#শতদলের_ভীরে
#পর্ব_৯
#মুসফিরাত_জান্নাত
ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে ঐশীর।সব রাগ নিমিষেই মিলিয়ে যায়।তড়িৎ উঠে পড়ে সে।ভার্সিটি যাওয়া দরকার।গুটি গুটি পা ফেলে চলে যায় ওয়াশরুমে।
_______
সকালের নাস্তা না করেই ভার্সিটিতে আসে ঐশী।ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে জেবা ও তাসনিমকে কল করে বলে,
“আমি স্মৃতিসৌধের এদিকটায় আছি।তোরাও আয়।”
ওদের সম্মতি পেতেই কল কাটে ঐশী।মনে মনে কুটিল হাসে।আজ নিশ্চিত সাদাতের ক্লাস বাঙ্ক মারবে সে।গতদিন চালাকি করে সাদাত তাকে নিজের ক্লাসটাও করিয়ে নিয়েছে।কিন্তু আজ আর তা হতে দিবে না।শুরুর ক্লাসটাই সাদাতের ছিলো।ঐশীকে ভার্সিটিতে না পেয়ে ক্লাস পোস্টপোন্ড করে দেয় সাদাত।তা জানা নেই ঐশীর।যখন সে মনের আনন্দে মেতে আছে তখন জেবা ও তাসনিমকে দেখতে পায়।দুজনের চোখে হতাশার ছাপ।ওদের চেহারা দেখে অবাক হয় ঐশী।ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
“তোদের চেহারার এই হাল কেন দোস্ত?মনে হচ্ছে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় বয়ে গিয়েছে তোদের উপর দিয়ে।মুখটা এমন বাংলা পাঁচের মতো করে রেখেছিস।কি নিয়া এতো হতাশ?”
ঐশীর টানা প্রশ্নের জবাব দেয় তাসনিম,
“হতাশ হবো না?সাদাত স্যারের আজকের ক্লাসটা কতো গুরুত্বপূর্ণ ছিলো।অথচ কোনো কারণ ছাড়াই পোস্ট পন্ড করে দিলো।”
জেবাও সায় দেয়,
“হ।আমি তো সকালে ঠিকমতো নাস্তাও করি নাই এইজন্য।কাল থেকে ভার্সিটি বন্ধ।আর আজকের ক্লাস পোস্ট পন্ড।এটা কোনো কথা!”
ফ্যাল ফ্যাল করে একবার এর মুখে দিকে তো আরেকবার ওর মুখের দিকে তাকায় ঐশী।তার আশায় গুড়ের বালি পড়ে।সে ভেবেছিলো তাকে ক্লাসে না পেয়ে সাদাত রেগে যাবে।আর গতদিন চালাকি করে তাকে দিয়ে ক্লাস করানোকে উসুল করে ছাড়বে।তা আর হলো না।হতাশ সে নিজেও হয়।কি আর করা মন খারাপ করে হাঁটা দেয় সবাই।একটু দূরে বড় কৃষ্ণচুড়া গাছ।তার নিচে ঘাসের উপর বসে পড়ে তিনজনে।হটাৎ তাসনিম লক্ষ্য করে ওদের চেয়েও ঐশীকে বেশি হতাশ লাগছে।চিন্তিত হয় সে।ঐশী তো ক্লাস করা নিয়ে এতো সিরিয়াস না।তবে কি হয়েছে ওর?সোজাসাপটা জিজ্ঞেস করে সে,
“কোনো সমস্যা ঐশী?এমন উসখুস করছিস কেন?ক্লাস পোস্ট পন্ড হলে তো তোর ইদ লেগে যায়।তবে আজ কি হলো?”
