দাম্পত্য_জীবন #মেহু_আপু #অন্তিমপর্ব_৩০

0
624

#দাম্পত্য_জীবন
#মেহু_আপু
#অন্তিমপর্ব_৩০

হ্যা আমিই এসব করেছি নীলা আপু তুমি আমার ভাইকে ঠকিয়েছো। এরপরে আকাশ ভাইয়াকে বিয়ে করছো। তাকে বিয়ে করে আমার ভাইকে জোড় করে মেঘ ভাবির সাথে বিয়ে দিছো। এরপরে প্লানিং সাকসেসফুলি হওয়ার জন্য আমাদেরকে ভালো জীবনযাপন করার জন্য একটা ফ্লাট আর ভাইয়াকে জব দিছো। কিন্তু সেই তুমি আবার ভাইয়াকে ব্ল্যাকমেইল করে জেলে পাঠিয়েছো। তুমি ভাইয়াকে বাধ্য করেছো আকাশ ভাইয়াকে শারমিনের কাছাকাছি আসার। সেই দোষ তুমি আবার ভাইয়ার ঘাড়ে চাপিয়ে জেলে পাঠাইছো। আর ভাইয়া এসব করছে আমাদের ভালোর জন্য। আমাকে বাঁচানোর জন্য এসব করেছো। তোমার দুই দুইটা বোন থাকতে কিভাবে আমার পিছনে গুন্ডা লেলিয়ে দিতে পারো। শুনো আমি তোমার বোনের মতো, বোন ভেবে এসব কাজ করা থেকে একটু ভেবে দেখতা তাহলে আজকে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতো না।

তুমি এসব কি বলছো সাদিয়া? আমি হামজার সাথে প্রতারণা করি নাই? উল্টো তোমার ভাই আমার সাথে তিন বছরের প্রেম প্রেম খেলা নাটক করছে আমার বাবার সম্পত্তির জন্য। যখন আমি জানতে পারি তখন তোমার ভাইয়ার সাথে ব্রেক আপ করি এইদিক থেকে আমার জীবনডা বেছে গেছে সাদিয়া। তোমার ভাই আমার স্বামীকে ফাঁসানোর জন্য দুই দুইবার দুইটা মেয়েকে লেলিয়ে দিছিলো আমি সেইখান থেকে আমার স্বামীকে মুক্তি করি। আমার স্বামী তোমার নরপিশাচ ভাইয়ের থেকে হাজার গুণে ভালো। তোমার ভাই অবলা মেঘকে ফাসিয়ে বিয়ে করছে মিথ্যা বলে। এসব জানার পরেও আমার শশুড় বাড়ীর লোক তোমার ভাইকে রাজ্যসহ রাজকন্যা দান করেছে। কিন্তু সে এসবের যোগ্য ছিলো না। এরপরে কে তোমাকে বলছে আমি তোমার পিছনে গুন্ডা লাগিয়েছি । এসব হামজা যদি বলে থাকে, আর তোমার পিছনে যদি গুন্ডা লেগে থাকে সব হামজা করিয়েছে সাদিয়া। এসব ভিত্তিহীন কথাবার্তা যার জন্য তুমি আমাদের পিছনে লেগেছো।

তুমি মিথ্যা বলছো হামজা ভাইয়া কখনো এরকম হতে পারেনা।

তোমাদের চোখ থেকেও অন্ধ। এসিপি রক্তিম সবটা সাদিয়াকে বলে আসলে, তোমাকে তোমার ভাই ব্যবহার করছে। এসব কিছুই করেনাই নীলা। তোমার সরলতার সুযোগ নিছে তোমার ভাই। আসলে তোমাকে ইমোশনালি ব্লাকমেইল ভালোই করতে পারে। তোমাকে এভাবে ব্লাকমেইল করছে হামজা। বিশ্বাস না হলে পুলিশ স্টেশনে যেয়ে সবটাই জানতে পারবেন।

না আমার ভাইয়া কখনো মিথ্যা কথা বলতে পারে না। অফিসার সব কিছু নীলার প্লান এনাকে জেলে ভরে কয়েকটা থাপ্পড় মারলে সব কথা পেট থেকে গড় গড় বের করে দিবে।

