#আবার_প্রেম_হোক(৪১+৪২)
#নুসরাত_জাহান_মিম
৪১.
সবেমাত্রই রিক্সা ঠিক করে তাতে উঠে বসেছিলো চাঁদ।এমতাবস্থায়ই সেখানে উপস্থিত হয়ে প্রণয় তাকে বলে,
“চাপুন”
অতঃপর কপাল কুচকে চাঁদের কিছু জিজ্ঞেস করার পূর্বেই প্রণয় তার পাশে বসতে বসতে রিক্সাওয়ালাকে বলে,
“চলো মামা”
রিক্সাওয়ালা রিক্সা চালানো শুরু করতেই চাঁদ বলে,
“আপনি?”
চাঁদের কথায় তোয়াক্কা না করে প্রণয় তাকে পালটা প্রশ্ন করে,
“বান্ধবীদের সাথে আসেন না কেনো এখন?”
“আছে কিছু জিনিস।কিন্তু আপনি হঠাৎ?”
“ভাবলাম যেহেতু একই রোডে যাচ্ছি আপনার সাথেই যাই”
“কিন্তু আমি ছেলেদের সাথে রিক্সায় উঠি না”
চাঁদের কথা শুনে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করতে করতে চাঁদের দিকে তাকিয়েই প্রণয় শুধায়,
“আমি তবে মেয়ে?”
“না না,তা না।কিন্তু আপনিতো মেয়েদের ….”
চাঁদের কথা সম্পূর্ণ করার পূর্বেই চাঁদের থেকে খানিকটা চেপে বা পাশে মুখ করে আকাশপানে চেয়ে প্রণয় বলে,
“মেয়েদের আর তার মাঝে বিস্তার ফারাক”
বেশকিছুদিন পরের কথা,
ক্যান্টিনে বসে প্রণয়ের বন্ধুমহল তারই জন্য অপেক্ষা করছিলো।এবং তাদের সাথে চাঁদের বন্ধুমহলও শামিল।উদ্দেশ্য একটাই।হঠাৎ প্রণয় আর চাঁদের এতো ঘনিষ্ঠতার কারণ কী?সেই রহস্যই উদঘাটন করা।আগ্রহ শুধু তাদেরই নয়।পুরো কলেজের সকলের মুখে এখন একটাই নাম।আর তা হলো ‘প্রণয়-চাঁদ’।তারাও জানতে চায় প্রণয় আর চাঁদের মাঝে কী চলে?কেনোনা বিগত এক মাস যাবৎ প্রণয় আর চাঁদ একসাথেই কলেজে আসে আবার একইসাথে বেরও হয়।সেইসাথে দুজনের সখ্যতাও গড়ে উঠেছে আগের তুলনায় বেশ!যেই প্রণয়কে কেউ কখনো কোনো মেয়ের দশহাত কাছেও দেখেনি সেই প্রণয় এখন অনায়াসে একটা মেয়ের পাশে পাশে হেটে বেড়ায়,একই রিক্সায় চড়ে বেড়ায়।তার চোখে চোখ রেখে কথোপকথন করে।কেবল এই একটা মেয়ের সাথেই তার এতো সখ্যতা কেন গড়তে হবে?কী এর কারণ?প্রণয় কি চাঁদের প্রেমে পড়েছে?মেয়েটাকে কি ভালোবাসে সে?নাকি মেয়েটা প্রণয়ের বিশেষ কেউ?প্রথমদিন থেকেই তাদের দুজনকে নিয়ে সকলের সন্দেহ ছিলো।এখন যেনো তার অন্ত নেই!বর্তমানেও ক্যান্টিনের অনেকেই চাঁদ আর প্রণয়ের বন্ধুমহলকে দেখেই তাদের নিয়ে সমালোচনায় মত্ত হয়েছে।তাদের সকলের ধারণা চাঁদ আর প্রণয় প্রেম করছে,সম্পর্ক আছে তাদের মাঝে।কিন্তু এখনও অব্দি এমন কোনো লক্ষ্মণই তারা দেখতে পায়নি যাতে করে সুনিশ্চিত হওয়া যায় যে তারা আসলেই একটা সম্পর্কে আছে।
খানিকটা কেশে ফায়ানই প্রথমে মিরকে জিজ্ঞেস করে,
“হঠাৎ আমাদের ডাকার কারণটা বুঝলাম না ভাইয়া?”