তাসনিমের প্রশ্নের উত্তর কেড়ে নেয় জেবা।রসিকতা করে বলে,
“আরে এইটা বুঝিস না!জামাইয়ের ক্লাস পোস্ট পন্ড।ক্লাস করার উছিলায় যে টুকু দর্শন মিলতো, এখন আর তা পাবে না।এইজন্য মন খারাপ।”
ঠাস করে জেবার বাম বাহুতে চাপড় লাগায় ঐশী।
“সব সময় উল্টাপাল্টা চিন্তা।”
অপর হাতের তালু দিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত স্থানটাতে ডলা দেয় জেবা।আরেক ধাপ বদমাইশি বাড়িয়ে বলে,
“হ,তোমরা যখন উল্টাপাল্টা কারবার করো তাতে কিছু না।আমি বললেই যতো দোষ।”
হো হো করে হাসে সে।তাল মেলায় তাসনিম।প্রতিবাদ করে ঐশী,
“লেগপুল করছিস তো,কর।মনে রাখিস,এক মাঘে শীত যায় না।তোরাও একসময় বিয়ে করবি।তখন আমিও দেখে নেব।হুহ।”
আরও এক পশলা হাসে সবাই।নিজেকে সামলে নিয়ে তাসনিম বলে,
“আচ্ছা দোস্ত,বিয়ের পরের জীবনটা কেমন হয় রে?”
তাসনিমের সিরিয়াস ভঙ্গিমার প্রশ্নে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে ঐশী।মন ভারী করে বলে,
“বিয়ের আগে যদি চাঁদনী রাতে নদীর পাড়ে বসে জোছনা বিলাস করিস, তো বিয়ের পর কুল হারা নদীতে পরে ভাসবি।বিয়ের পূর্বে বাবা মা সহ পরিবারের সবার সাপোর্ট থাকে।আর বিয়ের পর চেনা মানুষগুলোই অচেনা হয়ে যায়। শশুর বাড়িতে দূর্ভাগ্যবশত স্বামী খারাপ হলে এ কুল ও পাবি না ও কুল ও পাবি না।সে হাতটা ছেড়ে দিলেই ম’রন।”
সন্দিগ্ধ হয় জেবা।
“এভাবে বলছিস কেন?কিছু হয়েছে?”
“অনেক কিছু হইছে দোস্ত।বিয়ের পর সব নতুন নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে।”
“বিষয়টা কেমন একটু খুলে বল।আমরাও অভিজ্ঞতা নেই।”
“এই ধর বিয়ের পরদিনই নিকট আত্মীয়রা তোকে জিজ্ঞেস করবে স্বামী কেমন?আরে ভাই এক রাতে জামাই কেমন একটা মেয়ে এইটা কেমনে বুঝবে বল?বিয়ের দুয়েক মাস তো সবাই ভালো আচরণই করবে।বছর খানেক গেলে তখন না বোঝা যাবে স্বামী,শশুর বাড়ির লোক কেমন।আচ্ছা ওরা কি বিয়ের পরদিন বিছানার এক্সপেরিয়েন্স কেমন ছিলো এইটা শুনতে চায়?”
একটা সিরিয়াস কথার মাঝেও ঐশীর এই আলাভোলা প্রশ্নটা শুনে ফিক করে হেসে দেয় দুজনে।জেবা সয়তানি করে বলে,
“হতেও পারে।তা তোদের বিছানার এক্সপেরিয়েন্স কেমন ছিলো দোস্ত?”
তাল মেলায় তাসনিমও।
“আমিও খুব আগ্রহী দোস্ত।একটু ডিটেইলস বল।”
লজ্জা পায় ঐশী।লজ্জা লুকাতে কপট রাগ দেখায় সে।
“ছিহঃ তোদের স্যারের সম্পর্কে এমন কিছু শুনতে চাইতে লজ্জা করলো না?”
পাশ থেকে জেবা বলে,
“আমরা নির্লজ্জ।হি হি।”
তাসনিম একটু টেনে বলে,
“আমাদের স্যার হলেও তোর জামাই।সেইদিক দিয়ে সে আমাদের দুলাভাই।শালী হিসেবে তো শুনতে চাইতেই পারি।”
তাসনিমের কথার চেইন টেনে জেবা বলে,
“চাইতে পারি কি?অবশ্যই শুনব।এইটা শোনা আমাদের বান্ধবীগত হক।”
কথার মাইরপ্যাচে আকষ্মিক সবকিছু গুলিয়ে বসে ঐশী।নিজের চিরচেনা স্বভাবে ফিরে আসে সে।ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,
“কি আর শুনবি বল?তেমন কিছু হলে তো শুনবি।ওসব কিছু হয় নি আমাদের।আর আজন্মেও হবে বলে মনে হয় না।বেটা তো টিউব লাইট।”
একদমে কথাগুলো বলে ঐশী।
“অ্যাঁ..।”
একত্রে মুখ হা করে দুইজন।
হটাৎ সেখানে আগমন হয় অন্য কারো।পুরুষালি গম্ভীর কণ্ঠে শুধায়,
“কি নিয়ে কথা হচ্ছে আপনাদের?”
