#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_১৫
অনেকটা সময় রেস্ট করার পর তীরের পায়ের ব্যথাটা সর্ম্পূন ভাবে ভালো হলো। এখন সে চড়ুই পাখির মতো ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ করে ঘুরে বেড়াছে বিয়ে বাড়ির আনাছে কানাছে। আর এদিকে ইশান চোখ পাকিয়ে তীরের এসব নাচানাচি দেখে যাচ্ছে। ইশান ভেবে পাচ্ছে না একটু আগে যেই মেয়ে পায়ের ব্যথায় কাতরাছিলো আর এখন কিনা সেই মেয়ে নির্লজ্জর মতো এভাবে ডেং ডেং করছে।
তীর ইশাকে টেনে নিয়ে বিয়ে বাড়ির গেইটের সামনে আসে। গেইটটা খুব সুন্দর করে ডেকোরেশন করা হয়েছে। তীরের খুব ইচ্ছে করছে এখানে দাঁড়িয়ে ফটো তুলার জন্য। তাই ইশাকে টেনে নিয়ে আসা। তীর ইশার হাতে নিজের ফোনটা দিয়ে বলে।
–নে ছবি তোল তাড়াতাড়ি।
ইশা চারিপাশেটা চোখ বুলিয়ে দেখে কয়েকটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে আর সিগারেট খাচ্ছে। ইশা চাঁপা গলায় তীরকে বলে।
–এখানে ছবি তুলাটা ঠিক হবে না। চল ভেতরে চল।
–কিছু হবে না তুই এত কথা না বলে জলদি ছবি তুল।
বলেই তীর নানা রকম পোজ দেওয়া শুরু করে আর ইশা ছবি তুলছে। এমন সময় পাশে থাকা ছেলে গুলার মাঝে থেকে একজন উচ্চ স্বরে বলে উঠে।
–কি মামনি ছবি তুলচ্ছো। আসো আমাদের কোলে এসে বসে ছবি তুলো।
অন্য একজন ছেলে বলে।
–আমরা কিন্তু তোমার ওই হিরোর থেকে আরাম করে কোলে তুলবো। যাতে তোমার একটুও কষ্ট না হয় বুঝলে বেবি।
বলেই উচ্চ স্বরে হাসতে লাগলো। ইশা তীরের ডান হাত চেপে ধরে বলে।
–তীর ভেতরে চল এখানে আর থাকতে হবে না।
তীর আর ইশা চলে যেতে নিলে একটা ছেলে বলে।
–কি মামনি কোলে উঠবে না আমাদের।
তীর রাগী চোখে ছেলে গুলোর দিকে তাকায়। ইচ্ছে করছে সুঁই দিয়ে বেয়াদব গুলোর মুখ সেঁলাই করে দিতে।
–আরে আরে দেখ দেখ মামনি রেগে আগুন হয়ে গেছে।
তীর আর ইশা ভেতরে চলে যায়। ছেলেগুলার মাঝে একটা ছেলে বলে।
–ভাই মালটা কিন্তু সেই রে একে বারে হট।
আড়াল থেকে রক্তচক্ষু নিয়ে ইশান সবগুলা দেখেছে এতক্ষন ছেলেগুলা কি কি বলেছে। ইচ্ছে করছে ছেলে গুলাকে মেরে মাটিতে পুঁতে দিতে কিন্তু এখন আপতত এই ইচ্ছেটা মাটিচাপা দিয়েছে ইশান। আগে ইহানের বিয়েটা হোক সুষ্ট সুন্দর ভাবে তারপর দেখে নিবে এই বেয়াদবগুলাকে। ইশান নিজের রাগটা কন্ট্রোল করে রাগী চোখে ছেলেগুলার দিকে তাকিয়ে এখান থেকে চলে যায়।
বাড়ির ভেতরে ডুকেই ইশা তীরের হাত চেপে ধরে বলে।
–দোস্ত ইশান ভাইয়া যদি জানতে পারে এই বিষয়টা তাহলে বিরাট জামেলা হয়ে যাবে।
–চুপ কর তো এমনেতেই আমার ভয় করছে। আমারেই ভুল হয়েছে বাইরে বের হওয়াটা।
–আমি তখনেই বলেছিলাম ওখান থেকে চলে আসার জন্য কিন্তু তর জন্য….