নীলা এবার কঠোর হয় আর রক্তিম কে বলে, এসিপি যার ভাই যেরকম, তার বোন সেই লেভেলের হবে আমার বোঝা উচিত ছিলো আপনি ওদেরকে জেলে ভরুন। এক্ষুনি নিয়ে যান এখান থেকে। অনেক করেছি মানুষ কে ক্ষমা আর করতে চাইনা। এতো উদার হয়ে আজকে। আমি আমার স্বামীর ভালোবাসা হারিয়েছি।

আমি কিছু করি নাই, আমি সবকিছু সাদিয়ার প্লানমাফিক করছি। ওকে ভালোবাসি বলে এরকম কাজ করেছি আমাকে ক্ষমা করুন আমি জেলে যেতে চাইনা __ নবীর বললো।

যাকে ভালোবাসেন যার জন্য অপরাধ করতে একটুয়ো দ্বিধা বোধ করেন নাই তার জন্য শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে। কারণ আপনিয়ো সমান দোষে দোষী __ রক্তিম বললো।

আমি আর এদের কাউকে সহ্য করতে পারছিনা। আমার সামনে থেকে এদেরকে নিয়ে যান এসিপি। আর এই নবীরকে যৌনহয়নারিমূলক চার্জ দিয়েন কারণ এই নবীর আমার বোন কেয়ার স্তনে স্পর্শ করছে। এদের মুখ আমি দেখতে চাইনা। এদের জন্য দাম্পত্য জীবনে শুধুই একটার পর একটা সমস্যা লেগেই ছিলো।

এরপরে এসিপি কনস্টেবলদের দিয়ে সাদিয়া ও নবীরকে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যায়।

নীলা ঈশান কে বলে আমি আসি ভাইয়া। তোমাদের জীবনে যত সমস্যা সৃষ্টি হইছে সব আমার কারণে হইছে। আমি যদি তোমাদের পরিবারে বিয়ে করে না আসতাম তাহলে এসব সমস্যার সম্মুখীন হইতা না। আমার জন্য যত সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে চৌধুরী পরিবারে। আর আকাশ আমার সাথে সুখী নয় ও নিজেও বলছে।

কোনো কথা হবেনা নীলা আমি তোমাকে এক জায়গায় নিতে চাই এরপরে তুমি সিদ্ধান্ত নিয়ো তুমি যাবা কিনা।

আর কোথাও যেতে চাইনা আমি আকাশ ক্ষমা করো আমাকে।

এরপরে ঈষান জোড় করে নীলাকে। নীলা ঈষানের অনুরোধ টা আর ফেলতে পারেনা।

তারার বাবা, ঈষান, আকাশ ও নীলা হসপিটালে যায় যেয়ে দেখে তারার জ্ঞান ফিরছে। তারা ওর বাবাকে দেখে খুশি হয়ে যায়। আকাশকে ধন্যবাদ দেয়। আকাশ আমাকে ক্ষমা করো। আমি অযোগ্য তোমার। আমি তোমার ক্ষতি করতে চাইলাম সেই তুমি আমার বাবাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিলা। কিন্তু আকাশ তুমিতো জানো আমি নিরুপায় ছিলাম আমার কোনোকিছু করার ছিলোনা। কিন্তু বিশ্বাস করো একবার যদি তোমাকে বলতে পারতাম। তাহলে এতোকিছু ঘটতো না আমাদের লাইফে।নীলা তুমি হয়তো এতক্ষণে জানো, আমি কে? তাই আমার পরিচয় দেওয়ার লাগবে না তোমার কাছে। পারলে আমাকে ক্ষমা করিয়ো। নীলা তোমাকে আকাশ খুব ভালোবাসে তুমি ওকে ভূল বুঝিয়ো না। আর আমি ওর অতীত ছিলাম তুমি হলে বর্তমান। হয়তো তুমি ভাবছো রাতে আমাদের মধ্যে অনেক কিছু হয়েছে কিন্তু বিশ্বাস করো আমাদের মাঝে কিছু হয় নাই। আমি আকাশ কে ঘুমের ঔষধ খাইয়েছিলাম যাতে কিছু না হয়। কারণ আকাশতো নিজের মধ্যে থাকেনা ক্লোড ড্রিংস খেলে। আর আমি সবটাই করেছি আমার বাবাকে কিডনাপ্যারের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য।

এরপরেও তুমি আমার উপর অভিমান করবা। তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবা বলো নীলা।

