প্রনয়ের_দহন #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_১৬

0
726

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_১৬

তীর এক ধ্যানে আরশির ভেতরে পড়ে থাকা নিজের প্রতিবিম্বর দিকে তাকিয়ে আছে। আর বার বার কানের দুল গুলা দেখছে নেড়েচেড়ে। কানের দুল গুলা ওর ভীষন ভালো লেগেছে আর কিছু একটা ভেবে আনমনে হাসছে। মাথায় এখন একটা কথাই ঘোরপাক খাচ্ছে এই অচেনা লোকটা কে হতে পারে। মন বলছে ইশান আর মস্তিষ্ক বলে দিচ্ছে হঠাৎ করে ইশান এই কাজটা করতে যাবে কেন? কিন্তু এতটুকু বুঝতে পারছে পরিচিত কেউ একজন এই কাজটা করেছে। তবে সন্দেহের তীর বার বার ইশানের দিকেই যাচ্ছে। গলার কন্ঠটাও কিছুটা ইশানের মতোই ছিলো কিন্তু চাপা কন্ঠে আর ফিসফিসিয়ে কথা বলাতে ধরতে পারছে না তীর। লোকটার গায়ের গন্ধটাও কেমন পরিচিত মনে হলো।

হঠাৎ করেই বাইরে থেকে চেঁচামেচির শব্দ ভেসে আসে ভয়ে কেঁপে উঠে তীর। বিয়েতে কোনো গন্ডগোল হলো না তো আবার। তীর তাড়াহুড়ো করে টেবিলের উপর থেকে নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়।

বাড়ির বাইরে এসে দেখে এক জায়গাতে ভীড় জমে আছে। আর তার ভেতরের থেকে কারোর আর্তনাত ভেসে এসেছে। তীর ভ্রু কুঁচকে নেয় বিয়ে বাড়িতে এসে কে কাকে মারছে? তীর ভীড় ঢেলে ভেতরে ডুকে যা দেখে তাতে চোখ কপালে উঠে যায়। হা করে তাকিয়ে আছে সমানের দিকে। ইশানের হাতে চেলাকাঠ অর্ধেকটা ভেঙ্গে নড়ভড়ে হয়ে আছে আর পাশে পড়ে আছে তীর আর ইশাকে বাজে কথা বলা ছেলেগুলার মাঝে দুটো ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায়। শুধু তারা যে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে তা নয় ইশানের ডান হাতের অনেকটা জায়গা কেটে গেছে। যা দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। ইশানের ক্ষত স্থানটা দেখে তীরের বুকটা ধ্বক করে উঠে। লোকটা এভাবে মারামারি করছে কেন হঠাৎ করে বুঝে উঠতে পারছে না। তবে কি ইশান কিছু জানতে পেরেছে।

ইশানকে রিফাত, ইহান আরও কয়েকজন ধরে রেখেছে। ছেলে দুইটাকে এত মেরেও ইশানের মনের মাঝে শান্তি লাগছে না ইচ্ছে করছে আরও কয়েক গাঁ দিতে। ইশান হুংকর দিয়ে বলে উঠে।

–আমাকে ছাঁড় বলছি! ওদের দুজনকে আজকে জানে মেরে ফেলবো আমি।

ইহান বলে।
–ইশান পাগল হয়ে গেছিস তুই শান্ত হ। ওদেরকে যা মেরেছিস তাতে মন হয় না ঠিক মতো উঠে দাঁড়াতে পারবে।

সোহেল ফরাজী ছেলের এমন ভয়ংকর রুপ থেকে স্তম্ভিত হয়ে আছে। ছেলের এমন রুপ কোনো দিন স্বপ্নেও আনতে পারেন নি। বড় ছেলেটা যবুক বয়সে টুকটাক মারামারি করছে কিন্তু ছোট ছেলে মারপিট থেকে সর্বদা দূরে দূরে থেকেছে আর সেই ছেলে কিনা আজকে এভাবে মারামারি করছে। কি এমন হলো যে এমন শান্তশিষ্ট, গম্ভীর ছেলেটা মারামারি করলো। মানছে ছেলেটা ভীষন রাগী কিন্তু এভাবে কোনো দিন রেগে যেতে দেখে নি ইশানকে। সোহেল ফরাজী ছেলের এমন হিংস্রতা দেখে চিৎকার করে বলে।

–ইশান স্টপ ইট। সব কিছুর একটা লিমিট থাকে তুমি লিমিটের বাইরে চলে যাচ্ছো এবার। এটা আমাদের কুটুম বাড়ি নিজের বাড়ি না যে তুমি যা খুশি তাই করতে পারো।

