যে_বর্ষণে_প্রেমের_ছোঁয়া #আনিশা_সাবিহা পর্ব ৪১

0
458

#যে_বর্ষণে_প্রেমের_ছোঁয়া
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৪১

মোহের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল স্বচ্ছ। দোতালা বাড়িতে তখন লাইট জ্বলছে। স্বচ্ছ ভেবেই পায় না এসময় মেয়েটা তাকে কেন ডাকল! রাস্তার একপাশ হয়ে মোহের নম্বরে কল করল সে। কিছুসময় পরই কল রিসিভড হলো। মোহ ওপাশ থেকে চাপা সুরে বলল,
“আপনি এসেছেন?”

“হ্যাঁ। বাহিরে অপেক্ষা করছি।”

“আচ্ছা। একটু দাঁড়ান। আমি আসছি।”

কল কেটে যায়। স্বচ্ছ একমনে দাঁড়িয়ে মোহের অপেক্ষা করে। শরীর টলমল করছে তার৷ মাথা ভীষণ ব্যথা। গায়ে জ্বর হানা দিয়েছে। ঠিক দশ মিনিটের মাথায় দরজা খোলার শব্দ পাওয়া যায়। স্বচ্ছ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। মাথায় কাপড় জড়িয়ে এগিয়ে আসছে মোহ রাস্তার এপাশে। রাস্তার আশেপাশে তাকাচ্ছে বারংবার। চোখেমুখে আতঙ্ক। হয়ত কাউকে না জানিয়েই বেরিয়েছে সে। হাত খোঁপা করা চুল অনেকটাই এলোমেলো হয়ে গিয়েছে তার। সেটাই একহাতে ঠিক করছে মোহ। স্বচ্ছের নিকটে এসেই চক্ষুদ্বয় বড়ো করে তাকায় সে। কঠিন রাগ ঝাড়তে চায়৷ তবে সামাল দেয় পরক্ষণেই। স্বচ্ছ চেয়ে রয়েছে তার চোখের সেই ঘোলাটের মণির দ্বারা। যেটা মোহের আস্ত একটা সমুদ্র পৃষ্ঠের সেই ভয়ানক চোরাবালি মনে হয় যা থেকে উঠে আসা অসম্ভব। স্বচ্ছ হঠাৎ প্রশ্ন করে,
“মোহ ম্যাডাম! হঠাৎ এত জরুরি তলব?”

“জরুরি কথা ছিল বলেই ডেকেছি। এমনি এমনি ডেকে বিরক্ত কেন করব আপনাকে?”

স্বচ্ছ তৎক্ষনাৎ ধীর সুরে বিড়বিড়িয়ে ওঠে,
“এটা যদি বিরক্ত হয় তবে এই বিরক্তিটা আমার কাছে সবচেয়ে সুন্দর একটা বিরক্তি।”

মোহ স্বচ্ছের কথা অস্পষ্ট শুনতে পাওয়ায় কপাল কুঁচকে জানতে চাইল,
“কিছু বললেন?”

স্বচ্ছ অপ্রস্তুত হয়। নিজেকে ধাতস্থ করে বলে,
“বলছিলাম কী এমন জরুরি কথা?”

“চলুন সামনে হাঁটতে হাঁটতে বলছি। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে কথা বলতে ভালো লাগছে না।”

মোহ হাঁটতে শুরু করে আগে আগে। স্বচ্ছ তার পাশ ধরে হাঁটার চেষ্টা করে। মোহ শুধায়,
“আজকেও আপনার কোনো গাড়ি বা বাইক সাথে নেই?”

