শতদলের_ভীরে #পর্ব_৭ #মুসফিরাত_জান্নাত

0
349

#শতদলের_ভীরে
#পর্ব_৭
#মুসফিরাত_জান্নাত

দুপুর ঘনিয়ে আসে।ঐশীকে সাজানোতে ব্যস্ত সিন্থিয়া সহ সাদাতের কয়েকটা কাজিন।আজকের সাজটা একটু হালকা গোছের হয়।শাড়ী, গহনা মেকআপের কমতি না থাকলেও হালকা সাজে বেশ ফুরফুরে লাগে ঐশীর।ওদের সাথে সেই তখন থেকে বাঁচালের মতো বকবক করে সে।বিষয়টা অপছন্দ হয় রাবেয়ার।মেয়েটাকে বেহায়া ছাড়া অন্য কোনো উপাধি দিতে পারে না।রুষ্ট হয়ে সে বলে,

“এ কেমন আদব তোমার নতুন বউ?বিয়ের পর কেও এতো কথা বলে?একটু চুপ করে থাকতে পারো না?লোকজন কি ভাববে?”

একটুও অবাক হয় না ঐশী।সকালেই সে বুঝে গিয়েছে তার মামী শাশুড়ী কি জিনিস।তবে সেও বা কম কিসে?তার মামী তো আর জানে না মুখের জোর দিয়ে তাদের বাঘের মতো ছেলেকেই সে কাবু করে ফেলেছে,সেখানে রাবেয়াকে জব্দ করা তো ঐশীর কাছে ওয়ান টুর ব্যাপার।হাসি থামিয়ে একটু অবাক হওয়ার ভাণ ধরে ঐশী।শাণিত কন্ঠে বলে,

“লোকজন কি ভাববে তা দিয়ে কি হবে মামী?আমি কমফোর্ট ফিল করছি কিনা এইটা মেইন ব্যাপার।”

“তাই বলে এমন বেহায়াপনা?”

“বেয়াহাপনার কি দেখলেন মামি?আমি কি পেট পিঠ বের করে ঘুরছি নাকি?”

“চরম বেয়াদব তো তুমি!মুখে মুখে তর্ক করো।নতুন বউ বলেও তো একটু চুপ থাকা উচিত নাকি?নতুন বউদের চুপ থাকতে হয়।এতোটুকু ম্যানারও কি শেখোনি?”

“আগে যদি জানতাম নতুন বউদের চুপ থাকাটা ম্যানার।তাহলে পাশের বাড়ির সুমির কাছে পঁচিশ টাকা দিয়া আমার সব কথা বিক্রি করে দিয়ে আসতাম।সমস্যা নেই,এরপর বাড়ি গেলে বিক্রি করে দিয়ে আসব।তখন আর মুখ চলবে না।”

আশ্চর্য হয় রাবেয়া।মুখ টিপে হাসে উপস্থিত সকলে।ঐশীকে বেশ মনে ধরেছে তাদের।সিন্থিয়া আরও একটু মশকরা করে বলে,

“তাই বলে পঁচিশ টাকায় বিক্রি করবে ভাবি?আর একটু বেশি টাকা নিলে হয় না?”

“কি আর করবো বইন।যেখানে শশুর বাড়ির লোকের কাছেই আমার কথার দাম নাই।সেখানে পরেরা আর কতো দাম দিয়ে কিনবে বলো?”

আরও একবার হাসে সকলে।রাগে ফোঁসফোঁস করে রাবেয়া।তিক্ত গলায় বলে,

“সাহের বানু এ কেমন মেয়ে নিয়ে আসছে।না আছে রুপ, না আছে গুন।আমাদের সাদাত ফার্স্ট ক্লাস ছেলে।সে এর চেয়ে অনেক বেটার মেয়ে ডিজার্ভ করে।কিন্তু কপালে জুটলো কি!শেষমেশ সাদাতের চেয়ে অসুন্দর মেয়ে নিয়ে আসলো।”

রাগের বসে রাবেয়া কি বলছে সে নিজেও জানে না। ঐশীর সৌন্দর্যে কোনো কমতি নেই।তবুও বোকার মতো মেয়েটির রুপবিচারে বসেছে।স্মিত হাসে ঐশী।

“সেটা তো আপনাদের ব্যর্থতা মামি।আমার চেয়ে বেটার কাওকে আপনাদের ছেলের জন্য পান নাই বলেই তো আমাকে বিয়ে করেছে।আমার চেয়ে বেটার মেয়ে পেলে কি আর আমাকে বিয়ে করতো নাকি?”

