প্রনয়ের_দহন #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_২০

0
688

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_২০

ঘড়ির কাঁটায় রাত বারটো একুশ বাজে ইশান তখন বাড়ি ফিরে। বাড়ির কারোর ঘুমের ডির্স্টাব যাতে না হয় সে জন্য নিজের কাছে রাখা চাবি দিয়ে তালা খুলে বাড়িতে ডুকে। বাড়িতে ডুকে দরজা লাগিয়ে ড্রয়িং রুমে পা রাখতেই পা জোড়া থেমে যায় ইশানের। সামনের সোফাতে নেহা বেগম তার মা বসে আছে। ইশান মাকে এত রাত পর্যন্ত সজাগ থাকতে দেখে মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে বলে।

–মা তুমি এখনো জেগে আছো যে।

–তর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।

–কিন্তু কেন? আমি তো বলে গিয়েছি আমার আসতে লেইট হবে। তাহলে কেন শুধু শুধু জেগে আছো। শরীর খারাপ করবে তো।

নেহা বেগম নরম স্বরে ছেলেকে আবদার করে বলে।

–আমার পাশে বসবি একটু ইশান।

মাকে এমন নরম কন্ঠে কথা বলতে দেখে মায়ের পাশে বসে বিচলিত কন্ঠে বলে।

–কি হয়েছে মা? তোমার শরীর ঠিক আছে তো।

–আমি ঠিক আছি ইশান কিন্তু তুই ঠিক আছিস তো বাবা।

মায়ের এমন কথা শুনে থমকে যায় ইশান। কয়েক পল মায়ের দিকে তাকিয়ে নজর ফিরিয়ে নেয়। কি বলবে মাকে এখন কি বলা উচিত তার, সে কি বলে দিব সে যে একদম ঠিক নেই। তার হৃদয়ে যে #প্রনয়ের_দহন বইছে প্রতি মুহূর্তে যে দহনে পুড়ছে প্রতিনিয়ত। তবে মুখ ফুটে ইশান বলে।

–হে মা আমি একদম ঠিক আছি আমার আবার কি হবে! আই এম পার্ফেক্টলি ওল রাইট।

–আমি তর মা ইশান তকে দশ মাস দশ দিন আমার গর্ভে রেখেছি। তাই আমার থেকে তকে আর কেউ ভালো চিনে না। তাই আমায় বল না তর কি হয়েছে?

ইশান ফ্লোরের দিকে দৃষ্টিতে নিক্ষেপ‌ করে বলে।

–কিছু হয় নি মা আমার।

নেহা বেগম ছেলের বা হাতটা ধরে বলে।

–আমার এত বছর বয়সে যত টুকু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তত টুকু অভিজ্ঞতা থেকে আমি যা বুঝতে পেরেছি তুই কিছু লুকাছিস আমাদের সকলের কাছ থেকে।

ইশান চুপ করে আছে মায়ের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। নেহা বেগম এবার ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে।

–যদি আমাকে কিছু বলার থাকে তাহলে বলে দিস ইশান। আমি অপেক্ষায় থাকবো। আমি চাইলে আজকে তর কাছ থেকে জোর করে সব জেনে নিতে পারতাম। কিন্তু আমি চাই আমার ছেলে নিজের ইচ্ছেতে তার মনের সব কথা আমাকে বলুক।

নেহা বেগম থামে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে ছেলের মনের কথা। কিন্তু না ছেলে তার সেই গম্ভীর মুখশ্রী নিয়ে বসে আছে। নেহা বেগম বসে থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে।

–শুয়ে পড় গিয়ে অনেক রাত হয়েছে।

বলেই নিজের ঘরের দিকে চলে যান। নেহা বেগম চলে যেতেই ইশান চোখ বন্ধ করে নিজের মাথাটা হেলিয়ে দেয় সোফায়। ঘরের ভেতর থেকে নেহা বেগম একবার উঁকি দিয়ে দেখে ছেলে তার কি করে। ছেলেকে এমন ভাবে বসে থাকতে দেখে একবার ভেবেছিলো ছেলের সাথে খোলাসা ভাবে কথা বলতে কিন্তু পরে ভাবলো ছেলের ইচ্ছে হলে মাকে এমনি এসে বলবে সব কথা।

প্রায় বিশ মিনিট ইশান এভাবে বসে থাকে। মাথায় এখনও মায়ের বলা কথা গুলো বাজছে। তবে কি মা সব বুঝে গেছে। হয়তো বুঝে গেছে মায়েরা সন্তানদের চোখ মুখ দেখলেল বুঝে যায় সন্তানদের মনে কি চলছে।

“নেহা বেগম ছেলের মতিগতি দেখে আগেই টের পেরেছিলো তীরের জন্য ইশানের মনে দুর্বলতা কাজ করে। কিন্তু এটা বুঝতে পারছে না ইশান তীরকে কি শুধু পছন্দই করে নাকি মন থেকে ভালোবাসে। তার জন্যই ইশানের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে চেয়েছিলো কিন্তু অস্বস্তির জন্য বলতে পারে নি।”