জবাব আসে পূর্ণতার কাছ থেকে,
“কারণটা কী আদোতেই তুমি বুঝতে পারছোনা ফায়ান?”
ফায়ান গম্ভীরভাবে জবাব দেয়,
“হয়তো কিছুটা আন্দাজ করতে পারছি”
এবার শোনা যায় মিরার কন্ঠস্বর,
“অবনী আর ইফাদকেতো আমি বলেছিলাম ফায়ান”
মিরার কথা শুনতেই ফায়ান অবনী আর ইফাদের দিকে তাকায়।অতঃপর ইফাদ আমতাআমতা করে বলে,
“আ..আসলে তুই তো শুনতে চাস নি তাই আরকি বলিনি”
ইফাদের কথার অর্থ আর কেউ না বুঝলেও ফায়ান ঠিকই বুঝতে সক্ষম হলো।অতঃপর এই প্রসঙ্গ এখানেই সমাপ্ত করতে সে আবার বললো,
“তা বলুন কী আলোচনা করতে ডাকলেন?”
এবার রবিন বললো,
“আমাদের সন্দেহ…”
রবিনের কথাকে সম্পূর্ণের পূর্বেই অবনী ঝট করে বললো,
“সন্দেহ আমাদেরও ভাইয়া।কিন্তু চাঁদতো নিজে থেকে কিছু বলছেনা”
ফায়ান সন্দিহান কন্ঠে বলে,
“বাকিদের মতো তোদেরও কি আসলেই মনে হচ্ছে চাঁদ আর প্রণয় ভাইয়ার মাঝে কিছু চলছে?”
জবাব আসে ইপ্সির কাছ থেকে,
“মনে না হওয়ার মতো তো কিছু দেখছিনা ফায়ান”
মির গম্ভীরভাবে বলে,
“তোমাদের এজন্যই ডাকা যেনো এই বিষয়টা নিয়ে আমরা কিছু করতে পারি”
হঠাৎ অরণ বলে,
“যেখানে প্রণয় আর চাঁদ নিজে থেকেই কিছু বলছেনা সেখানে তোরা এতোটা শিওর কি করে হচ্ছিস যে আসলেই ওদের মাঝে কিছু চলছে?”
তখনই পূর্ণতা খ্যাক করে উঠে,
“তো চলছেনা?তুই বলছিস কিছুই চলছেনা?কিছু না চললে চেনা নেই জানা নেই অপরিচিত একটা মেয়ের সাথে ওর এতো ঢলাঢলি কিসের?”
আড়চোখে তাকায় অরণ পূর্ণতার পানে।তাকাতেই চোখজোড়ায় এক আক্রোশ ঘৃ!ণা আর অসীম পরিমাণ অস্বস্তি দেখতে পায়।এ অস্বস্তি কি তবে চাঁদের জন্য?পূর্ণতা কি চাঁদের সাথে রুষ্ট?অরণের ধ্যান ভাঙে ফায়ানের গম্ভীর কন্ঠে,
“চাঁদকে নিয়ে কোনো বাজে কথা শুনবোনা আপু।নিজের জবানে লাগাম দিতে শিখুন।পুরো বিষয়টাই আপনি একজনের উপর চাপিয়ে দিতে পারেন না”
পূর্ণতার বিরুদ্ধে কোনো কথাই অরণ শুনতে পারেনা তবে এবার ফায়ানকে বলার মতো তার কাছে কিছুই নেই।কেনোনা পূর্ণতা বলেছেই এমন কথা যার জন্য তাকে এ কথা শুনতে হয়েছে।এমতাবস্থায় মিরা একবার পূর্ণতার দিকে চেয়ে ধ্যান দেয় অরণের দিকে।অরণকে কিছু বলতে না দেখে অবাক হয় ঠিকই তবে বুঝতেও পারে অরণের কাছে ফায়ানের বলা কথার প্রেক্ষিতে আর কোনো জবাব নেই।অতঃপর প্রিয় বন্ধুকে নিয়ে সেও বাজে কথা নিতে না পেরে পূর্ণতাকে বলে,
