#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_১০
তীর রাগী চোখে ইশার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে এখনেই কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে নিবে ইশাকে। তীরের ইচ্ছে করছে ইশার মাথাটা ফাটিয়ে বলতে এত বড় মিথ্যা কথা বলার জন্য। ইশাও ভুলেও তাকচ্ছে না তীরের দিকে। যেভাবে তীর ওর দিকে তাকিয়ে আছে তাতে বেচারি ভীষন ভয় পেয়ে আছে। ইশা ঢোক গিলে তীরের দিকে মেকি একটা হাসি দিয়ে বলে।
–এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন দোস্ত?
তীর চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলে।
–মিথ্যা বললি কেন তুই আমাকে?
–কি মিথ্যা বলেছি তকে আমি?
–তুই এটা বলিস নি যে ই…
তীর ইশানের নামটা নেওয়ার আগেই থেমে যায় কারন ইশান ওর সামনে বসে এক মনে মুখে গম্ভীর ভাব নিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করছে আর তার পাশেই ইহান বসে আছে। আর তীর আর ইশা পিছনে। তীর নিজের রাগটা কন্ট্রোল করে ইশার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে।
–তুই কাজটা একদম ঠিক করিস নি।
ইশাও ফিসফিসিয়ে বলে।
–কোন কাজটা?
–ইশান ভাইয়া যাবে না তুই বলেছিস কিন্তু এখন তো ঠিকেই যাচ্ছে আমাদের সাথে।
–আরে আমি তো…
ইশার কথার মাঝেই ইহান বলে উঠে।
–কি রে তরা দুজন এমন ফিসফিসিয়ে কথা বলছিস কেন? কিছু কি হয়েছে?
ইশা ততমত খেয়ে বলে।
–কিছু হয় নি তো ভাইয়া?
–তাহলে এমন ফুসুর ফুসুর করছিস কেন?
–আমাদের পার্সোনাল কথা কি তোমাকে এখন শুনতে হবে ভাইয়া।
–না না তদের পার্সোনাল কথা শুনতে চাই না আমি।
ইহান কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে।
–তো তীর তর পরীক্ষা কেমন হলো?
–হে ভাইয়া ভালো।
–বোর্ড পরীক্ষা তো আর দেরি নেই তাই এই বিয়ে শাদী শেষ হয়ে যাওয়ার পর ধুমসে পড়ালেখা শুরু করে দিবি দুজনে।
ইশা ছটপট উত্তর দেয়।
–হে ভাইয়া তুমি একদম চিন্তা করো না তোমার বিয়েটা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেই আমরা দুজনে পড়তে বসবো।
–মানে। বিয়ে তো আরও পনেরো দিন বাকি তো এই পনেরো দিন কি পড়তে বসবি না।
–না পড়তে বসবো তো তবে কম পড়বো আর কি। তোমার বিয়ে নিয়ে কত প্লেন আছে সেই প্লেন গুলা সাকসেসফুল করতে হবে না।
–তা কি কি প্লেন করছিস আমার বিয়ে নিয়ে?
–তোমাকে বলবো কেন?
–আচ্ছা ঠিক আছে বলতে হবে না।
তীর আড় চোখে ইশানের দিকে তাকাছে লোকটা আসার পর থেকে একটা কথাও বলে নি চুপচাপ ড্রাইভ করেই যাচ্ছে। এমন কি তীরের দিকেও ফিরেও তাকায় নি।
____
গাড়ি থামে শপিংমলের সামনে। একে একে সবাই বের হয় গাড়ি থেকে। ইশান গাড়ি পার্কিং লটে রেখে এসে ওদের সাথে যুক্ত হয়। ইশান তীরের পিছন পিছন হাটছে কারো সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে আর তীর মাথা নিচু করে চুপচাপ হাটছে আর ইশা ফটরফটর করেই যাচ্ছে কি কি কিনবে তা নিয়ে।
ওরা এসে পোছাঁয় একটা লেহেঙ্গার দোকানে। ইশান ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত থাকায় ওদের সাথে দোকানে আসতে পারে নি। ইশা একে পর এক লেহেঙ্গা দেখেই যাচ্ছে কিন্তু পছন্দ হচ্ছে না। ইহান এক প্রকার বিরক্ত হয়েই বলে।
–তুই কি শুরু করলি ইশু এত গুলা লেহেঙ্গা দিলো ওরা আর তর একটাও পছন্দ হয় নি।
ইশা মুখটা ভোঁতা করে বলে।
–আমি কি করবো পছন্দ না হলে।
–তরা মেয়েরা আসলেই…
বলতে গিয়েও থেমে যায় ইহান। কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে।
–তাড়াতাড়ি পছন্দ কর লেহেঙ্গা টেহেঙ্গা।
ইশা তীরকে গুঁতো দিয়ে বলে।
–এই তীর দেখ না কোন লেহেঙ্গাটা বেশি সুন্দর। আসলে আমি দু টানায় পড়ে গেছি কোন লেহেঙ্গাটা কিনবো?