ইশান অফিসের ব্যাগটা হাতে নিয়ে নিজের ঘরের দিকে চলে যায় ধীর পায়ে হেটে। ইশান চলে যেতেই নেহা বেগম দীর্ঘ এক নিশ্বাস ত্যাগ করে শুতে চলে যায়। এতক্ষন আড়ালে দাঁড়িয়ে ছেলেকে দেখে গেছেন। চিন্তায় আছে ছেলেকে নিয়ে নেহা বেগম কিন্তু এটা ভেবে আবার নিশ্চিন্তে আছে আর যাই হয়ে যাক না কেন ছেলে তার এতটাও অবুঝ না যে উল্টাপাল্টা কিছু করে বসবে।

ইশান নিজের ঘরে এসে বাতি না জ্বালিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়। আধ ঘন্টা পর বের হয় শাওয়ার নিয়ে। টি-শার্ট আর টাউজার পড়ে উপুত হয়ে শুয়ে পড়ে। খুব ক্লান্ত লাগছে শরীরটা আজকে তাই বেডের সাথে ক্লান্ত শরীর লাগাতেই রাজ্যের ঘুম এসে হানা দেয় চোখে।

_______

সকাল আটটা পঞ্চাশে ঘুম ভাঙ্গে ইশানের। ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথে নজর যায় টি-টেবিলের উপরে পড়ে থাকা তীরের কানের দুল জোড়ার দিকে। ইশান ভ্রু-কুচকে নেয় ভেবেছিলো তীর নিয়ে গেছে কানের দুল জোড়া। কিন্তু এই মেয়ে তো দেখা যায় রেখে গেছে এখানে। নিলো না কেন সাথে করে এই জিনিসটা, রেখে যাওয়ার মানে কি?

ইশান আর কিছু না ভেবে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেস হওয়ার জন্য। ফ্রেস হয়ে এসে কয়েকটা ফাইল নিয়ে বসে যে ফাইল গুলা আজকের মধ্যেই চেক করতে হবে। ইশান সোফাতে বসে টি-টেবিলের উপরে ফাইল গুলা রেখে চেক করা শুরু করে দেয়। লাস্ট ফাইলটা যখনেই চেক করতে যাবে তখনেই নজর যায় সাদা টাইলস করা ফ্লোরের উপরে। কেমন লাল রঙের ফোঁটা পড়ে আছে কিছুটা জায়গা জুড়ে কিন্তু লাল রঙ এখানে আসবে কি করে বুঝতে পারছে না ইশান।

ইশান চেক করার জন্য উঠে দাঁড়ালো, সেখানটায় গিয়ে হাটু ভাঁজ করে বসে তর্জনী দ্বারা এক ফোঁটা রঙ মুজে নিয়ে বুঝার চেষ্টা করে আসলে কি এটা। যখন বুঝতে পারলো এটা রঙ নয় বরং রক্ত তখনেই ইশানের বুকটা ধ্বক করে। মনের মাঝে অজানা ভয় কাজ করছে এটা ভেবে তীরের কিছু হয় নি তো আবার। গতকাল রাতে তো মেয়েটা এখানে দাঁড়িয়ে ছিলো আর হাতে তো কানের দুল জোড়া ছিলো। কোনো ভাবে কি কানের দুল দ্বারা হাত কেটে গেছে। ইশান কিছু একটা ভেবে তড়িঘড়ি করে টি-টেবিলের উপরে রাখা কানের দুল জোড়া হাতে তুলে নেয়। তুলার সাথে সাথে কানের দুল জোড়া থেকে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে। টি-টেবিলের যে জায়গাতে দুল জোড়া রেখেছিলো সে জায়গাটায় পানি জমে আছে। যে পানির রঙটা হালকা লাল বর্নের। ইশান বিরবির করে উঠে।

–তার মানে মেয়েটার হাতে কেটে গেছে।

ধপ করে সোফায় বসে পড়ে ইশান।

–এটা কি করে ফেললাম আমি? খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি মেয়েটাকে আমি খুব। ওর হাতটার কি অবস্থা এখন ব্যান্ডেজ করিয়েছে তো নাকি….

ইশান দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকায় নয়টা বিশ বাজে। সাড়ে নয়টায় তীরের কোচিং ছুটি হবে। তাই ইশান আর কোনো কিছু না ভেবেই টি-শার্টের উপরে কালো রঙের একটা শার্ট পড়ে গাড়ির চাবিটা নিয়ে বের হয়ে পড়ে। যাওয়ার পথে বাড়ির সবাই একটু অবাক হয় ইশানের এমন তাড়াহুড়ো করা দেখে প্রশ্ন করে কি হয়েছে? কিন্তু ইশান কিছু হয় নি বলে বের হয়ে যায়।