প্রতিবাদ করে রাবেয়া।

“না পাই নাই।আমার ভাগনির কথা বলছিলাম।কতো নম্র,ভদ্র, সুন্দর মেয়ে।শিক্ষারও অভাব নাই।একমাত্র মেয়ে ছিলো।যা পেত সব সাদাতের হতো।”

“তা বিয়ে করে নাই নাকি?কি আর করবেন বলেন?আপনাদের ছেলেকে ফার্স্ট ক্লাস হিসেবে গড়ে তুললেও তার রুচিতে সমস্যা আছে।এইজন্য আপনার সুশ্রী ভাগনীকে রিজেক্ট করে আমাকে বিয়ে করেছে।”

রাগে, অপমানে সারা শরীর রি রি করে রাবেয়ার।ঐশীকে জব্দ করার লাস্ট হাতিয়ার হিসেবে বলে,

“বাড়ি থেকে কি খালি কথার ঝুড়িই এনেছো?নাকি অন্য কিছুও দিয়েছে তোমার বাবা মা।সোনার গহনা যে কয়েকটা পড়ছো সব তো এই বাড়িরই দেওয়া।মেয়েকে সাজানোর জন্য কিছু দেয় নাই তোমাকে?”

“জ্বী, দিয়েছে।তাদের তীল তীল করে গড়ে তোলে চোখের মনিটাকেই দিয়ে দিয়েছে।মনি তো এমনি জ্বল জ্বল করে।তাকে সাজাতে আর কি দিবে বলেন?”

উপহাস্যের হাসি দেয় রাবেয়া।এই একমাত্র কথায় সে যেন ঐশীকে নিচু করতে পেরেছে।নিজের বাবার বাড়ির প্রশংসা জুরে দেয় সে।

“অহ! কিছু দেয় নাই তাহলে।এইজন্য কথা দিয়ে ঢেকে রাখতে চাচ্ছো।মন খারাপ করো না।সবার কপালে কি আর সব জোটে!জানো আমার বিয়ের সময় আব্বা কতো কি দিয়েছে।অতো জিনিস চোখেও দেখো নাই কোনোদিন।আমার সারা গা স্বর্ন দিয়ে সাজানোর পাশাপাশি ঘরের সব ফার্নিচার দিয়েছিলো আব্বা।আরও কতো কি যে দিয়েছিলো!তা বলে শেষ করা যাবে না।”

“তাহলে বোঝেন,আপনি কি চিজ।আপনাকে চালানোর জন্য আপনার আব্বার কতো কি দেওয়া লাগছে।”

গুম গুম করে হেসে ওঠে পুরো ঘরে।অপমানে থমথমে চেহারা নিয়ে প্রস্থান করে রাবেয়া।সে বুঝে যায় এই মেয়ের সাথে পেরে উঠবে না।

এসব দেখে বেশ খুশি হয় সাথী।ঐশীকে তার ভীষণ মনে ধরে।মনে মনে ঐশীর বুদ্ধির অসংখ্য তারিফ করে সে।সঠিক সময়ে সঠিক জবাব দেয় মেয়েটি।তার বিয়ের সময়ও অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে শশুর বাড়ি থেকে।ঐশীর মতো উচিত জবাব না জানায় মুখ বুঁজে সব সহ্য করতে হয়েছে।একা একা কেঁদে বালিশ ভিজিয়েছে অসংখ্য বার।ঐশীকে সান্ত্বনা দিতে সে বলে,

“তুমি কিছু মনে করো না ভাবি।মামী একটু এমনই।তার উপর ওনার ভাগনিকে না নিয়ে আসায় তোমার খুঁত ধরতে ব্যস্ত হয়েছে।ওসবে কান দিও না।তোমাকে আমাদের অনেক পছন্দ বিধাই কালই নিয়ে এসেছি।রিস্ক নেই নি,পাছে যদি কেও নিয়ে যেত।”

এক গাল হাসে ঐশী।তার ননদিনী দুইটা অসম্ভব ভালো।ছায়ার মতো আগলে রাখছে তাকে।একটু পরে আনোয়ার খাঁ এ বাড়ির চৌকাঠে পা রাখে। মেয়ের কাছে আসতেই জাপ্টে ধরে ঐশী।মাথায় হাত বুলায় পিতা।

“কেমন আছিস মা?”

