আবার_প্রেম_হোক #নুসরাত_জাহান_মিম ২৩.

0
1139

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

২৩.
“আশা করছি আমাদের আর কখনোই কথোপকথনের দরকার পড়বেনা”

হঠাৎ করেই প্রণয়ের বলা শেষের কথাগুলো স্মরণ হতেই টনক নড়ে চাঁদের।চোয়াল জোড়া শক্ত হয় তার।দৃষ্টি সরিয়ে ফায়ানের হাত ধরে সামনের দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে বলে,

“এক্ষুনি চলুন এখান থেকে”

বলে আর এক মুহুর্ত দাড়ায়না সেখানে।হনহনিয়ে ফায়ানকে নিয়ে প্রস্থান করে সে স্থান।আর এ দৃশ্যটি প্রণয়ের দৃষ্টি এড়ায়নি খানিকের জন্যও।আঙুল জোড়া থামে তার।গিটারের সুর বন্ধ হয়।পাশে বসা অরণের প্লেটে রাখা অর্ধখাওয়া বার্গার হাতে নিয়ে কামড় বসায় সেখানে।

তৃতীয় বর্ষের ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে চাঁদ,ইপ্সি আর অবনী।অবনী চাঁদকে ফিসফিসিয়ে বলছে,

“প্রণয়কে দেখবো দোস্ত।ব্যবস্থা করে দে না”

“চ!টকিয়ে গাল লাল করে দেবো লু!চ্ছি জানি কোথাকার”

চাঁদের কথা শুনে অবনী ভ্রু’যুগোল নাচিয়ে বলে,

“তেলে বেগুনে জ্ব!লে যাচ্ছিস দেখি।ব্যাপার কী হিম?”

“এই যে বেশি কথা বলিস।ঠিক এজন্যই ভাল্লাগে না আমার।এই ইপ্সু ওকে নিয়ে যাতো!”

ডান কানের লতি দু’আঙুল দ্বারা স্পর্শ করে অবনী বলে,

“এই সরি সরি।আর কিছু বলবোনা”

লেকচারার ক্লাস থেকে প্রস্থানকালীন সময়ে তিনজনকে ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে ফিসফিসাতে দেখে ধম!কে বলেন,

“বাইরে কী তোমাদের?ক্লাসে ছিলেনা কেনো?নাম দাও এখনি।তোমাদের নামে কমপ্লেইন দেবো”

চাঁদ ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে,

“না না স্যার।আপনি ভুল ভাবছেন।আমরা ফার্স্ট ইয়ারের।এখানে এক আপুর সাথে কথা বলতে এসেছি”

লেকচারার জিজ্ঞেস করেন,

“অ্যান্ড হয়ার্স দ্যা প্রুফ?” [এবং তার প্রমাণ কোথায়?]

চাঁদ হিজাবের নিচ থেকে গলার আই’কার্ড সামনে এনে বলে,

“এই যে স্যার দেখুন”

লেকচারার চাঁদের আই’কার্ড দেখে চোখ বড় বড় করে বলেন,

“তুমি মুহাইমা?”

“জ্বি স্যার”

চাঁদের জবাবে তিনি সন্তুষ্ট হয়ে বলেন,

“খুব মনোযোগ সহকারে পড়াশুনা করবে মা।এখানে যেমন টপ করেছো আশা রাখছি একদিন নামীদামী ডাক্তারই হবে”

চাঁদ মৃদু হাসার চেষ্টা করে বলে,

“নামীদামীর কথাতো জানিনা স্যার।তবে আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো যেনো আমার জন্য কারো প্রা!ণটা না যায়”

“তোমার মনোঃকামনা পুর্ণ হোক”

বলেই তিনি প্রস্থান করেন।আর চাঁদ ইপ্সি,অবনীকে নিয়ে ক্লাসে ঢুকে চশমা চোখে ভালো করে এঁটে পুরো ক্লাসে চোখ বুলায়।অতঃপর মিরাকে দেখতে পেয়ে তার দিকে আগে বাড়তে নেবে এমন সময় এক মেয়ে তার সামনে এসে বলে,

“তুমি চাঁদ না?প্রণয় যেই মেয়েকে কি*স করেছে সে?”

চাঁদের বিরক্তিতে ভ্রু’যুগোল কুঞ্চিত হয়।সে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে মেয়েটা আবারও বলে,

“রাগ করছো নাকি?আমিতো এমনি বললাম”

চাঁদ ঘাড় ঘুরিয়ে বলে,

“কিন্তু আমিতো আপনাকে জিজ্ঞেস করিনি বা কিছু শুনতে চাইওনি”

বলেই মিরার বেঞ্চের দিকে এগোয়।সেখানে গিয়ে দাড়াতেই মিরা বলে,

“আরে চাঁদ দেখি।কী খবর তোমার?আর এরা কারা?আই গেস পাশের মেয়েটাকে দেখেছি কোথাও”

চাঁদ জবাব দেয়,

“জ্বি আপু।ও ইপ্সি।আমার ফ্রেন্ড।গতকালই দেখেছেন।আমি আর ও একসাথেই কলেজে ঢুকছিলাম”

“ওহ হ্যা হ্যা!আর এ পাশেরটা?”

