#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
৪৯.(রহস্যভেদের সূচনা)
দিন দুয়েক বাদের কথা,
একদিন বিশ্রাম নিয়ে পরেরদিন ক্লাসে এসেই এক মহিলার আহাজারি শুনে থমকে গিয়েছিলো চাঁদ।এভাবে বুক ফা!টানো আ!র্তনাদ বুঝি একজন মা ই তাঁর সন্তানের জন্য করতে পারেন?কিন্তু কী এমন হয়েছে তার মেয়ের?কেনো মহিলাটি চোখমুখ লাল করে একেকজনের কাছে নিজ মেয়ে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছেন?খানিকটা সংশয় নিয়েই চাঁদ এগোয় তাঁর পানে।অতঃপর কাধে হাত রেখে শুধায়,
“কী হয়েছে আন্টি?আমায় বলুন।কাদবেন না প্লিজ”
মহিলাটি চাঁদের কন্ঠস্বরে কেপে উঠে তার দিকে ঘুরে তাকান।অতঃপর চাঁদের দু’হাত ধরে আহাজারি করে বলেন,
“মা!মাগো!আমার মেয়েটাকে এনে দাওনা মা!”
মহিলাটাকে ধরে এনে লো বেঞ্চে বসিয়ে চাঁদ বলে,
“আগে আপনি শান্ত হন আন্টি।শান্ত হয়ে বলুন আপনার মেয়ের নাম কী?আর কী হয়েছে তার সাথে?”
বলেই নিজ ব্যাগ থেকে এক বোতল পানি বের করে মহিলাকে নিজ হাতে খাইয়ে দেয় চাঁদ।পানিটুকু খেয়েই অস্থির হয়ে মহিলাটি বলেন,
“আম্বিয়া।ফা…ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী।এই যে ক…কয়দিন বাদেই ওর পরীক্ষা ছিলো মাগো!পরশুদিন ফেয়ারওয়েলে ঠিকই আসলো কিন্তু বাড়ি আর গেলোনা গো মা!দু’দিন ধরে মেয়েটাকে তন্ন তন্ন করে কোথাও খুঁজে না পেয়ে এখানে এসেছি।এখানের কেউও কিছু বলতে পারছেনা।মাগো আমার মেয়েটার খবর কি তুমি জানো?”
মহিলার কাছে গিয়ে তাকে আগলে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে চাঁদ বলে,
“আপনি চিন্তা করবেন না আন্টি।আপুকে ঠিক পাবেন।আপু অবশ্যই ফিরে আসবে।আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো আপুকে খোজার।মন খারাপ করবেন না।কিচ্ছু হবেনা আপুর”
তখনই পাশে থেকে ইপ্সি তাকে বলে,
“দোস্ত তুইতো কাল আসিস নি।গতকালও ফার্স্ট ইয়ারের দু’জন গার্জিয়ান এসে প্রিন্সিপালের কাছে কমপ্লেইন করে গেছেন”
ইপ্সির কথা শুনে খানিকক্ষন চুপ থেকে ইফাদকে ডেকে চাঁদ বলে,
“ইফাদ আন্টিকে একটু তার বাসা অব্দি দিয়ে আসোতো”
চাঁদের কথামতো ইফাদ তাই করলো।নিজ মায়ের মতো আগলে মহিলাকে নিয়ে গেলো তার গন্তব্যে।ইফাদ যেতেই চাঁদ ইপ্সিকে বললো,
“কী কমপ্লেইন করেছে?এই যে একই কাহিনী?”
