আবার_প্রেম_হোক #নুসরাত_জাহান_মিম ৪৮.

0
986

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৪৮.
কলেজ গেটের সম্মুখে সকলে মিলে আপ্যায়ন করছে বিদায়ার্থীদের।দু’পাশে দু’লাইন।একপাশে তৃতীয় বর্ষের ছাত্রীরা তো অপরপাশে ছাত্ররা।মাঝপথ দিয়েই বিদায়ার্থীরা হাতে ফুল এবং আরও কিছু উপহার সমেত ভেতরে ঢুকছে।সবেমাত্রই প্রণয়রাও সেথায় এসেছিলো।কিন্তু আকস্মিক প্রণয়ের থেমে যাওয়ায় তারাও থেমে যেতে বাধ্য হয়,কেনোনা প্রণয়ই সর্বপ্রথমে দাঁড়ানো।প্রণয় দাঁড়িয়ে কাউকে খুঁজছিলো।এবং সেই কেউটা যে কে সেখানে উপস্থিত সকলেরই জানা।তাই গলা পরিষ্কার করে পাশে থেকে অবনী বলে উঠে,

“ইহিম!যাকে খুঁজছেন সে কিন্তু এখনও আসেনি ভাইয়া”

খানিকটা ভ!ড়কালেও নিজেকে যথেষ্ট গম্ভীর রেখে ভেতরে না গিয়ে উলটো বাইরে চলে আসে প্রণয়।তা দেখে খানিকটা ভড়কে তার বন্ধুমহলও তার পিছু আসে।এসেই কপাল কুচকে মির জিজ্ঞেস করে,

“ভেতরে গেলি না কেনো?”

রিহা পাশে থেকে বলে,

“বুঝিস নাই এখনও?”

মিরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

“বুঝি আবার নাই!এখানে আমরা সবাই ই বুঝেছি এই মহাশয় কেনো ভেতরে যান নি”

প্রণয় ঠান্ডাস্বরে বলে,

“বুঝছিসই যখন,এতো কথা বলিস কেন তবে?”

মির হঠাৎ বলে,

“আমি মাঝেমাঝে ভাবি তুই আমাদের সেই গম্ভীর,র!গচটা,নারী বিদ্বে!ষী সেই প্রণয়ই তো?”

“আমি আজও সেই গম্ভীর,র!গচটা আর নারী বি‌দ্বে!ষী সেই প্রণয়ই আছি তবে কেবল আমার শখের নারীর ক্ষেত্রে নারীময় হয়ে উঠি।ঐ এক নারী ব্যতীত বাকি সব নারীর জন্য প্রণয় নিষিদ্ধ,নিষিদ্ধ এক মানব বৈ কিছুনা”

সকলেই জানে,জানে মিরাও।তবুও সে বলে,

“তোর শখের নারী?”

“হ্যা।যে নারীকে দেখলে হৃদয়ে প্রলয় আরম্ভ হয়,সেই প্রলয়ঙ্কারিনীই আমার শখের নারী,আমার প্রেমমানবী”

পূর্ণতা গোমড়ামুখে বিরক্তির সহিত বলে,

“তো ও না আসলে এখন এজন্য তুই ভেতরে যাবিনা?”

প্রণয় গম্ভীরভাবে পূর্ণতার পানে চেয়ে বলে,

“তোরা যা,আটকে রাখিনিতো আমি”

“জানিসইতো যাবোনা”

“তো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক”

অতঃপর সকলে দাঁড়িয়ে চাঁদের অপেক্ষা করে।কেউ কেউ মোবাইলে ব্যস্ত হয় কেউবা বিরক্ত হয়ে একে অপরের সাথে কথা বলছে।কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে রবিন প্রণয়কে বলে,

“ভেতরে গিয়েওতো অপেক্ষা করা যায় নাকি?”

কপাল কুচকে আবারও তা শিথিল করে প্রণয় তেজহীন গলায় বলে,

“বললামতো তোরা যা”

রিহা ঠোট টিপে টিটকারি মা!রতে বলে,

“ওকে ছাড়া না গেলে কি তোর চলবেনা?আমরা নেই নাকি?”

“লাগবে সবাইকেই।তবে তাকে ছাড়া আমার এক মুহুর্তও চলেনা,চলবেনা”

প্রণয়ের সাবলীল জবাবে সকলেই সন্তুষ্ট।সন্তুষ্ট না কেবল পূর্ণতা।মির ফোনের দিকে নজর রেখেই বলে,

“হ্যা তাতো জানিই।তা না হলে কি আবার প্রতি শুক্রবারেই তার পাশের বাসার ছাদে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটাস?”