“ও অবনী।দুজনই আমার ফ্রেন্ড”

“আচ্ছা।এই বসো বসো।”

“না আপু বসতে আসিনি”

“তবে?”

“আসলে আপু…”

“হ্যা?”

“আপনি বলেছিলেন না?”

মিরা খানিকটা ভেবে বলে,

“আচ্ছা ঐ ব্যাপারে?হ্যা বলো কী হেল্প লাগবে?আর এই মেয়ে!কী আপনি আপনি করছো?”

“আসলে..আপু আপনার…ইম.. তোমরা যদি একটু কষ্ট করে বাইরে আসতে”

মির মোবাইল থেকে চোখ তুলে বলে,

“আরেএ বিড়ালিনী যে!তুমি বলেছিলে পরে কথা বলবে।”

“এখন একটু কাজে এসেছি ভাইয়া।অরণ,আপনি আর মিরাপু একটু আসুননা!”

অরণ বই বন্ধ করে বলে,

“চলো”

চাঁদ অবনীকে বলে,

“তুই একটু ফায়ান আর ইফাদকে ডেকে আনবি?”

অবনী নাকমুখ কুচকে বলে,

“ফায়ান হ্যান্ডুকে চাইলে ডাকতে পারি কিন্তু ঐ লুই!চ্চাটাকে একদমই পারবোনা”

ইপ্সির দিকে চাঁদ তাকাতেই ইপ্সি হাত জোর করার ভঙ্গিমায় বলে,

“মাফও চাই দোয়াও চাই”

চাঁদ বিরক্তিতে কপাল কুচকে বলে,

“তোরা এখানেই দাড়া আমিই ওদের নিয়ে আসছি”

মির বলে,

“কল দিলেইতো পারো।আবার যাওয়া লাগে?”

“নাম্বার নেইতো তাই আরকি”

রিহা চাঁদের সামনে এসে জিজ্ঞেস করে,

“ফ্রেন্ডের নাম্বার নেই?স্ট্রেঞ্জ”

“আসলে এখানে এসে পরিচয়তো তাই নেওয়া হয়নি”

ইপ্সি ফট করে বলে,

“অপরিচিত কাউকে নাম্বার দিসনা স্পেশালি ছেলেদের এটা বললেইতো হয়”

মির বিজ্ঞদের ন্যায় বলে,

“আচ্ছা এই ব্যাপার?গুড গুড।ভেরি গুড।সুন্দরীদের নাম্বার প্রাইভেট থাকাই ভালো বুঝলে?”

চাঁদ হাসার চেষ্টা করে বলে,

“ইম….হ্যা”

হঠাৎ করে অরণ জিজ্ঞেস করে,

“তখন যেই ছেলেটাকে তোমার সাথে দেখলাম।কী হয় তোমার?”

চাঁদ ভ্রু কুচকে বলে,

“কোন ছেলে?আর কখন?”

“ক্যান্টিনে যেই ছেলেটা তোমাকে টান দিলো”

অবনী সুর তুলে বাকা চোখে চেয়ে বলে,

“কিরেএএএ?”

চাঁদ বিরক্ত হয়ে বলে,

“চুপ থাক”

অতঃপর অরণের দিকে তাকিয়ে বলে,

“ফ্রেন্ড”

মির ভ্রু নাচিয়ে বলে,

“ফ্রেন্ড নাকি বয়ফ্রেন্ড হিম?”

চাঁদ মিরের দিকে তাকিয়ে বললো,

“আপনার নামটা যেনো কী?”

“মিশকাত মির”

“ডাকনাম?”

“মির”

“তো মিরজাফর ভাইয়া।এ জীবনে প্রেম করিনি।করার ইচ্ছাও নেই।ডিরেক্ট বিয়ে করবো বুঝেছেন?”

মির হাই তুলে বলে,

“এসব সবাই বলে”

“কিন্তু চাঁদ করে দেখায়”

বলে মিরকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই প্রস্থান করে।

নবীনবরণের দিন,
ফায়ান আর বাকিরা মিলে সবাইকে আপ্পায়ন করছে,এমতাবস্থায় নীল রঙা শাড়ি পরহিতা চাঁদ হিজাব ঠিক করতে করতে গেইট দিয়ে ঢুকে।ফায়ানসহ সকলের দৃষ্টিতে এ দৃশ্য আটকে যায়।আর ইফাদ ফট করে সে অবস্থায়ই চাঁদের ছবি তুলে তার সামনে এসে বলে,

