মনের_উঠোন_জুড়ে #পর্ব_২৪

0
324

#মনের_উঠোন_জুড়ে

#পর্ব_২৪

#লেখনীতে_নূন_মাহবুব

-“বিশ্বাস করুন স্যার, আমি সত্যিই কিছু করি ।আমি মা’রি নি ঐ কন্ট্রাক্ট কিলার কে।”

-” ধরা পাওয়ার পর সব অপরাধীরা এটায় বলে যে, আমি কিছু করি নি।”

-” আমি সত্যিই বলছি স্যার।”

-” ঠিক আছে তুই সত্যি বলছিস। তাহলে এটা বল যে ঐ কিলার টা মা’রা যাওয়ার পাঁচ মিনিট আগে তুই তার সাথে কি কথা বলেছিস?”

-” আসলে স্যার আমি এসিপি রায়হান মীরের মেয়ে কে মা’রা’র জন্য ঐ কিলার কে টাকা দিয়েছিলাম। আমার কথা মতো ঐ কিলার ভার্সিটি গিয়ে এসিপির মেয়ের উপর অ্যাটাক করে। কিন্তু আপনি তাকে বাঁচিয়ে নেন।”

-” এসিপির মেয়ে কে কেন মা’র’তে চায়ছিলি?”

-” আমার বাবা একজন নারী পাচারকারী ছিলেন। অনেক সুখের সংসার ছিলো আমাদের। কিন্তু ঐ এসিপির জন্য আমার বাবার ফাঁ’সি হয়। আমাদের সুখের সংসার ভেঙ্গে গুড়িয়ে যায়। বাবার মৃ’ত্যু সহ্য করতে না পেরে মা ও হার্ট অ্যাটাক করে মা’রা যায়। এতিম হয়ে যায় আমি আর আমার আদরের ছোট বোন। আমি তখনি সিদ্ধান্ত নেই আমি এর বদলা নিবো। কিন্তু বাবার ফাঁ’সি হ‌ওয়ার কিছু দিন পরে এসিপি আর তার পরিবারের নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ পাই। আমি হন্যে হয়ে খুঁজেছি তাদের। কিন্তু তাদের কোনো সন্ধান পাই নি। হঠাৎ দশ‌ বছর পর এসিপির মেয়ের সন্ধান পেয়ে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি নি ‌। পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়েছিলাম ঐ কিলার কে এসিপির মেয়ে কে মা’রা’র জন্য। কিন্তু কেউ তাকেই মে রে দিলো।ব্যাড লাক আমার।আম ও গেলো আর বস্তা ও গেলো। আমার বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ আমি নিতে পারলাম না।”

-” সাহিত্য কামরুলের শার্টের কলার চেপে ধরে বললো, এজন্যই সবাই কথায় বলে চোরের মায়ের বড় গলা।তোর বাবা ছিলো একজন পাচারকারী। কিন্তু এমন বড়ো মুখ করে বলছিস যেন সে কোনো মহৎ ব্যক্তি ছিলো। আবার বুক ফুলিয়ে গর্ব করে বলছিস আমার বাবা একজন পাচারকারী ছিলো।তোর বাবা আইনের চোখে একজন অপরাধী ছিলো।আর সে তার কর্মফল ভোগ করেছে।”

-“আপনি কি হুমায়ূন আহমেদের সেই উক্তি টি শোনেন নি স্যার? যেইখানে হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন, পৃথিবীতে অসংখ্য খারাপ পুরুষ আছে , কিন্তু একটা ও খারাপ বাবা নেই। হোক সে পাচারকারী তবু ও বাবা তো বাবাই হয়। বাবাদের আলাদা কোনো সংজ্ঞা হয় না।বাবারা হাজার অপরাধ করলেও সন্তানের চোখে তারা বাবাই থাকে, অপরাধী হয় না।”

-” এসব জ্ঞান এখন তোর নিজের পকেটে রাখ। খুব তো নিজের বাবার সাফাই গায়ছিস।নিজে এতিম হয়েছিস সেই কথা বলছিস। কিন্তু একবার ও সেইসব বাচ্চাদের কথা ভেবে দেখিস নি যাদের মা বোন পাচার হয়েছিলো।কতো বাচ্চা এতিম হয়েছিলো?কতো বাচ্চা মায়ের আদর ভালোবাসা ছাড়া বড়ো হয়েছিলো? এখন এসেছিস নীতি কথা শোনাতে।”

-” কি করবো স্যার বলুন তো।বাবা কে যে খুব ভালোবাসতাম। ধরুন আপনার বাবা একজন অপরাধী। এখন আপনি তার ছেলে হয়ে পারবেন তার হাতে হাতকড়া পরাতে?”

