প্রিয়_তুমি #পর্ব_১৪ #লেখিকা_N_K_Orni

0
311

#প্রিয়_তুমি
#পর্ব_১৪
#লেখিকা_N_K_Orni

পরদিন রাস্তায় আশহাবের সাথে লামিয়ার হঠাৎ করে দেখা হয়ে গেল। সে লামিয়ার সাথে কথা বলতে চাইল। সে লামিয়াকে দেখে বলে উঠল,

— কি অবস্থা তোমার?

— আমার তো সবই ঠিক আছে। বাবা তো আমার সাথে আমার বয়ফ্রেন্ডের বিয়েও ঠিক করে রেখেছে। আমার আর কি দরকার বলো? যাইহোক তোমার কথা বলো। অবশ্য তুমিও বেশ ভালোই আছো। নাতাশার সাথে তোমার এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গেছে। দুই মাস পর তো বিয়েও হতে চলেছে। তোমার তো আমারও আগে বিয়ে হয়ে যাবে।

কথাটা শুনে আশহাব শুকনো হেসে বলে উঠল,

— এরকম হলে তো হয়েই যেত। বিয়েটা এখন ভা*ঙতে যাচ্ছে। নাতাশা অন্য কাউকে পছন্দ করে। তাই সে আমাকে বিয়ে করতে চায়।

— তাই নাকি? তোমাদের জন্য এত কিছু করলাম তাও কিছু হলো না। যাতে তোমাদের এঙ্গেজমেন্ট হয় তাই আমি ওইদিন সবার সামনে এতোকিছু করলাম। তারপরও তোমাদের বিয়েটা হচ্ছে না। তোমার উচিত ছিল এই সময়ের মধ্যে নাতাশার মন পাওয়ার চেষ্টা করা।

ফ্লাসব্যাক

আশহাব আর লামিয়ার এঙ্গেজমেন্ট ঠিক হলে তারা একে অপরের সাথে দেখা করেছিল তাদের সমস্যা বলার জন্য।

— আশহাব প্লিজ বিয়েটা ভে*ঙে দেও। আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি। তাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে চাই না।

— সত্যি বলতে আমিও এই বিয়েটা করতে চাই না। আমি নাতাশাকে ভালোবাসি।

— ওহহ তাহলে তো ভালোই হলো। চলো আমাদের পরিবারকে বলে এই বিয়েটা ভে*ঙে দেই।

— সেটা তো করবই। কিন্তু এখন না পরে। আসলে আমার তোমার একটা সাহায্য দরকার। প্লিজ আমাকে একটু সাহায্য করো।

— কি সাহায্য? বলো আমি চেষ্টা করব।

— তুমি এখন কাউকে কিছু বলো না। এঙ্গেজমেন্টের দিন সবার সামনে বলবে। তখন এটা বললে সবচেয়ে ভালো হবে।

লামিয়া প্রথমে রাজি না হলেও আশহাব বারবার বলায় রাজি হয়ে গেল। তাদের এঙ্গেজমেন্টের দিন যা যা হয়েছিল সব আশহাব লামিয়াকে বলে দিয়েছিল। নাহলে সে আরও আগেই বিয়েটা ভে*ঙে দিত।

বতর্মান

— আমি তখন বুঝতে পারিনি। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি। আমার উচিত ছিল এই সময়ের মধ্যে ওসব নাটক না করে ওর সাথে ভালো ব্যবহার করা, ওকে পাওয়ার চেষ্টা করা। আমি তখন মনে করেছিলাম আমি যেটা করছি সেটাই সঠিক। কিন্তু এখন আমি বুঝেছি আমি ভুল ছিলাম।

— তুমি কেন এমনটা করতে গেলে? এমনটা না করলে হয়তো নাতাশা তোমাকে একটু হলেও পছন্দ করে ফেলতে পারত।