তখন অবনী বলে,
“না এক না।আমরা যেদিন সব আয়োজন করলাম না?সেদিন সকালে নাকি মেয়েগুলো ক্লাস করতে এসেছিলো।তারপরই নাকি আর বাসায় যায়নি।মহিলা দু’টো পাগলের মতো করে মেয়েদের খুঁজে গেছেন।আমার খুব মায়া লেগেছে,আজও এই আন্টির জন্য খুব খারাপ লাগছে”
লম্বা করে শ্বাস নিয়ে কিছু একটা ভেবে হোয়াইট বোর্ডের সামনে গিয়ে গলার স্বর খানিকটা উচিয়ে চাঁদ বলে,
“অ্যাটেনশন গাইজ!আমার কথাটা একটু মনোযোগ দিয়ে সবাই শোনো”
চাঁদের কথা মোতাবেক সকলে তার পানে তাকাতেই চাঁদ বলে,
“এমন কোনো নিউজ কি কেউ পেয়েছো যে আমাদের কোনো ক্লাসমেট অথবা তোমাদের কোনো ফ্রেন্ডকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা বা তাদের গার্জিয়ান কোনো খোঁজ করেছে?”
সকলে একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করে মাথা নাড়ে।সকলের জবাব পেয়ে ইপ্সি আর অবনীর পাশে গিয়ে বসে চাঁদ।কিন্তু মিনিট পাঁচেক বাদেই এক মেয়ে এসে চাঁদকে বলে,
“আমার এক ফ্রেন্ডকে পাওয়া যাচ্ছেনা তিনদিন ধরে।আমি ভেবেছিলাম ওর বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে হয়তো পালিয়েছে।কিন্তু এখন বিষয়টা জটিল মনে হচ্ছে চাঁদ”
কপাল কুচকে চাঁদ জিজ্ঞেস করে,
“কোনদিন থেকে পাচ্ছে না?”
“ফেয়ারওয়েলের আগেরদিন সকাল থেকেই”
বিস্ময় নিয়ে চাঁদ দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে,
“আর তুমি ভেবেছো পালিয়ে গেছে?সিরিয়াসলি নিধি?কেউ কি থার্ড ইয়ারে উঠে পালাবে?গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট না করে?আর মেডিকেলে পড়ুয়া কেউ কি পালায়?এটা মাথায় আসলোনা?”
মাথা নিচু করে নিধি বলে,
“আসলে বিষয়টা ভাবিনি তখন।ওদের মধ্যে ঝামেলা হচ্ছিলো বিয়ে নিয়ে আমি তাই সেটাই ভেবেছি”
“কার কথা বলছো?কাকে পাওয়া যাচ্ছেনা?”
“ইরানিকে”
কপাল অসম্ভব কুচকে উচ্চস্বরে চাঁদ বলে,
“হোয়াট?ইরানি?ইরানিকে পাচ্ছো না?ওরকম একটা রেসপন্সিবল মেয়েকে পাওয়া যাচ্ছেনা?আর ভেবে বসে আছো ইরানি পালিয়েছে?সিরিয়াসলি?আর ইউ ডা*ম্ব নিধি?”
নিধি চুপ করে আছে দেখে চাঁদই বলে,
“দেখি আমার সামনে থেকে যাও।মেজাজ খারাপ হচ্ছে”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
কেটে গেছে তিনটে মাস।প্রণয়ের ফাইনাল প্রফের রেজাল্ট বের হয়ে চাঁদের সেকেন্ড প্রফও প্রায় শেষের পথে।বরাবরের মতো সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর তালিকায় নাম লিখিয়েছে এবারও প্রণয়ই।এখন সে ইন্টার্নির ঝামেলা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।বন্ধুবান্ধব সকলেই যার যার পছন্দের সেক্টর বেছে নিয়েছে।সে অনুযায়ীই তারা সবকিছু পর্যবেক্ষণ করবে বলে ঠিক করেছে।কলেজ প্রাঙ্গণে তেমন আসা হয়না আর।হাসপাতালে আসে,রোগী পর্যবেক্ষণ করে আবার চলে যায়।চাঁদের সাথেও দেখা হয়না প্রণয় বা কারোরই।প্রণয় আর অরণ অতিরিক্তই ব্যস্ত।কেনোনা তারা কার্ডিওলজিস্ট হওয়ার সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে।অথবা বলা যায় তাদের দু’জনেরই শুরু থেকে স্বপ্ন একজন সফল কার্ডিওলজিস্ট হওয়া।
চাঁদও সময় পায়না দেখা করার।সেও পড়াশুনা এবং নিজ জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।এক্সাম দিয়ে হল থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাসে হাটছিলো চাঁদসহ তার বন্ধুমহলের সকলে।চাঁদকে অন্যমনস্ক দেখে ইপ্সি বলে,
“তোকে অনেকদিন ধরেই আমি এমন মনমরা দেখছি চাঁদ।কোনোকিছু নিয়ে কি তুই টেন্সড?বা ডিপ্রেসড?”