–উফফ চুপ করতো।
–দোয়া কর যাতে ভাইয়া এই বিষয়টা না জানতে পারে।
–ইশু রে! একটু ওয়াশরুমে দরকার রে আমার।
–কি? এমন একটা অবস্থাতে তর কিনা আগে বলেছি একটু কম করে খা কিন্তু তুই তো।
–উফ তর আজাইরা কথা বন্ধ কর তো। আমি এখন কি করবো বল প্রাকৃতিক কাজ ডাক দিয়েছে আমাকে আর তা আমি আগ্রাহ্য করি কি করে।
–হয়েছে বুঝতে পেরেছি। চল কেয়া ভাবির রুমে যাই।
–হুম।
_____
অন্য দিকে তীর আর ইশাকে খুজতে থাকে ইশান। ছেলেগুলাকে শিক্ষা দেওয়ার আগে তীর আর ইশাকে একটা শিক্ষা দিতে হবে না হলে এমন ঘটনাটা আবার ঘটবে। মেয়ে দুইটা ইদানিং একটু বেশিই উড়ঁছে তাই সময় থাকতেই ডানা ঝেঁটে দিতে হবে।
কিছুটা সময় খুজাখুজির পরেই ইশার দেখা মিলে নতুন বউয়ের পাশে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। কিন্তু আশেপাশে তীরকে দেখা যাচ্ছে না। মেয়েটা গেলো কোথায় আবার? এক জায়গায় স্থির হয়ে বসে না কেন এই মেয়ে? ইশান ইশার কাছে গিয়ে ইশাকে ডাক দেয়।
–ইশা এদিকে আয়।
ইশাও বাধ্য মেয়ের মতো ইশানের সামনে এসে দাড়ায়।
–কি হয়েছে ভাইয়া?
–তীর কোথায়?
–ও একটু ওয়াশরুমে গেছে।
ইশার মুখ থেকে এমন কথা শুনে ইশান রেগে বলে উঠে।
–তাহলে তুই এখানে বসে আছিস কেন? ওর সাথে গেলি না কেন? অচেনা জায়গাতে ওকে একা ছেড়ে দিলি।
–না মানে ভাইয়া আসলে একটু পর তো ভাইয়ার বিয়ে পড়ানো হবে তাই আর কি যায় নি। আর আমি যেতে চেয়েছিলাম তখনেই ভাবিকে নিয়ে আসা হয় তো তাই আর ওর সাথে যাওয়া হয় নি।
–বিয়ে বাড়িতে এসে খুব উড়ছিস না তরা দুজন।
–না ভাইয়া আসলে।
–চুপ আর একটা কথাও বলবি না। চুপচাপ গিয়ে বস ওখানে।
ইশা চুপচাপ গিয়ে কেয়া’র পাশে গিয়ে বসে পড়ে।
_________
এদিকে তীর তালুকতার বাড়িতে ডুকে দেখে বাড়ি পুরাই খালি। কেউ কেউ বিয়ের আসরে উপস্থিত আর কেউ বা খাওয়া দাওয়াতে ব্যস্ত আছে। তবে কিছু মানুষ আছে বাড়িতে হাতেগুনা। তীরের কিছুটা ভয় লাগছে বাড়িতে ডুকতে কিন্তু প্রাকৃতিক ডাকে তাকে এখন সাড়া দিতে হবে না হলে ইজ্জত কখন আবার প্লাস্টিক হয়ে যায় বলা যায় না। কিন্তু তীরের এখন মনে হচ্ছে একা আসাটাই ভুল হয়েছে ইশাকে নিয়ে আসা দরকার ছিলো। কিন্তু এখন আবার ইশাকে গিয়ে নিয়ে আসাও সম্ভব না। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়ে ভয়ে ভয়ে বাড়িতে ডুকে সোজা কেয়া’র রুমে ডুকে ওয়াশরুমে চলে যায়।
পাচঁ মিনিট পর ওয়াশরুম থেকে বের হয় তীর। বের হওয়ার সাথে সাথেই লাইট নিভে যায়। ভয়ে তীরের আত্মা কেঁপে উঠে। হঠাৎ করে লাইটের আবার কি হলো এতক্ষন তো ঠিকেই ছিলো আর বাইরেও তো লাইট জ্বলছে। হঠাৎই তীরের মনে হলো এই রুমে ও ছাড়া আরও কেউ একজন আছে যে কিনা ওর আশে পাশে দাড়িয়ে আছে। ঘরের মৃদু আলোতে একজন পুরুষের অবয়ব চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ভয়ে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে তীরের এটা ভেবে বাইরের ছেলেগুলার মাঝে কোনো ছেলে নয়তো আবার। তীর কাপা কাপা গলায় বলে।
–কে… কে… কে আছেন এখানে?
কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ পায় না তীর। ভয়টা যেন আরও বেড়ে যায় তীরের। নিজের প্রতি এখন নিজের খুব রাগ লাগছে কেন এখানে একা আসতে গেলো। তীর অন্ধকারের মাঝে হাতরে হাতরে বিছানার কাছে যায়। বিছানার কাছে গিয়ে নিজের ফোনটা খুজতে লাগে কিন্তু না ফোনের কোনো অস্তিত্ব নেই। কিন্তু তীরের স্পষ্ট মনে আছে ওয়াশরুমে রুমে ডুকার আগে বিছানাতে ফোনটা ছুড়েঁ ফেলেছিলো। তীরের গলা শুকিয়ে আসছে আজানা ভয়ে এখন তার কোনো সর্বনাশ হয়ে যাবে না তো এই বাড়িতে এসে। না তীর আর এসব ভাবতে পারছে মাথাটা ভার হয়ে আসছে। সময় থাকতে এই ঘর থেকে বের হতে হবে না হলে বড়ো কোনো সর্বনাশ হয়ে যেতে পারে।
তীর যেই পালাতে যাবে ওমনি কেউ ওর হাত ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলে। তীর ভয়ে চিৎকার করতে নিলেই শক্তপোক্ত পুরুষালি একটা হাত ওর মুখ চেপে ধরে আর একটা হাত দিয়ে ওর কোমড় চেপে ধরে যাতে তীর পালাতে না পারে। তীর মুচরামুচরি করে ছাড়া পাওয়ার জন্য কিন্তু লোকটা আরও শক্ত করে ধরছে। হঠাৎ করেই তীর অনুভব করে তার কানের কাছে লোকটা মুখ নিয়ে চাপা কন্ঠে আর ফিসফিসিয়ে বলে।
–একদম চিৎকার করতে যাবে না তাতে কিন্তু তোমার সর্বাঙ্গেই সবাই কলঙ্গ লাগিয়ে দিবে আমার গায়ে কিন্তু লাগবে না। তাই চুপচাপ থাকো আমি চাই না তোমার দিকে কেউ বাজে আঙ্গুল তুলুক। আমি তোমার মুখ থেকে হাত সারাছি একদম চিৎকার করবে না কিন্তু।
তীর মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে ও চিৎকার করবে না। লোকটাও সাথে সাথে তীরের মুখের উপর থেকে হাত সরিয়ে নেয়। তীর জোরে শ্বাস নিয়ে তটস্থ গলায় বলে।
–কে আপনি?
লোকটা আবারও সেই চাপা গলায় আর ফিসফিসিয়ে বলে।
–তোমার প্রেমে মাতোয়ারা একজন পাগলা প্রেমিক।
–মানে।
–মানেটা সময় হলে ঠিক জানবে।
বলেই আরও ঘনিষ্ঠ হলো তীরের। তীর নিজের শরীরটা পিছনের দিকে হেলিয়ে দিলো। লোকটা কে হতে পারে ভেবে পাচ্ছে না ও? আবার বলছে পাগলা প্রেমিক কন্ঠস্বর কেমন চিনাচিনা লাগছে তীরের কিন্তু এত চাপা স্বরে আর ফিসফিসিয়ে কথা বলছে যে বুঝতেই পারছে না ঠিকমতো। কিন্তু লোকটার গা থেকে একটা সুগন্ধ আসছে যেটা তীরের খুব চেনা চেনা লাগছে কোথায় যেন এই ঘ্রান সে নিয়েছে কিন্তু কোথায় নিয়েছে তা মনে করতে পারছে না। তীরের ধ্যান ভাঙ্গে নিজের পিঠের উপর কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে। লোকটা আবারও সেই একই ভঙ্গিতে বলে।
–এভাবে শরীর হেলিয়ে দিলে পরে যাবে তো জান।
তীরের সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠে এমন কথা শুনে বড় বড় চোখ করে তাকায় লোকটার দিকে কিন্তু দুঃখের বিষয়ে লোকটার মুখ দেখতে পারছে না। তীরের খুব ইচ্ছে লোকটার মুখ দেখতে কিন্তু লোকটা যে তাকে দেখানোর কোনো চান্সেই রাখে নি। লোকটা তীরের মনের কথা বুঝতে পেরে বলে উঠে।