“মুখ কিছুটা সামলে কথা বলবি পূর্ণ।ভুলে যাস না তুই প্রণয়কে নিয়ে কথা বলছিস।আর ওর ক্যারেক্টার,পার্সোনালিটি সম্পর্কে আমরা সকলেই অবগত।যেহেতু চাঁদের সাথে তাকে দেখাই যাচ্ছে নিশ্চিত এখানে কোনো কারণ আছে এবং সেই কারণ উদঘাটন করতেই আমাদের সকলের একসাথে হওয়া।এখন এখানে তুই কাউকেই কোনোরূপ দোষারোপ করতে পারিস না।ওদের দুজনের যদি একে অপরের সাথে থাকতে আপত্তি না থাকে আমাদের বা তোর কেনো থাকবে?আর এক লিঙ্গ আরেক লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হবে এটাইতো প্রকৃতির নিয়ম।এটাইতো হাজার হাজার বছর ধরে হয়ে এসেছে।নাহলে দুনিয়া চলতো কি করে?আর ওরা যদি একে অপরকে ভালোও বেসে থাকে তাতেও তো আমাদের কারো কোনো আপত্তি থাকার কথা না।বরং আমি খুশিই হবো আমার বন্ধুর জীবনেও প্রেম আসলো বলে।আমার বন্ধুর জীবনে কোনো নারীর আগমন ঘটলো বলে,যে নারী তাকে প্রাণবন্ত করে তুলছে আমি তার কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবো।সত্যি কথা আমি বড়োই খুশি হবো যদি জানি চাঁদ আর প্রণয় একে অপরকে ভালোবাসে শুনলে।চাঁদকে আমার ভীষণ পছন্দ।আর যদি সে আমার ভাবি হয়ে আসে আই উইল বি দ্যা হ্যাপিয়েস্ট পার্সন এভার”
তৎক্ষণাৎ রিহা বলে,
“নট অনলি ইউ।আমি এবং আমরা সবাই ই খুশি হবো।মিরতো চাইতোই চাঁদই যেনো ওর গম্ভীর মামার বউ হয়ে আসে”
কথাখানা শুনতেই ফায়ান তার চোখজোড়া বন্ধ করে।যদিও এসব শুনতে খানিকটা কষ্ট হচ্ছে তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে শুনে যাচ্ছে কেবল।
“হ্যা আমি অবশ্যই চাই ঘসেটি ই যেনো আমার মামি হয়ে আসে।কিন্তু বিষয়টাতো এখনো ক্লিয়ার না”
মিরের কথা শুনে ইফাদ বলে,
“হ্যা ভাইয়া ঠিক বলেছে।আমরা শুধু দুজনকে একসাথে দেখেই আন্দাজ করে নেবো যে তাদের মাঝে কিছু আছে বিষয়টা পাশের বাসার আন্টি টাইপ হয়ে যায়না?অন্যের সমালোচনা?”
ইফাদের কথার জবাব দেয় অরণ,
“সমালোচনাতো এখনও তোমরা সবাই করছো।আর সেটা বসে বসে আমি শুনেও যাচ্ছি”
মির মেজাজ খারাপ করে বলে,
“তুই চুপ থাক তো।সারাজীবন বই নিয়ে বসে থাকলে প্রেম-ভালোবাসার কিছু বুঝবি নাকি তুই?”
অরণ মৃদু হেসে বলে,
“হ্যা তাইতো!প্রেম-ভালোবাসা কি আমায় সাঝে?”
অরণের কথা শুনে তার পানে তাকিয়ে মিরা উপলব্ধি করতে পারে অরণের কথার মাঝে লুকিয়ে থাকা হতাশাদের।অতঃপর ধ্যান ভাঙে অবনীর কথা শুনে,
“তাহলে আমরা ডিরেক্ট চাঁদ বা প্রণয় ভাইয়াকেই জিজ্ঞেস করে ফেলি?যেহেতু তারা কিছু বলছেইনা?”
অবনীর কথা শুনে সকলেই কপাল কুচকে ফেলতে বাধ্য হয়।অতঃপর রবিন বলে,
“বলার হলেতো আরও আগেই বলে ফেলতো অবনী”
অরণ আবারও বলে,
“আমিওতো সেটাই বলছি!বলার হলেতো অবশ্যই বলতো।যেহেতু বলছেনা মানে বলতে চায়না অথবা ওদের মাঝে বলার মতো এমন কিছুই নেই তাই বলছেনা”
কপাল কুচকে রিহা বলে,
“তুই আবারও?”