— নাতাশা প্রথম থেকেই বিয়েতে রাজি ছিল না। আমি ভেবেছিলাম ওকে আমি বিয়েতে রাজি না এসব বললে বিভিন্ন অজুহাতে ওর সাথে কথা বলতে পারত। ও কখন কি চিন্তা করছে এসব জানতে পারব আগে থেকেই। নাতাশা তো বিয়েটা ভা*ঙার কোনো উপায়ই খুঁজে পেয়েছিল না। সবই ঠিকঠাক চলছিল। হঠাৎ করে ওর বয়ফ্রেন্ড কোন জায়গা থেকে এলো বুঝতে পারছি না।

— হয়তো আগেই পেয়েছিল কিন্তু তোমাকে বলেনি। এসব কিছু করাই তোমার ভুল হয়েছে।

— আসলে এসব কিছু আমি একা চিন্তা করে করিনি। আমি আর আঙ্কেল মিলেই ঠিক করেছিলাম। কিন্তু সবটা শেষ হয়ে গেল। এখন বুঝতে পারছি এটা না করলেই ভালো হতো।

— কিন্তু এখন বুঝেও আর কিছু করার নেই? এখন আফসোস করা ছাড়া আর কিছু বাকি নেই। আচ্ছা আমি এখন যাই, ভালো থেকো। আর তিন মাস পর আমার বিয়ে। তখন আমার বিয়েতে এসো।

লামিয়া আশহাবের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। আশহাব একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে রইল। দিন গিয়ে রাত আসতে শুধু করেছে। পশ্চিম আকাশে সূর্যের লাল আভা জানান দিচ্ছে একটু পরেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে। নাতাশা কাল রাতে রুমে যাওয়ার পর দরজা দিয়েছিল। তারপর থেকে আর দরজা খোলেনি। সারাদিনে একবারের জন্যও বের হয়নি। যার কারণে পুরো দিনে তার কিছু খাওয়াও হয়নি। মিসেস রাহা অনেক বলেও তাকে দিয়ে দরজা খুলতে পারেননি। তিনি খুবই চিন্তায় আছেন। এখন একমাত্র আশা ওনার স্বামী। নিহাদ বাড়ি ফিরতেই মিসেস রাহা ওনার কাছে ছুটে গেলেন। ওনাকে নাতাশার বিষয়ে সবটা বললেন। সব শুনে তিনিও নাতাশার রুমের সামনে চলে গেলেন। তারপর নাতাশার রুমের দরজায় নক করতে করতে বলে উঠলেন,

— নাতাশা দরজা খোলো। এই ছোট বিষয় নিয়ে না খেয়ে থাকার কোনো মানে হয় না। না খেয়ে থাকলে তোমারই ক্ষতি। তাই এসব না করে বেরিয়ে আসো।

— না। আমি এভাবেই থাকব। তুমি যতদিন না আমাদের সম্পর্কে রাজি হবে ততদিন আমি রুম থেকে বের হবো না। না খেয়ে যদি ম*রেও যাই তাও না।

— আচ্ছা তোমার যা ইচ্ছা করো। আমিও দেখব তুমি কতোক্ষণ এভাবে থাকতে পারো।

বলেই তিনি চলে গেলেন। মিসেস রাহা ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলেন। তিনি কি করবেন বুঝতে পারছেন না। তিনি এখানে দাঁড়িয়ে নাতাশাকে দরজা খোলার জন্য বলবেন নাকি ওনার স্বামীকে বোঝাবেন যেন উনি নাতাশার কথা মেনে নেয়। তিনি নাতাশার রুমের দরজার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে লাগলেন,

— এখানে আমারও দো*ষ আছে। এসবের পেছনে আমিও কোনো না কোনো ভাবে দায়ী। আমার জন্যই আজকে আমার মেয়েকে কষ্ট পেতে হচ্ছে। আমার বোঝা উচিত ছিল নাতাশার বাবা নিহরাফকে কখনোই মেনে নিবে না। এখন আমি নাতাশাকে দিয়ে কীভাবে দরজা খোলাবো। উফফ! আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