-” শোন আমার বাবা এমন নয়।আর যদি এমন হয় ও আমার একটুও হাত কাঁপবে না তার হাতে হাতকড়া পরাতে।”

-” এটা খুব সহজেই বলে দেওয়া যায়। কিন্তু করে দেখানো যায় না।”

-” সাহিত্য কামরুলের কথার পিঠে কথা না বাড়িয়ে আবৃত্তি করা স্কেচ টা কামরুলের সামনে দিয়ে বললো,ওসব কথা ছাড়।আর এই স্কেচ টা ভালো করে দেখ একে চিনতে পারিস কিনা?আর হ্যাঁ একদম মিথ্যা কথা বলার চেষ্টা করবি না ‌।কারণ আমি খুব ভালো করে জানি তুই এই লোক টা চিনিস। সেদিন ভার্সিটিতে তোর ভাড়া করা গুন্ডা যখন উষ্ণতার উপর অ্যাটাক করে তখন এই লোকটা সেইখানে উপস্থিত ছিলো।সে উষ্ণতার উপর কড়া নজরদারি করছিলো।আমি নিজে চোখে তাকে দেখেছিলাম।”

-” হ্যাঁ স্যার একে আমি চিনি।ওর নাম রতন।আগে ছোটখাটো একজন চোর ছিলো।শুনেছি এখন নাকি বড়ো বড়ো লোকদের সাথে কাজ করে।আমি ওকে যতটুকু চিনি ও কোনো খু’ন করতে পারে না।”

-” ও খু’ন না কিডন্যাপ করেছে।এখন বল এই রতন ওরফে পিজ্জা ডেলিভারি বয় ওকে কোথায় পাবো?”

-” ওর বাড়ি কুসুমপুর ।একটা বস্তিতে থাকে ও। সম্ভবত এইখানে গেলে পাবেন ওকে।”

-” প্রায় ঘন্টা খানেক পরে সাহিত্য এসে কুসুমপুর পৌঁছায়। এইখানে এসে রতনে কথা বলতেই একটা বয়স্ক লোক বলে উঠে, আপনি কি থানা থেকে এসেছেন? রতন কি আবারো অন্যের ব‌উ ভাগিয়ে নিয়ে এসেছে?”

-” কেন এর আগেও এনেছে বুঝি?”

-” হ্যাঁ স্যার।বুঝি না এই রতনের মধ্যে কি এমন আছে যা দেখে মেয়েরা ওর প্রেমে পাগল হয়ে নিজের ঘর সংসার ছেড়ে চলে আসে।”

-” বুঝতে পারছি এই রতন জায়েদ খানের লাইট ভার্সন। আচ্ছা এই রতনের ঘর কোনটা?”

-” চলুন স্যার আমি আপনাকে নিয়ে যাচ্ছি বলে কয়েক কদম হাঁটার পর বয়স্ক লোক টা একটা ঘর দেখিয়ে বললো,এই যে এইটা রতনের ঘর।”

-” ঠিক আছে , আপনি এখন আসুন। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।বয়স্ক লোক টি কে বিদায় দিতে সাহিত্য রতনের দরজার কড়া নাড়ে। প্রায় পাঁচ মিনিট পরে রতন দরজা খুলে চোখ মুছতে মুছতে বলে,আবে শা’লা কে রে তুই? শান্তি করে একটু ঘুমোতে ও দিচ্ছিস না।”