রবিনও বলে,

“বারান্দায় উঁকিঝুঁকি দিস?”

রিহাও তাদের সঙ্গ দেয়,

“যখন তখন ফোন ওয়েটিং এ পাই?”

মিরাও শেষে বলে উঠে,

“ক্লাস রেখে লাইব্রেরিতে গিয়ে ঘোরাফেরা করিস?

অরণও সমস্বরে বলে,

“সময় পেলেতো জুনিয়রের ক্লাসের বাইরেও!এছাড়া মোবাইলে লুকিয়ে চুরিয়ে….”

অরণের কথা সম্পূর্ণ করার আগেই প্রণয় তাকে থামাতে পূর্ণতাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“তুই বাদ আছিস কেনো?তুইও বল।তবে আমি বলে নিচ্ছি,যতটা বেহায়া হওয়া যায় তার সীমা অতিক্রম করে তার জন্য!কেবল তার জন্য সর্ববেহায়াকেও বেহায়াপনায় হারিয়ে দেবো আমি”

পূর্ণতার হঠাৎ প্রশ্ন,

“কারো জন্য এতোটা ডেসপারেট কবে থেকে হলি প্রণয়?”

তাল মেলায় অরণও,

“এতোই যেহেতু ডেসপারেট বলে কেনো দিস না ওকে?যদি অন্য কারো হয়ে যায়?”

অরণের কথায় ঘাড় বাকিয়ে বাকা চোখে তার পানে চায় প্রণয়।অতঃপর বলে,

“এরূপ চিন্তা তার মস্তিষ্ক অথবা হৃদয় কোনোটাতেই কখনো আসবেনা”

অরণও নাছোড়বান্দা,

“যদি এসে যায়?”

“আসবেনা”

“যদি এসেই যায়?কী করবি?”

“বললামতো আসবেনা”

“ধর এসেই গেলো!কী করবি তখন?”

“ধরতে পারছিনা”

“সাবধান করছি,অন্যের হওয়ার আগেই নিজের করে নে”

“সময় হোক”

অতঃপর সকলে মেতে উঠলো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায়।হয়তো এরপর আর এভাবে আড্ডার সু্যোগ হবেনা তাই!কিন্তু নীরব কেবল প্রণয়।সে ব্যস্ত নিজের হৃদস্পন্দন সামলাতে।বড্ড বেপরোয়া হয়েছে তারা।যখন-তখন যেথায়-সেথায় তীব্র গতিতে বেড়ে যায়।যা থামানোর সাধ্যি প্রণয়েরও নেই।এই যেমন এখনও তার চন্দ্রময়ীকে কল্পনায় নিজ ইচ্ছেমতো কল্পনা করতে করতে স্পন্দন গুলো তীব্র হয়েছে!

অতঃপর সময় কাটলো।অপেক্ষার অবসান ঘটলো।দূর হতে দেখা যাচ্ছে তার প্রেমমানবী একজন মধ্য বয়স্ক লোকের হাত ধরে রিক্সা থেকে শাড়ির কুচি ধরে নামছে।নেমে তার সহিত খানিক আলাপ করে তাকে আলিঙ্গন করে বিদায় জানিয়ে ধীর গতিতে এগিয়ে আসছে তার দিকে।হৃদস্পন্দন বেগতিক বাড়লো প্রণয়ের।দৃষ্টি তার থমকালো।চোখের পলক হলো স্থির।নিশ্বাস ভেতরে গিয়ে আর বেরুতে পারলোনা যেনো!মস্তিষ্ক ফাকা হয়ে আসলো বোধহয়।চোখেমুখে মুগ্ধতার রেশ।তার বিড়ালাক্ষীজোড়া চাঁদের কুচি ধরে ধরে এগিয়ে আসার পানেই নিবদ্ধ হলো।যত আগাচ্ছে হৃদস্পন্দন তত বাড়ছে।হৃদযন্ত্রটা বুঝি বুক চি!ড়ে বেরিয়ে আসবে?জ্ঞান কি হারাবে সে?অতঃপর চাঁদ যখন তার কাছে এসে দাড়ালো।ঠিক আড়াই হাত দূরত্ব তাদের মাঝে,মস্তিষ্ক পুরোপুরি ফাকা হয়ে আসলো প্রণয়ের।এবং তখন!ঠিক তখনই সে দিক দিশা না পেয়ে ডান হাত দিয়ে বুকের বাম পাশের পাঞ্জাবীর অংশটায় চামড়াসহই খা!মচে ধরে আঁখি জোড়া বন্ধ করে পেছন দিকে ধাবিত হলো।এবং!এবং সত্যি সত্যিই সে জ্ঞান হারালো।দু’দিক থেকে ধরলো দুই বন্ধু রবিন এবং মির।পেছন থেকে বন্ধুকে জাপটে ধরলো অরণও।