–সবগুলাই সুন্দর তুই যেটাই পড়বি সেটাতেই তকে ভালো লাগবে। তবে গোলাপি কালারটা পড়লে তকে ভালো লাগে।
–ঠিক আছে তাহলে গোলাপি কালারের মাঝে একটা লেহেঙ্গা নিবো।
তীরের একটা হালকা বেগুনি কালারের লেহেঙ্গা পছন্দ হয়েছে। সেই লেহেঙ্গাটাই হাতে নিয়ে দেখছে। এমন সময় তীরের পাশে থেকে কেউ একজন শান্ত কন্ঠে বলে উঠে।
–এটা পছন্দ?
তীর চমকে উঠে পাশে ফিরে তাকিয়ে দেখে ইশান দাঁড়িয়ে আছে। তীর সাথে সাথে নজর ফিরে নেয়। ইশান মুচঁকি একটা হাসি দিয়ে বলে।
–কি হলো কিছু জিঙ্গেস করছি তো এটা কি পছন্দ হয়েছে তর?
তীর একটা কথাও বলছে না দেখে ইশানের মেজাজটা গরম হয়ে যাচ্ছে। দাতে দাত চেপে বলে।
–কি সমস্যা কথা বলছিস না? আমি তকে কিছু জিঙ্গেস করছি তো এই লেহেঙ্গা কি তর পছন্দ হয়েছে?
তীর ছোট করে উত্তর দেয়।
–নাহ।
ইশান কিছু বলতে যাবে এর আগেই ইশা বলে উঠে।
–এই তীর তর কোনটা পছন্দ হয়েছে রে? আমি এটা নিবো এটা ফাইনাল।
–খুব সুন্দর হয়েছে তকে মানাবে খুব।
–আচ্ছা এবার বল তর কোনটা পছন্দ হয়েছে?
–আমি নিবো না। আমি তো টাকা আনি নাই।
–টাকা নিয়ে চিন্তা করছিস কেন? টাকা ভাইয়া দিবে তুই বল তর কোনটা পছন্দ হয়েছে?
–তা হয় না রে।
এর মাঝেই ইহান বলে উঠে।
–হয় না মানে কি তর কোনটা পছন্দ হয়েছে সেটা বল। আর আমি আমার এক বোনকে দিতে পারলে আরকে বোন দিতে পারবো না। তুই জাস্ট বল তর কোনটা পছন্দ।
–কিন্তু ইহান ভাইয়া।
এর মাঝেই ইশান দোকানদারের উদ্দেশ্যে বলে উঠে।
–ভাই এই হালকা বেগুনি কালারের লেহেঙ্গা ওর জন্য প্যাক করে দেন।
–না না লাগবে না আ..
তীর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই ইশান রাগী চোখে তীরের দিকে তাকায় তাতে তীরের মুখ চুপসে যায়। ইশান রাগী কন্ঠে বলে।
–লাগবে কি লাগবে না সেটা আমরা বুঝে নিবো তকে দেওয়া হচ্ছে একটা জিনিস সেটা তুই সাদরে গ্রহণ করবি চুপচাপ।
ইশা মিটিমিটি হাসছে। ইহান আর ইশান দুজন মিলে ইশা আর তীরকে শপিং করে দিলো। বিল মিটিয়ে এবার গেল কসমেটিকের দোকানে। লেহেঙ্গার সাথে মিলিয়ে বড় বড় কানের দুল, চুড়ি, লিপস্টিক আরও প্রয়োজনীয় সব কিনলো দুজনে। এর মাঝেই ইশানের নজর পড়ে এক জোড়া পাথরের কানের দুলের উপর। সিম্পলের মাঝে খুব সুন্দর ডিজাইন করা। ইশানের খুব ইচ্ছে করছে তীরকে নিজ হাতে এই কানের দুলগুলা পড়িয়ে দেখতে কেমন লাগে তার তীরকে। কিন্তু তা তো আর হওয়ার নয় তাই আর কানের দুল জোড়ার উপর বেশি আগ্রহ দেখালো না। সব কিছু কেনাকাটা করতে করতে বেজে গেল রাত সাড়ে নয়টা ইশান রাগ দেখাতে গিয়েও রাগ দেখাতে পারছে না। কারন আজকে ইশান বাড়ি থেকেই প্রমিজ করে এসেছে ইশা যা যা করবে সব কিছু দুই ভাইকে মুখ বুজে সহ্য করতে হবে। তাই কি আর করার ইশান আর ইহান দুজনে মুখ বুজে দু হাত ভর্তি শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে বোনের পিছনে পিছনে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
_____
ডিনার শেষ করেই বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্য পা বাড়ায় ওরা। ইশান ড্রাইভিং সিটে উঠতে যাবে তখনেই কিছু একটা মনে পড়তেই ইহানকে উদ্দেশ্য করে বলে।
–ভাইয়া তোমরা একটু বসো আমি আসছি পাঁচ মিনিটের মধ্যে।
ইহানকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই ইশান দ্রুত পায়ে আবার শপিংমলে ডুকে পড়লো। তীর অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ইশানের যাওয়ার পথে। হঠাৎ লোকটার কি হলো তীর ভেবে পাচ্ছে না। বেশ কিছুক্ষন পর ফিরে এলো ইশান এসেই ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়। ইহান ইশান জিঙ্গেসা করে।
–এভাবে তাড়াহুড়ো করে কোথায় গিয়েছিলি?