অরণ এবার গম্ভীরভাবে বলে,
“তোরা ভুলে যাচ্ছিস প্রণয় আমার বেস্টফ্রেন্ড।আর ও আমার কাছে খোলা বইয়ের ন্যায়।এটাতো তোরাই বলিস তাইনা?তাহলে আমায় যেহেতু বলেনি,আমিও ওদের মাঝে তেমন কিছু ফিল করতে পারছিনা।তার মানে ওদের মাঝে আসলেই কিছু নেই।এটা তোরা বোঝার চেষ্টা কর!আমি উঠলাম”
কথাগুলো বলে অরণ চলে যেতেই মির বললো,
“অরণের কথা কিন্তু ভুল না তবুও আজ আমি একটা চান্স নিতে চাই।তোমরা সবাই কী বলো?”
মিরা জিজ্ঞেস করে,
“কেমন চান্স নিতে চাচ্ছিস?”
“যেহেতু ওরা একসাথেই কলেজে ঢুকে।আর প্রায় সময় হয়েও এসেছে।আমরা সবাই একসাথে ওদের সামনে গিয়ে দাড়ালে কেমন হয়?”
হঠাৎ ই ফায়ান বলে,
“কিছু মনে না করলে আমি কিছু বলতে চাচ্ছিলাম ভাইয়া”
“হ্যা অবশ্যই”
“আমার কাছে বিষয়টা অনুচিত লাগছে ভাইয়া।অরণ ভাইয়ার কথায় যুক্তি আছে।আর আমিও মনে করি তাদের মাঝে কিছু হলে সবার আগে আমাদেরকেই বলতো।আর আপনাদেরও উচিত বন্ধুর উপর বিশ্বাস রাখা।এভাবে তাদের সামনে গিয়ে তাদের বিব্রত না করাকেই আমি শ্রেয় মনে করি।যেমনভাবে চলছে সবকিছু সেভাবেই চলতে দিন।যদি দুজন দুজনকে ভালোও বেসে থাকে বাসুক না!বাসতে দিন।দুজন দুজনকে বুঝতে সময় নিলে নিতে দিন।সময় সবটা বলে দেবে।আপাতত আমি রিকুয়েষ্ট করছি দুজনের মাঝে যেনো আমরা কেউই তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে না যাই।আশা করছি আমার কথাগুলো বুঝবেন।আমিও উঠলাম”
৪২.
সময় স্রোতের ন্যায় বহমান।সময়কে কেউ ধরে রাখতে পারেনা।তা চলে তার আপন গতিতে।না কারো জন্য থামে আর না কারো জন্য দ্রুতগতিতে চলে।সময়ের নিজস্ব এক মাত্রা আছে,সে সেই মাত্রানুযায়ীই চলে।সময় পালটে যেতেও সময়ের সময় লাগেনা।তেমনিভাবে বছর গড়াতেও সময় লাগেনি।কিভাবে যেনো একটা বছর কেটে গেলো কেউ বুঝতেও পারলোনা।সকলের কাছেই মনে হলো এ বছরটা যেনো দ্রুতই পার হলো!এর মাঝে কিছুই পরিবর্তন হয়নি।সবকিছু আগের ন্যায় ই রয়ে গেছে।পরিবর্তিত হয়েছে শুধু প্রণয় আর চাঁদের সম্পর্ক।আসলে ঠিক পরিবর্তিতও না।আগে তাদের সম্পর্কের কোনো নাম ছিলোনা।যে যেভাবে পারতো সেভাবে একটা নাম দিয়ে দিতো।কারো কারো মতে দুজন টাইমপাস করছে এসবও শোনা গেছে।সকল কিছুকে তুচ্ছ্য করে একসময় তারা প্রকাশ করেছে তাদের সম্পর্ক।আর সেটা হচ্ছে মানবিকতার সম্পর্ক।প্রণয় একজন সিনিয়র হিসেবে চাঁদকে পড়াশুনার দিক দিয়ে সর্বদা সাহায্য করে এবং তারা খুব ঘনিষ্ঠ।তবে এই সম্পর্কটার নাম আসলে কী এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।না তারা বন্ধু আর না প্রেমিক-প্রেমিকা।কিন্তু সকলেই মানে এবং বুঝে দুজনের প্রতি দুজনের অনুভূতি প্রগাঢ়।কথাখানা মানে প্রণয় আর চাঁদের বন্ধুমহলও।দুই মানব-মানবী একে অপরকে ভালো ঠিকই বাসে কিন্তু মুখ ফুটিয়ে বলেনা অথবা বলতে চায়না!