অজ্ঞানাবস্থায় বন্ধুদের উপর পড়ে আছে প্রণয়।সকলে মিলে তাকে ধরে বেধে উঠানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।এমনকি যারা আপ্যায়ন করছিলো তারাও এসে ভীড় জমিয়েছে প্রণয়ের পাশে।হাটু মুড়ে প্রণয়ের উপর ঝুঁকে এক এলোকেশী রমণী বারংবার তাকে উঠানোর চেষ্টায় মত্ত,

“প্রণয়?এই প্রণয়?উঠুন,উঠুন না”

“প্রণয় শুনছেন?”

“বিড়াল?মি.বিড়াল?এই বিড়ালাক্ষী মানব?”

এবার কিছুটা ঝাঝমিশ্রিত কন্ঠে সে বলে,

“এই?এই ধলা বিলাই?এইই?”

তবুও প্রণয় উঠছেনা বলে পাশে থেকে মির বলে উঠে,

“কী দরকার ছিলো এভাবে আমার বন্ধুকে মে!রে ফেলার বেশে আসার?শুধু আমার বন্ধু কেনো?অনেক ছেলেকেই তুমি আজ মে!রে ফেলবে ঘসেটি!”

চাঁদ ভ্রু কুচকে মিরের পানে চেয়ে বললো,

“এখন কি এসব বলার সময় ভাইয়া?”

অতঃপর রবিনকে বলে,

“আমি প্রণয়ের পাশে বসলাম তুমি গিয়ে এক বোতল পানি নিয়ে আসো যাও”

চাঁদের কথা শুনে রবিন ছুট লাগায় পানি আনার তাগিদে।রবিন যেতেই চাঁদ অরণকে বলে,

“প্রণয় হঠাৎ সেন্সলেস হলো কী করে?ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করেনা নাকি?”

অরণ চাঁদের পানে চেয়ে ভাবলেশহীন ভাবে বলে,

“এখন আমি কিছু বললে বলবে ঠাট্টা করছি।তাই বলার মানে হয়না”

চাঁদ বুঝতে না পেরে বলে,

“মানে?”

তখনই মিরা দাঁড়ানো অবস্থা থেকে বসে চাঁদের থুতনী বরাবর হাত রেখে মাথা খানিকটা উঁচু করিয়ে বলে,

“মানে হলো এই রূপে যেকোনো ছেলেই কূপকাত হয়ে যাবে সেখানে প্রণয়তো তোমার প্রেমিক পুরুষই”

অতঃপর নিজের চোখ থেকে কাজল নিয়ে চাঁদের চুল কানের পাশে গুজে দিয়ে কানের লতিতে কাজল লাগাতে লাগাতে বললো,

“মাশাআল্লাহ মাশাআল্লাহ!আমি নিজেই তোমার থেকে চোখ সরাতে পারছিনা।ভাবো প্রণয়ের কী দশাটাই না হয়েছে?”

মিরার কথায় তৎক্ষনাৎ চাঁদের গাল দুটো জ্বলে যায়।দৃষ্টি নত হয় তার।বার কয়েক শ্বাস নিয়ে আবারও প্রণয়পানে নজর স্থির করে।এখন অনেক বেশি লজ্জা লাগছে প্রণয়ের দিকে তাকাতে,তবুও মন কিছুটা আনচান করছে ছেলেটার জন্য।আসলেই কি চাঁদকে দেখেই সে জ্ঞান হারালো?নাকি দুর্বলতায়?এসব ভাবতে ভাবতেই রবিন এসে তার দিকে পানি বারিয়ে দিলো।অতঃপর পানির বোতল নিতে নিতে অরণ আর মিরকে সরে যেতে বলে অস্থির চিত্তে শাড়িসহ রাস্তার ধূলোবালিতেই হাটু মুড়ে বসে পড়লো প্রণয়কে তার কোলে মাথা রাখিয়ে।যেহেতু সেন্সলেস হয়েছে সুতরাং পুরো ভারটাই এসে তার হাটুর উপরে লাগছে বিধায় রাস্তা এবং আশেপাশের মানুষদের ভুলে গিয়ে জুতাদুটো খুলে পা মেলে দিয়ে প্রণয়কে ভালোভাবে তার কোলের উপর শুইয়ে এক হাতে গালে হালকাভাবে ছুয়ে অপর হাতে পানির ছিটা দিতে দিতে চাঁদ বলছে,

