#স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
#পর্ব_২৪
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
চারিদকে সবুজ অরণ্যে ঘেরা ঘন কালো জঙ্গল। অতিরিক্ত গাছপালা থাকায় জঙ্গলটা একটু বেশি কালো হয়ে আছে। আরাভ আর মারিশা জঙ্গলের গভীরে চলে যাচ্ছে। জঙ্গলের গভীরে যতই যাচ্ছে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে নিস্তব্ধতা দিগুণ ভাবে বিরাজ করছে। ফাঁকা হতে শুরু করেছে পাখির কণ্ঠস্বর। গা ছমছম করে উঠলো মারিশার। হৃদপিণ্ডের গতিবেগ দিগুণ গতিতে ছুটে চলেছে। এমন সময় মারিশার মুঠোফোনটা বেজে উঠলো। আচমকা ফোন বেজে উঠতেই মারিশা চমকে উঠলো। ফোনের স্ক্রিনে তার স্বামী নামটা জ্বলজ্বল করছে। মারিশা একবার আরাভের দিকে দৃষ্টিপাত করল। তারপরে ফোনটা সাইলেন্ট করে দিল। দু’জন আবার জঙ্গলের গভীরে চলে যেতে লাগলো। জঙ্গলের মধ্যে খানে আসতেই একটি বাড়ির আঙ্গিনা খুঁজে পেল। অজান্তেই আরাভের মুখশ্রীতে হাসি ফুটে উঠলো। সে বাড়িটার দিকে অগ্রসর হতে লাগলো। কতকাল ধরে চেষ্টা করছিল এই বাড়ি পর্যন্ত আসার। অবশেষে সে আসতে পেরেছে ভাবতেই বুকটা প্রশান্তিতে ভরে উঠছে। আরাভ ধীর গতিতে বাড়িটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আরাভ আবেগে উৎফুল্ল হয়ে ভুলেই গিয়েছে। তার শত্রুরা তাকে ধরার জন্য ওত পেতে আছে। আরাভ গৃহের সামনে আসতেই চারিদিক থেকে কালো পোশাক পড়া লোক এসে আরাভ আর মারিশাকে ঘিরে ফেলল। আচমকা আক্রমণে থেমে যায় আরাভের দু’টি চরন। তখনই কারো বিকট হাসির শব্দ কর্ণকুহরে এসে পৌঁছায়। নির্দিষ্ট মানুষকে বহু বছর পরে দেখে আঁখি জোড়া থমকে যায়। সমস্ত মুখশ্রীতে রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ে। আরাভ নিজের ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে মানুষটাকে আক্রমণ করে বসে। ভারি দেহের কালো পোশাক পড়া লোক গুলো এগিয়ে আসতে চাইলে, মানুষটা হাতের ইশারা দিয়ে তাদের থামিয়ে দেয়। আরাভ মানুষটাকে মা’র’তে মা’র’তে মাটিতে শুইয়ে ফেলে, মানুষটার নাক দিয়ে গলগল করে র’ক্ত বের হচ্ছে তবুও আরাভকে থামাতে ইচ্ছে করছে না। এভাবে চলতে থাকলে সে হয়তো মা’রা’ই যাবে। নিজের প্রাণ রক্ষা করার জন্য আরাভকে ধা’ক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। আরাভ আর আক্রমণ করতে পারলো না। দু’জন লোক এসে আরাভকে শক্ত হাতে ধরে ফেলল। বিপরীত পক্ষের মানুষটার নজর যায় মারিশার দিকে, আরাভ বিশ্রী দু’টো গালি দিয়ে বলল,