–একটু দরকার ছিলো ভাইয়া।
–কি দরকার বলা যাবে কি?
ইশান প্রক্ষুত্তরে একটা মুচঁকি একটা হাসি দেয়। ইশানের হাসি দেখে ইহান বলে।
–বুঝেছি বলা যাবে না সমস্যা নাই সব মানুষেরই একটা নিজেস্ব কাজ থাকে।
_____
গাড়ি থামে ফরাজী ভিলার সামনে। দু ভাই পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে ইশা আর তীর দুজনেই বেঘোরে ঘুমোছে। ইহান ইশানকে বলে।
–এর মাঝেই দুজন ঘুমিয়ে পড়লো।
–ঘুমানোর তো কথাই দুজনে যেভাবে ছরকি কেটেছে আজকে।
–আমার পা গুলা ব্যাথা করছে জানিস। আমি আর জীবনে ইশার সাথে এই শপিং নিয়ে কোনো ডিল করবো না।
ইশান ভাইয়ের কথায় হেসে দেয় আর বলে।
–তুমি ইশা নিয়ে ভেতরে যাও আমি তীরকে দেখছি।
–আচ্ছা।
ইহান বোনকে না ডেকে কোলে করে নিয়েই বাড়ির ভেতরে চলে যায়। ইহান যেতেই ইশান গাড়ি থেকে নেমে তীরের কাছে এসে বসে এক ধ্যানে তার ঘুমন্ত পরীর দিকে তাকিয়ে আছে। মুখের আশেপাশের চুল গুলা আলতো হাতে সরিয়ে দেয়। ইশানের স্পর্শ পেয়ে তীর ভ্রু-কুচ করে ফেলে। ইশান মৃদু হেসে উঠে তীরের এমন করাতে। অনেকটা সময় ইশান তীরকে দেখে নেয় মন ভরে এবার তীরকে ডাকতে হবে না হলে দেরি হয়ে যাবে।
ইশান তীরকে ডাক দেয় কিন্তু কোনো হেলদোলেই নেই তীরের। এবার ইশান তীরের গালে আলতো হাতে চড় দিয়ে বলে।
–তীর!
তীর ঘুম ঘুম চোখে তাকায় ইশানের দিকে ইশানকে নিজের দিকে ঝুুকে থাকতে দেখে ভ্রু-কুচকে নেয়। মুখটা অন্য সাইডে নিয়ে নেয় কিন্তু পরক্ষনে কিছু একটা ভেবে ইশানের কোর্টের কলার ধরে নিজের আরেকটু কাছে নিয়ে ভাঙ্গা কন্ঠে বলে।
–এভাবে ডাকেন কেন আমায়?
ইশান বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে তীরের দিকে। এই মেয়ের হঠাৎ হলোটা কি এটা ভেবে। একে ওপরের নিশ্বাস আছড়ে পড়ছে একে অন্যের মুখের উপর। তীর আবারও বলে।
–কি হলো কথা বলছেন না কেন?
ইশান শুকনো একটা ঢোক গিলে ভরাট কন্ঠে বলে।
–কিভাবে ডাকি?
–জানেন আপনি যখন আমার নাম ধরে ডাকেন তখন আমার বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠে। কেন হয় এমনটা বলুন না? আপনার আশেপাশে থাকলেই কেমন কেমন জানি লাগে আমার ইদানিং কই আগে তো এমন হয় নি। আচ্ছা আপনি কি আমায় ভা…..
এমন সময় ইহান এসে ইশানকে ডাক দেয়।
–এই ইশান?
ইশান ততমত খেয়ে দ্রুত তীরের কাছ থেকে দুরে সরে এসে বলে।
–হে ভাইয়া।
–তীরকে দিয়ে এসেছিস?
–না ভাইয়া কখন থেকে ওকে ডাকছি ও তো উঠছেই না।
–ডাকার দরকার নাই কোলে তুলে বাড়িতে দিয়ে আয়।
–আচ্ছা।
ইহান যেতই ইশান তীরের দিকে তাকিয়ে দেখে তীর আবারও ঘুমিয়ে গেছে। ইশান ভ্রু-কুচকে বলে।
–মানেটা কি? এত ঘুম এই মেয়ের চোখে এত জোরে জোরে কথা বললাম তারপর উঠলো না।
ইশান দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে আবারও বলে।
–আমাদের বাসর রাতে যদি এভাবে বেঘোরে ঘুমিয়ে পরিস তাহলে কিভাবে হবে তীর? আমি কিন্তু তকে একদম ঘুমাতে দিবো না সারারাত জাগিয়ে রাখবো। ওই দিন রাতে তকে আমি আমার #প্রনয়ের_দহনে পোড়াবো আমি এত বছর যত পুড়েছি এর দ্বিগুন পোড়াবো তকে বুঝলি রেডি থাকিস।
#চলবে________