“প্রণয়?এই প্রণয়?আপনি কি উঠবেন না?”

অতঃপর খানিকটা পানি বেশি করেই হাতের তালুতে নিয়ে প্রণয়ের মুখ বরাবর ছিটিয়ে বলে,

“নাকি আমি একাই ভেতরে চলে যাবো?প্রণয়?এই প্রণয়?”

“আপনার আবদার রাখতে গেলে যে এরকম টা হবে জানলে তা কখনোই……”

ধীরে ধীরে চোখ খুলে চাঁদের ঠোটে নিজ হাত দ্বারা স্পর্শ করে প্রণয় বলে,

“প্রেমের সাগরে ভাসাতে বলেছিলাম কিন্তু আপনিতো পুরো ডুবিয়ে ছাড়লেন প্রেমমানবী”

প্রণয়ের কন্ঠ শুনতে পেয়ে টুপ করে এক ফোটা অশ্রুকণা চোখ থেকে প্রণয়ের গাল বরাবর গিয়ে পড়ে চাঁদের।প্রণয় হকচকিয়ে কোল থেকে উঠে চাঁদের ডান গালে হাত রেখে বিচলিত হয়ে বলে,

“কাদছেন কেনো চন্দ্র?জাদুময়ী ঐ চোখে প্রেম ব্যতীত আর কিছু দেখতে চাইনা”

অতঃপর গাল বেয়ে পড়া পানিগুলো বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা মুছতে মুছতে আবারও বলে,

“কাদেনা,কাদেনা চন্দ্রময়ী”

প্রণয়ের বিড়ালাক্ষী জোড়ায় দৃষ্টি স্থির করে চাঁদ আটকে আটকে বলে,

“আমি…আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম প্রণয়!এই বুঝি আপ….”

চাঁদের ঠোট বরাবর তর্জনী রেখে প্রণয় শুধায়,

“হিশ!নো মোর ওয়ার্ডস”

বলেই ঝট করে দাঁড়িয়ে গিয়ে চাঁদের দিকে হাত বাড়িয়ে আবারও বলে,

“এতোটাই ভয় পেয়েছেন যে রাস্তাঘাট কোনো কিছু না দেখে নতুন শাড়ি নিয়ে ধুলোর মধ্যেই বসে পড়েছেন?”

প্রণয়ের বাড়িয়ে দেওয়া হাতে হাত রেখে বসা থেকে উঠে চাঁদ বলে,

“অতোকিছু দেখে কী হবে?নিজের মানুষটাকে দেখতে পেলেই নেত্রদ্বয় অমৃত খুঁজে পায়”

চাঁদের প্রেমবাক্য শুনে চাঁদের হাত খানিকটা টেনে তার দিকেই ঝুঁকে গিয়ে প্রণয় বলে,

“আমি আপনার নিজের মানুষ?”

চাঁদের চোখেমুখে অসম্ভব লজ্জারা এসে হানা দেয়।কী করলো সে এটা?কার সামনে কী বলে ফেললো?চাঁদকে লজ্জা পেতে দেখে তার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে প্রণয় বলে,

“আমার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বারংবার আমারই সামনে লজ্জা পেতে ভীষণ ভালোবাসেন তাইনা?কিন্তু আপনি কি জানেন?এই লজ্জায় প্রণয় একদিন এমনভাবে বিজয় অর্জন করবে লজ্জারাও লজ্জা পেতে লজ্জায় ম!রে যাবে”

