#দাম্পত্য_জীবন
#মেহু_আপু
#পর্ব_২৩
আজকে রাত বারোটায় একটা সারপ্রাইজ প্লান করলো নীলা। সুন্দরকরে একটি কেক বানালো। বাগান বাড়িটা সুন্দর করে সাজালো, চারদিকে লাল নীল সবুজ বাতি জলমল করছিলো। দুই গাছের সঙ্গে সুন্দর করে একটি ব্যানার টাঙ্গিয়ে রাখলো। ব্যানারে লেখা আছে হ্যাপি বার্থডে আকাশ মেনি মেনি হ্যাপি রিটার্ন অফ ডে। এই প্লানের সঙ্গী শুধু মাত্র রিয়া। বাড়ির কেউ জানেনা আকাশের জন্মদিন সেলিব্রিট হবে আজ। বাগানবাড়িতে সুন্দর করে আয়োজন করছে নীলা। কারণ নীলা সবাইকে সারপ্রাইজ দিতে চায়।
আজকে ভাইয়া অনেক খুশি হবে নীলাপু। আচ্ছা ভাইয়াকে আর কিছু দিবিনা।
হুম আমি একটা পাঞ্জাবি বানিয়েছে। ওর পছন্দের ব্লু কালার আর নিজের হাতের ডিজাইন করা কারুকার্য। আর একটা হোয়াইট পায়জামা কিনছি।
ভাইয়া অনেক সারপ্রাইজ হবে দেখে নিস।
আচ্ছা রাত ১২.০০ টা বাজতে চললো বাড়ির সবাইকে নিয়ে আয় যারা যারা জেগে আছে।
এরপরে নীলা কেক নিয়ে আকাশের জন্য অপেক্ষা করছে। রিয়া বাসায় যেয়ে দেখলো শশুড় শাশুড়ি সবাই ঘুমিয়ে পড়ছে। রিয়া ইমরানকে ডেকে তুললো তারপরে ঈশান, উষশীকে ডাক দিয়ে বাগানে পাঠিয়ে দিলো। রিয়া আকাশের রুমে নক করলো।
দরজা খোলা আছে ভিতরে আসো নীলা।
আমি নীলা না ভাইয়া। আমি রিয়া।
ও রিয়া কিছু বলবা।
আসলে ভাইয়া নীলাপু তোমার জন্য বাগান বাড়িতে অপেক্ষা করছে। তোমাকে যেতে বললো।
কি আশ্চর্য ব্যাপার তুমি দেখছো না আমি কাজ করছি? নতুন বায়ার ভিজিট করবে অফিসে তার ডেমান্ড সম্পর্কে রিসার্চ করছি। তুমি নীলাকে যেয়ে বলো আমি আসতে পারবো না ওখে দ্রুত রুমে পাঠিয়ে দাও।
আরে ভাইয়া এটা কোনো কথা বললা তুমি? তুমি না গেলে আপু রাগ করবে। আর আপু তোমাকে চোখ বেঁধে নিয়ে যেতে বলেছে।
কি পাগলামি করছো তোমরা ছোট বাচ্চার মতো। আচ্ছা চোখ বেঁধে যেতে হবে ক্যানো?
আপু তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ প্লান করেছে। ওইখানে গেলেই বুঝবা।
আচ্ছা নিয়ে যাও। দেখি কি সারপ্রাইজ 🙄
এরপরে রিয়া আকাশের চোখ কালো কাপড়ের টুকরা দিয়ে বেঁধে বাগান বাড়িতে নিয়ে আসে।
ইমরান আর ঈশান ঘামছে। নীলার আয়োজন দেখে।
তা দেখে নীলা জিজ্ঞেস করলো ঘামছো কেনো তোমরা?