মাস তিনেক পরেই ওয়ান অ্যান্ড হাফ ইয়ার পূর্ণ হবে এই কলেজে চাঁদের পদার্পণের।সেইসাথে ফার্স্ট প্রফও শুরু হবে।পড়াশুনা চাঁদকে যেমনভাবে কিলবিলিয়ে খা!চ্ছে তেমনিভাবে কিছু নতুন এবং সুক্ষ্ম অনুভূতিও খা!চ্ছে।সে আরও একটা জিনিস উপলব্ধি করতে পেরেছে এই একবছরে,এবং সেটা হচ্ছে আহিন নামক সেই ছেলেটা এবং তার অনুভূতিগুলোকে।সেগুলো মিথ্যে নয়।ছেলেটা সত্যিই তাকে ভালোবাসে।যেদিন চাঁদ তার নিকট হাত জোর করে কাদতে কাদতে বলেছিলো ‘আমায় মাফ করুন।আমি আর নিতে পারছিনা!অস্বস্তি আমায় কুড়ে কুড়ে খা!য়’ ঠিক সেদিন থেকেই আর ছেলেটাকে আশেপাশে দেখা যায়নি।তবে চাঁদ দেখেছে,বুঝেছে,উপলব্ধি করেছে।আড়ালে,আবডালে,লুকিয়ে-চুরিয়ে ছেলেটা তাকে দেখে।তার খোঁজ নেয়।আজ আবারও ছেলেটার মুখোমুখি হতে হবে তাকে।আজ আরও একবার ছেলেটাকে ভেঙেচুরে দিতে হবে।নাহয় ছেলেটা জীবনে আগে বাড়তে অক্ষম হয়ে যাবে যে!নিজের মনকে শক্ত করে চাঁদ প্রস্তুত হচ্ছে নবীনবরণের উদ্দেশ্যে অথবা বলা যায় কারো হৃদয় ভাঙার উদ্দেশ্যে।বর্তমানে চাঁদ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।সুতরাং তার কাধেই আরও একবার দায়িত্ব পড়েছে নবীনবরণের আয়োজনের।প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের উপর এ দায়িত্ব দিতে গিয়েও দেননি কলেজ কর্তৃপক্ষ।কেনোনা চাঁদকে তারা চোখ বন্ধ করে ভরসা করেন।সেইসাথে দায়িত্বে আছে প্রণয়ও।দ্বিতীয় বর্ষ এবং চতুর্থ বর্ষের ক্যাপ্টেনদের হাতে দায়িত্ব দিয়েছেন এবারের নবীনবরণের।তাই তোড়জোড় করে সব আয়োজন সম্পন্ন করে গতকাল রাতেই ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরেছে চাঁদ।এখন সে রেডি হচ্ছে নবীনবরণের জন্য।এবং আবারও সে পরেছে সেই নীলরঙা শাড়ি এবং আকাশি রঙের হিজাব।যেই বেশে আহিন তার প্রেমে পড়েছিলো সেই বেশে এবং সেই দিনেই আজ তার মন ভাঙবে চাঁদ।ভালোবাসার কি অদ্ভুত অনুভূতি তাইনা?কেউ কাউকে প্রচন্ড ভালোবেসেও পায়না আবার কেউ ভালো না বেসেও পেয়ে যায়।চাঁদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে একবছর আগের বেশে আরও একবার সাজালো নিজেকে।অতঃপর ছুটলো তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
চাঁদ দাঁড়িয়ে আছে হাইওয়েতে।মিনিট দশেক পরেই সেখানে প্রণয় এসে উপস্থিত হলো।চাঁদ কপাল কুচকে রাগীমুখ করে প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে মোবাইল বের করে টাইম দেখিয়ে বললো,
“দেখুন তো কয়টা বাজে?পুরো দশ মিনিট রোদের মধ্যে দাড় করালেন আমায়!”
