#যে_বর্ষণে_প্রেমের_ছোঁয়া
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৩৭
থম ধরে কিছু সময় বসে থেকে অতিবাহিত করল স্বচ্ছ। মোহের মুখে শেষ কথা শুনে বুকের ধুকপুক বন্ধ হচ্ছে না তার। সেই সঙ্গে গলা বেয়ে পড়ছে ঘাম। নিঃশ্বাস ঘন হচ্ছে একটু একটু করে। মেয়েটা শেষমেশ ধরেই ফেলেছে তার মনের গহীনে লুকায়িত কথা? এই নারীটি বেশ চতুর। বেশ লজ্জায় পড়ে গেল সে। কান গরম হয়ে গেল। কান চেপে ধরে চিত হয়ে শুয়ে পড়ল। পরক্ষণেই শৌভিকের কথা মাথায় আসতেই হুড়মুড়িয়ে বসে পড়ল। এই ছেলেটাকে সে এমনিতেই সহ্য করতে পারে না। তার উপর মোহের সাক্ষাৎ করার ব্যাপারটা তার কাছে মোটেই সুবিধার ঠেকছে না। কেমন যেন বিষয়টি তার কাছে সুঁচের মতো শরীরে আ;ঘাত করতে চাইছে। সে মোহের মতো কণ্ঠস্বর চিকন করে মুখ ভেঙ্গিয়ে ব্যঙ্গ করে বলল,
“সেটা আমি শুধুমাত্র উনাকেই জানাতে চাই। আপনি আমায় উনার বাড়ি অবধি নিয়ে যেতে পারবেন? অনেক আশা নিয়ে কল করেছি আপনাকে।”
এই কথা বলেই থেমে মুখ ভার করল সে। বলল,
“তোমার এই আশা ভরসা, মিষ্টি কথাই তো আমাকে শেষ করে দিলো মিস মোহ। এখন শরীরে জ্বলুনি নিয়ে তার বাড়ি তোমায় নিয়ে যেতে হবে।”
স্বচ্ছ শুয়ে পড়ল। খিদে পেটে ঘুমাতে অসুবিধা হচ্ছে তার। তার উপর গরম এবং হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে থাকার জায়গার অভাব। সব মিলিয়ে রাতটা যেন তার নির্ঘুমই কাটল।
কাঠের পুরোনো দরজাটা খুলে নিস্তব্ধ নিষিদ্ধ শহরের আশপাশটা দেখে নিলো ঈশানী। যদিও প্রতিদিন এমন শহরটা নীরব থাকে না। কারণ রাতের বেলাই তো এই পল্লী সবচেয়ে সক্রিয় থাকে। আজ নীরবতার কারণ নতুন কিছু মেয়ে। নতুন মেয়েরা এসেছে। তাদেরকে এক ঘরে বাছাই করা হচ্ছে। যেটা স্বয়ং এখানকার সর্দার মহিলা হেনা করছে। তাই এসব দিকে নজর দিতে পারবে না বলে সবাইকে ছুটি দিয়েছে আজ। তার ঘরটা একেবারে পল্লীর শেষ মাথায়। পেছন ফিরে দেখে নিলো বাকিরা সবাই ঘুমাচ্ছে কিনা। সবাইকে বেঘোরে ঘুমোতে দেখে আস্তে করে দরজা লাগিয়ে দ্রুত পায়ে হাঁটা শুরু করল সে। তার নূপুর পরা পায়ের রিনঝিন শব্দ হতে লাগল। সেটা দমাতে পা টিপে হাঁটল সে।
দোতালার ঘর থেকে সবে হেনা এসে খোলা বারান্দায় দাঁড়ায়। তার সঙ্গে থাকা ছেলেটিকে হিসহিসিয়ে বলে,
“যা চাইছে এই কয়ডা মেয়ের জন্যে এত টাকা দিতে পারুম না। আর সব মেয়ের বয়সই কম তাই তাদের সব কয়ডা আমি রাখুম। তোর বসকে কল করে এখনি বইলা দে। বেশি টাকা টাকা করলে আর জীবনেও ওর কাছ থেকে মেয়ে নিতাম না।”
ছেলেটি আবদার করে বলল,
“আচ্ছা বসরে না দিলেন। আমারে তো দেওয়া যায়। বস খুব একটা বকশিশ দেয় না আমারে। আপনি কয়ডা টাকা দিয়েন।”
হেনা ফোঁস ফোঁস করে সেখানকার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“তোদের দেখি শখের কমতি নাই।”
‘এত কষ্ট করি। একটু তো শখ হবেই।”
ছেলেটির এই কথাটা কানে পৌঁছায় না হেনার। সে ভ্রু কুঁচকে চেয়ে থাকে এই দোতালা বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়া মেয়েটার দিকে। এতরাতে কে বের হলো? এই ভেবেই জোরে হাক দিলো হেনা।
“এই কে রে ওইটা? কে যায় রে? কে তুই?”
