আবার_প্রেম_হোক #নুসরাত_জাহান_মিম ২০.

0
1194

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

২০.
“আমার ডি*ভো*র্স লাগবে দোস্ত”

কথাটি বলে দমও ফেলতে পারেনি চাঁদ।তৎক্ষনাৎ ফোনের ওপাশ থেকে কারো বিস্মিত কন্ঠস্বর তার কানে ভেসে এলো,

“ডি*ভো*র্স লাগবে মানে?তুই বিয়ে করেছিস?”

“হিম”

“কবে করলি?জানালিওনা?এই আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড?”

“হুট করেই হয়ে গেছে রে”

“তুই না সারাজীবন কুমারী থাকবি বলেছিস?তবে বিয়ের প্রসঙ্গ আসে কোত্থেকে?”

চাঁদ মজার ছলে বলে,

“কেন রে?আমার বিয়ে না হলে তোর বউ বানাতি নাকি?”

“রাহা থাকতে তোকে কেনো বউ বানাবো চান্দু?”

“ঐ রাহাতো জীবনেও তোকে পাত্তা দিলোনা।বেস্ট ফ্রেন্ড বলে বলে ইউজ ই করলো।এখনো ঐ মেয়েকে ভালোবাসিস তুই?”

“তুইও তো প্রণয়কে বাসিস”

“আমার প্রণয়ের সাথে ঐ থার্ড ক্লাস মেয়েটার তুলনা যায়ও না”

ছেলেটা বিরক্তির সুরে বললো,

“আচ্ছা থাম।তোর সামনে রাহার কথা বলাটাই আমার ভুল হয়েছে।এখন বল যে প্রণয়কে তুই কি করে ধো*কা দিলি?”

চাঁদ কপাল কুচকে বললো,

“ধো!কা দিয়েছি মানে?”

“তোর না বিয়ে হয়েছে?”

“হ্যা তো?”

“এটা প্রণয়কে ধো*কা দেওয়া হলোনা?”

“চ!ট!কাবো তোকে!সোজাসুজি বলতে পারিস না?”

“এই মেয়ে বিয়ে করছিস কি মনের রঙে?প্রণয় ছাড়াতো কিছুই বুঝতিস না।তাইলে এমন কোন সুপুরুষকে বিয়ে করছিস যে প্রণয়ের কথা বলায় এভাবে ভ!ড়কাচ্ছিস?”

ব্যঙ্গ করে চাঁদ বলছে,

“আরে ছাগলের নানা!প্রণয়ের সাথেই বিয়েটা হয়েছে আমার”

বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ছেলেটা বললো,

“কী!কী বললি তুই?প্রণয়?তোর প্রণয়?”

“হিম”

“ঐ যে রুহায়ের প্রণয়?”

“হ্যা”

“তোর ঐ বিড়ালাক্ষী মানব?”

“হ্যা রে ভাই হ্যা”

“ডাক্তার হবে যে ঐ ছেলেটা?”

“ছাগল জানি কোথাকার।সারাজীবন কি ডাক্তারই হবে?অলরেডি হয়ে গেছে।বাংলাদেশের সনামধন্য কার্ডিয়াক সার্জনদের মধ্যে অন্যতম সে”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছেলেটা বললো,

“তোরও তো হওয়ার কথা ছিলো।কার্ডিয়াক সার্জন হওয়াতো তোর স্বপ্ন!”

“বাদ দে।তুই বল আমার ডি*ভোর্স করাতে পারবি কিনা?”

“প্রণয়ের সাথে বিয়ে হওয়ার পরও ডিভো*র্স চাচ্ছিস?”

“হ্যা চাচ্ছি”

“ডি!ভো!র্সই যখন লাগবে বিয়ে কেনো করেছিস?”

“সেসব একদিন সময় করে বলবো।আপাতত আমার ডি*ভোর্সটা লাগবেই দোস্ত।যে করেই হোক।তুই আমার কেসটা নিতে পারবি?”

“প্রণয় কি তোকে মা!রধ!র করে?”

আশ্চর্যান্বিত হয়ে চাঁদ বলে,

“মা!রবে কেনো?”

“তবে ডি!ভোর্স কেনো চাচ্ছিস?”

“তুই আমার কেস নিতে পারবি কিনা তা বল?”

“আমি অবশ্যই তোর কেসটা নিতাম যদি আমি দেশে থাকতাম বা কয়েকদিন অথবা মাসখানেকের মাঝেই আসতাম”

“তুই এখনো ইংল্যান্ড?তোর না মাস ছয়েক আগেই আসার কথা?”