প্রণয় অসহায় মুখ করে দু’কানের লতিতে আঙুল দিয়ে ধরে বলে,
“সরি আমার মহারানী!আমার চন্দ্রময়ী!”
“হয়েছে ঢং করতে হবেনা।চলুন”
বলেই হাটতে গিয়েও থেমে গিয়ে কপাল কুচকে বলে,
“এক মিনিট,এক মিনিট!আপনি না আজ কালো পরবেন বলেছিলেন?আমায় পাঞ্জাবীর ছবিও তো দেখিয়েছিলেন!আকাশি পরলেন যে?”
“এ তো কেবল সমুদ্রকন্যার শুদ্ধ পুরুষ হওয়ার ছোট্ট এক প্রয়াস মাত্র”
প্রণয়ের কথায় খানিকটা লজ্জা পেয়ে চাঁদ বললো,
“চলুন”
“নিন ধরুন”
বলেই একটা প্যাকেট চাঁদের দিকে এগিয়ে দেয় প্রণয়।তা দেখে চাঁদ বলে,
“কী এতে?”
“হাতে রাখুন।রিক্সায় চড়ে দেখে নিয়েন”
বলেই চাঁদের হাত ধরে তাকে একপাশে দাড় করিয়ে রিক্সা ঠিক করে এনে তাতে চড়ে বসে দুজনে।রিক্সায় উঠতেই প্রণয় বলে,
“এবার খুলে দেখুন”
“বাসায় গিয়ে দেখে নেবো।এখনতো যেতে হবে।রিহার্সালও আছে আমার”
“সেসব দেখা যাবে।আপনি আগে খুলুন এটা”
চাঁদ সন্দেহ নিয়ে প্রশ্ন করে,
“কী এমন আছে এতে?”
চাঁদের চোখে চোখ রেখে প্রণয় বলে,
“এমন কিছুই আছে যা আমার জন্য কল্যাণকর”
চাঁদ বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে,
“মানে?”
চাঁদের ঠোটে তর্জনী রেখে তাকে চুপ করিয়ে মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় চাঁদের আঁখি জোড়ায় নিজ বিড়ালাক্ষীদ্বয় নজরাবন্দী করে প্রণয় বলে,
“হিশ!আপনার ঐ চোখে অনায়াসে ডুবে থাকা যাবে চন্দ্র।এ চোখের অতল গভীরে যাত্রা না করলে হৃদয় ব্যাকুল হয়ে যায় যে চন্দ্রময়ী!”
প্রণয়কে নিজের এতোটা কাছে দেখে নিশ্বাস ভারী হয়ে আসে চাঁদের।হৃদস্পন্দন তীব্র হয় তার।চোখজোড়া বন্ধ করে শ্বাস আটকে নেয় সে।অতঃপর প্রণয়ের সরে যেতেই ঘনঘন নিশ্বাস নেয় চাঁদ।নিজেকে সামলে র্যাপিং করা প্যাকেট খুলতে আরম্ভ করে।প্যাকেট খুলতেই দেখতে পায় একটা বড় বাক্স।বাক্স দেখেই প্রণয়ের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দিতেই প্রণয় ইশারায় বাক্স খুলতে বলে।প্রণয়ের কথানুযায়ী চাঁদ তাই করে।অতঃপর বিস্ময়ে দুই ঠোটের মাঝে কিঞ্চিৎ ফাঁক হয় তার।প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
“এসব কী প্রণয়?”
“চশমাতো পরেননি।লেন্সও কি পরেননি আপনি?”
“ঠাট্টা করবেন নাতো”
“ঠাট্টা কোথায় করলাম?দেখতেইতো পাচ্ছেন।তবে রিপিট কেনো করছেন?”
“কারণ আমার জানাটা জরুরী,এগুলো দেওয়ার মানে কী?কেনো দিলেন?”
“কেনো দিতে পারিনা?নাকি আপনি নেবেন না?”
“হঠাৎ কেনো?কোনো অকেশন নেই।জন্মদিনও চলে গেছে তবে হঠাৎ?”