স্বচ্ছ খানিকটা থমকাল। গলার জোর যেন কমে এলো। তবুও দম নিয়ে বলল,
“সবসময় কি মানুষের এক জিনিস ভালো লাগে? আজ একটু এসব ছাড়াই চলতে চাইছিলাম।”

“তাই? সবসময় এক আপনার জিনিস ভালো লাগে না? তাহলে তো চিন্তার বিষয়। বিয়ের পর এক স্ত্রীকে নিয়েই সারাজীবন কাটাতে হবে। কিন্তু হ্যাঁ আপনি চাইলে স্ত্রী বদলাতে পারেন। তবে সেখানে আপনার চরিত্রবান উপাধি নষ্ট হবে।”

স্বচ্ছ অমায়িক হাসে। নির্দ্বিধায় বলে,
“তখন সেই একজনকেই আমি ভিন্ন ভিন্ন রূপে সাজিয়ে ফেলব। নিজের মন মতো রঙে রাঙিয়ে রাখব। কিন্তু আমার কি মনে হয় জানো? কিছু কিছু জিনিস এক রূপেই বেশি মোহনীয়। সেই এক রূপ দেখে হয়ত আমি এই জীবন কাটিয়ে দিতে পারব। আমার বিশ্বাস, আমার নিজের সকল রঙ তার কাছে ফিকে পড়বে।”

মোহ স্বচ্ছের এই জবাবে যেন মোটেও প্রস্তত ছিল না। লোকটির জবাব হজম করার মতো ক্ষমতা পাচ্ছে না সে। মাথা নিচু করে হাঁটছে। মাথার কাপড়ে মুখ লুকানোর চেষ্টা করছে। অথচ স্বচ্ছ তার নাম উল্লেখই করেনি। তবুও কেন এত অস্বস্তি?

“এখনো কিন্তু বললে না কীসের জরুরি তলব করা হয়েছে আমায়!”

মোহ নিজেকে স্বাভাবিক করতে চাইল। আগের কড়া রূপে ফিরল পরক্ষণেই। গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
“সারাদিনে কিছু খাওয়া হয়েছে?”

স্বচ্ছ হকচকিয়ে ওঠে। ঘাড় বাঁকিয়ে মোহের শুকনো মুখের দিকে চায়। হঠাৎ মেয়েটার এই প্রশ্ন মাথা ঘুরিয়ে দিলো স্বচ্ছের। তবুও বলল,
“খাওয়া হবে না কেন? খেয়েছি তো।”

এখনো সত্যিটা লুকোনোতে মোহের রাগ বাড়ে। জোর দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“কী খাওয়া হয়েছে? টাকা ছিল আপনার কাছে?”

স্বচ্ছ দাঁড়িয়ে পড়ে। বুঝতে পারে সবটা জানাজানি হয়েছে। তবে কে জানাল ভাবতে গিয়ে মোহ কঠোর সুরে বলে,
“বাড়ি থেকে কেন বেরিয়ে এসেছেন? কীসের জন্য?”

স্বচ্ছ আসল কারণ তবুও বলতে চায় না। সে একটু হলেও মোহকে চিনেছে। সে জানে মোহ বিষয়টা জানলে নিজের কাছে ছোটো লাগবে তার। তাই গলায় জোর এনে বলে,
“বাবার সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছিল তাই আরকি।”

“কী নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছিল?”

ভ্রু কুঁচকে জানতে চাইল মোহ। স্বচ্ছ এবার মিছি রাগ দেখিয়ে বলল,
“বাবা ছেলের মাঝে কথা কাটাকাটি হয় না মাঝে মাঝে? আমাদেরও তেমনটা হয়েছিল। এই আর কী! তুমি এত জেনে কী করবে? আর আমি যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছি এটা তোমায় কে বলেছে বলো তো?”

“যে বলেছে বলুক। আমার মূল কথা হচ্ছে আপনার আর আপনার বাবার মাঝের সমস্যার প্রধান হচ্ছে আমি। আমার জন্যই আপনি আপনার বাবার সাথে ঝামেলা করেছেন তাই তো?”

স্বচ্ছ নীরব হয় প্রথমে। একটু পরেই হালকা হাসার চেষ্টা করে বলে,
“তোমার জন্য কেন ঝগড়া করব বাবার সাথে? মানে আমি কেন তোমার জন্য ঝামেলা করতে যাব? আমার কীসের দায়?”