ঈশানী বিনা উত্তরে জোরে পা চালায়। হেনার কণ্ঠস্বর শুনে আতঙ্কিত শরীর কেঁপে ওঠে। অপরদিকে উত্তর না পেয়ে হেনার সন্দেহ বাড়ে। চিল্লিয়ে বলে,
“এই ওখানেই দাঁড়া বলতেছি। থাম।”
ঈশানী দাঁড়ায় না। এবার দৌড়াতে শুরু করলে হেনা সবার উদ্দেশ্যে ডাক ছেড়ে বলে,
“এই কে কোথায় আছিস। তাড়াতাড়ি বাহিরে বের হ। কে জানি পালায়!”
হেনা চুপ থাকে না আর। ভারী শরীর নিয়ে দ্রুত পায়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যায়। নেমে এগিয়ে যেতে যেতে দেখে ইতিমধ্যে কিছু মেয়ে ঈশানীকে ধরে ফেলেছে। হাতে থাকা ফোনের লাইট ঈশানীর মুখে মারতেই মেয়েটি চোখমুখ খিঁচে নিলো। অব্যাহত রাখল হাত-পা ছাড়ানোর চেষ্টা। হেনা ভারি অবাক হলো। ঈশানী কেন পালাতে চাইবে? এতদিন তো চায়নি। তবে?
“কী রে মাইয়া! মাথায় কীসের ভূত চাপছে? কী করতে চাইতেছিলি তুই?”
ঈশানী স্পষ্ট এবং জোর গলায় বলল,
“চলে যেতে চাই এখান থেকে। থাকব না এখানে আর।”
“এতবছর পর তোর চলে যাওয়ার ইচ্ছা জাগল কেন? প্রথম যখন তোরে এখানে এনে রাখা হয় তোরে কোনো প্রতিবাদ করতে দেখিনি বাকি মেয়েদের মতো। সব কাজ করতি। এতগুলা বছর পর তোর কী হইল?”
“আমার প্রতিবাদের ভাষা কেঁড়ে নিয়েছে যে আমায় এখানে এনে রেখে গিয়েছিল। আমি যার জন্য কোনো প্রতিবাদ করিনি সে হচ্ছে আমার সন্তান। আজ সেই সন্তানের খোঁজ দিতে পারেনি। আমি ওই জা/নোয়া/রকে মে/রে ফেলব এখান থেকে পালিয়ে দিয়ে। তারপর যা হওয়ার হবে।”
হেনা কপাল কুঁচকে কিছুক্ষণ ঈশানীকে দেখল। তারপর বাকি মেয়েদের উদ্দেশ্য করে বলল,
“এই তোরা এরে নিয়ে যা। বন্ধ করে রাখ। কাল কাস্টমারের উপর কাস্টমার আসলে এমনি এসব কথা ভুইলা যাবে। যা তোরা।”
ঈশানীকে জোরপূর্বক টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। হেনা পান চিবুতে চিবুতে চেয়ে থাকেন কিছু সময়। কিছুদিন হচ্ছে ঈশানীর মাঝে অনেক পরিবর্তন দেখেছে সে। আগের মতো নেই ঈশানী। সবসময় অস্থির অস্থির করে। না জানি পরবর্তীতে মেয়েটা কী করবে!
অটো থেকে মোহের বাড়ির মোড়ের সামনে দাঁড়ায় স্বচ্ছ। খিদে পেয়েছে তার ভীষণ। সে ফোন বের করে দেখে ঘড়িতে বাজে প্রায় দশটা। এখনো দু’মিনিট বাকি। স্বচ্ছ তার হাতে থাকা টাকা ভালো করে দেখে নেয়। আছে মোটেই একশ টাকা। পঞ্চাশ টাকা আসতে খরচ হয়ে গিয়েছে। স্বচ্ছ ভেবে নেয় সে কিছু খাবে। পরক্ষণেই মনে পড়ে সৌমিত্রের বাড়ি যাওয়ার পথেই একশ টাকাই খরচ হয়ে যেতে পারে। তাই নিজের খাওয়ার ইচ্ছে দমিয়ে মোহের বাড়ির গলিটাতে ঢুকে যায় সে। তবে খিদে যেন তার সহ্য হচ্ছে না। হবে কী করে? কোনোদিন কি এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে তার? খিদের চোটে পেটে ওলটপালট শুরু হয়েছে যেন। সবে মোহের বাড়ির দরজার সামনে পৌঁছাতেই মোহকে বের হতে দেখা যায়। পরনে হলুদ জামা এবং সাদা ওড়না। স্বভাবতই তার ওড়না দিয়ে মাথার কিছু অংশ ঢাকা। স্বচ্ছ মনোযোগ দিয়ে দেখল মোহকে। আজ মোহকে একটু বেশিই সুন্দর বোধ হচ্ছে। সেটার কারণ স্বচ্ছ জানে না। অথচ মোহ প্রতিদিনের মতোই বেরিয়েছে ঘর থেকে। তবে মোহ কি শৌভিকের বাড়ি যাবে বলে বেশি পরিপাটি হয়ে এলো? নাকি সে বেশি ভাবছে? এসব ভাবাভাবি করতে করতে যখন তার মাথায় জং ধরে যাওয়ার উপক্রম তখন মোহ বলল,
“আমরা কি যাব? নাকি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকব?”
“কেন আমার জন্য যদি সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তবে ক্ষতি কী? আমি যদি বলি ওই মি. শৌভিকের বাড়ি না গিয়ে এখানে সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকতে আমার সামনে। তবে তুমি কোন কাজটা আগে করবে?”
“অবশ্যই মি. শৌভিকের বাড়ি আগে যাব। কারণ ওটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
“তার মানে আমার কথা শোনার চেয়ে ওটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো তোমার কাছে?”
মোহ সোজাসাপটা বলল,
“হ্যাঁ। আমি কেন আপনার কথা শুনব?”
“কারণ…”
একটা শব্দই বেশ টেনে উচ্চারণ করে থামল স্বচ্ছ। মোহ সন্দিহান হয়ে জানতে চাইল,
“কারণ?”
স্বচ্ছ গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
“আমি তোমার সিনিয়র তাই। সিনিয়রদের কথা শোনা জুনিয়রদের একান্ত এবং ব্যক্তিগত কর্তব্য। সিনিয়রদের মন জয় করে চলতে হয়। তবেই ভবিষ্যতে নানানরকম বিপদে-আপদে সহায়তা পাবে বুঝলে? তুমি তো আমার কথা শোনোই না তবুও আমি তোমায় এত সাহায্য করি। আমি ভালো মনের মানুষ বলে এত এডভান্টেজ পাচ্ছো। আমার মতো সরল মনের মানুষ দুটো পাবে না তুমি।”
বেশ জ্ঞানীর মতো এত কথা শোনানোর পর আঁড়চোখে মোহকে পরখ করল স্বচ্ছ। মোহ নিজের নেত্র দুটো সরু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বেশি লেকচার দিলে নারীজাতি কখন যেন ফোঁস করে ওঠে সাপের ন্যায় তার ঠিক নেই। তাই স্বচ্ছ একটু কেশে বলল,
“চলো যাওয়া যাক।”
স্বচ্ছ আর মোহ হেঁটে হেঁটে মোড়ে এসে দাঁড়াল। অপেক্ষায় রইল কোনো খালি অটোর। স্বচ্ছের ভীষণ অস্বস্তি হলো এভাবে দাঁড়িয়ে থাকায়। মোহ স্বচ্ছের উসখুস দেখে বলল,
আজ সূর্য কি অন্যদিকে উঠেছে? আপনি আজ অটোর জন্য দাঁড়িয়ে রয়েছেন যে!”