ইশান বাবার কথা শুনে শান্ত হয়ে যায়। হাত থেকে চেলাকাঠটা ফেলে দেয়। বাবার সাথে সকলের সামনে কোনো ধরনের খা’রাপ আচরণ করতে চায় না ইশান। কিন্তু চোয়াল শক্ত করে রেখেছে। ইশানের কানে এখনও বাজছে তাকে বলা কথা গুলা। ইচ্ছে করছে ছেলে দুটার জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলতে। যাতে পরের বার এমন কথা না বলতে পারে কিন্তু এখন যেই মার মেরেছে নেক্সট টাইম চোখ তুলে তাকানোর সাহস পাবে না। ইহান আর রিফাত ইশানকে ধরে নিয়ে একটা চেয়ারে বসায়। ক্ষত জায়গাটা পরিস্কার করতে হবে না হলে সেপটিক হয়ে যেতে পারে।

অন্যদিকে সোহেল ফরাজী সবার উদ্দেশ্যে অনুনয় করে বলেন।

–প্লিজ ওদেরকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন যত টাকা লাগে সব আমি দিবো।

এর মাঝে এহসান তালুকতার মানে হইানের শশুড় মশাই বলে উঠে।

–বেয়াই সাহেব আপনি চিন্তা করবেন না। আমি সামলে নিবো সব। যাদের ইশান বাবা মেরেছে তারা এই এলাকার বখাটে ছেলে নিশ্চয়ই এমন কিছু করেছে যার জন্য বাধ্য হয়ে ইশান বাবা এমন একটা কাজ করে ফেলেছে। আপনি টেনশন করবেন না।

–কিন্তু আমাকে জানতে হবে কি এমন হলো যে এভাবে মারধোর করার প্রয়োজন হলো।

____

সদ্য বিবাহিত ইহান ইশানের ক্ষত স্থান ড্রেসিং করে দিচ্ছে নিজের নববধুকে রেখে। কোথায় এখন তার নববধুর পাশে বসে হাতে হাত রেখে গল্প করবে কিন্তু তা না করে এখন ছোট ভাইয়ের সেবা করতে ব্যস্ত। সবেই পোড়া কপাল।

ইহানের প্রোফেশান ডাক্তার তাই আর ইশানকে হাসপাতালে যেতে হলো না ইহানেই সামলে নিলো। ইশানের ভ্রুদ্বয়ের মাঝে ভাঁজ পড়ে আছে। জোরে জোরে নিশ্বাস নিছে রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। তীরের নামে বলা বিচ্ছির কথা গুলো যেন কানে বার বার কান বাজছে। ইশান জোরে বলে উঠে।

–উফফ ভাইয়া ছাড় আমাকে। এতটুকু ক্ষততে আমার কিছু হবে না।

এমন সময় সোহেল ফরাজী ছেলের উদ্দেশ্যে বলে।

–হে ঠিকেই এতটুকু ক্ষততে তোমার কিছু হবে না। কিন্তু যাদের এমন নির্মম ভাবে মেরেছো তাদের কি হবে ভেবে দেখেছো একবার। ওদের কথা বাদেই দিলাম তোমার কথা একবারও ভেবেছো। এখন যদি ওরা তোমার নামে থানায় মামলা করে তখন তোমার অবস্থান কোথায় হবে ভাবতে পারছো একবার। লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে ইশান তোমার এমন কান্ড দেখে।

সোহেল ফরাজী থামে কয়েক মুহুর্ত। তারপর আবারও বলে।

–কেন মেরেছো ওদের ওভাবে?

ইশান কোনো কথা বলছে না দেখে সোহেল ফরাজী বাজখাই কন্ঠে বলে।

–কি হলো আমি কিছু প্রশ্ন জিঙ্গেস করছি তো তোমায়।

ইশান শান্ত কন্ঠে বলে।

–মারামারি করতে শখ জেগেছিলো তাই করেছি।

সোহেল ফরাজী আবাকের চূড়ান্তে চলে যায়। কি বলে এই ছেলে মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে নাকি।

–মানে মারামারি করতে শখ জেগেছিলো মানেটা কি?

ইশান আগের মতোই উত্তর দেয়।

–জীবনে কোনো দিন মারামারি করি নাই তো তাই আজকে খুব শখ জেগেছে মারামারি করার তাই শখটা পূরন করলাম। আর এমন সুযোগ কোনো দিন হয়তো পেতাম না তাই সু্যোগের সত্ ব্যবহার করলাম।

–একদম ত্যাড়া ত্যাড়া কথা বলবে না ইশান। স্পষ্ট ভাবে বলো কেন মারামারি করেছো তুমি?

ইশান তীরের দিকে তাকায়। তীর ইশানের দিকেই তাকিয়ে আছে ইশানের কাছ থেকে উত্তর পাওয়ার আশায়। তবে ইশান তাকাতেই নজর অন্য দিকে ফিরিয়ে নেয় তীর। ইশান নিচের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে হাসে। মেয়েটা যে ওর দিকে তাকাতে ইততস্ত বোধ করে তা আর বুঝতে বাকি নেই। ইশান কিছু একটা ভেবে স্টান দাঁড়িয়ে পড়ে বলে।

–রিফাত তর গাড়ির চাবিটা দেওয়া যাবে।

–গাড়ির চাবি দিয়ে এখন কি করবি তুই?