চোখের কোন ভিজে যায় ঐশীর।ব্যকুল হয়ে বলে,

“ভালো থাকি কেমনে বলো?তোমাদের ছাড়া এক রাত এক আলোকবর্ষ সমান মনে হয়েছে।আমি আর থাকব না আব্বু।আমাকে নিয়ে চলো।”

“পা’গলী!এভাবে কেও কাঁদে?তোকে নিতেই তো এসেছি আমি।”

চোখ মোছে ঐশী।ঘরোয়া পরিবেশে বেশ সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয় বউভাতের আয়োজন।আনোয়ার খাঁ ঐশীকে নিতে এসেছে বললেও নিয়ে যেতে পারেন না।ভার্সিটিতে নতুন জয়েন করেছে সাদাত।তার মাঝে দ্বিতীয় দিন ছুটি নিতে হলো।আর ছুটি নেওয়া বেমানান দেখাবে বলে বিয়ের বাকি আনুষ্ঠানিকতা এখানেই থামিয়ে দেওয়া হয়।থেকে যায় নিজের বাড়ি।মেয়েকে সান্ত্বনা দিয়ে চলে যায় কনে পক্ষের সবাই।ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে ঐশী।বাড়ি ফেরার হাজার ইচ্ছে সত্বেও নিরুপায় সে।বিচ্ছেদ যন্ত্রণা হয়তো এমনই।হোক না সেটা বাবার বাড়ির।দহন তো একই রকম হচ্ছে।
_____
পরদিন সকাল।আত্মীয় স্বজন বিদায় নিয়ে বাড়ি ফাঁকা হয়ে গিয়েছে।সাহের বানু তড়িঘড়ি করে নাস্তা বানিয়েছেন।সাদাত ভার্সিটি যাবে জন্য।টেবিলে নাস্তা খেতে বসে ঐশীকে ডাকে সাহের বানু,

“আসো ঐশী।তুমিও খেয়ে নেও।খাওয়া শেষে রেডি হবে।”

বিষ্মিত হয় ঐশী।

“কিন্তু কেনো মা?”

“ভার্সিটিতে যাবে।”

ভার্সিটিতে যেতে অনিচ্ছা সত্বেও খেতে বসে ঐশী।শাশুড়ীর কথা ফেলতে পারে না।এদিকে সাদাত লেকচার দিবে সেই ক্লাস করাটাও তার জন্য অস্বস্তিকর।তবুও খেয়ে রেডি হয় সে।রাস্তায় এক সাথে যায় দু’জনে।ভার্সিটি থেকে পায়ে হেঁটে পাঁচ মিনিট আগে ঐশীকে নামিয়ে দেয় সাদাত।

“এখান থেকে বাকি রাস্তা হেঁটে যাবেন।টানা দুইদিন ক্লাস মিস দিয়েছেন।আজ থেকে প্রতিটা ক্লাসে যেন আপনাকে পাই।”

পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকে ঐশী।সাদাতের সাথে ভার্সিটিতে প্রবেশের ইচ্ছা তারও নেই।তবুও এভাবে নামিয়ে দেওয়ায় অপমান বোধ করে।মনে মনে বলে,

“বয়েই গিয়েছে আপনার আদেশ শোনার।আজকেও ক্লাস বাঙ্ক মারব আমি।হুহ।দেখি কি করতে পারেন।”

গটগট করে হেঁটে যায় ঐশী।একটু পরেই ফোনে সাদাতের মেসেজ।

“আজ আপনি ভুলেও ভার্সিটিতে আসবেন না ঐশী।বাড়ি ফিরে যান।”

বিষ্মিত ঐশী।একটু আগেই ক্লাস করার আদেশ দিয়ে,এখন নিজেই ফিরে যেতে বলছে।ভার্সিটিতে উল্টাপাল্টা কিছু হয় নি তো?পরিবেশ দেখে তো মা’রামা’রি লেগেছে বলেও মনে হয় না।কি হয়েছে আসলে?জানতে হবে তাকে।নিষেধাজ্ঞা সত্বেও পা বাড়ায় ঐশী।প্রবেশদ্বারে পৌঁছানের সাথেই খপ করে তার এক হাত আঁকড়ে ধরে কেও।পিলে চমকে ওঠে ঐশীর।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here