#অনুরাগের_প্রহর
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_২০(অন্তিম পর্ব)
_________________
এভাবে পাঁচদিন কেটে গেল।আজ হামিদ আর মুনিয়ার বিয়ে।
-“এই সমস্যা কি?দেখে চলতে পারেন না?রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে আছেন।আপনার জন্য আরেকটু হলে আমার ক্যামেরাটা পড়ে যেত!”
এক নিশ্বাসে কথাগুলো বললো রুমি।শুভ অবাক হয়ে রুমির দিকে তাকিয়ে আছে।নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,
-“দোষটা আপনারই।ছবি তুলতে তুলতে মানুষের গায়ের উপর এসে পড়তেছেন!”
-“এই যে হ্যালো!আমি কারো গায়ের উপরে পড়িনি।আপনি এসে আমার পিছনে দাঁড়িয়েছেন।”
শুভ কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল।এমনিই তার মনের অবস্থা ভালো না।এখন এইসব ঝগড়াঝাঁটি তার কাছে বিরক্ত লাগছে।তাই সে সেখানে আর না দাঁড়িয়ে চলে গেল!
রুমি ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“ভাব দেখালো নাকি!বাই দ্যা ওয়ে লোকটা কে জানতে হবে!”
___________
-“আমাদের বিয়েটাও এভাবে হতে পারতো তাই-না শেহরেয়ার?”
মেহরিনের কথায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে শেহরেয়ার বললো,
-“হুম!কিন্তু পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল।ওইদিন ওভাবে বিয়ে না করলে আজ তুমি আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে না।আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।”
-“তা অবশ্য ঠিকই বলেছো।ওভাবে বিয়ে করাতেও একটা আনন্দ আছে।”
দুজনে একসাথে হেসে দিল।হামিদ আর মুনিয়ার বিয়ে হয়ে গেল।রুমা বেগম নিশ্বাস ফেলে বললেন,
-“শুধুমাত্র তোর জন্য আমার মনের ইচ্ছাটা পূরণ হলো না!”
রুমি কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললো,
-“প্লিজ আম্মু।এইসব বলা বাদ দেও।”
হামিদ মুনিয়াকে নিয়ে তার বাড়িতে চলে গেল।
-“কেমন লাগলো আমার বাড়ি?”
মুনিয়া বাড়ির চারপাশ ঘুরে দেখে বললো,
-“অনেক ভালো লেগেছে!”
হামিদ মুনিয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না তো?”
মুনিয়া শক্ত করে হামিদকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“কখনো না!”
_________________________
২ বছর পর,
-“কংগ্রাচুলেশনস!আপনি পুত্র সন্তানের বাবা হয়েছেন।”
ডাক্তারের কথা শুনে শেহরেয়ার সহ বাড়ির সবাই খুশি হলো।
-“ডক্টর আমি কি এখন মেহরিন আর আমার ছেলেকে দেখতে যেতে পারি।”
-“কিছুক্ষণ পরে পেসেন্টকে ক্যাবিনে দেওয়া হবে।একটু অপেক্ষা করুন।”
মেহরিনকে ক্যাবিনে দেওয়া হলে শেহরেয়ার ভিতরে প্রবেশ করলো।শেহরেয়ারকে দেখে মেহরিনের মুখে হাসি ফুটলো।শেহরেয়ার গিয়ে তাদের ছেলেকে কোলে নিয়ে মেহরিনের পাশে বসে বললো,
-“ছেলে কিন্তু দেখতে আমার মতোই হয়েছে।”
মেহরিন হাসি দিয়ে বললো,
-“আমি এটাই চেয়েছিলাম।”
শেহরেয়ার মেহরিনের কপালে একটা চুমু দিল।দরজার আড়াল থেকে রায়ান বললো,
-“টুকি!”
শেহরেয়ার আর মেহরিন দরজার দিকে তাকিয়ে রায়ানকে দেখে হেসে দিল।মেহরিন রায়ানের দিকে হাত বাড়াতে সে দৌড়ে এসে মেহরিনকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“আমার ছোট ভাই চলে এসেছে!”