-” তৎক্ষণাৎ সাহিত্য রতনের কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে বললো,আর একটা বাজে কথা যদি বলেছিস একদম শুট করে শান্তির ঘুম পাড়িয়ে দিবো।তোর আর কয়টা রুপ দেখাতে বাকি আছে বল তো?পিজ্জা ডেলিভারি বয়,লাভার বয়, কিডন্যাপার বয়, চোর।এক কথায় অল ইন ওয়ান। গত রাতে শিকদার ভিলায় তুই পিজ্জা ডেলিভারি বয় সেজে গিয়েছিলি। সেই খানে গিয়ে তুই সবাইকে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে খাইয়েছিস। তারপর উষ্ণতা কে তুই কিডন্যাপ করছিস।তোর জন্য চার চার জন মানুষ ম’র’তে বসেছিলো ।তোর তো কঠিন শাস্তি হবে।”

-” সাহিত্যের কথা শুনে রতন সাহিত্যের পা জড়িয়ে ধরে বলে, স্যার আমি একজন ছোট খাটো চোর। চুরি করতে গিয়ে অনেকের সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এমনকি অনেক মেয়েকে আমি প্রেমের জালে ফাঁসিয়েছি। কিন্তু কথায় বলে না ” চোরের দশদিন আর গেরস্তের একদিন।চুরি করতে গিয়ে লতা নামের একটা মেয়ের সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমি ছাড়া ওর আর কেউ নেই।ওকে আমি কথা দিয়েছিলাম আমি খারাপ কাজ ছেড়ে দিয়ে ভালো হয়ে যাবো। কিন্তু দুই দিন আগে হঠাৎ করে লতার বড়ো একটা এক্সিডেন্ট হয়।যার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন ছিলো।আর টাকার জন্যই আমি এসব কিছু করেছি। এইটুকু কাজের বিনিময়ে আমি এক লাখ টাকা পেয়েছি।যা দিয়ে আমার লতার চিকিৎসা করতে পেরেছি।”

-” কার কথায় করেছিস এইসব? কে টাকা দিয়েছে তোকে?”

-” আমি তাকে চিনি না স্যার।তবে এটা জানি উষ্ণতা কোথায় আছে? স্মৃতিনগর একটা বন্ধ কারখানা আছে। সেইখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে উষ্ণতা কে।হয়তো ঐখানে গেলে আসল কালপ্রিট কে পেয়ে যাবেন।”
___________________________________

-” শিক্ষা কে অন্ধকার একটা রুমে চেয়ারে বসিয়ে হাত পা বেঁধে রাখা হয়েছে।রাতে জ্ঞান ফেরার পর শিক্ষা চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেয়।যার জন্য বাধ্য হয়ে আবারো শিক্ষা কে অজ্ঞান করে রাখা হয়েছিলো। শিক্ষা অজ্ঞান অবস্থায় মাথা নিচু করে ছিলো এমন সময় কেউ একজন এসে শিক্ষার মুখে এক বালতি পানি ছুঁড়ে মা’রে।যার ফলে হকচকিয়ে উঠে শিক্ষা। তার সাথে ঠিক কি হয়েছে বুঝতে বেশ সময় লেগে যায় শিক্ষার। অনেকক্ষণ যাবৎ চেয়ারের সাথে হাত বেঁধে রাখার জন্য ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠে শিক্ষা।সে নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করে বলে , কার এতো বড়ো কলিজা আমাকে এইখানে বেঁধে রেখেছিস। কাপুরুষের মতো একটা মেয়েকে এইভাবে বেঁধে রাখতে একটু ও বিবেকে বাঁধলো না তোদের? সাহস থাকে তো আমার সামনে আয়। আমার হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে লড়াই কর আমার সাথে। এইভাবে পর্দার আড়ালে থেকে কাপুরুষের পরিচয় দিস না।আবারো বলছি সাহস থাকে তো সামনে আয়। শিক্ষার কথা শুনে মূহুর্তের মধ্যে শিক্ষার সামনে একটা অবয়ব এসে দাঁড়ায়।যা দেখে শিক্ষার যেন পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যায়।সে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। কণ্ঠনালী কাঁপতে থাকে তার। শিক্ষা অবাক হয়ে কাঁপা কাঁপা স্বরে জিজ্ঞেস করে ,তাহলে তুমি রয়েছো এসব কিছুর পেছনে??

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here