অবনীও খেয়াল করে বলে,
“অনেকদিন না আমি মাস খানেক ধরেই দেখছি ক্লাসে চুপচাপ থাকে।আগের মতো প্রাণোচ্ছল দেখা যায়না।বিষয়টা কি প্রণয় ভাইয়া জড়িত?”
চাঁদের হেলদুল দেখতে না পেয়ে পাশে থেকে ইপ্সি তাকে হালকা ধাক্কা দিতেই সে বলে,
“হ্যা?কী?ধাক্কাচ্ছিস কেনো?”
ইফাদ বলে,
“অবু আর ইপ্সু কিছু জিজ্ঞেস করেছে”
“কী?”
অবনী মেজাজ খারাপ করে বলে,
“তোর মন থাকে কোথায় চাঁদ বলতো?”
“কী করেছি বলবিতো?”
ইপ্সি চাঁদের বাহু ধরে ক্যাম্পাসের একপাশে দাড় করিয়ে চোখে চোখ রেখে শান্তস্বরে বলে,
“তোর কী হয়েছে বলবি?কোনোকিছু নিয়ে কি খুব চিন্তিত তুই?”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে অন্যদিকে চেয়ে চাঁদ বলে,
“না।তেমন কিছুইনা”
তখন ফায়ানও বলে,
“তো তুমি বলতে চাইছো এতোগুলো মানুষ একইসাথে ভুল ধারণা করছে?”
ফায়ানের কথার প্রেক্ষিতে আর কোনো জবাব দিতে পারেনা চাঁদ।ওরা কিছু জিজ্ঞেস করার পূর্বেই সেখানে এপ্রোণ গায়ে গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে কাধে ব্যাগ নিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে আসে অরণ।অরণকে দেখতে পেয়ে বাকিদের প্রশ্নকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য চাঁদ বলে,
“ঐ যে অরণ।কতদিন পর দেখলাম।আয় তোরা”
বলেই অরণের পানে এগিয়ে যায় চাঁদ।গিয়েই বলে,
“পুরোই ডাক্তার ডাক্তার লাগছে কিন্তু অরণ”
খানিকটা হেসে অরণ বলে,
“তোমার বিড়াল মানবকে দেখলে ডাক্তার ডাক্তার না।ডাক্তারই বলে সবাই”
গম্ভীরভাবে চাঁদ বলে,
“তার কথা শুনতে চাচ্ছি না”
“রাগ করে আছো?”
অরণের কথা শুনে তার পানে চেয়ে মৃদু হেসে চাঁদ বলে,
“রাগ?কার সাথে রাগ করবো?”
“যার কথা বললে”
“নাতো।রাগ করার কী হলো?”
“আমি কিন্তু ভালোই বুঝতে পারছি।কিন্তু জানোইতো আমার আর প্রণয়ের সেক্টরটাই এমন।সময় বেশি দেয়া লাগে”
“আর বাকিরা?তারা কি করছেনা?এই যে আপনি।আপনি কি একই সেক্টরে নন?এই যে আসতে পারলেন।মাঝেমাঝে আপনার সাথে কথাও হয় আমার।কিন্তু সে?সে তো একবারের জন্য খোঁজও নেয়না।আমি নিতে গেলে কোনো রেসপন্স করেনা।একটা মেসেজ অব্দি দেয়না আর না আমার রিপ্লাই করে।হয়তো টাইমপাস শেষ তাই?”