“সেটা আপনিই ভালো বলতে পারবেন আমার থেকে। কিন্তু মিথ্যে বলবেন না। আমি সত্যিটা জানি।”

বেশ শান্ত সুরে এবার কথাটি বলল মোহ। স্বচ্ছ পেরে উঠল না আর। হাফ ছাড়ল। মোহের ভার মুখ পর্যবেক্ষণ করল সে। মোহ ব্যাকুল হয়ে বলল,
“কেন এসব কষ্ট আপনি আমার জন্য করছেন? আপনার সুন্দর জীবনযাপন, বড়ো বাড়ি, শৌখিন জীবন ছেড়ে দিলেন কেন এভাবে? আমি কখনো চাইনি আপনি আমার জন্য কোনো কষ্ট ভোগ করুন। আপনি যেমন আপনার কারণে আমার সমস্যা হোক সেটা চান না। আমিও ঠিক তাই।”

স্বচ্ছ বড়ো শ্বাস নিলো। শান্ত গলায় বলল,
“আমার কষ্ট হচ্ছে না মোহ।”

“মিথ্যে বলবেন না। আবারও বলছি। আপনি তো এই জীবনযাপনে অভ্যস্ত নন। শুধুমাত্র আমার জন্য আপনি আপনার পরিবারের থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। এই ব্যাপারটা আমায় ছোটো করছে নিজের কাছে। আমার ছোটো লাগাকে বাড়িয়ে দেবেন না। ফিরে যান নিজের বাড়ি। শত্রুতা আমার আর আপনার বাবার মাঝে। আমি এখানে অন্য কারোর হস্তক্ষেপ চাইনা।”

স্বচ্ছ চুপচাপ মোহের কথা শোনার পর মাথা নাড়াল দুপাশে। সে ফিরবে না বাড়ি। মোহ ব্যর্থ হলো বোঝাতে। স্বচ্ছ বলল,
“আমি বাড়ি ফিরলে আমার আত্মসম্মান মিশে যাবে। আর প্রধাণ কারণ তুমি ছিলে না আমাদের ঝামেলার। আমার সমস্যা ছিল বাবার অনুতপ্ত হওয়া নিয়ে। উনি নিজের দোষ স্বীকার করতে রাজিই ছিলেন না। নিজেকে উঁচু পদে নিয়ে যেতে যেতে উনি ভালোমন্দের পার্থক্য গুলিয়ে ফেলেছে। আমি সেটাই ধরিয়ে দিতে চেয়েছি।”

মোহ ধীর সুরে প্রতিত্তোরে বলে,
“কিন্তু সবাই তো ভাবছে আপনি আমার জন্যই নিজের বাবার সাথে ঝামেলা করেছেন।”

স্নচ্ছ হেসে বলে,
“সবার ভাবনার কথা তুমি কবে থেকে ভাবো? আমি তো জানতাম তুমি কাউকে পরোয়া করো না।”

মোহ ফের রাগ নিয়ে বলল,
“করি না তো। কিন্তু সবক্ষেত্রে সব নিয়ম একই হয়না। আপনি বাড়ি ফিরবেন।”

স্বচ্ছ কিছু বলতে গেলে মোহের ফোনে কল আসে। ফোনটা হাতে ধরে দেখে মিসেস সুফিয়ার কল। মোহ আঁতকে ওঠে তৎক্ষনাৎ। কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মায়ের ধমকের সুর শুনতে পায়।
“মোহ! কোথায় গিয়েছিস তুই?”