“হ্যা কিন্তু আমি এখানে সিনিয়রদের পর্যবেক্ষণ করছি।তাছাড়া ঘুরাঘুরিও আছে টুকটাক”

“তো তুই আমার কেসটা নিতে পারছিস না?”

“কিভাবে নেবো বল?দেশে থাকলে একটা কথা ছিলো”

“তো দেশে আসছিস না কেনো?”

“এখনই না বললাম?”

“কী বলেছিস?”

“আচ্ছা বুঝিয়ে বলছি।তোরা তো শেষে দিয়ে ইন্টার্নি করিস।আমাদের তেমন স্পেসিফিক কিছু না থাকলেও আমি আমার সুবিধার্থে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছি যাতে করে ফিউচারে যেকোনো প্রকার কেস হ্যান্ডেল করতে কোনো অসুবিধা না হয়।”

“তা দেশে আসবি কবে?”

“আসতে আসতে বছরখানেকতো লাগবেই”

“অতোদিনে বুড়িও হয়ে যেতে পারি।এখন বল যে ডি*ভোর্স কিভাবে নেবো আমি?”

“বিডিতে তো আর কম লয়ার নেই তাইনা?যেকোনো একজনকে হায়ার করে নে”

“সেটা কর‍তে পারলে তোকে অবশ্যই ডিস্টার্ব করতাম না?”

“কিন্তু অন্য কেউতে সমস্যা কোথায়?”

“সমস্যা অন্য কেউতে না।সমস্যা হলো আমি চাইনা মিডিয়া বা কারো সামনে আমাদের বিয়ে বা ডি*ভোর্সের কথা আসুক”

ছেলেটা মৃদু হেসে বললো,

“তোদের বিয়ে বা ডি*ভোর্স নাকি ডক্টর রুহায়ের প্রণয়ের ব!দনা!মী না হোক সেটা?”

“গিভ মি সাম বেটার সলিউশনস” [আমায় ভালো কিছু উপায় দে]

চাঁদ বিষয়টা এড়িয়ে যেতে চাচ্ছে বুঝতে পেরে চাঁদকে আর ঘাটায়না সে।অতঃপর বলে,

“ওয়েল একজন মেয়ে লয়ার আছে।চলবে?”

“আমার কেসটা নিলে সবকিছু গোপনে করবেতো?”

“হ্যা।ও আমার বিদেশী ফ্রেন্ড।আই মিন এখানে পড়তে আসার পর আমাদের ফ্রেন্ডশিপ হয়েছে।আর আজই ও দেশে ফিরেছে।আমি ওর সাথে কথা বলে তোকে ওর নাম্বারটা দিচ্ছি।তুই ওর সাথে আলাপ করে দেখতে পারিস”

“ঠিক আছে”

“আর শোন”

“বল”

“বাই এনি চান্স বিয়েটা যদি না ভাঙে।আই মিন তোদের যদি ডি*ভোর্স না হয়,তো এই একবছরে আমি না আসা পর্যন্ত বাচ্চা কাচ্চা আবার নিয়ে ফেলিস না!আমার একটা মাত্র বেস্ট ফ্রেন্ডের বিয়ে খেতে পারিনাই।এটা আমার সারাজীবনের আফসোস থাকবে।অন্তত বাচ্চা হওয়াটা যেনো দেখতে পারি।”

“তবে রে সোইম্মা!”

ছেলেটা দম ফা!টানো হাসিতে মেতে উঠে বলে,

“বাআবাই চান্দু।সংসারে মনোযোগী হও।ফুউউউ!”

বলেই কলটা কেটে দেয়।আর চাঁদ হাসতে হাসতে মোবাইলের দিকে চেয়ে আছে।কারো আওয়াজে পেছনে ফিরে তাকাতেই রুবাকে দেখতে পায় সে।রুবা বলছে,

“কার সাথে এতো হাসা হচ্ছে ভাবি?”

রুবাকে দেখে স্মিত হেসে চাঁদ বলে,

“আমার প্রাণ”

“প্রাণের সাথে এতোটা প্রাণবন্ত?”

“হিম।এককথায় সে আমার প্রাণ ই।সহজভাবে বলতে গেলে বেস্টফ্রেন্ড”

“ওহ আচ্ছা আচ্ছা এবার বুঝলাম!”

“কিছু লাগবে তোমার?”

“না।আমিতো তোমায় নাস্তার জন্য ডাকতে আসলাম।এসে দেখলাম তুমি একটু ব্যস্ত।তাই দাড়িয়ে ছিলাম বাইরে”

চাঁদ কিছুটা শংকিত হয়ে বলে,

“কখন এসেছো?”