স্বচ্ছ খানিকটা আমতা আমতা করেই বলে উঠল,
“আসলে আজকে গাড়ি নিয়ে বের হতে ইচ্ছে করল না। তাই এমনি বেরিয়েছি।”
মোহ ছোট্ট করে ‘ওহ’ উত্তর দিয়ে থেমে গেল। সন্দিহান নজরে একটু পর পর স্বচ্ছের পানে দেখল। লোকটির পরনে কালকের একই শার্ট দেখে অদ্ভুত লাগছে তার। মানুষটা কি বাড়ি যায় নি নাকি? মুখটাও বেশ শুকনো স্বচ্ছের। চোখে ধূসর মণির আশেপাশে সাদা অংশ রক্তিম বর্ণে পরিণত হওয়ার বিষয়টি জানান দিচ্ছে পুরো রাত স্বচ্ছের নির্ঘুম কেটেছে। তবে সন্দেহের বশে কোনো কিছু জানতে চাইল না মোহ। নীরব রইল। অটো পাওয়া গেল। মোহ ভেতরে উঠে বসল। স্বচ্ছও ভেতরে বসতে গেলে থামল একটু। এরপর সামনে গিয়ে দাঁড়াল সামনের সিটে বসার জন্য। তা দেখে মোহ শুধাল,
কী ব্যাপার? এখানে বসলেন না যে?”
“তোমার বসতে অস্বস্তি হতে পারে তাই।”
মোহ কড়া নজরে চাইল। ধমকে উঠে বলল,
“এখানে বসুন। আমি এতটাও মোটা হয়ে যাইনি যে আমার পুরো সিট প্রয়োজন হবে।”
স্বচ্ছ বারণ করতে চেয়েও করল না। কী দরকার? যদি বেশি বারণ করতে গিয়ে মোহ রানির পাশাপাশি বসার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়? মোহ খানিকটা সরে বসে। স্বচ্ছ ভেতরে বসতে বসতে বলে,
“যাক! তোমার কথাটা শুনে ফেললাম। তাছাড়া সামনের রাস্তা ভালো নয়। প্রচুর ঝাঁকুনি হবে। আসলে যার বাড়িতে যাচ্ছো সেই মানুষটাও তো খুব একটা সুবিধার নয় তাই রাস্তাও জানান দেয় বিষয়টা।”
মোহ ফ্যালফ্যাল করে তাকায়। এই লোকটার কেন এত সমস্যা শৌভিককে নিয়ে বুঝে উঠতে পারে না। সে উত্তরে কিছু বলে না। স্বচ্ছ আবারও বলে,
“আর সামনে যতটা রাস্তা খারাপ তোমার মতো পুঁটি মাছ এমনি পড়ে যাবে। আমার তো আবার দায়িত্ব পুঁটি মাছ সামলানো।”
মোহ বেশ বুঝতে পারল তাকে স্বচ্ছ পচিয়ে দিচ্ছে। সে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলে,
“কাকে কে সামলায় সেটা দেখা যাবে সময় আসলেই।”
স্বচ্ছ প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসের সহিত বলে,
“হুঁ, হুঁ দেখা যাবে।”
রাস্তায় অটো যেতে যেতে স্বচ্ছ একটা শব্দ পেল। শব্দটা অদ্ভুত। যা পেট থেকে আসছে। না খেয়ে রীতিমতো ঝড় উঠেছে পেটে এটা তারই আভাস। সে লজ্জায় পড়ে গেল। মোহ শুনেছে কিনা এই ভেবে উসখুস করতে লাগল। তৎক্ষনাৎ মোহ বলে উঠল,
“কীসের শব্দ হলো?”