_______

দশ পনেরো মিনিটের রাস্তা ইশান ছয় মিনিটে ড্রাইভ করে শেষ করলো। কতটা হাই স্প্রিডে ড্রাইভ করেছে এটা একমাএ ইশানেই জানে। গাড়িতে বসেই ইশান অপেক্ষা করছে কোচিং ছুটি হওয়ার আর জোরে জোরে নিশ্বাস ছাড়ছে আর নিচ্ছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। কিছুক্ষন বাদেই কোচিং ছুটি হয় ইশান গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। একে বারে শেষে বের হয় তীর আর ইশা। তীরের মুখটা আঁধার রাতের থেকেও অন্ধকার করে রেখেছে। চোখ দুটো কেমন লাল হয়ে আছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে রাতে ঘুমাই নি। তীরের এমন বিধ্বস্ত চেহারাটা দেখে ইশানের বুকটা চিনচিন করে ওঠে। এক রাতের মধ্যে মেয়েটা নিজের কি করুণ অবস্থা করে ফেলছে এতটা অবুঝ কেন এই মেয়ে।

তীর আনমনে হেটে আসছে তাই ইশানকে এখনো লক্ষ্য করে নি। ইশা ইশানকে দেখার সাথে সাথে বলে উঠে।

–ভাইয়া তুমি এখানে হঠাৎ?

ইশার কন্ঠ শুনে তীর সামনের দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় ইশানকে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। তীর সাথে সাথে মুখ ফিরিয়ে নেয় অন্য দিকে। তীরের এমন মুখ ফিরানো দেখে ইশান দীর্ঘ এক নিশ্বাস ছেড়ে তীরের ডান হাতের দিকে তাকায়। না ডান হাতটা ঠিকেই আছেই এবার বা হাতের দিকে তাকাতেই দেখে ওড়না পেঁচানো তার মানে এই‌ হাতটা ক্ষ’তবিক্ষ’ত হয়েছে। ইশান গম্ভীর কন্ঠে বলে।

–গাড়িতে উঠ ইশা।

ইশা ভাইয়ের কথামতো গাড়িতে উঠে বসে। কিন্তু তীর ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। তীরকে এমন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইশান আবারও বলে।

–গাড়িতে উঠতে বলেছি আমি।

তীর ইশাকে ঊদ্দেশ্য করে বলে।

–ইশু তুই চলে যা। আমি রিকশা করে চলে যেতে পারবো।

ইশা কিছু বলবে তার পূর্বেই ইশান দাতে দাত চেপে বলে।

–বেশি পাকনামি না করে চুপচাপ গিয়ে গাড়িতে উঠ। আর আমি যদি তকে গাড়িতে তুলি তাহলে সেটা তর পছন্দ হবে না হয়তো।

তীর ইশানের দিকে রাগী চোখে তাকায় হুমকি দিচ্ছে তাকে এত বড় সাহস। তীরের ইচ্ছে করছে ইশানকে পঁচা ডোবাতে ছুঁড়ে ফেলতে। কিন্তু এই টুকু শরীর নিয়ে এই হাতির মতো মানুষটাকে তীর জীবনেও তুলতে পারবে না আর ছুঁড়ে ফেলা তো দুরের কথা। তাই ইশান আজ বেঁচে গেলো। ইশান চোখ রাঙায় তীরকে। ইশানের চোখ রাঙানো থেকে তীর আর কোনো কথা না বলে বাধ্য মেয়ের মতো গাড়িতে উঠে বসে। ইশান ঠোঁট গোল করে তপ্ত শ্বাস ছেড়ে নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করা শুরু করে।

তীর চুপচাপ বসে আছে কোনো কথা বলছে না। আসলে‌ এই বদ লোকটার সামনে কথা বলতে একদম ইচ্ছে করছে না তীরের। কিন্তু পাশে বসে থাকা ইশা বকবক করেই যাচ্ছে। ইশার এই বকবকানি সহ্য করতে না পেরে তীর বলে উঠে।

–একটু চুপ করবি তুই ইশু।

তীরের কথা শুনা মাএই ইশার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। সকাল থেকেই ইশা দেখছে তার প্রিয় বান্ধবীটা কিছু একটা নিয়ে আপসেট। কিন্তু কিছু জিঙ্গেসা করলেই বলে কিছু হয় নি। তাই ইশাও চুপচাপ বসে থাকে কোনো রাও করে না। ইশা বাইরের দিকে তাকিয়ে যখন বুঝতে পারে গাড়ি বাড়ির দিকে না গিয়ে অন্য দিকে যাচ্ছে তখনেই চিৎকার করে বলে।

–ভাইয়া কোথায় যাচ্ছি আমার? কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমাদের?

ইশা এমন ভাবে কথাটা বলেছে যেন ইশান ওর আপন কেউ না। একজন অপরিচিত লোক ওদেরকে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কোথাও। ইশান গম্ভীর কন্ঠে বলে।

–চুপচাপ বসে থাক ইশু। তদের নিশ্চয়ই বেঁচে দিতে নিয়ে যাচ্ছি না আমি এই ভরসা তো আমার উপরে আছে নাকি।

ইশা চুপ করে যায় ভাইয়ের এমন অসহ্যকর মার্কা কথা শুনে। মনে কোনো রসকষ নেই।

#চলবে_______

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here