কথাখানা বলে দ্রুত গতিতেই সরে আসে প্রণয়।তার নিশ্বাস ভারী হয়ে এসেছে।বহু কষ্টে নিজেকে সামলিয়েছে সে।এই প্রথম এতোটা কাছ থেকে চাঁদকে অনুভব করেছে।উন্মুক্ত ঘাড় আর কানে থাকা তিল দু’টো বড্ড টানছিলো তাকে।নিজেকে ধাতস্থ করে হাত মুঠো করে দাতে দাত চেপে সরে এসেছে সে।চাঁদের নিশ্বাসের হারও হয়েছে দ্রুত।সেই সাথে হৃদস্পন্দনের মাত্রা যেই হারে বেড়েছে হৃদয় বেড়িয়ে যাবার উপক্রম।এ কী বললো প্রণয়?একটু আগে কী বললো সে?মনে পড়তেই কান দু’টো গরম হয়ে আসে চাঁদের।নিশ্চিত সেগুলো হতে ধোয়া নির্গত হচ্ছে!যখন সে ভালোভাবে বাক্যগুলো স্মরণ করলো এবং তার অর্থ বোধগম্য হলো শাড়ির আচল খাম!চে ধরে চোখজোড়া বুজে নিলো চাঁদ।

চাঁদকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে মিরাকে ডাকে প্রণয়।মিরা তার সামনে যেতেই মিরার কানের কাছে খুবই নিম্নস্বরে বলে,

“চাঁদের শরীরে ধুলোবালি ভরা।পেছন দিকটায়ও অনেকখানি লেগেছে।ঝেড়ে দিয়ে আয়”

মিরা চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলে,

“কেন তুই….”

বলতে গিয়েও থেমে যায় মিরা।কী বলছিলো সে?নিজেই লজ্জা পেয়ে যায় এ কথায়।আরও বেশি লজ্জায় পড়ে প্রণয়ের কথা শুনে,

“আমি তার গায়ে হাত দেবো?”

মিরা দু’পাশে মাথা নাড়িয়ে বলে,

“না আমিই যাচ্ছি”

বলেই চাঁদের পাশে গিয়ে তার শরীর থেকে বালুগুলো ঝেড়ে দেয়।এইটুকু সময়ের মধ্যে নিজের পাঞ্জাবীর ধুলোগুলো ঝেড়ে নেয় প্রণয়ও।অতঃপর চাঁদকে বলে,

“একটু এখানে আসুনতো চাঁদ”

প্রণয়ের সম্মুখে গিয়ে চাঁদ শুধায়,

“জ্বি?”

চাঁদের দু’বাহু ধরে তাকে খানিকটা পেছনে চাপিয়ে নিজে অনেকটা দূরে এসে গেটের কাছের এক দেয়ালে হেলান দিয়ে চাঁদের পানে দৃষ্টি স্থির করে দু’হাত বগলদাবা করতে করতে প্রণয় বলে,

“দেখি ভালোভাবেতো দেখতেও পারলাম না তখন”

কথাখানা বলেই চাঁদকে নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগে।সকলের সামনে প্রণয়ের এহেন কাজে ভড়কায় চাঁদ।খানিকটা অবাক আর অনেকখানি লজ্জার মিশ্রণ এসে হানা দেয় তার চোখেমুখে।অপরদিকে প্রণয় ব্যস্ত তার লালগোলাপের দর্শণে।লাল জমিন আর কালো পাড়ের মধ্যকার এক শাড়িতে আবৃত সে।ব্লাউজখানা কনুই অব্দি কালো বর্ণের।চুলগুলো মাঝের সিথি করে দু’পাশ দিয়ে খানিকটা ফোলানো এবং বাকিগুলো ছেড়ে দেওয়া,বোধহয় কোমড়ের থেকেও পাঁচ,ছয় ইঞ্চি নিচ অব্দি তার সীমারেখা।চোখে চশমা নেই,হয়তো আজও ট্রান্সপারেন্ট লেন্স লাগিয়েছে তবুও কোনোপ্রকার কৃত্রিমতা তাতে বোঝা যাচ্ছেনা।স্নিগ্ধ,অপরূপ সেই আঁখি জোড়া,তাতে বিদ্যমান কৃঁষ বর্ণের কাজলরেখা।ঠোঁটজোড়ায় হালকা লালবর্ণের ওষ্ঠরঞ্জনী।কানে রূপোলী একজোড়া ঝুমকা আর হাতজোড়ায় লাল-কালো মিশ্রিত চুড়ির মেলা।এছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছেনা চাঁদেতে।তবুও এতো অপরূপ,এতটা মনোমুগ্ধকর যে একজন পুরুষ তার হৃদভারসাম্য হারিয়ে লুটিয়ে পড়েছে জমিনে।পুরুষটি সেই স্নিগ্ধ,অপার সৌন্দর্যেমন্ডিত নারীর একান্ত নীরব,লুক্কায়িত প্রেমিক পুরুষ।সেই নারী যখন লজ্জায় লালরাঙা হয় তখন তার সৌন্দর্য বেড়ে গিয়ে কয়েক সহস্রাধিক হয়ে যায় যেনো!অতঃপর তার থেকে দৃষ্টি সরানো দায় হয়ে পড়ে।এমনিভাবে প্রণয়ও তার দৃষ্টি কোনোক্রমেই চাঁদ হতে সরাতে সক্ষম হচ্ছেনা।এতোটা ভালোবাসাময়ী হতে কে বলেছিলো তাকে?এতো এতো ভালোলাগার রেশ এই এক নারীতেই কেনো বিদ্যমান?কেনো এই এক নারী তার হৃদয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করতে সেকেন্ডও সময় নেয়না?

