#অমানিশায়_সেই_তুমিই
#লেখায়_তেজস্মিতা_মর্তুজা
২৬.
বিয়েতে যেহেতু কিছু করা হয়নি, অতএব হেলাল সাহেব চেয়েছিলেন, মেঘালয়ার গর্ভবস্থায় আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত করে খাওয়াবেন সঙ্গে দোয়াও নেওয়া হবে মেঘালয়ার জন্য। ইরাজ অমত করেছে এতে। সে আপাতত কোনরকম ঝামেলা চায়না। সবকিছু সুষ্ঠভাবে মিটে গেলে বহুত অনুষ্ঠান করা যাবে; এটাই তার মতামত এবং সিদ্ধান্ত।
হেলাল সাহেব রোজই এসে মেয়েকে দেখে যান। তার পায়ে সুতো নেই। আজও এসেছিলেন, ঘন্টাখানেকের মতো মেঘালয়ার সঙ্গে কাটিয়ে চলে গেলেন নিজের কাজের ব্যস্ততায়। তার পর-পরই হঠাৎ-ই মেঘালয়া উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। কোনকিছুতেই শান্তি লাগছে না। আশেপাশের সবকিছু অসহ্য লাগছে। পাঁচ-মাস চলছে তার গর্ভাবস্থার। খুব বেশি না হলেও পেট বুঝা যায় এখন তার। পায়ের ফোলা কমছে না। ওভাবেই মনমরা হয়ে বসে রইল কিছুক্ষণ। খানিকবাদে হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকল ইরাজ।
মেঘালয়ার সামনে এসে দাঁড়িয়ে দ্রুত কপাল, গলায় হাত রাখল। এলোমেলো চোখে দেখে নিল মেঘালয়াকে। ব্যস্ত হাতে বিছানার ওপর থেকে ওড়নাটা তুলে মেঘালয়ার গায়ে জড়িয়ে দেয় ভালোভাবে। মাথায় ওড়না তুলে দিয়ে, ওড়না ভেদ করে আসা এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে ওড়নার ভেতরে রেখে আবারও ওড়নাটা ভালোভাবে টেনে দিল। শান্ত নজরে তাকাল একবার মেঘালয়ার দিকে। মেঘালয়ার মুখটা ভার। এটা অবশ্য আজকাল সবসময়ের পরিচিত দৃশ্য। ইরাজকে কেন জানি সহ্য করতে পারে না মেঘালয়া। কেন তা অবশ্য জানে না ঠিকঠাক, ইরাজ! সর্বক্ষণ ওমন মুখটা ভার করেই থাকে মেঘালয়া। বিশেষ করে ইরাজ কাছে আসলে। মেঘালয়ার ভারী মুখটা থেকে চোখ ফিরিয়ে নিচে তাকাল ইরাজ। বলল, “ডাক্তার এসেছে, প্রেশার চেইক করবে।ʼʼ
বেরিয়ে গেল কথাটা বলেই। মেঘালয়া এবার তাকায় ইরাজের দিকে। সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার মাথা নত করে বসল। ইরাজ যা-ই করে, সবটাই তার সন্তানের জন্য নিশ্চয়ই! এটা বোঝে মেঘালয়া। ইরাজের এত চিন্তা, ছটফটানি সবটাই নিজের সন্তানকে কেন্দ্র করে!
