমার কাছে।”
-“তা আবার তুমি আমার সামনে বলতেছো?”
-“তুমিই তো জিজ্ঞেস করলে!”
মেহরিন রাগ করে চলে যেতে গেলে শেহরেয়ার তার হাত টেনে ধরলো।তার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
-“বিয়ের আগে আল্লাহ্ আমার কপালে একটা প্রেমও লিখে রাখেননি।আমার জীবনের প্রথম প্রেম তুমি।তোমার তো গর্ব করা উচিত আমার মতো পবিত্র ছেলেকে স্বামী হিসেবে পেয়েছো!”
মেহরিন হাসি দিয়ে বললো,
-“যাক শুনে শান্তি পেলাম।”
শেহরেয়ার মেহরিনের কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো,
-“আমার এ জীবনে ভালাবাসা এসেছে তোমাকে দেখার পর।তাই তুমি আমার #অনুরাগের_প্রহর।”
মেহরিন মৃদু হেসে শেহরেয়ারকে জড়িয়ে ধরলো।শেহরেয়ারও মেহরিনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
_________________
সকালে সবাই মিলে একসাথে ব্রেকফাস্ট করে বসে আছে।
-“আপু আমি আজকে বাসায় চলে যাবো।”
মুনিয়ার কথা শুনে শুভ বললো,
-“আরে কেনো?আমি এসেছি!আপনি আরো কিছুদিন থাকেন।”
-“আপনি এসেছেন তা আমার কি হয়েছে?আমার যাওয়া আমি যাবো।”
-“হ্যাঁ মুনিয়া একদম ঠিক বলেছে।”
হামিদকে দেখে শেহরেয়ার বললো,
-“তুই আমাদের বাড়ি এসেছিস?এতো সময় আছে তোর?”
হামিদ কিছু না বলে মৃদু হেসে সোফায় এসে বসলো।মুনিয়া হামিদকে দেখে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে।হামিদ সবার চোখের আড়ালে মুনিয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ মারলো।মুনিয়া মুখ ভেঙচি কেটে অন্য দিকে ঘুরে তাকালো।
-“তা হামিদ ভাইয়া,কি মনে করে আসলে তুমি?”
-“মূলত তোমার কারণেই এসেছি।তুমি যা বিস্ফোরক পদার্থ!”
শুভ অবাক হয়ে বললো,
-“কি বলছো তুমি এইসব?”
হামিদ মুচকি হেসে বললো,
-“বাচ্চা ছেলে!মজাও বুঝে না।”
__________________________
বিকালবেলা সবাই বসে বসে গল্প করছে।হঠাৎ বাড়ির কলিংবেল বেজে উঠলো।শেহরেয়ার গিয়ে দরজা খুলে দেখলো রুশমি একটা ছোট মেয়েকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।শেহরেয়ার অবাক হয়ে বললো,
-“রুশমি তুই?”
-“আমার কি আসার কথা ছিল না শেহরেয়ার?”
শেহরেয়ার মৃদু হেসে বললো,
-“আমরা একসাথে পড়াশোনা করেছি।তুই তো আসবিই!এটা কি তোর মেয়ে নাকি?”
-“এটা শুধু আমার না,তোরও মেয়ে!”
শেহরেয়ার রুশমির কথা শুনে চমকে গেল।কিছু বলতে যাবে তার আগে মেহরিন বললো,
-“উনি এইসব কি বলছে শেহরেয়ার?”
#চলবে____
[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]