স্বচ্ছের কাছে যেন উত্তর তৈরি ছিল। হুড়মুড়িয়ে বলল,
“গাড়ির। আশেপাশে এত গাড়ি রয়েছে সেসবের শব্দ।”
মোহের কেন যেন বিশ্বাস হলো না। সে খেয়াল করেছে স্বচ্ছ মাঝে মাঝে পেটে হাত রেখে জোরে চাপ দিচ্ছে। এর কারণ বুঝতে সময় লেগে গেল মোহের। স্বচ্ছ প্রসঙ্গ ঘুরাতে জিজ্ঞেস করে বসল,
“ইথান বাড়ি ফিরেছে?”
“না। সকালে কথা হয়েছিল। দুপুরের মাঝে ফিরবে বাড়িতে।”
কথার মাঝেই খারাপ এবং ভাঙ্গা রাস্তার ঝাঁকুনি শুরু হলো। হুট করেই পেছন থেকে অন্য কোনো গাড়ি ধা;ক্কা দিলে মোহ নিজেকে সামলাতে ব্যর্থ হলো। মাথাটা সামনের গ্রিলের সাথে আ/ঘাত লাগতে লাগলে স্বচ্ছ গ্রিলে হাত রেখে মোহের হাত চেপে ধরে। হাফ ছেড়ে বাঁচে মোহ। সামনের ড্রাইভার পেছনে থাকা গাড়িকে অকথ্য ভাষায় গা/লি দিতে থাকে। মোহ এবার স্বচ্ছের চোখে চোখ রাখতে পারে না। এইতো কিছু সময় আগে সে নিজেকে নিয়ে ভীষণই আত্মবিশ্বাসী ছিল। স্বচ্ছ মৃদু হাসল মোহের লাজুকতায়। মোহের কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
“আচ্ছা বলো তো! তোমায় এত সুন্দর করে বাঁচিয়ে দিলাম এরপর আমার মনের সেই অনুভূতিটা সেটা কি যেকোনো নারীকে বাঁচালেই পাওয়া যায়? নাকি এই অনুভূতি তোমার জন্য বরাদ্দ।”
মোহ সরে গিয়ে বলল,
“তা আপনি ভালো জানেন।”
“আমার তো মনে হয় এই অনুভূতি মোহ আনবীরের দখলদারি সম্পত্তি।”
মোহ মুখ ফুলিয়ে বলে,
“আপনার অনুভূতিকে দখল করতে আমার বয়েই গেছে।”
স্বচ্ছ বিস্তর হাসে এবার। মেয়েটাকে কখনো হার মানানো যাবে না। কারণ নারী জাতি তর্কে জিততে ভালোবাসে।
গাড়িটা থামে একটা সাদামাটা বাড়ির সামনে। বাড়িটা বড়ো হলেও কিছু পুরোনো ধরনের। আধুনিকত্ব, দালানকোঠা পেরিয়ে এক সরল গঠনের বাড়ি। অতি চাকচিক্য না থাকলেও বোঝায় যায় বাড়িটির বেশ যত্ন করা হয়। স্বচ্ছ ভাড়া মিটিয়ে দিতে দিতে ভাবনায় পড়ে যায় এখন সে ফিরবে কী করে। হঠাৎ মোহ ড্রাইভারকে টাকা শোধ করে দিয়ে বলে,
“আপনি এমনিতে আমার অনেক উপকার করেছেন। সেটা হোক আর্থিক কিংবা অন্যভাবে। এই সামান্য ভাড়া আমি নিজেই মেটাতে পারব। যেটা আমি নিজে পারি সেটাতে অন্যকারোর সাহায্য নিই না।”
স্বচ্ছ কিছু বলতে চাইলে তার আগেই মোহ বলল,
“আপনি যাবেন ভেতরে আমার সাথে?”