ডাক্তার বলতে, বড়ো কোন বিশেষ ডিগ্রিধারী ডাক্তার নয়। প্রাথমিক চিকিৎসা জ্ঞান সম্পন্ন ডাক্তারকে এনেছে ইরাজ, প্রেশার চেইক করার জন্য। মেঘালয়া ভ্রু কুঞ্চন করল, তার তো প্রেশার নেই! ডাক্তার তার হাতের কব্জির কাছে মৃদূ চেপে ধরে প্রথমে পালস-রেট অনুমান করল। পরে প্রেশার মেপে স্ফিগমেনোমিটার নামিয়ে, স্টেথোস্কোপ লাগাল মেঘালয়ার বুকের ওপরে। সেটাও নামিয়ে নীরবে বের হয়ে গেল রুম থেকে। পেছনে যায় ইরাজ। মেঘালয়া চেয়ে রইল সেদিকে।
কিছুক্ষণ বাদে ইরাজ রুমে আসে। বিক্ষিপ্ত লাগছে দেখতে। মেঘালয়া সে-সবে তোয়াক্কা না করে সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়, “কী হয়েছে? ব্লা ড-প্রশার হাই? কী লুকোচ্ছেন?ʼʼ
“কি লুকোবো? চল ডাক্তারের কাছে যাব।ʼʼ
“আমার কী হয়েছে, সেটা আমি শুনব না?ʼʼ
ইরাজ অজ্ঞাত কারনেই জ্বলে উঠল যেন ধপ করে। হাতে থাকা ফোনটা সজোরে ছুঁড়ে মারল মেঝেতে। মাথার দু-পাশের চুল টেনে ধরল। জোরে জোরে শ্বাস নিল কিছুক্ষণ। মেঘালয়া বিভ্রান্ত চোখে তাকিয়ে রয় নাম না জানা কারনে হুটহাট উত্তেজিত হয়ে পড়া ইরাজের দিকে। কী থেকে কী হয়— আজকাল দুজনেই বড্ড উত্তেজিত থাকে সবসময়। তবে ইরাজ যে ছটফটানির মাঝে আছে, এটা চোখে গাঁথার মতো। কিছুটা সময় নিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে গিয়ে সোফায় বসল ইরাজ। শরীরের ভর ছেড়ে দিয়ে গা আওলে বসে পরিশ্রান্ত শ্বাস ফেলল কয়েকটা। আগুন নিভে যাওয়ার পর যেমন বাতাসের দমকায় মৃদূ প্রজ্জ্বলিত-নিভু আকারে তাপ ছড়ায়, ইরাজের গলাটা তেমন নিভু আগুনের মতো শান্ত-অটল শুনাল, “চল বের হই।ʼʼ
—
মৃদূমন্দ এসির হাওয়ার মাঝেও ইরাজকে দেখতে অশান্ত, পরিশ্রান্ত লাগছে। মুখটা শুকনো, চোখে-মুখে কাতরতা। মাথাটা হালকা ঝুঁকিয়ে বসে আছে। তাকে কিছুক্ষণ পরখ করে দেখলেন ড. শারমিন আরা। দুষ্টু, ছন্নছাড়া, বেপরোয়া এই ছেলেটা কেমন দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন স্বামী ও অনাগত সন্তানের উদ্বিগ্ন বাবা হয়ে উঠেছে! পুরুষ বোধহয় এমনই! যারা একসময় সবকিছুর বাঁধন ছেড়ে, প্রাবহমান স্রোতের মতন তাণ্ডব ছড়িয়ে বেড়ায়, তো সেই পুরুষই সময়ের ব্যবধানে হয়ে ওঠে এক নারীর অবলম্বন, সবটুকু ভরসার জায়গা, কচি হাতগুলোর বেড়ে ওঠার কারিগর। থেমে যায় পুরুষ, রাস্তা বদলে ভিন্ন ধরণে পথ চলতে শুরু করে আপনচিত্তেই।
কিছুক্ষণ ওভাবেই বিবর্ণ ইরাজকে অবলোকন করে, শান্ত স্বরে বললেন, “তুমি এভাবে ডিস্ট্র্যাক্ট হয়ে পড়লে চলবে কী! যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে, সেটার কারন হবে— তোমার এই মনোবলের অভাব, রাজ!ʼʼ
ইরাজ অসভ্যের মতো বলে ওঠে, “আপনি এতদিনে কী এমন করেছেন, ম্যাম! যাতে আমি মনোবল পাব বা শান্ত, নিশ্চিন্ত থাকব? দিন-দিন কনডিশন খারাপ হচ্ছে। তার ওপর নাকি কোন ওষুধ দেওয়া যাবে না। কী করছেন, কী করতে চাইছেন আপনি? যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যায় না? কী এমন হয়েছে, পরিকল্পনা কী আপনার?ʼʼ
কথাগুলো বলেই উত্তেজিত শ্বাস ফেলল ইরাজ। ঘাঁড় ঝাঁকাল কয়েকবার। নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করল। শারমিন আরা বললেন, “মূর্খের মতো কথা বলছো তুমি। উত্তেজনা কখনও কোন সমস্যার সমাধান নয়, শিক্ষিত ছেলে তুমি। অথচ এ অবস্থায় নিজের বিচক্ষনতা হারিয়ে বসেছ। এখন সবচেয়ে জরুরী তোমার নিজেকে সামাল দেওয়া। কী করতে বলছ তুমি আমায়, বলো?ʼʼ
ইরাজ করুণ চোখে তাকায়। হঠাৎ-ই ঠান্ডা জলের মতো অভিব্যাক্তিতে প্রায় অনুরোধ করে বলে ওঠে, “ম্যাম! কোনভাবে ওষুধ খাইয়ে বা অন্য কোন উপায় নেই ব্লা ড- প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখার? ম্যাম, আমার বাচ্চা..