“মা, আমি একটু বাহিরে হাঁটতে… ”

মোহের কথা মাঝপথে থামিয়ে মিসেস সুফিয়া জোর দিয়ে বলেন,
“বাড়ি আয় এখনি।”

কল কেটে গেল। মোহ তড়িঘড়ি করে স্বচ্ছকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“বাড়ি ফিরতে হবে। আপনি এখান থেকে সোজা বাড়ি যাবেন।”

মোহ তাড়াহুড়ো করে চলতে আরম্ভ করে। ইতিমধ্যে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সূচনা হয়েছে। টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে তাদের দুজনের গালে মুখে। সামনে রাস্তার বড়ো গর্ত খেয়াল করে না মোহ। তাড়াতাড়ি হাঁটতে গিয়ে সেখানে পা পড়লে সামলাতে পারে না সে। পাশে থাকা স্বচ্ছের হাত ধরে ফেলে নিরুপায় হয়ে। স্বচ্ছ আরেক হাতে ধরে তাকে সাহায্য করে বলে,
“এখনি পা ভাঙতে যাচ্ছিল। অতঃপর পা ভাঙা মেয়েটাকে কে বিয়ে করত?”

“করতে হবে না কাউকে বিয়ে। আমি একা চলতে পারি।”

“হ্যাঁ সেটা দেখাই গেল একটু আগে।”

মোহ তেতে ওঠে। কিছু বলতে উদ্যত হলে সে অনুভব করে স্বচ্ছের স্পর্শ অস্বাভাবিক গরম। নিজেকে ছাড়িয়ে দ্রুত স্বচ্ছের কপালে হাত রাখে সে। চোখ গোল গোল করে বলে,
“আপনার জ্বর?”

স্বচ্ছ নিজের অগোছালো চুল দুহাতে নাড়িয়ে বলে,
“ওই হালকা। চিন্তা করো না। জ্বর হয়েছে। ডেঙ্গু বা মরণব্যাধি নয়। যে ম;রে যাব।”

“উল্টোপাল্টা কথা বাদ দিয়ে দ্রুত বাড়ি যান বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে পড়লে জ্বর বাড়বে।”

প্রজেক্ট পার্টি শেষ করে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে ফারাহ। লাগাতার কল করে যাচ্ছে কাউকে। কলে না পেয়ে বিরক্তির সীমানা থাকছে না তার। আবারও কল করে যখন কাউকে পেল না তখন ফোনটা ছুঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করল তার। বৃষ্টির বিন্দু যখন তাকে স্পর্শ করল তখন আরো হতাশ হলো সে। রাগে-দুঃখে বিড়বিড়িয়ে বলল,
“আমার এত সুন্দর ডিজাইনার ড্রেসটা যদি আজকে বৃষ্টিতে ভিজে দফারফা হয়ে যায় তাহলে আমি হেস্তনেস্ত করে ফেলব আজ।”

নিজের বলা কথা শেষ হতে না হতে তার ফোনে কল এলো। এতক্ষণ যার নম্বরে কল করে চেষ্টা চালাচ্ছিল তার নম্বর দেখে উচ্ছ্বসিত হলো সে। তড়িঘড়ি করে কল রিসিভ করে বলল,
“ড্রাইভার আংকেল কোথায় আপনি? কতক্ষণ ধরে ওয়েট করছি আপনার জন্য? আমি অফিস ছেড়ে বেরও হয়ে এসেছি।”

ওপাশ থেকে অপরিচিত মেয়েলি কণ্ঠ পেল ফারাহ।
“হ্যালো, ম্যাম! আসলে এই ফোনটা যার তার এক্সি/ডেন্ট হয়েছে আর তিনি এই মুহূর্তে হসপিটালে আছেন। আপনি যদি উনার পরিচিত কেউ হোন তবে তাড়াতাড়ি হসপিটালে চলে আসুন।”