ইশান দাতে দাত চেপে বলে।

–গাড়ির চাবি দিয়ে মানুষ কি করে নিশ্চয় মাথায় দেয় না বা খায় না।

রিফাত থতমত খেয়ে বলে।

–না আমি সেটা বলি নি।

–ঠিক আছে গাড়ির চাবিটা দে বাড়ি যাবো।

সোহেল ফরাজী রাগী কন্ঠে বলে।

–ইশান যাওয়ার আগে আমার কথার জবাব দিয়ে যাও।

ইশান বাবার কথা পাত্তা না দিয়ে বলে।

–চাবিটা দে।

–ঠিক আছে চল তাহলে আমিও যাই তর সাথে।

বলতে বলতে পকেট থেকে গাড়ি চাবিটা বের করে রিফাত।

–নাহ। তুই ওদের সবাইকে সাথে করে নিয়ে আসবি।

সোহেল ফরাজী রিফাতকে উদ্দেশ্য করে বলে।

–রিফাত ওকে তুমি চাবি দিবে না।

ইশান দাতে দাত চেপে রিফাতকে বলে।

–তুই কি চাবি দিবি।

সোহেল ফরাজী বলে।
–না ও তোমাকে চাবি দিবে না। তুমি আমার কথার জবাব দাও কেন মারামারি করেছো?

রিফাত একবার সোহেল ফরাজী দিকে তো আরেক বার বন্ধুর দিকে তাকায়। বেচারা রিফাত বাপ বেটার চিপায় পড়ে গেছে। একজনের থেকে আরেকজন কম যায় না। রিফাত কার পক্ষ নিবে বুঝতে পারছে না। প্রান প্রিয় বন্ধুর পক্ষ নিবে নাকি ভবিষতে হওয়া শশুড়ের পক্ষ নিবে। রিফাতের ভাবনার মাঝেই ইশান রিফাতের হাত থেকে ছুঁ মেরে চাবিটা নিয়ে বলে।

–সবাইকে সাবধানে নিয়ে আসবি।

এর মাঝে ইহান ইশানের সামনে এসে দাঁড়ায়।

–ইশান তর হাতের অবস্থা ভালো না ড্রাইভ করতে পারবি না।

–সমস্যা হবে না ভাইয়া।

বলেই ইশার কাছ থেকে নিজের কোর্টেটা নিয়ে তীরের দিকে এক পলক তাকিয়ে হনহন করে চলে যায়। আর অন্য দিকে সোহেল ফরাজী চিৎকার করে ছেলেকে বকে চলছে। ছেলেটা ওনার হঠাৎ করেই কেমন যেন পাল্টে গেল। একেই বলে ভোঁতা কাচির ধাঁর উঠলে যা হয় আর কি! ইশানের ক্ষেএেও আজকে তাই হলো।

ইশা তীরের কানে কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে।

–দোস্ত ভাইয়া কি কিছু জানতে পেরেছে নাকি রে?

–বুঝতে পারছি না।

–আমার মনে হয় ভাইয়া কিছু জানতে পেরেছে না হলে ভাইয়া এভাবে মারামারি করার লোক না। দেখেছিস ভাইয়া তকে কত ভালোবাসে।

–সত্যি কি তাই। কিন্তু ওনি যদি ভালোবেসে থাকেও তাহলে মুখ ফুটে এসে বলুক আমাকে।

–গাদী তুই বুঝতে পারিস না ভাইয়ার হাবভাব দেখে। একটা মেয়ে একটা ছেলের হাবভাব দুর থেকে দেখলেই তো বুঝে যায় যে ছেলেটা ওকে কি নজরে দেখে। আর সেখানে তুই ভাইয়ার এত কাছে থেকেও বুঝতে পারিস না।

–বুঝতে তো পারি কিন্তু বিশ্বাস করতে পারছি না যে ওনি আমার মতো একটা মেয়েকে ভালোবাসবে। যেখানে ওনার আশেপাশে আমার থেকেও সুন্দরী মেয়েরা ঘুরাফেরা করে সেখানে আমি তো কোন ছাই।

–ভাইয়া তকে ভালোবাসার কথা মুখে বললে বিশ্বাস করবি তো।

–কিন্তু সে তো বলে না অতোও বলবে কিনা সন্দেহ।

–ভাইয়াকে বাধ্য করবো বলাতে।

–কিভাবে?

–আগে ইহান ভাইয়ার বিয়ের ঝামেলাটা শেষ হোক তারপর ইশান ভাইয়ার ভালোবাসা স্বীকার করার মিশনে নামবো আমরা।

তীর ইশার কথা শুনে হেসে দেয়। শেষে কিনা ছোট বোন হয়ে বড় ভাইয়ের মুখে ভালোবাসার কথা স্বীকার করাবে। বড়ই অদ্ভুত ঘটনা।

কিন্তু এবার দেখে যাক ইশা কি করে যেটা করলে ইশান তার মনের কথা বলবে তীরকে।

#চলবে_______

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here