“আমি কিন্তু তোমার পার্মিশন ছাড়া তোমার একটা ছবি তুলে ফেলেছি চাঁদ”

চাঁদ গম্ভীরভাবে বলে,

“এটা কিন্তু ঠিক হয়নি ইফাদ”

ইফাদ মুখ লটকিয়ে বলে,

“এই নীল-আসমানী কম্বিনেশনে অনেক জোস লাগছিলো তোমায়”

ইপ্সি সামনে এসে বলে,

“হ্যা দোস্ত নীল শাড়ির সাথে আসমানী ব্লাউজ আর হিজাব খুব মানিয়েছে তোকে”

চাঁদ ইফাদের মোবাইলে মনোযোগ দিয়ে বলে,

“কই দেখি ছবিটা”

ইফাদ ছবি দেখাতেই চাঁদ হাসিমুখ করে বলে,

“বাহ সুন্দর হয়েছেতো।ডিপি দেওয়া যাবে।হোয়াটসঅ্যাপে সেন্ড করওতো।আর হ্যা সেন্ড করেই কিন্তু গ্যালারি,ফটোজ,ড্রাইভ-স্রাইভ সবখান থেকে ডিলিট করে দেবে”

হতাশার সুরে ইফাদ বলে,

“ঠিক আছে ম্যাডাম”

অতঃপর আবারও বলে,

“এই আজকে কিছু মিসিং মিসিং লাগছে”

ফায়ান সামনে এসে খানিকটা কেশে বলে,

“হিম।চশমা নেই আজ”

ইফাদ মনে পড়ার ভঙ্গিতে বলে,

“হ্যা হ্যা।চশমা পরতে ভুলে গেছো নাকি?”

“ভুলিনি।আমিই পরিনি”

ইফাদ চাঁদের সামনে তিন আঙুল দেখিয়ে বলে,

“বলোতো এখানে কয় আঙুল?”

চাঁদ ইফাদের দিকে তাকিয়ে বলে,

“বোকা ছেলে!এতোটা কানাও হইনি যে সামনে থাকা জিনিস একেবারেই দেখবোনা।তাছাড়া আমি লেন্স পরেছি।”

ইফাদ চাঁদের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,

“কোথায় বোঝা যাচ্ছেনাতো?”

“ট্রান্সপারেন্ট তাই”

“এজন্যই আজ একটু অন্যরকম লাগছে।তার উপর আবার শাড়ি পরেছো।নির্ঘাত কয়েকজনের হৃদয় দখল করবে আজ”

ফায়ান চাঁদের দিকে ফুলের পাপড়ির থালা এগিয়ে দিয়ে বলে,

“সুন্দর লাগছে”

ফায়ানের কথা শুনে তার দিকে তাকায় চাঁদ।অতঃপর নজরে আসে সাদা রঙের পাঞ্জাবি-পা’জামা পরহিত ফায়ানকে।ফায়ানের হাত থেকে থালা নিয়ে চাঁদ বলে,

“তোমায়ও”

To be continued….

[বিঃদ্রঃ গ্রামে গিয়েছিলাম এবং তা জানিয়েছিলামও।বলেছিলাম রবি বা সোমবার গল্প দেবো।তাও কয়েকজনকে দেখলাম অপেক্ষা করেছেন।গ্রামে নেটওয়ার্ক তেমন একটা পাইনি।এজন্যই মূলত গল্প দিতে পারিনি।এজন্য আমি সত্যিই দুঃখিত।আরও খেয়াল করলাম অনেকেই প্রতিদিন গল্প চান।যেটা আমি চেষ্টা করেও দিতে পারছিনা।কারণ গল্পটা একটুখানি গম্ভীর।একেক লাইন লিখতে আমায় কমপক্ষে দু’ থেকে তিন মিনিট ভাবতে হয়।এরপর পুরোটা লিখে কমপ্লিট করে নাহলেও তিন থেকে চারবার রিচেক দেই।কোথায় কী ভুল হলো।কোন জায়গায় কোন বাক্যটা বা দৃশ্যটা মানানসই হবে এসব দেখতে হয়।যার কারণে প্রতিদিন দিতে পারছিনা।চাইলেই দেওয়া যায় তবে খাপছাড়া হয়ে যাবে।যেভাবে ভেবেছি সেভাবে একদমই হবেনা।তাই বলছি গল্পটা একদিন পরপর ই দেবো।যদি সম্ভব হয় আমি খুব করে চেষ্টা করবো রোজ দিতে।তবে ঐযে বললাম খাপছাড়া হয়ে যাবে।কেনোনা গল্পটা একটুখানি ভিন্ন ধাচের।এখনো গল্পের মেইন প্লটে আসা হয়নি।ধীরে ধীরে বুঝবেন আমি আদোতে সঠিক বললাম নাকি ভুল।তাই রিকুয়েষ্ট করছি ধৈর্য সহকারে পড়বেন প্লিজ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here