মেহরিন রায়ানের গালে একটা চুমু দিয়ে বললো,
-“হ্যাঁ তোর ছোট ভাই চলে এসেছে।”
শেহরেয়ার ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“কিন্তু ছেলের নাম কি রাখবো মেহরিন?”
মেহরিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-“শেহরাজ।”
শেহরেয়ার মুচকি হেসে বললো,
-“বাহ্!খুব সুন্দর নাম।”
_________________
১ সপ্তাহ পরে,
সকাল বেলায় সবাই একসাথে গল্প করছে।হঠাৎ শেহমীর মির্জা বললেন,
-“আজকে তো রুশমির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী তাই-না?”
মেহরিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“হ্যাঁ বাবা!”
-“ওর মেয়েটার কোনো খবর জানো?”
শেহরেয়ার চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো,
-“তিহা আপু ও-কে সিঙ্গাপুরে নিয়ে গেছে।আপুই এখন ওর মায়ের ভূমিকা পালন করছে!”
পাশে থেকে হেনা সাহেবা বললেন,
-“যাক ভালোই হয়েছে।”
অন্যদিকে,
-“শুভ আমি আপনাকে ভালোবাসি!”
-“আপনি কি পাগল হয়েছেন রুমি?”
-“না আমি একদম ঠিক আছি।মুনিয়ার বিয়ের দিন যখন আপনার সাথে আমার ঝগড়া হয়েছিল তখনই আপনাকে আমার ভালো লেগেছিল।এই ভালোলাগা আস্তে আস্তে ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে।”
শুভ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-“আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারবো না।”
-“কিন্তু কেনো?”
-“কারণ আছে।”
-“কি কারণ?”
শুভ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
_”কোনো এক মায়াবতীর চেহারায়
আমি আজও মাতাল..!”
রুমির কিছুটা কষ্ট লাগলো শুভর কথা শুনে।তাও সে নিজেকে সামলে বললো,
-“কে সে?”
-“মুনিয়া!”
রুমি অবাক হয়ে বললো,
-“মানে?”
-“হ্যাঁ আমি মুনিয়াকে ভালোবাসাতাম।ভালোবাসতাম না এখনো ভালোবাসি।উনাকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিনই উনাকে ভালোবেসে ফেলি।কিন্তু উনাকে কখনো বলার সুযোগ হয়নি।উনি আর হামিদ ভাইয়া একে অপরকে ভালোবাসে।উনারা যে বিয়ে করে সুখে আছে এতেই আমি খুশি!”
রুমির চোখ ছলছল করছে।হাতে থাকা এক গুচ্ছ গোলাপ ফুল যেন নিমিষেই শুকিয়ে গেছে।সে নিজেকে সামলে বললো,
-“আমাকে কি একটি বার সুযোগ দেওয়া যায় না?কথা দিচ্ছি কখনো ছেড়ে যাবো না।আপনাকে না পেলে আজীবন হয়তো একাই কাটিয়ে দিব।কিন্তু মনের কোথাও না কোথাও কিন্তু একটা দাগ থেকেই যাবে।যাকে পাননি তাকে ভুলে যেতে বলবো না আমি।শুধু বলবো তাকে যতটুকু ভালোবাসেন তার থেকে এক বিন্দু পরিমাণ আমাকে ভালোবাসলেই হবে!”
শুভ রুমির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।সে নিশ্বাস ফেলে রুমির হাত থেকে গোলাপের গুচ্ছ নিয়ে বললো,
-“আপনার কথায় জীবনকে না হয় আরেকবার সুযোগ দিলাম।তবে হ্যাঁ আমি এইসব প্রেম করায় নেই।একেবারে বিয়ে করবো!”
রুমি হাসি দিয়ে বললো,
-“যথাআজ্ঞা জনাব!”
রুমির কথায় শুভ হেসে দিল।তারপরে কিছু একটা ভেবে বললো,
-“চলুন আজই বিয়ে করবো!”
রুমি ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“আপনি শিওর?”