রুবা চাঁদকে আস্বস্ত করে বলে,

“আহা টেনশন নিওনা ভাব্জ!আমি তোমার কথা শুনিনি।জাস্ট সোইম্মা নাকি শুনলাম।তারপরই দাঁড়িয়ে ছিলাম”

চাঁদও রুবার ন্যায় বললো,

“টেনশন নিইনি নন্স!ইউ আর ঠু মাচ কিউট।আমার কথা শুনলেও যে কাউকে বলবেনা সে বিশ্বাস রাখতেই পারি।না?”

“অফ কর্স ভাব্জ!আমি তোমার সামনে নিতান্তই চুনোপুঁটি।তাছাড়া তোমার হাসি কিন্তু মারাত্মক!ভাইয়া নিশ্চয়ই হাসির প্রেমেই পড়েছিলো?”

“চলো নাস্তা করে আসি?নিশ্চয়ই তোমার ক্ষুদা পেয়েছে?”

“ওহ হ্যা চলো”

“তুমি যাও আমি শাড়িটা পাল্টেই আসছি”

“ঠিক আছে ভাব্জ”

“খেতে বসে পড়ও কিন্তু!আমার অপেক্ষায় থেকোনা”

“তুমি আগে আসোতো!”

“আচ্ছা আচ্ছা আসছি”

চুলে টাওয়াল পেচাতে পেচাতে ড্রয়িংরুমে হাজির হয় চাঁদ।অতঃপর কিছুটা জোরে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“তোমাদের মতো অতো বড় ডাইনীং টেবিলতো নেই।তাছাড়া আমরা হাতেগোনা মানুষই হলাম চারজন।তাই ছ’জনের টাই এনেছিলাম।একটু আগে-পরে খেলে আশা করছি অসুবিধা হবেনা কারোরই?”

রামিম চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলে,

“প্রণয়ের যে এতো সুন্দর একটা শালি আছে জানতাম নাতো।হেই ধূসরপরী আর ইউ সিংগেল?”

চাঁদসহ বাকিসবাই রামিমের দিকে ভ্রু কুচকে তাকাতেই শোনা যায় প্রণয়ের গম্ভীর কন্ঠস্বর,

“নো।শি ইজ ম্যারিড এন্ড প্রণয়’স বেটার হাফ”

এ কথা শুনতেই রামিমের কাশি উঠে যায়।সে আশেপাশে পানি খুজতে গেলেই রিদি তাকে পানি এগিয়ে দিয়ে বলে,

“ভাইয়া এটাই আমাদের চাঁদ ভাবি”

পানি খেয়ে রামিম বলে,

“সরি চাঁদ।আমি আসলে বুঝতে পারিনি যে তুমিই প্রণয়ের ওয়াইফ”

“ইটস ওকে ভাইয়া”

মির রামিমকে সতর্কবানী দিলো,

“তুমি প্রণয়ের ভাই বলেই বেঁচে গেলে রামিম।নাহয় এই বিড়ালিনীকে কেউ টিটকারি মা!রবে আর সে তাকে ছেড়ে দেবে এমনটা আমি দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারিনা”

বলেই চাঁদের দিকে তাকালো মির।আর রামিম মিরকে বললো,

“তাই নাকি?চেনো নাকি তুমি?”

“খুব ভালো করেই”

রামিম আরও কিছু বলতে চেয়েছিলো তবে চাঁদের কথায় থেমে গেছে,

“আমায় নিয়ে গবেষণা শেষ হলে নাস্তা আনবো?”

শিফা চাঁদকে বলে,

“ভাবি আমরা কিন্তু তোমার অপেক্ষায়ই ছিলাম।এমনকি ভাইয়ারাও”

“কিন্তু সবাইতো একসাথে বসতে পারবোনা শিফা”

মির বললো,

“এই টেবিল ফেবিলে কে বসবে বিড়ালিনী?আমিতো নিচেই বসবো।অরণ থাকতে আমরা প্রায়শই বিভিন্নভাবে আড্ডা দিতাম”

রামিম মিরকে বলে,

“অরণের এখন কন্ডিশন কেমন?”

মির জবাব দেয়,

“আগের মতোই”

“অরণকে ভীষণ মিস করি”

রিদি রামিমকে বললো,

“ভাইয়াকে আমরাও মিস করি ভাইয়া।আমি মন থেকে তার জন্য অভিশাপ দেই যার বদৌলতে আমাদের অরণ ভাইয়ার আজ এই দশা।”

শিফা রিদির দিকে তাকিয়ে বললো,

“তার কপালে আজীবন দুঃখ লেগে থাকবে দেখে নিস রিদু!”