উষশী বললো ওদের কথা বাদ দাও তো। আজকে আমার দেবর মহাখুশি হবে। এই বাড়িতে বিয়ে হয়ে আসলাম ২.৫ বছর হইছে। কখনো কাউকে দেখি নাই বার্থডে সেলিব্রিট করতে। আজকে তোমার আয়োজন দেখে আমি সারপ্রাইজ।
কি বলছো ভাবী কখনো কাউকে দেখো নাই? নীলা অবাক হয়ে যায়।
আকাশের চোখ বেঁধে আনে রিয়া। এরপরে কেকের কাছে দাঁড় করিয়ে রাখে আকাশকে।
চোখ খুললাম রিয়া। আকাশ বললো
চোখ খোলা যাবেনা। এই কথা বলে নীলা আকাশের হাতে ছোট ছু*ড়ি দেয়।
আকাশ বলে এটা দিয়ে কি করবো আমি। এরপরে নীলা আকাশের হাত ধরে কেক কাটে।
রিয়া, উষশী বলে উঠে হ্যাপি বার্থডে টু ইউ। হ্যাপি বার্থডে আকাশ।
আকাশ দ্রুত নিজের চোখের বাঁধন খোলে। নীলা দ্রুত আকাশকে কেক খাইয়ে দেয়।
আকাশ খুব রেগে যায়। কি হচ্ছে এসব নীলা।
তুমি এতো হাই টেম্পার হচ্ছো ক্যান? কি আবার হচ্ছে তোমার বার্থডে সেলিব্রিট হচ্ছে।
তুমি জানোনা এসব আমার অপছন্দ। তুমি আমার অপছন্দের কাজ করে আমাকে খুব রেগে দিলা নীলা।
তুমি সারপ্রাইজ্ড নয়। রাগ করছো কেনো?
ঈশান ইমরানকে বললো যেটার ভয় পাচ্ছিলাম ঠিক সেটাই হলো।
জন্মদিন পালন করা আমার জন্য একটা অভিশাপ। যখনি আমি জন্মদিন পালন করি আমি আমার খুব কাছের প্রিয় জিনিসকে হারিয়ে ফেলি। তুমি এই কাজ করে আমার হৃদয় কে ব্যথিত করলা নীলা।
সরি আমি জানতাম না আকাশ। কিন্তু এমন কি হয়েছিলো যার জন্য তুমি এই শুভ দিনটি পালন করতে চাওনা।
এই শুভ দিনটি আমার জন্য অশুভ নীলা। ভাইয়া, ইমরান তোমরাতো জানো, কিন্তু নীলাকে তোমরা মানা করো নাই কেনো?
ভাই আমরাও তোর মতো শকড ছিলাম। কিছু বলার আগেই ওরা সবটা করে ফেলেছে। আমাদের ক্ষমা করিস।
এরপরে আকাশ হাউমাউ করে কেঁদে সব আয়োজন মাটি করে দেয়। কেক ছুড়ে ফেলে, সাজসজ্জা ছিড়ে ফেলে, ব্যানারে আগুন ধরিয়ে দিয়ে কেঁদে কেঁদে রুমে চলে যায়।
এমন অবস্থা দেখে রিয়া,নীলা,উষশী খুব শক খায়। তিনজনের মুখ বন্ধ হয়ে যায়।
ঈশান শুধু একটা কথাই বলে জন্মদিন পালন করা আকাশের জন্য মর্মান্তিক ইমোশন। এর জন্য বাড়ির কেউ আমরা এই দিনটিকে পালন করিনা। এই বলে ঈশান চলে যায়।
ক্যান কি এমন হয়েছিলো ইমরান? যার জন্য আমাদের এতো সুন্দর করে সাজানো গোছানো পরিবেশ টাকে নষ্ট করে দিলো তোমার ভাই ___ রিয়া বললো
আমি এসব কিছু জানিনা তুমি আমার সাথে ঘরে চলো ___ ইমরান বললো
এরপরে রিয়াকে ঘরে নিয়ে যায় ইমরান।
উষশী নীলাকে বলে যে করেই হোক তোমাকে জানতে হবে জন্মদিন উৎসব ক্যান এ বাড়িতে বারণ। তোমাকে আকাশকে শান্ত করে সবটাই বোঝাতে হবে। জন্মদিন কখনো খারাপ হয়না। এইদিনে এমন কি হয়েছে যার জন্য আজকে তোমার সাথে ও এমন করলো। মনে কষ্ট নিয়ো না নীলা আসলে ওরা এই দিনটিকে ট্রোমাটাইজ হিসাবে ধরে রাখছে।
না ভাবী আমি আকাশকে কষ্ট দিছি। আমাকে জানতেই হবে কি এমন হয়েছিলো যার জন্য আকাশকে এই দিনটি এতো কষ্ট দেয়।
আকাশ রুমে বসে একটা আ্যালবাম বের করে কাঁদছে।
নীলা রুমে এসে আকাশের হাতে আ্যালবাম দেখতে পায়।
আকাশ নীলাকে দেখে আ্যালবামটি লুকানোর চেষ্টা করে। তা দেখে নীলা বলে কিসের আ্যালবাম আকাশ। আমাকে দেখে চো*রের মতো করছো ক্যান?