এমন কথায় চ!টে যায় অরণ।কপাল কুচকে নাক ফুলিয়ে থমথমেভাবে বলে,
“এভাবে বলবেনা।আমার বন্ধু তোমায় সত্যিই ভালোবাসে”
“ভালো…..”
চাঁদের কিছু বলার পূর্বেই অরণ বাকিদের আসা দেখে তাদের পানে চেয়ে বলে,
“আমার চাঁদের সাথে কিছু কথা আছে।তোমাদের এক্সাম শেষ না?তোমরা যাও।চাঁদকে আমি দিয়ে আসবোনে”
সকলে সম্মতি দিয়ে চলে যায়।তারা যেতেই অরণ বলে,
“ক্যান্টিনে চলো।বসি”
“খাবোনা কিছু।এখানেই কোথাও বসি”
“ঠিক আছে”
অতঃপর বাগানের পাশের পাকায় বসে দুজনে।বসতেই অরণ বলে,
“প্রণয়কে ভুল বুঝও না চাঁদ।ও কিন্তু তোমায় অসম্ভবরকম ভালোবাসে”
“ভালোবাসলে বুঝি মাসের পর মাস একটা কথা না বলেও থাকা যায়?”
“কথা না বললেই কি ভালোবাসা হারিয়ে যায় বা মুছে যায়?”
“সে কি কখনো বলেছে ভালোবাসে?হতেইতো পারে সবটা কেবলই মোহ”
“তুমি কি একবারও প্রণয়কে বলেছো ভালোবাসো?মোহ কি তোমারটা হতে পারেনা?”
“বলেননিতো পূর্ণপুকে আপনিও।তাই বলে কি ভালোবাসেন না তাকে?”
খানিকটা হেসে অরণ বলে,
“একপাক্ষিক ভালোবাসার সাথে তুমি তোমাদেরটা মেলাচ্ছো চাঁদ?”
“মেলাচ্ছিনা।আমি শুধু বললাম”
“আচ্ছা শোনো,আমি একটা জিনিস ভেবেছি।আমার মনেতো হচ্ছেনা ইহ জন্মে তোমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসার কথা বলবেও।তাই আমিই প্রণয়ের মুখ দিয়ে কথাটা বলাবো।তাতে হেল্প লাগবে তোমার।করবে কিনা?”
“আপনি বলতে চাচ্ছেন সে সত্যিই ভালোবাসে আমায়?”
“এই তিন বছরে কি একটুও বুঝতে পারোনি সেটা?”
লম্বা শ্বাস টেনে চাঁদ বলে,
“ঠিক আছে।আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো অরণ।ভেবেছিলাম প্রণয়কে বলবো।কিন্তু সেতো আমায় প্রায় ভুলেই বসেছে”
“হ্যা,অবশ্যই।বলো”
“আপনি কি আপনাদের ফেয়ারওয়েলের পর থেকে যে একের পর এক মেয়ে গায়েব হচ্ছে বিষয়টা শুনেছেন?”
কপাল কুচকে অরণ বলে,
“আম্বিয়ার কথা শুনেছিলাম।আর কোনোকিছুতো শুনিনি।বিজি ছিলামতো।কেনো বলোতো?কী হয়েছে?”