ঘার ঘুরিয়ে সাদাতকে দেখে সবাই।বিষম খায় ঐশী।লোকটাকে এই অসময়েই আসতে হলো?
“তেমন কিছু না স্যার।আসি,আসসালামু আলাইকুম।”
একত্রে কথা গুলো বলে পাশ কাটিয়ে চলে যায় জেবা ও তাসনিম।বেকায়দায় পড়ে যায় ঐশী।হাঁসফাঁস শুরু করে দেয় সে।স্থির নয়নে তাকিয়ে থাকে সাদাত।ভয়ে আত্মা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায় মেয়েটির।শুকনো ঢোক গিলে বলে,
“কিছু বলবেন?”
সুক্ষ্ম নয়নে ঐশীকে দেখে সাদাত।দৃঢ় কন্ঠে শুধায়,
“সকালে না খেয়ে এসেছেন কেন?”
বিষ্মিত ঐশী মুখ তুলে তাকায়।তার উত্তরের তোয়াক্কা করে না সাদাত।এক হাত ধরে টেনে গাড়িতে নিয়ে বসায়।কিছু সময় ড্রাইভ করে নিয়ে যায় নিকটস্থ রেস্টুরেন্টে।আকষ্মিক ঘটনায় বিহ্বল ঐশী।এক দৃষ্টিতে সাদাতের দিকে তাকিয়ে থাকে সে।তার দিকে মেন্যু কার্ড এগিয়ে দিয়ে সাদাত বলে,
“চোখের ক্ষুধা মিটে থাকলে পেটের ক্ষুধা মিটাতে কি খাবেন বলেন?
হুস ফিরে ঐশীর।নিজেকে সামলে নেয় দ্রুত।পছন্দ মতো খাবার অর্ডার করে ব্রেকফাস্ট সেড়ে নেয়।সাদাতও হালকা কিছু অর্ডার করে খেয়ে নেয়।বিল মিটিয়ে গাড়িতে বসে ঐশীকে কড়া শাসন করে সাদাত।
” আর কখনো এভাবে না খেয়ে বের হবেন না।আগে শারীরিক সুস্থতা।তার পরে অন্য সব কিছু।আপনি যদি ভালোই না থাকেন তবে ভার্সিটি,ক্লাস, বন্ধু -বান্ধবী এসব দিয়ে কি হবে?তাই নিজের প্রয়োজন খাতিরে নিয়ম মতো চলবেন।বিশেষত ঘুম,গোছল আর খাওয়া।এসবে হেরফের করবেন না।”
মাথা দুলিয়ে রাজি হয় ঐশী।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে লোকটির পাণে।কতো কেয়ারিং লোকটা।শুধুমাত্র সে খেয়ে আসে নি বলে ক্লাস পোস্ট পন্ড করে তাকে খাওয়াতে নিয়ে এসেছে।এখন কতো সুন্দর করে বুঝিয়ে যাচ্ছে তার ভালো থাকার নিয়মাবলি।মুগ্ধ হয়ে পুরুষ কায়াটির দিকে তাকিয়ে থাকে ঐশী।হটাৎ নিজের বক্তব্যের মোড় বদলায় সাদাত।সন্দিগ্ধ গলায় জিজ্ঞেস করে,
“তখন টিউব লাইট কাকে বলছিলেন?”
অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ঐশী।লোকটা তার তখনের বলা কথা শুনে ফেলেছে?এখন কি জবাব দিবে সে?
চলবে