#অনুরাগের_প্রহর
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_১৭
_________________
রাত একটা!রাস্তা-ঘাট নিরিবিলি হয়ে গেছে।শেহরেয়ার ব্রিজের উপর গাড়ি পার্ক করে তার উপরে শুয়ে আছে আকাশের দিকে তাকিয়ে।তার চোখ জোড়া ছলছল করছে।
-“কেনো আমাকে একা রেখে চলে গেলে মেহরিন!তোমায় ছাড়া যে আমি শূন্যতায় ডুবে আছি।”
সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে মির্জা বাড়িতে না গিয়ে হামিদের বাড়ির দিকে রওয়ানা হলো!
____________________
-“আপু এতো রাত হয়ে গেছে!তুই ঘুমাচ্ছিস না কেনো?”
-“শেহরেয়ারকে সেই সন্ধ্যা থেকে বিশ বার কল দিয়েছি।কিন্তু ওর মোবাইল সুইচ অফ বলছে।মাকে বারোটার দিকে কল করেছিলাম,উনি বললেন বাসায় ফিরেনি তখনো।হামিদ ভাইকেও কল করেছি,উনি রিসিভ করেননি।টেনশন হচ্ছে আমার!”
-“অনেক ভালোবাসিস তাই-না?”
মেহরিন কিছু না বলে মৃদু হাসলো।মুনিয়া ভ্রু উঁচিয়ে বললো,
-“থাক তোমার আর মুখে বলতে হবে না!লজ্জাবতী লতা!”
-“মুনি মা*র খাবি কিন্তু!”
মুনিয়া আর কিছু না বলে হাসি দিয়ে চোখ বন্ধ করলো।মেহরিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে রইলো।
_____________
হামিদ ঘুমের চোখে দরজা খুলে দেখলো শেহরেয়ার দাঁড়িয়ে আছে।হামিদ অবাক হয়ে বললো,
-“তুই এতো রাতে?”
শেহরেয়ার হামিদকে দরজার সামনে থেকে সরিয়ে বাড়ির ভিতরে গিয়ে সোফায় বসলো।হামিদ দরজা লাগিয়ে শেহরেয়ারের পাশে বসে বললো,
-“কি হয়েছে শেহরেয়ার?”
শেহরেয়ার দীর্ঘশ্বাস ফেলে হামিদকে সবকিছু বললো।হামিদ সবটা শুনে চমকে গিয়ে বললো,
-“কি?এতো কিছু হয়ে গেছে?আর আমি কিছুই জানি না।”
শেহরেয়ার সোফায় হেলান দিয়ে বসে বললো,
-“ওই বাড়িতে যেতে ইচ্ছে করছে না আমার।চারিদিকে শুধু মেহরিন আর রায়ানের স্মৃতি!আর অন্যদিকে রুশমি নামের এক বিরক্তি!”
-“আচ্ছা তুই এখানেই থাক।রাতে কিছু খেয়েছিস?”
শেহরেয়ার নিশ্বাস ফেলে বললো,
-“খাওয়ার ইচ্ছাই মরে গেছে।”
-“ওয়েট!আমি খাবার নিয়ে আসতেছি। ”
-“দরকার নেই কোনো!”
-“সেটা তো আমি বুঝবো।”
হামিদ গিয়ে শেহরেয়ারের জন্য খাবার নিয়ে আসলো।হামিদের জোরাজুরিতে শেহরেয়ার অল্প কিছু খাবার খেয়ে রুমের দিকে গেল।শেহরেয়ার রুমে যেতে হামিদ তার মোবাইলটা হাতে নিল।দেখলো মেহরিন কল করেছিল।হামিদ দেরি না করে মেহরিনকে কল করলো।
মেহরিন মোবাইলটা হাতে নিয়ে বসেছিল।হঠাৎ হামিদের কল আসায় সে এক মুহূর্ত দেরি না করে কলটা রিসিভ করলো।
-“হামিদ ভাই’ শেহরেয়ার কোথায় আপনি জানেন?”
-“শেহরেয়ার আমার বাড়িতেই আছে ভাবি।এতোকিছু ঘটে গিয়েছে আমি কিছুই জানতাম না।ও একটু আগেই এসে সবটা বললো।আপনি কেন চলে গেলেন ভাবি?”