“আম্বিয়া আপুতো ফেয়ারওয়েলের দিন থেকে উধাও হয়েছে।কিন্তু এর আগেরদিন থেকেই এই বিষয়টা শুরু হয়েছে।ফার্স্ট ইয়ারের দু’টো মেয়ে আর আমাদের ইয়ারের একটা মেয়ে সর্বপ্রথম গায়েব হয়।আর আশ্চর্যজনক জিনিস কী জানেন?সেদিন আমি সন্ধ্যার দিকে প্রণয়ের সাথে দেখা করতে গেটের বাইরে যাচ্ছিলাম।এই যে ঠিক এখানটায়ই বসে ছিলাম।এবং এতো জোরে কিছু পড়ার আওয়াজ শুনলাম,ভেবেছিলাম বিড়াল টিড়াল।কিন্তু অতো জোরে মানুষ বাদে কিছুই পড়তে পারেনা।আমার কী মনে হচ্ছে জানেন?এই যে এই বাগানটার দিকেই সেই তিনটা মেয়েকে বেঁ!ধে রাখা হয়েছিলো।এটা কোনো কিডন্যা!পিং বিষয়।অথবা অন্য কিছু।ফেয়ারওয়েলের দিন আম্বিয়া আপু।আবার এরপর থেকে এর মুখে ওর মুখে শুনছি একে পাওয়া যাচ্ছেনা,ওকে পাওয়া যাচ্ছেনা।বিষয়টা ভেবে দেখেছেন?মেডিকেলে পড়ুয়া কেউ কেনোইবা পালাবে?অথবা তারা উধাও হবেই বা কেনো?সবারইতো একটা স্বপ্ন আছে।স্বপ্ন জয়ের ইচ্ছা আছে।তাছাড়া শুধু মেয়েরাই কেনো?কোনো ছেলে কেনো উধাও হচ্ছেনা?একটু জটিল না বিষয়টা?”
বলেই থামে চাঁদ।খানিকটা শ্বাস নেয়।অতঃপর আবার বলে,
“আপনি শুনে আশ্চর্য হবেন আমি কী দেখেছি”
“কী দেখেছো?”
“দেয়ালেরও কান আছে।আপনার মাথাটা ঝুকান আমি আপনার কানে বলছি”
অরণ মাথা ঝুকাতেই চাঁদ তার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
“আমাদের অনিন্দ্য ঘোষ স্যার আছেন না?সেদিন ওনার কেবিনে একটা কাজের জন্য যাচ্ছিলাম।বাইরে থেকেই দেখি ওনি একটা মেয়ের সাথে খুব ঘ…ঘনিষ্ঠভাবে ছিলেন কিন্তু মেয়েটাকে দেখে মনে হলো মেয়েটা বাধ্য অথবা জোর করে ওনি….. তারপর সেখানে আর থাকতে পারিনি।তারপর বিষয়টা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে চেয়েও পারিনি।বারবার সেই দৃশ্য মনে পড়তো।এবং বিষয়টা আরও দৃঢ়ভাবে আমার মস্তিষ্কে চেপে বসে সেদিন,যেদিন ক্লাস শেষে স্যারকে এই বাগানের দিকে আসতে দেখি।সবাই প্রায় চলে গিয়েছিলো।আমি খুব ভয়ে আর পা টিপে ওনার পিছু নেই।বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা…. ”
খানিকটা থেমে আবারও লম্বা শ্বাস নিয়ে চাঁদ বলে,
“কিন্তু ওনাকে আমি….আমি এই বাগানের দিকে আসতে দেখি।অন্ধকারে অত বোঝা যাচ্ছিলোনা।তবে যখন কোনো মেয়ের গোঙানি শুনতে পাই বুঝেছিলাম ঠিক এ জায়গাটায় সেদিন আমি কোনো মানুষেরই আওয়াজ পেয়েছিলাম।তারপর যা দেখলাম!আমার চোখ অ*ন্ধ হলে বোধহয় ভালো হতো অরণ!”
লম্বা শ্বাস টেনে আস্তেসুরে অরণ বলে,
“কী দেখেছো?”
ঘনঘন শ্বাস নিয়ে চাঁদ বলে,
“ওখানে আরও তিনজন লোক ছিলো।এবং তারা তিনজন মিলে!তিনজন মিলে মেয়েটাকে…….”