অতঃপর চাঁদ যখন অতিরিক্ত মাত্রায় লজ্জা সামলাতে না পেরে প্রণয়ের বাহুঘেষে দাঁড়িয়ে তার কর্ণসম্মুখ নিম্নস্বরে শুধায়,

“দিনদিন লজ্জাশরম খোয়াচ্ছেন কৃঁষমানব”

চাঁদের কথা শুনে প্রণয় তার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে বাকা চোখে চেয়ে জানতে চায়,

“কৃঁষমানব?”

লম্বা এক শ্বাস টেনে চোখ বন্ধ করে আবারও খুলে নিয়ে চাঁদ বলে,

“হ্যা।কৃঁষ বর্ণে নিজেকে সজ্জিত করলে সে হয় পৃথিবীর অপার সৌন্দর্যেমন্ডিত কৃঁষমানব,আমার বিড়ালাক্ষী মানব”

অতঃপর প্রণয়ের চোখজোড়ায় দৃষ্টি জ্ঞাপন করে।প্রণয় একবার নিজেকে দেখে নিয়ে চাঁদের দিকে খেয়াল দিতেই কিছু একটা লক্ষ্য করে রিহার কাছে গিয়ে বলে,

“তুইতো লাল লাগিয়েছিস না?তোর লিপস্টিকটা দেতো”

কপাল কুচকে রিহা বলে,

“আমার লিপস্টিক দিয়ে তুই কী করবি?”

“দিতে বলেছি দে”

প্রণয়ের গম্ভীরভাব দেখে রিহা তার হ্যান্ডব্যাগ থেকে প্রণয়ের কথামোতাবেক লিপস্টিক এগিয়ে দেয় তার পানে।প্রণয় তা নিয়ে চাঁদের সামনে হাজির হয়ে লিপস্টিকের মুখ খুলতেই সকলে বিস্ময় নিয়ে তাদের পানে তাকিয়ে থাকে।প্রণয় চাঁদের থুতনী ধরে খানিকটা উঁচিয়ে ঠোটে গাঢ় করে লিপস্টিক লাগিয়ে দিতে দিতে বলে,

“ফিকে ওষ্ঠাসহ যদিও তার সৌন্দর্য ফিকে পড়েনি তবুও রঞ্জিত অধরজোড়া শীতল হৃদয়ে উষ্ণানুভূতি জাগায়”

অতঃপর চাঁদের সঙ্গসহই কলেজ গেটের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করে প্রণয়,পেছনে তার বন্ধুমহলের সকলেই।

To be continued….

[বিঃদ্রঃ ইচ্ছা ছিলো এ পর্বেই এই প্রসঙ্গটা শেষ করবো কিন্তু বাড়িতে মেহমান এসেছে তাই পুরোটা এখনই লিখে দিতে পারলামনা।ভেবেছিলাম দু’দিনে শেষ করে ফেলবো কিন্তু মেহমান থাকায় একটু একটু করে এতোটা লিখতে পেরেছি।পরবর্তীতে এর বর্ধিতাংশ দেবো।রিচেক দিতে পারিনি তাই বানানে ভুলগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আর গল্পটা সম্পূর্ণই কাল্পনিক।পরবর্তী পর্ব কাল দিতে পারবোনা।সম্ভবত পরশু দেওয়া পড়বে]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here