ভালোবাসার_রং_মিছিল💚 #লেখিকা_ইশা_আহমেদ #পর্ব_৩২

0
411

#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা_ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৩২

—“কিরে তুই এমন হাবলার মতো তাকিয়ে আছিস কেনো”

অর্ষার কথায় রুশান লাফিয়ে উঠলো।ইলমা আরিশা ফিক করে হেসে দিলো।রুশান লজ্জা পায়।অর্ষার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,,,

—“এতো লেট কেউ করে।আটা ময়দা তো দিছিস একশো কেজি।ভাবতেছি তোকে দেখে ইরহাম ভাইয়া না ভুত ভেবে পালিয়ে যায়।তোকে পেত্নীর থেকেও বাজে লাগছে দেখতে অর্ষা”

অর্ষা রুশানের কথা শুনে রেগে মেগে ফায়ার।রুশানকে মারতে থাকে অর্ষা।রুশান বেচারা ছাড়াতে ব্যস্ত।ইলমা আর আরিশা দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছে।অর্ষা কোনো কথা না বলে গাল ফুলিয়ে গাড়িতে বসে পরে।আরিশা ইলমাও বসে পরে।রুশান ও হেসে গাড়িতে বসে পরে।পরে না হয় তার বেস্টুর রাগ ভাঙিয়ে নেবে।

বাড়িতে আসতেই অনুষ্ঠান শুরু হয়।অর্ষার কাজিনরা নাচছে।কেউ কেউ মেহেদী পরছে।অর্ষাকে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে ওর কাজিন।যে খুব সুন্দর করে দিয়ে দিচ্ছে।ইলমা আরিশা মজা করছে সবার সাথে।রুশান অর্ষার পিক তুলছে।অর্ষার হাতে তার কাজিন খুব সুন্দর করেন ইরহামের নাম লিখে দিয়েছে।অনুষ্ঠান চলে রাত ১২ টা পর্যন্ত।ইলমাকে রুশান দিয়ে এসেছে।রুশান কি এই সুযোগ ছাড়ে কখনো।প্রেয়সীর সাথে কিছু সময় কাটাতে পারাটাও অনেক আনন্দের।

অর্ষা মাত্র রুমে এসেছে।সবাই এখনো ছাড়তেই চাইছিলো না।অর্ষা আয়নার সামনে বসে চুল ছাড়িয়ে নেয়।মেকাপ ধুয়ে এসে মুখ মুছতেছিলো।তখনই উন্মুক্ত পেটে কারো গভীর স্পর্শ পায়।শিউরে ওঠে অর্ষা।লোকটা পেছন থেকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে।অর্ষার খোলা চুলে মুখ গুঁজে আছে।অর্ষা চেনে লোকটা কে!তার প্রেমিক পুরুষ একান্তই তার।

—“বউ আমি থাকতে পারছি না তোমাকে ছাড়া এখনো আগামী কালকের দিনটা আছে।ইশ সময় যাচ্ছে না কেনো বলতো?”

ইরহাম অর্ষার চুলে মুগ গুঁজেই কথাটা বলল।অর্ষা কেঁপে উঠে।অর্ষা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,,,

—“কি করছেন ইরহাম ছাড়ুন”

ইরহাম অর্ষাকে ছেড়ে দেয়।অর্ষা জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে তাকায় ইরহামের দিকে।ইরহামের ঠোঁটে দুষ্ট হাসি।ইরহামকে দেখে এক দফা ক্রাশ খায় অর্ষা।ইরহামের পরনে সবুজ পাঞ্জাবি।বুকের উপরের বোতাম দুটো খোলা।চুলগুলো বাতাসে এলোমেলো হয়ে কপালে লেপ্টে আছে।চোখে চশমা তো আছেই।ইরহাম অর্ষার দিকে ঝুঁকে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,,,,

—‘এখন ছাড়ছি তবে বাসর রাতে ছাড়াছাড়ি নেই বউ।সেদিন আমি তোমাতে মিশে যাবো আর তুমি আমাতে”

অর্ষার কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে।গালগুলো লজ্জায় লালরঙা হয়েছে।চোখ নিচের দিকে।ইরহামের দিকে তাকানোর সাহস নেই।ইরহাম অর্ষার অবস্থা দেখে হাসে।অর্ষা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলে,,,,

—“আপনি এতো রাতে এখানে কি করছেন বলুন তো?”

—“কেনো আমার বউকে দেখতে এসেছি।বউয়ের হাতে আমার নামটা কেমন লাগছে সেইটা দেখতে এসেছি।দেখাবে না?”

অর্ষা মুচকি হেসে ইরহামের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়।ইরহাম নিজের নাম কিছুক্ষণ খোঁজার পর পেয়ে যায়।মেহেদীর রঙ হয়েছে অনেক।ইরহাম হাতদুটোয় চুমু খায়।এরপর অর্ষার কোমড় টেনে কাছে এনে কপালে কপাল ঠেকায়।ইরহামের নিঃশ্বাস আছড়ে পরছে অর্ষার মুখের উপর।অর্ষা চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে।ইরহাম নেশালো কন্ঠে বলল,,,

—“আই ক্যান্ট লিভ উইথ আউট ইউ বউ”

৭১.