চাঁদের থেকে সরে এসে চাঁদের দু’বাহু ধরে অরণ বলে,
“শান্ত হও,শান্ত হও।এভাবে হাইপার হয়ো না”
লম্বা শ্বাস টেনে চাঁদ বলে,
“হাইপার হচ্ছিনা।কিন্তু সেই দৃশ্য আমি ভুলতে পারিনা অরণ।সেখান থেকে নড়তেও পারিনি,পাছে আমায় দেখে ফেলে?তার দরুন পুরোটা সময় সেখানে থেকে মেয়েটার আহাজারি,গগন বিদারি চি!ৎকার শুনতে হয়েছে আমায়।কি আকুতি মিনুতি করলো!অথচ পা!ষাণগুলো শুনলোনা।শুধু সেই পর্যন্তই না ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে মেয়েটার ভি*ডি*ও ও করলো।মেয়েটার সাথে সেলফি তুললো।কি ব!র্বর!কেমন অমা!নুষ তারা!মেয়েটাকে অজ্ঞা*ন করে কাপড়ে পে!চিয়ে কোথায় যেনো নিয়ে গেলো।এরপর আর জানতে পারলাম না”
অরণ এদিক ওদিক চেয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
“আস্তে বলো কেউ শুনলে বিপদ”
“বলছি,শুনুন।এর কয়েকদিন পর থেকে খেয়াল করি যেই মেয়েটাকে স্যারের কেবিনে দেখেছিলাম সেই মেয়েটা আর ক্লাসে আসেনা।সেইসাথে একে একে মেয়ে শুধু উধাও হচ্ছে।আশ্চর্যজনক বিষয় কী জানেন?প্রথম প্রথম কমপ্লেইন এলেও এরপর থেকে আর কোনো কমপ্লেইন আসেনা।সেইসাথে আমার ক্লাসেরই দু’একটা মেয়ের সু!ইসা*ইডের খবরও আমি পাই।তার চেয়েও আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে অস্বাভাবিকভাবে আরও একটা জিনিস ঘটে।যাদেরকে পাওয়া যাচ্ছিলোনা বা যারা উধাও হয়েছিলো।হঠাৎ করেই এই মাসের এক্সামের কয়দিন আগেই তারা আবার আসা ধরে।বিষয়গুলো আমি বুঝতে পারছিলাম না।আর সন্দেহটা অনিন্দ্য স্যারকেই ঘিরে ছিলো তাই তাকে নজরে রাখা শুরু করি।এক্সামের ঠিক আগেরদিন তার পিছু গিয়ে যা দেখি আপনি ভাবতেও পারবেন না আমি কী দেখেছিলাম সেদিন!”
অরণ ঢোক গিলে বলে,
“কী দেখেছো?আবার কাউকে সে ধ!র্ষ…..”
“না না।আমি সেদিন রাস্তার পাশে আম্বিয়া আপুকে দেখি!আম্বিয়া আপু?মনে আছে আপনার?আম্বিয়া আপু তার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।ঘনিষ্ঠভাবে তাকে ধরে রেখেছে এবং শেষে দুজন দুজনকে….”
“দুজনকে?”
“কা….কিস করে।বিষয়টা আমি নিতে পারছিলামনা।তারপরতো এক্সামই।প্রথম এক্সামটা বেশি ভালো যায়নি।এসবকিছু আমি বুঝতে পারছিনা।কী হচ্ছে,কেনো হচ্ছে,কে করছে,কেনোইবা করছে কিছুই না।পাগল হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা অরণ!অথচ প্রণয়কে পাশে পাচ্ছিনা বলার জন্য।মেন্টালি খুব ডিপ্রেসড হয়ে পড়েছি।কী করবো বুঝছিনা”
মৃদুস্বরে অরণ জিজ্ঞেস করে,
“কী করতে চাচ্ছো এখন?”
“আমি বিষয়টার অনেককিছুই যেহেতু জানি পুরোটাই খতিয়ে দেখতে চাই”
“আমার মনে হচ্ছে এটা রাজনীতি সংক্রান্ত কিছু হতে পারে।নাহয় বেস্ট মেডিকেল অফ বিডিতে এমন উচ্ছৃঙ্খল আর বি!শ্রী কাজ কে ই বা করবে?অথবা করতে পারে?সাহস হবে কারো?”
মাথা ঝুলিয়ে চাঁদ বলে,
“হিম….এরকম কিছু হতেই পারে।তবে অন্য কিছুও হতে পারে।বিষয়টাতো আমরা জানিনা”
“তাহলে আহিনকে বলবো?”