আচ্ছা আমিতো জানি তোমার কোনো দোষ নেই। কিন্তু আমিতো আমার দিক থেকে নির্দোষ মুক্ত হতে পারছিনা। তুমি আমাকে ক্ষমা করো, আমার জন্য তোমার লাইফে এতোকিছু হয়েছে। কারন সবকিছুর মূলে আমার এক্স ছিলো। যদি না, আমার লাইফে কোনো এক্স থাকতো তাহলে আমাদের দাম্পত্য জীবন টা সুখের হতো। কিন্তু সর্বশেষে একটা কথা বুঝতে সক্ষম হয়েছি আমার জন্য শশুড়বাড়িতে এতো ভেজাল। আমি চাইনা আমার ভালোবাসার মানুষ টির পরিবার বারবার সমলোচনার মুখোমুখি হোক। তাই আমাকে দূরে যেতে দাও আকাশ।

তারা বললো আমি একটা কথা বলি তোমরা দুজন একটু শুনো পিলিজ। আসলে একটা ছেলে মেয়ের যখন বিয়ে হয় বেড়ে যায় অনেক দায়িত্ব। তোমরা দুজন মানে নীলা তুমি সেই দায়িত্ব কে ইগনোর করতে পারোনা। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক ঠিক এরকম যতই বিপদ আসুক ভালোবাসায় বিশ্বাসের শক্তি থাকলে তোমরা ঠিক জয় করে নিবা। আর আমি যতটুকু পর্যালোচনা করলাম তোমাদের বিশ্বাস ঠিক আছে তাই ধৈর্য না হারিয়ে বিশ্বাস করো যতই বিপদ আসুক সব কিছু মোকাবিলা করা খুব সহজ হবে তোমাদের। কখনো নিজের ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস হারাবা না। একজন যদি রেগে যায়, বুঝে নিতে হবে ও টেনশনে এরকম করছে। তাই অপরপক্ষে কে শান্ত থাকতে হবে। তোমরা যদি এভাবে মজবুত স্বয়ং আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কেউ দুর্বল করতে পারবেনা। দাম্পত্য জীবনে বিশ্বাস টাই মেইন নীলা।

কিন্তু তারা যা কিছু আকাশের জীবনে ঘটেছে। সব আমার কারণে ঘটেছে আমি চাইনা আমার ভালোবাসার মানুষ টি তার চরিত্র নিয়ে বারবার সমালোচনার মুখোমুখি হোক।

তুমি যতই দূরে চলে আকাশ ঠিক তোমাকে এভাবে খুজে নিবে ও তোমাকে যেতেই দিবেনা। আর তুমি যেইটাকে সমালোচনা বলছো ওইটা হলো ভালোবাসা যার জন্য এইভাবে তোমাদের পরীক্ষার সম্মুখীন করছে আল্লাহ তালা। এভাবে ভালোবাসা কমেনা মনের অজান্তেই অনেক বেড়ে যায়।

ঠিক বলেছো তারা আমি আকাশকে ছাড়া থাকতে পারবো না। এরপরে আকাশের কাছে ক্ষমা চায়। আকাশ নীলাকে বুকে টেনে নেয়। তারা তার বাবাকে আগামীকাল ইংল্যান্ডে ফিরবে। আকাশ তার ভালোবাসকে ফিরে পেলো।

নীলা ও আকাশ বাড়ি ফিরলে সবাই নীলাকে দেখে খুশি হয়ে আকাশ নিয়ে সমলোচনা করতে থাকে তুই কবে নিজেকে শুধরাইবি এসব প্রশ্ন।

তখন নীলা রেগে যেয়ে বলে মা – বাবা আকাশ খুব ভালো ছেলে ওর জন্য তোমাদের গর্ব করা উচিত। এই কথা বলে লজ্জা পেয়ে রুমে চলে যায়।সবার বুঝতে বাকি রইলো না যে ওদের ভিতর আবারো ভাব হয়ে গেছে।

পরেরদিন সকাল বেলা মেঘ ল্যাগেজ গুছিয়ে ইংল্যান্ডের জন্য রওনা হয় কারণ বাকি পড়াশোনা কমপ্লিট করতে চায় । তাই কেউ মেঘকে বাধা দেয়না কারণ হামজা কে স্মৃতি থেকে মুছতে হলে কাজে ব্যাস্ত থাকাই শ্রেয়ো। সেদিন তারা, তারার বাবা ও ইংল্যান্ডে ফিরবে তাই আকাশ ওদের সাথে যোগাযোগ করে সন্ধ্যাবেলার ফ্লাইটের টিকিট কাটে। সন্ধ্যায় আকাশ ও নীলা, মেঘ তারা ও তারার বাবাকে ফ্লাইটে চড়িয়ে দিয়ে আসে।