সবাই সকাল সকাল উঠেছে।হলুদ আজ অর্ষার।অর্ষাকে কিছুতেই ঘুম থেকে উঠাতে পারছে না কেউ।উঠছেই না।এদিকে সকাল বেলা হলুদ দিয়ে গোসল করাবে সবাই অর্ষাকে।ইরহামকে ফোন করে রুশান বললে।ইরহাম ফোন দেয়।ইরহামের কল পেয়ে অর্ষা লাফিয়ে উঠে।এরপর রিসিভ করে বলে,,,

—“হুম বলুন প্রেমিক পুরুষ”

—“উঠছো না কেনো?তুমি কি বিয়ে করতে চাইছো না”

—“বাজে লোক কাল সারা রাত ঘুমাতে দেইনি নিজে আমায় আর এখন আমি একটু ঘুমিয়েছি বলে রাগ দেখাচ্ছে,আমি বিয়ে করবো না কে বলেছে আপনাকে?”

—“আচ্ছা সরি উঠে ফ্রেশ হয়ে হলুদের অনুষ্ঠানে জন্য রেডি হও সবাই অপেক্ষা করছে”

অর্ষা ফ্রেশ হয়ে হলুদের অনুষ্ঠানের জন্য রেডি হয়।হলুদ রাঙা শাড়ি,তাজা ফুলের গহনায় নিজেকে সজ্জিত করেছে অর্ষা।ভীষণ সুন্দর লাগছে।সাধারণ সাজসজ্জা মুখে।রুশান ছবি তুলে তুলে সেইগুলো ইরহামকে পাঠাচ্ছে।এটা তার কাজ।ইরহাম ফোন দিয়ে ছবি তুলে পাঠাতে বলেছে।ছাদে সবাই চলে আসে।অর্ষাকেও নিয়ে আসা হয়।সবাই মিলে হলুদ ছোঁয়ায় অর্ষাকে।এরপর গোসল করে নেয়।

দুপুরে সাজাতে এসেছে অর্ষাকে পার্লার থেকে।পার্লারের মেয়েরা সাজিয়ে চলেছে তাকে।আজকেও অসম্ভব সুন্দর লাগছে অর্ষাকে।অর্ষাকে নিয়ে স্টেজে যাওয়া হয়।আত্নীয় স্বজন সবাই আসছে হলুদ দিচ্ছে অর্ষাকে।কিছুক্ষণ পর সব লাইট অফ হয়ে যায় আর গান বাজতে থাকে।লাইট ফেকাস করা হয় ইরহামের দিকে।ইরহাম গানের তালে তালে নেচে অর্ষার কাছে আসে।অর্ষা অবাক হয়ে যায়।ইরহাম এভাবে এন্ট্রি নেবে ভাবতেও পারিনি সে।ইরহাম অর্ষার কাছে এসে হেসে ওর সাথে নাচে।

এরপর বসানো হয় দুজনকে।আসলে আয়রা ইসফাক,আহিন,আসিফ মিলে দুজনের হলুদ এক সাথে করবে ঠিক করেছেন।কিন্তু অর্ষা জানতো না।তাই এতো অবাক হয়েছে।অর্ষা ইরহামের দিকে তাকায় হলুদ পাঞ্জাবি আর কটিতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।ইরহামও তার প্রেয়সীকে দেখে পরনে হলুদ লেহেঙ্গা গহনা সাজ দিয়ে অসম্ভব সুন্দরী লাগছে দেখতে।ইরহাম কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে থাকে তার প্রেয়সীর দিকে।সবাই এসে হলুদ দিচ্ছে সবাইকে আর প্রশংসা করছে।কাজিনরা সব নাচানাচি করছে।

ইরহাম সবার আড়ালে অর্ষার কানে ফিসফিস করে বলে,,,,

—“কেমন দিলাম বউ”

—“আপনি বলেন নি কেনো আমাকে আজকে আসবেন,হলুদ একসাথে হবে”

—“বললে তো আর তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে পারতাম না তাই না বউ”

হলুদ সন্ধ্যা শেষ হওয়ার পর ইরহাম অর্ষাকে নিয়ে অর্ষার রুমে আসে।অর্ষাকে দেওয়ালের সাথে আটকে বলে,,,,

—“আমার বউ আর আমিই এখনো হলুদ দিতে পারলাম না এটা ঠিক বলো”

—“আপনি কেনো হলুদ দিবেন আমায়?”

—“আমার বউ তুমি আমি দেবো না মানে ওয়েট”

ইরহাম নিজের মুখ এগিয়ে নিয়ে অর্ষার গালে নিজের গাল মিশিয়ে হলুদ মাখিয়ে দেয়।এরপর সরে এসে বাঁকা হেসে বলে,,,

—“আগামী কালকের জন্য রেডি হয়ে নাও বউ।কালকে তোমার প্রেমিক পুরুষের অন্যরূপ দেখবে প্রেয়সী।”

অর্ষা লজ্জায় কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ইরহাম হেসে অর্ষাকে জড়িয়ে ধরে।এরপর ছেড়ে দিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বাই বলে চলে যায়।অর্ষা এখনো আগের ন্যায় দাঁড়িয়ে।ইরহামের কথাগুলো ভেবে চলেছে।ইশশ লোকটা এতো রোমান্টিক কখনো ভাবে নি।কালকে যে তার কপালে শনি রবি সব ঘুরবে তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে।

#চলবে…!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here