“না।কেনো?খামোখা তাকে বিরক্ত করারতো প্রয়োজন নেই।ইলেকশনে দাঁড়াবে,এমনিতেইতো ঝামেলা আছে। শুধু শুধু নতুন ঝামেলা দেয়ার দরকার নেই।বিষয়টা আমিই দেখি।আমি আম্বিয়া আপুর খোঁজ টা আগে করবো।আম্বিয়া আপুকে ধরলেই সবটা জানা যাবে”
“একা একা বেশি পাকামো করার দরকার নেই।কলেজটা যেহেতু আমারও আর সবাই যেহেতু আমারও ক্লাসমেট,ছোটবোন আমি যথাসাধ্য সাহায্যে আছি তোমার।এতো বড় মিস্ট্রিতে তোমায় রিস্ক নিতে দেওয়া যাচ্ছেনা।তুমি আমার বন্ধুর আমানত,আমার হবু ভাবি সো কান্ট লেট ইউ গো ইন ডে!ঞ্জার”
অরণের শেষের কথা শুনে লজ্জা পেয়ে দৃষ্টি নত করে চাঁদ।অতঃপর অরণের কথায় চোখ তুলে তাকায়,
“আজ তাড়াতাড়ি এসে পড়েছি যথেষ্ট সময় আছে,এখানে যেহেতু বসেই আছি একবার বাগানটায় গিয়ে দেখে আসা উচিত না চাঁদ?যাবে তুমি?”
“কেউ যদি দেখে ফেলে?তাছাড়া বাগানটা বেশ অন্ধকারের দিকে।ওপাশটায় আলো কম যায়”
“ভয় পাচ্ছো?”
“না তেমন কিছুনা।যদি ওখানে কেউ থেকে থাকে দেখে ফেলবে”
“দেখবেনা।সাবধানে যাবো আর দিনের বেলা মনে তো হচ্ছেনা কারোর থাকার কথা।চলো”
“চলুন”
অতঃপর দুজনে পা বাড়ায় অন্ধকার বাগানের দিকে।যত এগোচ্ছে অন্ধকারাচ্ছন্ন বাগান ঘন অন্ধকারে ছেয়ে যাচ্ছে।অনেকটা গভীরে যাওয়ার পর কিছুই তেমন একটা দেখা যাচ্ছেনা।অগ্যতা অরণ ফ্ল্যাশ জ্বালাতে গেলে চাঁদ ছিটকে এসে অরণের পাশে দাঁড়িয়ে তার বাহু জাপটে ধরে।চাঁদের এরূপ কান্ডে ফ্ল্যাশ না জ্বালিয়েই চাঁদের কানে সে ফিসফিসায়,
“কী হয়েছে?ভয় পেয়েছো?”
ঢোক গিলে অরণের হাত আরও জোরে চেপে ধরে চাঁদ বলে,
“ও…ওখানে কিছু আছে অরণ।আম…আমি নরম কিছুতে পা দিয়েছি সম্ভবত গলে গিয়েছে।পা উঠাতেই পচা গন্ধ পাচ্ছি।আপনিও পাচ্ছেন না?”
অরণ নাক ফুলিয়ে বায়ু ভেতরে নিতেই নাকমুখ কুচকে বলে,
“হ্যা।এরকম গন্ধতো আমি আগেও পেয়েছি,মর্গেজে”
“ম….ম….মর্গেজে?মা..মানে?”
“মানে তুমি যা ভাবছো আমিও তাই ভাবছি তবে আমাদের শিওর হওয়ার জন্য দেখা উচিত”
“না না অরণ!আম..আমি…হোচট খেতে গিয়ে আপনার কাছে এসে পড়েছি।শক্ত কিছু লেগেছে পায়ে,আপনি যা ভাবছেন তাতো নাও হতে পারে।চ…চলুন চলে যাই প্লিজ”
“ভয় লাগছে?”