তন্ময়ের কন্ঠে ক্ষো!ভ মিশ্রিত,

“এসব অভিশাপেতো আমি বিশ্বাস করিনা।তবে মন থেকেই চাই,যে ভাইয়ার সাথে এমনটা করেছে সে যেনো তার প্রাপ্য শাস্তিটুকু পায়”

“প্রাপ্য থেকে অতিরিক্তই পাবে।কেবলই সময়ের অপেক্ষা”

প্রণয়ের কথা শুনে সে পানে তাকায় চাঁদ।অতঃপর দেখতে পায় প্রণয়ের দৃষ্টি তারই দিকে নিবদ্ধ আর সে দৃষ্টিতে রয়েছে এক আকাশ পরিমাণ আক্রোশ।
.
.
.
.
.
.
.

নাস্তা সেরে যে যারমতো উঠে যাচ্ছিলো এমতাবস্থায় চৈত্র কেশে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে,

“ইহিম!আপনাদের মতো অতো বড়লোক হয়তো আমরা নই।অথবা বলা যায় আপনাদের সামনে আমরা কিছুই না।খালামনির বাসায় যেতে হচ্ছে একটুখানি।সেখানে দু’দিন থাকতে পারবেন অনায়াসে।আমাদেরতো দুটোই রুম।একরুমেতো আর এতোজনকে জায়গা দেয়া যাবেনা”

তন্ময় বাঁধা দিয়ে বললো,

“ঐ ভাগারু বাড়িতে আমরা যাবোনা”

শিফাও নাক ফুলিয়ে বললো,

“হ্যা।ওখানে যাওয়ার প্রশ্নই আসেনা!”

রুবাও তাল মিলিয়ে বললো,

“এতোটা অপ!মানিতো হওয়ার পরও ওখানে যাবো?উহু!একদমই না”

চৈত্র ইতস্তত করে বললো,

“তাহলে মানে কিভাবে আপনারা…”

রামিম চৈত্রের কাধে হাত রেখে বললো,

“ভাই আমি একটা সাজেশন দিতে পারি।নেবেন?”

চৈত্র রামিমের দিকে তাকিয়ে বললো,

“বলুন”

“আমরা চাইলেই সবাই মিলে দুটো রুমে থাকতে পারি।আংকেল-আন্টিকে নাহয় আপনার খালার বাসায় পাঠিয়ে দিলেন”

“আম্মু-আব্বু গতকালই ও বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে”

“আচ্ছা তাহলেতো হলোই।আমরা ইয়াংস্টাররা এখানেই থাকবো”

রুবা জিজ্ঞেস করলো,

“কিন্তু কিভাবে ভাইয়া?”

“কিভাবে আবার?এক রুমে তোরা মেয়েরা মেয়েরা থাকলি।একরুমে আমরা ছেলেরা”

শিফা কিছু বলতেই নিয়েছিলো তার আগেই চাঁদ বলে ফেললো,

“কিন্তু প্রণয়তো….”

চাঁদ সম্পূর্ণ কথা পূর্ণ করার আগেই প্রণয়ের গম্ভীরস্বর ভেসে আসে,

“প্রণয়ের অনেক কিছুই বদলেছে,সেইসাথে প্রণয় নিজেও।রামিম যা বলেছে সেভাবেই হবে”

বিকাল চারটা বেজে সাত মিনিট,
রিদির চেচানোতে ড্রয়িংরুমে উপস্থিত হয় সবাই।অতঃপর সামনে তাকিয়ে বিস্ময়ে চোখ বড় করে তাকিয়ে থাকে সে পানে।চৈত্র হনহনিয়ে রিদির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অমৃতার বাহু টে!নে তার সম্মুখে দাড় করিয়ে গালে পাঁচ আঙুল বসিয়ে দিয়ে বলে,

“কোন বিবেকে এ বাড়ি এসেছিস?”

To be continued….

[বিঃদ্রঃদেরিতে দেয়ার জন্য দুঃখিত।ক’দিন ধরেই অসুস্থতা জেঁকে ধরেছে।দেরিতে দিই বা তাড়াতাড়ি,নাইস/নেক্সট বাদে আপনাদের রেসপন্সতো তেমন পাইনা।তাই বোঝাও যায়না আদোতে আপনারা অপেক্ষা করেন কিনা!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here