-“ভাই,আমি কি করে ওই মেয়েটার সাথে এক বাড়িতে থাকবো বলতে পারেন?”
-“আপনি কি এই কারণে আপনার বাড়িতে চলে গেছেন?”
-“হুম এই কারণেই।আমার শেহরেয়ারের উপর বিশ্বাস আছে।আমি কালকে ওর সাথে দেখা করতে আসবো।আমাকে কল করার জন্য ধন্যবাদ!ও-কে নিয়ে অনেক টেনশন হচ্ছিল।”
হামিদ মুচকি হেসে বললো,
-“আহা!কি ভালোবাসা!”
মেহরিন হাসি দিয়ে মোবাইলটা রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
ঘুম না আসার কারণে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বসে আছে শেহরেয়ার।হামিদ দরজার আড়াল থেকে দেখলো শেহরেয়ার বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।সে গিয়ে শেহরেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
-“এখনো ঘুমাসনি কেনো?”
শেহরেয়ার কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-“জানিস আজকে চাঁদটা আমায় ডেকে জিজ্ঞেস করলো,’কোথায় তোমার সেই মানুষ?যার সাথে আমার তুলনা করতে’!”
হামিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“শেহরেয়ার ভাবি কিন্তু তোকে ভুল বুঝেনি।”
-“জানি আমি!তবে ও আমাকে একা রেখে চলে গেছে।”
-“আঙ্কেল কেনো ওই রুশমিকে বাড়িতে থাকতে দিল?”
-“সেটা তিনি জানেন।আমার প্রতি তো উনার বিশ্বাস নেই।”
-“বাই দ্যা ওয়ে!তোর মোবাইল কোথায়?”
শেহরেয়ার হামিদের কথা শুনে পকেটে হাত দিয়ে মোবাইল বের করলো।দেখলো মোবাইল বন্ধ হয়ে গেছে।শেহরেয়ার হামিদের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“চার্জ শেষ।”
-“বাড়ির কাউকে জানিয়েছিস তুই যে এখানে এসেছিস?”
-“কাউকে জানানোর প্রয়োজন নেই।”
-“সবাই টেনশন করতেছে হয়তো।”
শেহরেয়ার আর কিছু না বলে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।হামিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুম থেকে বের হয়ে শেহমীর মির্জাকে কল করে জানিয়ে দিল শেহরেয়ার যে তার বাসায় আছে!
____________________
-“আপু তুই এই সকাল সকাল কোথায় যাচ্ছিস?”
-“হামিদ ভাইয়ার বাড়িতে!”
মুনিয়া অবাক হয়ে বললো,
-“কেনো?”
-“শেহরেয়ার উনার বাড়িতে আছে।ওর সাথে আমার কথা বলতে হবে।”
-“আপু আমিও যাবো তোর সাথে।”
-“তুই গিয়ে কি করবি?”
-“আমার দরকার আছে।”
মেহরিন ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“তোর কিসের দরকার?”
-“দরকার আছেই তো!ভাইয়াকে বুঝাতে হবে না!”
-“তোর ভাইয়াকে আমিই বুঝাতে পারবো।তুই রায়ানকে নিয়ে বাড়িতে থাক।বাবা আজকে আসতেছে।”
-“আচ্ছা ঠিক আছে।”
মেহরিন হামিদের বাড়ির দরজায় গিয়ে কলিংবেল বাজালো।হামিদ দরজা খুলে মেহরিনকে দেখে মৃদু হেসে বললো,
-“ভাবি আপনি চলে এসেছেন!”
-“হ্যাঁ!আমার বর এখানে আছে।আমি তো এখানে আসবোই।”
-“আচ্ছা ভিতরে আসুন।”
মেহরিন এদিক-ওদিক তাকিয়ে শেহরেয়ারকে না দেখতে পেয়ে বললো,
-“ও কোথায়?”