“রিল্যাক্স রাজ! শোনো আমার কথা। তুমি যতটা সহজভাবে ভাবছ, তা কেবলই উত্তেজনার বশে। সেভাবে আমি ভাবতে পারি না। আমাকে ছোট্ট একটা সিদ্ধান্ত নিতেও বহুদিক বিবেচনা করতে হবে। গর্ভাবস্থায় সব-ধরণের প্রেশার কন্ট্রোল মেডিসিন সেবন করার নয়। এতে বরং হিতে বিপরীত হবে। যে আশঙ্কা আমি করছি, তা আরও নিশ্চিত হবে। আমি আমার মতো যথাসাধ্য চেষ্টা করব। মেঘালয়ার এই কন্ডিশনটাকে বলা হয়— জেসটেশনাল হাইপারটেনশন। এই ঘটনা ঘটে— পরিবারে কারও এমনটা থাকলে বা পঁচিশ বছরের কম বয়সে গর্ভধারণে এমন হয়ে থাকে। আর তাছাড়া প্রথম গর্ভধারণে ব্লা ড-প্রেশারে গড়মিল প্রায় নারীরই দেখা যায়। তবে ঝুঁকি কমানো যায়, রাজ! বি পজেটিভ।ʼʼ
ইরাজ ব্যাকুল হয়ে উঠল, “সকলেই তো সন্তান জন্ম দিচ্ছে। তাহলে মেঘেরই কেন এমন হচ্ছে, ম্যাম!ʼʼ
শারমিন আরা মৃদূ হাসলেন। পূর্নদৃষ্টি মেলে তাকালেন আকুল হয়ে চেয়ে থাকা ইরাজের দিকে। ইরাজকে সে আগেও বহুবার দেখেছে। পূর্ব-পরিচিত ইরাজ ছিল বেপরোয়া,দাম্ভিক, আর বাঁকানো হাড়ে তৈরী। অথচ এই ইরাজকে তার সাথে কিছুদিন মেলাতে পারেন না তিনি। অশান্ত ইরাজকে আশ্বস্ত করতে শান্ত স্বরে বললেন, “রাজ! তোমার ক্ষিপ্রতা জায়েজ! বাবা তো তুমি! কিন্ত কী বলো তো! সবকিছুর ওপরে লাঠি ঘুরছে সৃষ্টিকর্তার— এটা অস্বীকার করতে পারবে? আমি ডাক্তার; মানছি, তবে তিনি যদি আমার চিকিৎসায় শেফা না দেন তবে আমি কী করে তকদিরে পরিবর্তন আনতে পারি? তুমি তো অবুঝ নও, রাজ! আল্লাহর ফয়সালা এবং আমার চেষ্টা; হতে পারে ভালো কিছুই হলো। ভরসা রাখো।ʼʼ
—
সম্প্রতি শরীরের অবনতি চোখে পড়ার মতো মেঘালয়ার। পা আরও ফুলে উঠেছে, সঙ্গে মাথা ব্যথার তীব্রতা সময়ের সঙ্গে সমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে যেন! রাত এগারোটার মতো। ইরাজ মেঘালয়াকে খাইয়ে নিজে খেতে বসেছে।মেঘালয়ার পা মেলে দিয়ে বসা বিছানার ওপরে। ইরাজ খেতে খেতে হঠাৎ-ই জিজ্ঞেস করল, “মেঘ! ঘুরতে যাবি?ʼʼ
এমন একটা সময় মেঘালয়া এ কথা শুনে অবাক হলো। এটা অবশ্য ইরাজের পুরোনো অভ্যাস— রাত করে রাস্তায় বিনা গন্তব্যে হাঁটতে বেরোনো। আগেও হল থেকে বাড়ি ফিরলে রাতে এভাবে হাঁটতে হাঁটতে কখনও কখনও মেঘালয়াদের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হতো। হাতে থাকত মেঘালয়ার পছন্দের কোন খাবার অথবা মেয়েদের কিছু ব্যবহার্য সামগ্রী। হেলাল সাহবে খুব খুশি হতেন অবশ্য ইরাজের এমন অদ্ভুত সময়ে অদ্ভুত আগমনে। সকলেরই জানা, স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ইরাজ কমই করে। তাই তার এমন রাতবিরাত মেহমান হয়ে আগমন স্বাভাবিক এবং সারপ্রাইজিং বটে। আহ্লাদি মেঘালয়া ইরাজের সঙ্গে ঘুরতে যেতে বায়না করত। তবে আব্বুর কাছে, ইরাজের কাছে বলার সাহস ছিল না মোটেই। হেলাল সাহেব বললেও ইরাজ নিয়ে যেত না। কখনও কখনও মেঘালয়াকে ধমকে জিজ্ঞেস করত, “কেন এ-সময় ঘুরতে যেতে হবে? কিছু লাগলে বল, এনে দিয়ে যাচ্ছি।ʼʼ