–খুব দেখতে ইচ্ছে করছে না আমাকে। তুমি চাইলে আমাকে ছুঁয়ে দেখতে পারো আমি বারণ করবো না। বরং তোমার ওই নরম হাতের ছোঁয়া আমি গভীর ভাবে অনুভব করবো।
তীরের কি হলো ও নিজেও জানে না কাপাকাপা হাতে লোকটার ডান গাল ছুঁয়ে দেয়। ছুঁয়ে দিতেই তীর কেঁপে উঠে, শিরদাঁড়ায় অদ্ভুদ এক শিহরন বয়ে গেল। তীরের হাতের উপর লোকটাও তার হাত রাখল তীর চকিতে চমকে তাকায় কিন্তু কিছুই দেখতে পারলো না। তীর সাথে সাথে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে হাসঁফাস করতে লাগলো। লোকটাও তীরের এমন অবস্থা দেখে নিঃশব্দে হাসে। তীর কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই লোকটা তীরের কানে হাত দেয় তীর বুঝতে পারে ওর কানের দুল খুলছে লোকটা। লোকটার প্রত্যেকটা ছোঁয়াতে তীরকে বেসামাল করে তুলছে। লেহেঙ্গার কাপড় দু হাত দিয়ে ঘামছে ধরে। গলা উচিঁয়ে কথা বলতে চাইছে কিন্তু না গলা দিয়ে একটা রাও বের হচ্ছে না। তবে অনেক কষ্টে তীর কাপাকাপা গলায় বলে।
–কি.. কি… করছেন আপনি?
–হুসসসসস! কোনো কথা না।
তীর এতটুকু বুঝতে পারছে লোকটা তার কান থেকে তার ভারি ভারি কানের দুল গুলা খুলে ফেলেছে। এর কিছুক্ষন পরেই মনে হলো আবার কানে দুল পড়িয়ে দিচ্ছে। তীর এটা ভেবে পাচ্ছে দুল খুলার মানে কি আবার পড়িয়ে দেওয়ার মানে কি? লোকটা আবারও সেই আগের স্বরেই বলে।
–নাও পার্ফেক্ট।
তীর পিটপিট চোখে সামনে থাকা লোকটার দিকে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ করেই অনুভব করলো তার মুখে লোকটা ফু দিচ্ছে তীর অবেশেই চোখ বন্ধ করে নেয়। এই প্রথম কোনো পুরুষ তার এতটা কাছে এসেছে তাই নিজেকে কেমন যেন মাতাল মাতাল মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন অতল সাগরে ডুবে যাচ্ছে যেই সাগর থেকে উঠতে খুব কষ্ট হবে আজকে ওর। লোকটা ওর কানের কাছে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে।
–চোখ বন্ধ করে রাখবে একদম খুলবে না কিন্তু।
তীর লোকটার কথামতোই চোখ বন্ধ করে রাখলো। অনেকক্ষন হয়ে গেল লোকটার কোনো সাড়া শব্দ নেই। তীর আস্তে আস্তে নিজের চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে সারা ঘর আলোকিত। তীর চোখ দুটো বন্ধ করে নেয় আবার। এতক্ষন অন্ধকারে থেকে হঠাৎ করেই চোখে আলো পড়াতে চোখ দুটো আলো সইতে পারে নি। তীর চোখ দুটো কচলিয়ে আবার তাকায় কিন্তু না সামনে কেউ নেই। তীর সারা ঘরে ভালো করে চোখ বুলায় কিন্তু কারো কোনো অস্তিত্ব নেই। এতক্ষন কি তাহলে যা ঘটেছে সবটাই কি তীরের হেলোসিয়েশন ছিলো। তীর কিছু একটা ভেবে আয়নার সামনে দাড়ায়। দু কানের কাছ থেকে চুল সরিয়ে দেখে নতুন এক জোড়া কানের দুল তার কানে। তারমানে এতক্ষন যা ঘটেছে সবটাই বাস্তব কোনো হেলোসিয়েশন নয়।
#চলবে________
যারা গল্পে পড়েন তারা রেসপন্স করবেন প্লিজ না হলে বুঝবো কি করে কে কে গল্প পড়েন। আর ভুল হলে ক্ষমাসরুপ দেখবেন।