ফারাহ খানিকটা থমকাল। সে এই মুহূর্তে যেতে পারবে না। অন্য কাউকে পাঠাতে হবে। কিন্তু সে বাড়ি অবধি যাবে কী করে ভাবতে ভাবতে বাস স্ট্যান্ডের সামনে দাঁড়াল সে। ততক্ষণে মুষলধারে বৃষ্টি চলে এসেছে। ফারাহ অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়ে রইল অন্যমনস্ক হয়ে। কিছু সময়ের মাঝে বাসের দেখা পাওয়া গেল৷ তড়িঘড়ি করে বাসে উঠে পড়ল ফারাহ। বাসের ভেতরে গিয়ে শেষদিকের একটি ফাঁকা সিটে বসে হাফ ছাড়ল সে। ততক্ষণে বাসে আরো দুয়েকজন যাত্রী উঠেছে। বাসে বেশিরভাগই পুরুষ মানুষ৷ এরই মাঝে একটি যুবক এসে দাঁড়ায় ফারাহর সামনে। উদ্দেশ্য, ফারাহর পাশে বসা। ফারাহ তা বুঝল। জানালার দিকে চেপে বসল সে। ছেলেটি বসে পড়ল তার পাশে। বাস ছেড়ে দিলো৷ মেইন রাস্তা খুব একটা খারাপ নয়। ফলে ঝাঁকুনিও হচ্ছে কম। তবুও হুটহাট ফারাহর গা ঘেঁষে যাচ্ছে তার পাশে বসা পুরুষটি। চোখ বড়ো বড়ো করে তাকাচ্ছে ফারাহ। অসহ্য লাগছে তার। প্রথমে কিছু না বললেও একটা সময় সে চিল্লিয়ে বলে উঠল,
“এইযে আপনি উঠুন তো। অন্য কোথাও গিয়ে বসুন। আমি দুটো সিট নিয়ে বসব। আমার অসুবিধা হচ্ছে।”

নাছোরবান্দা ছেলেটিও জোর দেখিয়ে বলল,
“বললেই হলো নাকি ম্যাডাম! চেয়ে দেখেন তো আর কোনো সিট ফাঁকা আছে কিনা? এটা পাবলিক বাস। সবার সাথে শেয়ার করে যাইতে হবে।”

ফারাহ দাঁতে দাঁত চেপে আশেপাশে তাকাল। আসলেই অন্য কোনো সিট ফাঁকা নেই। তাই সে ফের কড়া কণ্ঠে ছেলেটিকে বলল,
“তাহলে দূরে সরে বসুন।”

“কী আশ্চর্য! জায়গা না থাকলে কোথায় দূরে সরব? বাস যে তৈরি করছে তারে বলেন সিটগুলো বড়ো তৈরি করতে।”

ফারাহ লোকটির সাথে কথায় পেরে উঠল না। এর উত্তরে কী বলবে ভেবে পেল না সে। হুট করে উদয় হলো এক চশমা পরিহিত লম্বাটে লোকের। পরনে তার হালকা রঙের পাঞ্জাবি। ফারাহর পাশে বসা লোকটিকে বলতে শুরু করল,
“এইযে ভাই, আপনি ওঠেন। আমার সিটে গিয়ে বসেন। যান।”

শৌভিকের কথায় ছেলেটি পেছনে তাকাল। বলল,
“ধুর, না। আপনার সিট তো একদম পেছনে। এত পেছনে যেতে পারব না।”

শৌভিক চোয়াল শক্ত করে বলল,
“কিন্তু আমি তো এখানে বসব ভাই। তাই আপনাকে উঠতে হবে।”

ছেলেটি চোখমুখ জড়িয়ে বলে,
“আপনাকে কেন এখানে বসতে দেব?”

“কারণ আপনি যার পাশে বসেছেন সে আমার পরিচিত তাই।”

“বললেই হলো! কে হয় আপনার?”

শৌভিক এবার চটে গেল। কর্কশ গলায় বলল,
“বউ, গার্লফ্রেন্ড, বোন লাগে কিছু একটা। সেই কৈফিয়ত আপনাকে কেন দেব?”