আবার কখনও কখনও ধমকাতে ধমকাতে নিয়ে গিয়ে ফুসকা, চটপটি কিছু কিনে হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাড়ি পৌঁছে দিত। নিজের সঙ্গে মেঘালয়াকে কখনোই ইরাজ একাকী রাখতে চায়নি। এমনটা কেন, তা জানে না কেউ-ই। জানে ওই ত্যাড়া ইরাজ। সে যেখানে মেঘালয়াকে সকল বিপদ ও অনিষ্টর হাত থেকে জোরপূর্বক হলেও বাঁচিয়ে রেখেছে, সেখানে ইরাজও তো মেঘালয়ার প্রেমে পড়েছিল, হতে পারত— ইরাজই মেঘালয়ার জন্য অপ্রস্তুত-বোধের কারন হয়ে উঠল কখনও। এছাড়াও, নিজের অনুভূতিকে কাবুকে রাখতেও, ইরাজের মেঘালয়ার সঙ্গে ঘেষতে আপত্তি ছিল।তার ধরণা ছিল, এভাবে অবাধে চলাফেরা করলে, সে আরও বেসামাল হয়ে যাবে। পরিশেষে, ইরাজের তো হাড় বাঁকা! সে যে সুষ্ঠ, স্বাভাবিক আচরণ ও চিন্তা করবে না; এটাই বরং স্বাভাবিক তার জন্য। মেঘালয়াকে দু মিনিটের মাঝে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে, নিজে রাত ধরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে শেষরাতে বাড়ি পৌঁছেছে।
আজ সেই ইরাজ মেঘালয়াকে সঙ্গে নিতে চাইছে। ঘুরতে যেতে চাইছে। ব্যাপারটা আজব এক অনুভূতি জাগায় মেঘালয়ার মাঝে। ঘাঁড় ঘুরিয়ে তাকায় সে ইরাজের দিকে। বুকটা ধুক করে ওঠে। দেখতে কেমন প্রাণহীন লাগছে সবসময় সাহেব বেশে চলাচল করা ইরাজকে। চোখ বসে গেছে, দেখেই বোঝা যাচ্ছে, বহুরাতের ঘুম-শূন্যতার সুবাদে এই হাল। জিজ্ঞেস করল, “হঠাৎ এ কথা কেন?ʼʼ
“তোকে নিয়ে একটু ঘুরতে যেতে ইচ্ছে হলো, আর কী!ʼʼ
ইরাজের মুখে আজ এমন একটা কথা এমন অদ্ভুত আবদারের সুরে মেঘালয়ার বুকের কোথাও একটা খালি খালি লাগল আচমকা। হাঁসফাঁস লাগল খুব। দ্রুত বলে উঠল, “কেন, খুব শীঘ্রই হারিয়ে যাবেন আপনি?ʼʼ
প্লেটের ওপর ইরাজের হাতটা থেমে যায় আচমকা। চোখ তুলে তাকায় মেঘালয়ার দিকে। চট করে ঠোঁট প্রসার করে মলিন হেসে উঠল ইরাজ। ওভাবেই বলল, “যে হারায় সে বলে হারায় না, মেঘ! হারিয়ে যাওয়ার পূর্বে খবর পাওয়া যায় না। খবর যা পাওয়া যায়, তা ঘটে না। খবর যতদিন পাওয়া যায় যতদিন, ততদিন কেউ হারায় না।ʼʼ
মেঘালয়া কেবল চেয়ে রইল ইরাজের সজল চোখদুটোর দিকে। সে মুহূর্তে ইরাজ ঝুঁকে বসে খানিকটা। মেঘালয়ার কেন জানি, আরও কিছুক্ষণ দেখতে ইচ্ছে হলো ইরাজের ভগ্ন-সিক্ত চোখদুটো। সে-ও একটু ঘাঁড় বাঁকিয়ে মাথা নিচু করল ইরাজের চোখদুটো দেখার লোভে। ইরাজ খাবার শেষ না করেই অনীহার সাথে হাতটা ধুয়ে ফেলে উঠে দাঁড়ায়। হেঁটে ড্রেসিং টেবিলের কাছে গিয়ে আস্তে করে ড্রয়ার খুলল। ভরা সিগারেটের প্যাকেট ও লাইটার হাতে তুলে নিয়ে বারান্দার দিকে পা বাড়ায়। মেঘালয়া তা দেখে মুখ-চোখ জড়িয়ে বলে উঠল, “আপনি আবার সিগারেট খেতে যাচ্ছেন? খাবেন না সিগারেট, শুনুন আমার কথা? আমি কিন্ত..