সাদিয়া ও নবীরের ২ বছরের জন্য জেল হয়ে যায়।

—————— রাত বারোটা ——————

নীলার এক সপ্তাহ পর এমএসসি ফাইনাল পরীক্ষা । তাই পড়তেছিলো, আকাশ এসে বলে এখনো সাতদিন সময় আছে। আমি জানি আমার স্ত্রীর কাছে এসব ব্যাপার না। আজকে আর পড়তে হবেনা নীলা। নীলার হাত ধরে টেবিল থেকে টেনে তুলে। দেখো আকাশ আমি পড়তে চাই আমাকে ডিস্টার্ব করিয়ো না।
বউকে ভালোবাসছি ডির্স্টাব হলে হোক এভাবে ভালোবাসবো প্রতি রাত। এরপরে আকাশ নীলার ঠোঁট চুমু করতে নিজের ঠোঁট এগিয়ে দেয়। কিন্তু নীলা তাতে সাড়া না দিয়ে আকাশকে ধাক্কা দিয়ে আবারো টেবিলে পড়তে বসে।
আকাশ আবার টেবিলের কাছে যায় দেখে নীলা বই উল্টো করে ধরে আছে। তা দেখে আকাশ বলে আজকে আর পড়তে হবেনা, কেউ উল্টো করে বই ধরে পড়াশোনা করে।
নীলা দেখলো উল্টো আসলেই উল্টো করে ধরা। এরপরে নীলা বললো চলো ছাঁদে যাবো অনেকদিনের ইচ্ছে জামাইয়ের সঙ্গে জোৎস্ন্যা বিলাশ করবো আর চাঁদ আমাদের দেখে দেখে মিঠি মিঠি হাসবে।
এরপরে আকাশ আর নীলা ছাঁদে যায়। জোৎস্নারাতে একে অপরের বুকে মিশে যায় ঠান্ডা বাতাস বইছে চারদিকে নীলার শরীরে শিহরণ উঠছে দমকা হাওয়ার। নীলা আর থাকতে পারেনা ঠান্ডায় আকাশ তখন নীলাকে রুমে নিয়ে যায়। নীলা ঠান্ডায় কাপতে থাকে। আকাশ তখন নীলার কাছাকাছি এসে নীলাকে জাপটে জড়িয়ে ধরে। নীলার তবুও ঠান্ডা কমছে না তাই তখন আকাশ কোনো উপায় না পেয়ে স্পর্শ কাতর জায়গায় চুমু দিয়ে নীলার শরীর গরম করে। এরপরে তারা একে অপরকে ভালোবাসতে থাকে। ভালোবাসা শেষে দেখে ফজরের আযান দিচ্ছে। দুজন একসঙ্গে শাওয়ার নিয়ে, ফজরের নামাজ এক সঙ্গে পড়ে। নামাজ শেষে আকাশ উঠে দাড়ালে নীলা আকাশের পা ধরে সালাম করে। এরপরে আকাশ নীলাকে জড়িয়ে ধরে বলে আমাদের দাম্পত্য জীবনে কারো নজর না লাগুক মৃত্যু পযন্ত এভাবেই বাকিপথ চলতে পারি যেনো।

––––––সমাপ্ত ––––––
দাম্পত্য জীবনঃ-

গল্পটা শেষ করলাম। আমি কখনো নিজেকে লেখিকা হিসাবে মনে করিনা। কারণ আমার লেখায় অনেক ভূল ছিলো। রিচ না পেয়েও গল্পটা লিখে গিয়েছিলাম কয়েকজনের কমেন্টের ভিত্তিতে। আমাকে আপনারা মাফ করবেন। সর্বশেষে একটাই কথা আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ যারা এতদিন আমার পাশে ছিলেন। আবারো দেখা হবে খুব শীঘ্রই, এবার যেনো আমি আমার ভূল গুলো শুধরাইতে পারি 😟

আসসালামু আলাইকুম। যারা গল্পটি শেষ পর্যন্ত পড়েছেন তারাই আজকে কমেন্ট করবেন কেমন লেগেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here