স্বচ্ছ দ্রুত চোখমুখ জড়িয়ে ফেলল। বলল,
“না না। আমি যেয়ে কী করব?”
মোহ মেকি হেসে বলল,
“হুমম। আপনার ক্ষেত্রে না যাওয়ায় ভালো। বাড়ি ফিরে যান। আর রাস্তাটা চিনিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।”
মোহ আর কোনো কথা না বাড়িয়ে বাহিরের গেট খুলে প্রবেশ করে। স্বচ্ছের তা দেখে অসহ্য লাগে। প্রবল ইচ্ছে ভর করে তার মস্তিষ্কে। মোহকে ধরে বেঁধে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে, ‘এই মেয়ে এখানে কী তোমার? তুমি কেন এখানে আসবে? আমি থাকতে তুমি এখানে আসবে কেন? হুঁ?’
কিন্তু স্বচ্ছের তীব্র আফসোস হলো। সে জিজ্ঞেস করতে পারবে না। নিজেকে কেন নিচু দেখাবে সে? তাকে তো ‘কিছু যায় আসে না’ এমন ধরনের ভাব নিয়ে চলতে হবে। স্বচ্ছের ফোনে কল আসে তখন। এবার ইচ্ছে করে সৌমিত্রের কল রিসিভ করে স্বচ্ছ। ওপাশ থেকে হাঁসফাঁস করা কণ্ঠ ভেসে আসে।
“এই ভাই! কই তুমি? কী শুরু করেছ? কাল থেকে তোমার খোঁজ নেই। মা চিন্তা করে করে প্রেশার লো করে ফেলেছে।”
স্বচ্ছ গম্ভীর হয়ে বলে,
“মাকে চিন্তা করতে বারণ কর।”
“বারণ করলাম আর ওমনি চিন্তা করা বন্ধ করে দিলো তাই না? তুমি বাড়ি এসো। তোমায় না দেখলে মা শান্ত হবে না।”
“বাড়ি ফিরব না আমি। বলেছি না? কথা কি বুঝতে পারিস না তোরা?”
সৌমিত্র বুঝতে পারে এভাবে কথা বললে হবে না মোটেও। সামনাসামনি কথা বলতে হবে। তাই সে জানতে চায়,
“আচ্ছা কই আছো তুমি? আমার সঙ্গে অন্তত দেখা করো।”
“আপাতত বাহিরে আছি। ক্লাবে আয়। ওখানে ইয়াকীনও আছে। ওর কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছি। ওখানে আয় কথা বলছি।”
স্বচ্ছ সৌমিত্রের উত্তরের অপেক্ষা না করে কল কেটে দিল। অন্য একটা অটো ধরে রওনা হলো ক্লাবের দিকে।
“তোদের দিয়ে কি একটা কাজও হবে না? সামনে ইলেকশান আর তোরা ব্যানার বানাতে পারিস নি। এভাবে করলে সব কয়টার ঘাড় মটকাব আমি গিয়ে।”
মাথা গরম করে কথাগুলো একনাগাড়ে বলে থামল শৌভিক। ওপরপাশ থেকে যা উত্তর এলো তাতে সে কঠিন সুরে বলল,
“আজ বিকালেই আমি বের হচ্ছি থাম। ফাইজলামি বের করছি।”
কথা শেষ করে কল কাটতে গিয়ে বাড়ির কাজের এক সহকর্মী এসে বলল,
“ভাই আপনার লগে একজন দেখা করতে আইছে।”
শৌভিক উৎসুক হয়ে জানতে চাইল,
“কে?”
“নাম তো শুনি নাই।”
“ভেতরে আসতে বলেন।”
কিছু সময় পরেই গুটিগুটি পায়ে শৌভিকের সামনে উপস্থিত হলো মোহ। শৌভিক তার বাড়িতে মোহকে আশা করেনি। সে চমকাল খানিকটা। গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
“আপনি?”
চলবে…
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]