ইরাজের কানে আদৌ কথাগুলো গিয়েছে বলে মনে হলো না। সে আপন মনে মৃদূ হেলেদুলে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। মেঘালয়া মুখটা গম্ভীর করে বসে রয় ওভাবেই। ইরাজ খুব বেশি মানসিক কষ্টে না থাকলে রাতে ধূমপান করে না; তা অজানা নয় মেঘালয়ার। তাহলে কী হয়েছে ইরাজের? মনটা আবার বিষিয়ে উঠল মেঘালয়ার। ইরাজকে কিছু জিজ্ঞেস করলেও বলে না। প্রসঙ্গ এড়িয়ে যায়, অথচ সর্বক্ষণ চোখে-মুখে স্পষ্ট ব্যথা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে!
শেষরাতের দিকে মেঘালয়ার ঘুম ভেঙে যায়। ঘরে জ্বলে থাকা মৃদূ আলোতে এমনিতেই ঝাপসা লাগছে চোখ নাকি সে দেখছে ঝাপসা; তা ঠাহর করতে পারল না। জোরে জোরে শ্বাস নিতে শুরু করল। শ্বাসরোধ হয়ে আসছে যেন, আর বেশিক্ষণ এ শ্বাস-প্রশ্বাসের খেলা চলতে পারবেনা, থেমে যাবে বলে মনে হলো মেঘালয়ার। ধীরে-ধীরে চোখের সামনে অন্ধকার নামতে শুরু করল যেন। শ্বাসের গতি আরও বাড়ল মেঘালয়ার। তবুও যেন রোধ হয়ে আসছে নিঃশ্বাস। আরও খানিকটা বুক ফুলিয়ে শ্বাস নিতে চেষ্টা করে মেঘালয়া। হুড়মুড়িয়ে উঠে বসল ইরাজ। শ্বাসরোধ মেঘালয়ার হয়ে আসলেও, প্রাণটা যেন ইরাজের বেড়িয়ে যেতে নিয়েছিল– এভাবে ব্যাকুল হয়ে পড়ল মুহূর্তের মাঝে। মেঘালয়াকে ধরে দ্রুত বসায়। শুকনো কয়েকটা ঢোক গিলল কেবল, মুখে কিছু বলতে পারল না কিছুক্ষণ। ভাষা মেলাতে পারে না ইরাজ। চোখ-মুখ বিষ্ফোরিত তার। পর্বতের ন্যায় অটল ইরাজ যেন আজ এলোমেলো ঝরনার ন্যায় তলিয়ে যাচ্ছে, পাহাড়ের ঢালুতে। একহাতে মেঘালয়াকে ধরে হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে গিয়ে আপাতত টেবিল-ল্যাম্প জ্বালাল। তাতে মেঘালয়া যেন অসহ্য হয়ে উঠল আরও। হাত চোখের সম্মুখে রেখে আলোকে রুখতে চেষ্টা করল। মেঘালয়ার দিকে তাকাতেই ইরাজের হৃদস্পন্দন থেমে রইল কয়েকটা। অতঃপর দ্রিম-দ্রিম করে বাজতে থাকল আবার।
মেঘালয়ার নাক থেকে র ক্ত বয়ে ঠোঁট পার করে থুতনিতে এসে ঠেকেছে। মেঘালয়া কয়েকবার বমি করার লক্ষ্যে ‘ওয়াক’ এর মতো করে ওঠে। অতঃপর করেও ফেলল শেষে। এক-সময় পেট চেপে ধরে কেঁদে ওঠে। অসহ্য ব্যথায় কাতর হয়ে ছটফটানির মাত্রা বাড়ল ক্রমশ মেঘালয়ার। নাক দিয়ে র ক্ত পড়ছে, সঙ্গে চোখটা আরও ঝাপসা হয়ে এলো ধীরে-ধীরে।
চলবে..
[ কেউ বিরূপ মন্তব্য করবেন না🙂 ভুলভ্রান্তে ক্ষমা করবেন।]