“খা…খানিকটা”
“এই পর্যায়ে এসে চলে যেতে বলছো?আর তোমার মতো একজন স্ট্রং পার্সোনালিটির মেয়ের এভাবে ভয় পাওয়া আমায় অবাক করছে চাঁদ।তাছাড়া একজন ডাক্তারকে সদা সবকিছুর জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়।আদারওয়াইজ ডাক্তার কিভাবে হবে?”
লম্বা শ্বাস টেনে অরণকে ধরে রেখেই চাঁদ বলে,
“একচুয়ালি সেদিনের সেই মেয়েটার বিষয়টা ভাবলেই আমার অদ্ভুত লাগে।ঠিক আছে চলুন দেখি।তবে দাঁড়িয়ে থেকেই ফ্ল্যাশ জ্বালাবেন না।কেউ দেখে ফেলবে।তাছাড়া আমরা যা ভাবছি তা হলে একদমই না।খানিকটা ঝুকে তারপর জ্বালান”
অতঃপর অরণ খানিকটা ঝুকে ফ্ল্যাশ জ্বালাতেই অরণের হাত ছেড়ে দিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরে চাঁদ সে পানে তাকিয়ে থাকে।অরণও চোখজোড়া বন্ধ করে সাথে সাথে ফ্ল্যাশ অফ করে।চাঁদ অরণের হাত খা!মচে ধরে আস্তে করে খুব কষ্টে বলে,
“লা….লা*শ অরণ!আম্বিয়া আপুর লা*শ!কিন্তু…..কিন্তু আপ….”
অরণ ফিসফিসিয়ে বলে,
“কোনো কথা বলবেনা।আর তোমার জুতোতে ওর মাং!স লেগেছে সেটাই গলে গেছে।নিশ্চয়ই র*ক্তও লেগেছে।ছাপ পড়ে যাবে।জুতা খোলো ফাস্ট।খুলে হাতে নাও”
“কিন্তু?”
“যা বলেছি করো”
অরণের কথানুযায়ী চাঁদ তার জুতা খুলে ব্যাগে ভরে নেয়।তা দেখে অরণ বলে,
“এখানে আর এক মুহুর্ত না,চলো।কেউ দেখে ফেলবে।লা*শ যেহেতু আছে খু*নীরাও থাকবে অথবা এসে পড়বে।এ বিষয়ে পড়ে আলাপ করবো।নাও কাম ফাস্ট”
বলেই চাঁদের কব্জি ধরে খুব সামলে পা টিপে চাঁদকে নিয়ে বাগান থেকে বেরিয়ে আসে অরণ।
To be continued….
[বিঃদ্রঃবিগত ৩ দিন ধরে আমার অ্যাকাউন্টটা রে!স্ট্রি!ক্টেড ছিলো।তাই আমি আমার বড় ভাইয়ার অ্যাকাউন্ট দিয়ে গত পর্বের কমেন্টবক্সে বিষয়টা জানিয়ে দিয়েছিলাম।আশা করছি কেউ রেগে থাকবেন না।রে!স্ট্রি!ক্ট হলে কেমন প্রবলেম হয় সবাইতো জানেনই,পোস্ট,কমেন্ট,রিয়েক্ট কিছুই করা যায়না।আমার ক্ষেত্রেও একই জিনিস হয়েছে।এই পর্বটা আমি গত পর্বের একদিন পরই দিয়ে দিতাম লিখেও ফেলেছিলাম।এবং এই পর্বের জন্য আমি অতিরিক্ত প্রফুল্লচিত্তে ছিলাম।অনেকেইতো এই সময়টার অপেক্ষা করেছেন।গত পর্বে এয়ো বলেছিলাম অতীতের আর বেশি বাকি নাই।এটাই তার সূচনা।আশা রাখছি সবার সাসপেন্স ধীরে ধীরে ক্লিয়ার হবে।এক পর্বেই সব জেনে যাবেন না।এটাতো কেবল রহস্যন্মোচন শুরু হলো।আর হ্যা আবারও বলছি গল্পটা কিন্তু কাল্পনিক তাই বাস্তবতার সঙ্গে কেউ গুলাবেন না।ইটস আ হাম্বাল রিকুয়েস্ট]