মিসেস রাহা এবার ওনার স্বামীর রুমে ছুটে গেলেন। যাতে ওনাকে রাজি করিয়ে নাতাশাকে বের করতে পারেন। মিসেস রাহা ওনাকে অনেকবার অনুরোধ করলেন। কিন্তু তিনি ওনার কথায় কান দিলেন না। তিনি বললেন যে সময় হলেই নাতাশা বের হয়ে আসবে। দেখতে দেখতে রাত নয়টা বেজে গেল। নাতাশা এখনো দরজা খুলে বের হয়নি। মিসেস রাহা আর কোনো উপায় না পেয়ে নিহরাফকে কল দিলেন। তিনি নিহরাফকে এখানের সব কথা খুলে বললেন আর এখানে এসে নাতাশাকে বের করার কথা বললেন।

নিহরাফকে বলার পরও তিনি কোনো ভাবেই শান্ত হতে পারছেন না। ওনার মনে অজানা ভয় ঢুকে আছে। এদিকে ঠিকমতো হাঁটতে ওনার বেশ কষ্ট হচ্ছে। মেয়ে দরজা না খোলায় সকাল থেকে মেয়ের পাশাপাশি ওনারও কিছুই খাওয়া হয়নি। তিনি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে নিহরাফের আসার অপেক্ষায় বসে আছেন। কেউই তো নাতাশাকে দিয়ে দরজা খোলাতে পারল না। এখন নিহরাফই ওনার শেষ আশা। নিহরাফ নাতাশার বাসায় আসতে আসতে সাড়ে নয়টার বেশি বেজে গেল। সে যখন এসেছিল তখন নাতাশার বাবা রুমে ছিলেন তাই ওকে দেখতে পাননি। নিহরাফ আসতেই মিসেস রাহা ওর কাছে গেলেন। ওকে নিয়ে নাতাশার রুমের সামনে এসে বললেন,

— নাতাশা সকাল থেকে দরজা খুলছে না। কিছু খায়ওনি। তুমি প্লিজ ওকে যেভাবেই হোক রুম থেকে বের করো। ও হয়তো তোমার কথা শুনবে।

— আচ্ছা আমি দেখছি।

তারপর নিহরাফ নাতাশার দরজায় নক করে তাকে দরজা খুলতে বলল। নিহরাফের কথা শুনে সে খুব খুশি হয়ে গেল। সে ভাবল হয়তো তার বাবা নিহরাফকে মেনে নিয়েছেন। সে সাথে সাথে দরজা খুলে বেরিয়ে এলো। নিহরাফ ওকে দেখে বলে উঠল,

— তুমি সারাদিন এভাবে কেন ছিলে? খাওনি কেন সারাদিন? যাও এখনই খেয়ে নেও। মামি আপনি খাবার নিয়ে আসেন। চলো তোমার রুমে।

এরপর নিহরাফ নাতাশাকে নিয়ে ওর রুমে গেল। মিসেস রাহা খাবার নিয়ে এসে ওকে খাইয়ে দিলেন। তারপর নিহরাফ যাওয়ার প্রস্তুতি নিল। যাওয়ার আগে সে নাতাশার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

— আমি এখন আসছি। অনেক রাত হয়ে গেছে। আর কখনো এমনটা করবে না। তাহলে কিন্তু আমি আর তোমার সাথে কথা বলব না।

— আচ্ছা আর করব।

— আচ্ছা আমি আসি। মামি আমি আসছি। কোনো সমস্যা হলে আপনি আমাকে বলতে পারেন।

বলেই সে ওর রুম থেকে বেরিয়ে গেল। রুম থেকে বের হতেই তার নাতাশার বাবার সাথে দেখা হলো।

চলবে,,,

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here