-“একদম!”
হেনা সাহেবা দরজা খুলে শুভ আর রুমিকে ফুলের মালা গলায় দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকে গিয়ে বললেন,
-“তোরা দুজন এমন গলায় মালা দিয়ে এসেছিস কেনো?”
-“চাচি আমরা বিয়ে করে এসেছি।”
শুভর কথা শুনে হেনা সাহেবা অবাক হলেও খুশি হয়ে বললেন,
-“যাক তাহলে তুই শেষমেষ বিয়ে করলি!”
বাড়ির সবাই শুভ আর রুমির বিয়েটা মেনে নিলেন।শেহরেয়ার মৃদু হেসে বললো,
-“আচ্ছা একটা কাজ করি।আমার আর মেহরিনের এবং শুভ আর রুমির বিয়েটা আরেকবার হোক।কারণ শুভ আর আমি দুজনেই তো কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করে বউকে বাড়িতে এনেছি।”
সেতারা বেগম হাসি দিয়ে বললেন,
-“নাতিন ঠিকই বলছে।এই দুই জোড়ার আরেকবার বিয়া হওয়া দরকার।”
মেহরিন বিড়বিড় করে বললো,
-“তুমি কি পাগল হলে নাকি!আমাদের বাচ্চা হয়ে গেছে।”
-“তাতে কি হয়েছে!বাচ্চা নিয়েই বিয়ে করবো।”
শেহরেয়ারের কথা শুনে মেহরিন হেসে দিল।
কিছুদিন পরে,
শেহরেয়ার আর মেহরিনের একদিকে বিয়ে হচ্ছে আর আরেক দিকে বিয়ে হচ্ছে শুভ আর রুমির।দুই জোড়ার বিয়েই সুন্দর ভাবে সমাপ্ত হলো।
রিয়াজুল রাহমানকে সালাম করে শেহরেয়ার বললো,
-“শ্বশুর মশাই আপনার মেয়েকে কিন্তু দ্বিতীয় বার বিয়ে করলাম।”
রিয়াজুল রাহমান শেহরেয়ারকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
-“তোমার হাতে আমার মেয়েকে আমি দ্বিতীয় বার তুলে দিলাম বাবা।”
-“বাহ্ খালি বড় জামাইকেই আদর করছেন শ্বশুর মশাই!”
হামিদের কথা শুনে রিয়াজুল রাহমান হেসে তাকেও জড়িয়ে ধরে বললেন,
-“আমার দুই জামাই একদম সেরার সেরা!”
মেহরিন মুনিয়ার কাঁধে হাত দিয়ে বললো,
-“দেখতে হবে তো জামাই দুটো কাদের!”
-“একদম ঠিক বলেছিস আপু।”
–
–
–
–
রাত বারোটা বাজে।রায়ান আর শেহরাজ বিছানায় ঘুমিয়ে আছে।শেহরেয়ার আর মেহরিন বেলকনিতে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখছে।শেহরেয়ার মেহরিনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,
-“আমার ঘরেই যেখানে চাঁদ আছে সেখানে আকাশের চাঁদ দেখার তো দরকার নেই।”
শেহরেয়ার মেহরিনের কথা শুনে মুচকি হাসলো।শেহরেয়ার মেহরিনকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“ভালোবাসি!”
মেহরিন মুচকি হেসে বললো,
-“কাকে?”
-“আমার চাঁদকে।”
-“আমিও আমার চাঁদকে খুব ভালোবাসি।”
শেহরেয়ার মেহরিনকে তার সামনে দাঁড়া করিয়ে বললো,
-“তোমার চাঁদটা আবার কে?”
মেহরিন শেহরেয়ারের নাক টেনে বললো,
-“তুমি!”
মেহরিন শেহরেয়ারকে জড়িয়ে ধরলো।শেহরেয়ারও শক্ত করে মেহরিনকে জড়িয়ে ধরলো।
_____________#সমাপ্ত_____________
[আল্লাহ হাফেজ।গল্পটা কেমন লেগেছে জানাবেন!আর ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।এতোদিন পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ।]