আকাশ বলে কিছু না।
কিছুতো রহস্য আছে এই আ্যালবামে। আমি আ্যালবাম টি দেখতে চাই।
তোমাকে আ্যালবাম দেওয়া যাবেনা।
এরপরে নীলা আকাশের হাত থেকে কেড়ে নেয় আ্যালবামটি। আ্যালবামটির ভিতরে ১১ – ১২ বছরের এক মেয়েকে দেখে অবাক হয়ে যায় নীলা। নীলা জিজ্ঞেস করে মেয়েটি কে আকাশ?
আকাশ তখন বলে এটা আমার অতীত নীলা যার সাথে আমার এখন কোনো সম্পর্ক নাই। তাই এসব নিয়ে ভাবিয়ো না তুমি।
নীলা বলে তুমি আমার স্বামী,তোমার অতীত জানার অধিকার আমার আছে। এই মেয়েটা কি দায়ী? যার জন্য তুমি জন্মদিন পালন করো না।
আকাশ তখন বলে হ্যা নীলা এই মেয়েটার নাম তারা, আমরা এক সঙ্গে শৈশব পার করেছি। এক স্কুলে এক সঙ্গে ক্লাস 6 পর্যন্ত পড়েছি। কিন্তু আমার ১২ তম জন্মদিনে সে সারপ্রাইজ দেয় আমাকে,সে আমাকে ছেড়ে বিদেশে অর্থাৎ ইংল্যান্ডে পাড়ি জমায়। তখন থেকে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
আমি তাঁকে খুব ভালোবাসতাম। সে আমাকে ভালোবেসে ধোঁকা দিয়েছে। তার কাছে ক্যারিয়ার আগে ছিলো। আমার কাছেই দুটোরই প্রায়োরিটি ছিলো। এই দেশে থেকে আমি পড়ালেখা করে আজ এক বিশাল বড় বিজনেসম্যান। সে কি পাড়তো না। অবশ্যই পাড়তো কিন্তু কষ্ট হতো। সেই কষ্ট সে আমাকে একাই দিয়ে চলে গেছে নীলা। এর জন্য পনেরো অক্টোবর আমার জন্য বাজে একটা দিন। তাই আমি দিনটিকে স্বরণ করতে চাই না জন্মদিন পালন করে। এর জন্য আমার পরিবারের কাউকে জন্মদিন পালন করতে দেইনা। কারন এই দিনটি আমার কাছে রহস্যময় লাগে। আমার সব প্রিয়ো জিনিস হারিয়ে যদি যায় এই ভয়ে। আমি তোমাকে কষ্ট দিয়ে থাকলে ক্ষমা করিয়ো। কিন্তু আজ ১৫ বছর পর আবার কেক কাটছি জানিনা কি হবে? আমি তোমাকে হারাতে চাইনা নীলা। এই দিনটিকে আমার কাছে রাক্ষসী মনে হয়।
এতো যন্ত্রণা নিয়ে আসো তুমি। অথচো তোমাকে দেখে সবসময় হাসিখুশি মনে হতো। আজকে তুমি এসব বলে কিছু টা হলেও হালকা হয়েছো। আমাকে ক্ষমা করিয়ো আকাশ জানতাম না এই দিন নিয়েও তোমার কাহিনী ছিলো।
ক্ষমা চাচ্ছো ক্যান? তুমি জাষ্ট আমাকে সারপ্রাইজ দিতে চাইছিলা।
শুনো আকাশ তোমার এই জন্মদিন নিয়ে ভূল ধারণা একদিন প্রমাণ করে দিবো। এই দিনটিতে তুমি পৃথিবীতে এসেছো। তাই এই দিনটি কখনো খারাপ হতে পারেনা। বলেই আকাশকে চুমু দিলো আলতো করে নীলা।
আকাশ বললো যাই হোক এই দিনটিকে আর পালন করার চেষ্টা করিয়ো না নীলা। কাল অফিসে নতুন বায়ার ভিজিট করবে তাই আমার মুডকে ক্লিন রাখতে চাই।
এখন মুড ক্লিন কি আমাকেই করতে হবে।
হুম নীলা।
এরপরে নীলা বেডে হেলান দিয়ে শুইলো। আকাশ নীলার বুকে মাথা রেখে শুইলো। নীলা আলতো করে মাথার চুল টেনে দিয়ে কপালে হাত বুলিয়ে দিয়ে আকাশকে ঘুম পাড়ালো।
সকাল হলো। আকাশ অফিসে আসলো। অফিসে এসে দেখতে পেলো নতুন বায়ার হিসাবে তাদের অফিস ভিজিটিং করতে এসেছে, তার শৈশবের সার্থপর ভালোবাসা তারা।
চলবে,,,,,