শৌভিকের সাথে তর্কাতর্কিতে না পেরে উঠে গেল ছেলেটি। শৌভিক দাঁড়িয়ে পড়ল ফারাহর নিকটে। কণ্ঠস্বর নরম করে জিজ্ঞেস করল,
“আমি আপনার পাশে বসলেও কী সমস্যা হবে? তাহলে আমি দাঁড়িয়ে থাকছি। আপনি বসুন।”

ফারাহ মাথা নাড়িয়ে বলল,
“না, না বসুন এখানে। আবার অন্যকেউ বসে গেলে? আপনি বসুন।”

শৌভিক আস্তে করে সিটে বসে ফারাহর সাথে দূরত্ব বজায় রেখে। বলে,
“আমাকে এত বিশ্বাস করার কারণ? আমিও তো অন্যকারোর মতোই হতে পারি।”

ফারাহ তৎক্ষনাৎ জবাব দিলো,
“না পারেন না। ফারাহ মানুষ চিনতে পারে।”

শৌভিক আর কোনো জবাব দিলো না। খোলা জানালা দিয়ে তখন বৃষ্টির পানি আসছে। ফারাহ জানালা বন্ধ করতে গেল। তবে পারল না। উল্টে বাসের ঝাঁকুনিতে তাল সামলাতে পারল না সে। শৌভিক কোনোরকমে তার দুটো হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে নিজে জানালা বন্ধ করে দিলো আর বলল,
“বাসে যাওয়া-আসার অভ্যেস নেই?”

“না। ড্রাইভার আংকেল এক্সি/ডেন্ট করেছে আজ। তাই যেতে হচ্ছে।”

টুকটাক কথা বলতে বলতে ফারাহর বাস থেকে নামার সময় হয়ে এলো। তবে সে ভেবে পেল না এই বৃষ্টির মাঝে বাকিটুকু পথ সে কী করে যাবে। বাস থেকে নামতে নামতে খেয়াল করল তার পিছু পিছু শৌভিকও নামছে। তার কাছে ছাতারও রয়েছে একটা। শৌভিক কিছু না বলেই ছাতা ফারাহর মাথার উপরে ধরে বলল,
“প্রথমে ভেবেছিলাম ছাতা আপনার হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে যাব। কিন্তু পরে মনে হলো আপনি নিজেকে সামলাবেন নাকি ছাতা! যেমন পোশাক পড়েছেন সেটা সামলাতে গিয়েই তো ফিসাবিলিল্লাহ হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। আমি এগিয়ে দেব?”

ফারাহ ইতস্তত বোধ করে শুধাল,
“আপনার দেরি হয়ে যাবে না?”

“হলেও বা কী করার! সুন্দরী নারীকে রাস্তায় একা ছাড়তে নেই। পরে বিপদ হয়ে গেলে আমার আফসোস হবে।”

ফারাহ কিঞ্চিৎ হাসল। তারা ছাতা ধরে পাশাপাশি এগোতে থাকল। শৌভিক হঠাৎ বলল,
“আপনাকে বাড়ি অবধি এগিয়ে দিতে তো যাচ্ছি। কিন্তু আপনার বাড়ির লোকজন বিশেষ করে আপনার বাবা মন্ত্রী সাহেব আমাকে দেখলে পি/স্তল ধরবে না তো?”

ফারাহ হতবাক হয়ে জানতে চাইল,
“কেন, কেন?”

“এই ভেবে যে ভোটের জন্য আমি উনার মেয়েকে হাত করছি।”

ফারাহ এবার শব্দ করে হেসে ফেলল। হাসতে হাসতেই বলল,
“বাবা জানে তার মেয়েকে হাত করা এত সোজা না। এটা একটা বিরল ঘটনা।”

শৌভিক অনেকটা ভেবে বলল,
“তার মানে এই বিরল ঘটনা যে ঘটাতে পারবে সে নিশ্চয় চমৎকার কোনো উপহায় পাবে!”

“হুঁ পাবে তো। আমাকে…!”

চলবে….

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। পরবর্তী পর্বে চমক রয়েছে।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here