–মারিশার ওপরে তোর ছায়া পড়লে তোকে জ্যা’ন্ত পুঁ’তে ফেলবো। ভুলে-ও ওর দিকে এক কদম এগোবি না। তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। তুই যেভাবে আমার দম বন্ধ হয়ে আসার কারণ হয়েছিস। তোর কারণে আমি আজ কতগুলো বছর নির্ঘুম রাত কাটিয়ে পার করছি। আমি বাবা-মায়ের সামনে উঁচু গলায় কথা বলতে পারি না। আমার বোন আমাকে ভরসা করে না। আমাকে যতটা কষ্ট তুই দিয়েছিস। একটা একটা করে সব তোকে ফিরিয়ে দিব। তুই যতদিন বাঁচবি। তোর মুখে একটা কথা আসবে সেটা হলো, ‘আমি বাঁচার মতো করে বাঁচতে পারিনি। আরাভের কথায় মানুষটি বিশ্রী হাসি হেসে বলল,
–এই গভীর অরণ্যে আমি ছাড়া কে আছে? তুই আমাকে কিভাবে মা’র’বি? যাকে সাথে করে নিয়ে এসেছিস। তার রুপের আগুন দিয়ে, যদি তাই হয় তাহলে আমি শতবার ম’র’তে রাজি আছি। তুই এত ভালো কেনো বল তো? না চাইতেই মুখের সামনে খাবার এনে দিস। এজন্যই তোকে আমি এত ভালোবাসি। আরাভ নিজের ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না। নিজের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে মানুষ দু’টোকে ছাড়িয়ে সামনে থাকা মানুষটির বুক বরাবর লা’থি মারলো। মানুষটা তাল সামলাতে না পেরে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। মানুষটা মাটিতে শুয়ে থেকে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে বলল,
–বাঘের বাসায় এসে বাঘকেই আক্রমণ করছিস! তোর কি ভয়ডর বলতে কিছু নেই আরাভ? এখানে এই মেয়েটা ছাড়া তোর কেউ নেই। কিন্তু এখানে আমি ছাড়া আমার আরো অনেক জন আছে। আমার শরীর স্পর্শ করতে তোর বুক কাঁপছে না? মানুষটার কথায় আরাভ তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
–যে স্রষ্টা কে ভয় পায় না। সে পৃথিবীর সব কিছুকেই ভয় পায়। আর যে স্রষ্টাকে ভয় পায়। সে পৃথিবীর কোনো কিছুকেই ভয় পায় না। তোর মত জা’নো’য়া’র এটা বুঝবে না। আরাভের কথা শেষ হবার সাথে সাথে মানুষটা বন্দুক বের করে মারিশার দিকে ধরে, আরাভের মুখশ্রীতে এসে ধরা দেয় ভয়। সে নিজের প্রাণের পরোয়া করে না। কিন্তু সে যে অন্যের স্ত্রীকে সাথে করে নিয়ে এসেছে। তার কিছু হয়ে গেলে সে তার স্বামীর কাছে কি জবাব দিবে? আরাভের ভাবনার মাঝেই মানুষটা গু’লি চালানোর প্রস্তুতি নেয়। তখনই আরাভ গিয়ে মারিশাকে আড়াল করে নেয়। বন্দুক গিয়ে লাগে আরাভের বাম হাতে সাথে সাথে আরাভ হাত চেপে ধরে, মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আরাভের করুন অবস্থা দেখে অবস্থা সামনে থাকা মানুষটার মুখশ্রী খুশিতে চিকচিক করে উঠে। মানুষটার হাসোজ্জল মুখ খানা বেশিক্ষণ টিকলো না। আরাভ পকেট থেকে বন্দুক বের করে মানুষটার বুক বারবার মারে। আরাভ এমন কিছু করতে পারে, তা মানুষটার কল্পনার বাহিরে। আরাভ যে এতটা ভয়ংকর হয়ে উঠবে। তা মানুষটার ভাবনার বাহিরে ছিল। আরাভ আর আগন্তুক দু’জনেই যন্ত্রনায় ছটফট করতে থাকে। তখনই কারো পদধ্বনির আওয়াজে কর্ণকুহরে ভেসে আসে। কালো পোশাক পড়া লোক গুলো আগন্তুককে কোলে তুলে নিয়ে পালিয়ে যেতে শুরু করে। মারিশা চেয়ে ও আটকাতে পারেনি। এই গভীর অরণ্যের মধ্যে থেকে আরাভকে নিয়ে কিভাবে বের হবে? চিন্তায় পুরো শরীর অবশ হয়ে আসছে মারিশার। তখনই পরিচিত একটা মুখ সামনে এসে দাঁড়ায়। মানুষটার সমস্ত মুখশ্রী রক্তিম বর্ন ধারণ করেছে। অর্ধাঙ্গিনীকে হারিয়ে ফেলার ভয় তাকে নিস্তেজ করে দিয়েছে। কোনো কথা না বলে মারিশাকে বুকে টেনে নিল। এই একটা কারণে মানুষটাকে এটা ভালোবাসে মারিশা। পুরো ধরনী যদি তার বিপক্ষে থাকে, তাহলে এই একটা মানুষই শুধু তার পক্ষে থাকবে। এমন স্বামী ক’জনের ভাগ্যে থাকে? সেজন্য মারিশা নিজেকে ভাগ্যবতী বলে মনে করে। মারিশা অস্থির হয়ে বলল,
–আরাভকে গু’লি করেছে। প্রচন্ড রক্তক্ষরণ হচ্ছে এখনই হসপিটালে নিয়ে না গেলে ছেলেটা মারা যেতে পারে। তুমি সঠিক সময়ে এসেছো। মারিশার কথা মারিশার স্বামী কপট রাগ দেখিয়ে বলে,
–তোমাকে কতদিন নিষেধ করেছি। এভাবে নিজেকে বিপদের মুখে ঠেলে দিবে না। তবুও কেনো আমার কথা শুনো না। আমাকে কি তোমার মানুষ বলে মনে হয় না। নাকি আমার কথা তোমার মনে হয় না। তুমি কি সত্যি আমায় ভালোবাসো? মারিশা স্বামীর দিক আহত দৃষ্টিতে তাকালো মারিশা। মলিন কণ্ঠে বলল,
–তোমার সব অভিযোগ আমি পড়ে শুনবো। আগে ছেলেটাকে হসপিটালে নিয়ে চলো। মারিশার স্বামী ফাহিম আর কোনো কথা বলল না। আরাভকে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্য রওনা দিল।
হসপিটালের কোলাহলে নিদ্রা ভাঙে যায় স্মৃতির। নিজেকে অন্য স্থানে আবিষ্কার করে থমকালো। আঁখি জোড়া মেলে একজন নার্সকে দেখে চিন্তিত হয়ে ভাবতে শুরু করল। সে এখানে কিভাবে আসলো? স্মৃতির জ্ঞান ফিরেছে দেখে নার্স বাহিরে খবর দিল। মেয়ের জ্ঞান ফিরেছে কথাটা শুনে, মুনিয়া বেগমের বুকটা প্রশান্তিতে ভরে গেল। খাবার নিয়ে ছুটলেন মেয়ের কেবিনের দিকে। ডক্টরের কথা মতো খাবার নিয়ে এসেছেন তিনি। মুনতাসীর ঔষধ আনতে গিয়েছে। এমন সময় মারিশা আর মারিশার স্বামী একই হসপিটালে আরাভকে নিয়ে আসে। হসপিটালে মারিশার স্বামীর পরিচিত লোক থাকায় আরাভকে দ্রুত জরুরি বিভাগের দিকে নিয়ে যাওয়া হলো। প্রচন্ড রক্তক্ষরণ হওয়ায় রক্তের প্রয়োজন হতে পারে বলে, ডক্টর আগেই রক্তের ব্যবস্থা করতে বলে দিয়েছে। মারিশা উপায় না পেয়ে অভ্রকে ফোন দিয়ে হসপিটালে আসতে বলে। অভ্র হসপিটালে এসে সবকিছু শুনে অস্থির হয়ে উঠে। মারিশা আগেই সবাইকে খবর জানাতে নিষেধ করে। জরুরি বিভাগের সামনে অস্থির হয়ে পায়চারি করছে অভ্র।
চলবে…..