-“সোজা দোতলার দুই নাম্বার রুমে চলে যান।আপনার প্রাণপ্রিয় স্বামী সেখানেই আছে।”
মেহরিন মুচকি হেসে সেখানে গেল।রুমে গিয়ে দেখলো দরজা খোলা।শেহরেয়ার বিছানায় উল্টো পাশে ঘুরে মোবাইল হাতে নিয়ে বসে আছে।মেহরিন শেহরেয়ারের পিছন থেকে উঁকি দিয়ে দেখলো শেহরেয়ার ওদের কাপল পিকটা দেখতেছে।মেহরিন ভ্রু উঁচিয়ে বললো,
-“এতো মিস করতেছো কিন্তু কল করতে পারলে না একবারও!”
হঠাৎ মেহরিনের কথা শুনে শেহরেয়ার চমকে গেল।পিছনে ফিরে মেহরিনকে দেখে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল।মেহরিন হাসি মুখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।শেহরেয়ার কিছুক্ষণ মেহরিনের দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নিল।তারপরে বললো,
-“তুমি এখানে এসেছো কেনো?”
-“বা রে!আমার দশ টা না,পাঁচ টা না, একটা মাত্র জামাই।তাকে না দেখে থাকা যায় নাকি?”
শেহরেয়ার চোয়াল শক্ত করে বললো,
-“মজা করতেছো আমার সাথে?”
-“নাহ্।আমি সিরিয়াস কথা বলতেই এসেছি।”
শেহরেয়ার কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-“ডিভোর্সের কথা বলতে এসেছো তুমি?”
মেহরিন চোখ রাঙিয়ে বললো,
-“ডিভোর্সের কথা বললে কেনো তুমি?”
শেহরেয়ার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“বাড়ি ছেড়ে চলে গেছো,এখন এসে বলতেছো সিরিয়াস কথা আছে।আমার মনে হলো তোমার সিরিয়াস কথাটা হলো ডিভোর্স নিয়ে!”
-“বেশি বোঝা ভালো না।এখন চুপ থেকে আমার কথা শোনো।”
শেহরেয়ার মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে বললো,
-“তোমার কোনো কথা শোনার ইচ্ছা নেই আমার।”
-“শেহরেয়ার প্লিজ এমন ত্যা*ড়ামি করো না।”
-“ত্যা*ড়ামি আমি না তুমি করেছো মেহরিন!”
-“আরে ভাই আমি ওই মেয়ের সাথে বাড়িতে থাকতাম কি করে?”
শেহরেয়ার দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-“আমি এখন ভাই হয়ে গেছি!”
শেহরেয়ারের কথা শুনে মেহরিন হেসে দিল।হাসি থামিয়ে বললো,
-“আরে ওটা তো কথার কথা।”
শেহরেয়ার আর কিছু না বলে চুপ করে রইলো।মেহরিন নিশ্বাস ফেলে বললো,
-“ডিএনএ টেস্ট করালেই তো সবটা প্রমাণ হয়ে যাবে।”
-“সেটা আমি জানি।”
-“তা এখানে বসে আছো কেনো?আজই গিয়ে ডিএনএ টেস্ট করার ব্যবস্থা করো।”
-“তোমার এইসব নিয়ে ভাবতে হবে না।তুমি যাও!”
মেহরিন কিছুক্ষণ শেহরেয়ারের দিকে তাকিয়ে থেকে তাকে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।শেহরেয়ার মেহরিনকে তার থেকে সরাতে গিয়েও থেমে গেল।সে’ও মেহরিনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“আমাকে একা রেখে চলে যাওয়া কি তোমার উচিত হয়েছে?”
-“আমি তো তোমাকে একা রেখে যাইনি।বাড়ি থেকে চলে গেছি তবে তোমার হৃদয় থেকে না।এখানে একমাত্র আমার অধিকার!”
শেহরেয়ার মেহরিনকে তার সামনে দাঁড়া করিয়ে কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিল।
-“শেহরেয়ার আমি সবসময় তোমার পাশে আছি।তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা এবং বিশ্বাস কখনোই শেষ হবে না।”
-“মানুষটি তাহলে আমারই?”
-“একদম!একান্ত ব্যক্তিগত মানুষ!”
মেহরিনের কথায় শেহরেয়ার হেসে দিল।
#চলবে____
[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]