উপরের দিকে আকাশপানে মুখ করে ভাবলেশহীনভাবে প্রণয় বললো,
“হঠাৎ করেই ইচ্ছে হলো”
অতঃপর দৃষ্টি চাঁদের পানে রেখে বললো,
“ইচ্ছেপূরণ কি করা যায়না লালগোলাপ?”
“এভাবে ডাকবেন না!”
রাস্তার ডান পাশে মুখ করে প্রণয় বলে,
“সে কি জানেনা?তাকে সব নামে নয়,কেবল নিজের বরাদ্দকৃত নামে ডাকতেই প্রণয় স্বাচ্ছন্দবোধ করে?”
প্রসঙ্গ পালটে চাঁদ বলে,
“এগুলো এখানে খুলতে বললেন কেনো?”
“কারণ এখনই এগুলো পরবেন তাই”
“কিন্তু আমিতো পরে এসেছি”
“পুরোনো রঙ ধুয়েমুছে নতুন রঙে নিজেকে রাঙাতে কি তার খুব অস্বস্তি হয়ে যাবে?”
হাত থেকে চুড়ি খুলতে খুলতে চাঁদ বলে,
“খুব কথা শিখেছেন মি.বিড়ালাক্ষী মানব”
“তার বদৌলতেইতো সব”
অতঃপর চুড়িগুলো প্রণয়ের হাতে দিয়ে চাঁদ বলে,
“ধরুন এগুলো”
বলেই প্রণয়ের হাতে সেগুলো ধরিয়ে দিয়ে প্যাকেট থেকে নতুন দুই মুঠ চুড়ি বের করে দু’হাতে পরে গলার পেন্ডেন্ট খুলে সেটাও তাকে দিয়ে প্যাকেটে রাখা আরেকটা পেন্ডেন্ট পরে প্রণয়কে বলে,
“হয়েছে?”
“আংটি আর হিজাবের পিন,ব্রোঞ্জ এসব কিন্তু রয়েই গেছে মিস রেডরোজ”
চাঁদ বাকা চোখে প্রণয়ের দিকে চেয়ে বলে,
“এগুলোও পরতে হবে?”
“আমার তরফ থেকে কোনোপ্রকার জোর নেই”
কথাটা শুনে মুখ মলিন হয়ে যায় চাঁদের।অতঃপর বাকিগুলো পরতে পরতে বাম পাশে মুখ করে চাঁদ বলে,
“আপনার ইচ্ছাগুলো প্রাণবন্ত হলেও অনিচ্ছাগুলো বড়োই নিষ্ঠুর প্রণয়”
অতঃপর চাঁদের থেকে লুকিয়ে তারই দেওয়া সকলকিছু একটা ব্যাগে রেখে সন্তপর্ণে তা নিজ কাধের ব্যাগে রেখে প্রণয় সুর টেনে বলে,
“আমার ইচ্ছেগুলো রঙ চিনেছে চাঁদের কাছে এসে।শুধু চাঁদের স্রোতে ভেসে”
To be continued…..
[বিঃদ্রঃভীষণভাবে দুঃখিত!আমি আসলে দুঃখিত বলতে বলতে বড়োই লজ্জাবোধ করি এখন।কিন্তু করার মতো কিছুই নেই আমার।আপনাদেরতো জানিয়ে দিয়েছিলাম আমার পেটে ব্যাথা।হসপিটালে গিয়েছিলাম সেখানে ছিলামও অনেক্ক্ষণ।এরপর এসেই বিষয়টা আপনাদের জানানো হয়েছিলো।কিন্তু ব্যাথাটা আমার কমেনি।সেদিনের পর আরও দু’দিন খুব কষ্ট করেছি।এখনও খানিকটা আছে।গতকাল আর আজকে মিলিয়ে এই দুই পর্ব লিখতে পেরেছি।ভাবছিলামই দু’টো পর্ব দেবো।এতোদিন দিতে পারিনি বলে!আরেকটা কথা।যারা খুব অধৈর্য ছিলেন গল্পটা নিয়ে,একদম পুরো উপন্যাস সংক্ষেপে পড়ে ফেলতে চেয়েছিলেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি।মেইন প্লটে কিন্তু ঢুকে গেছি সেই বহু আগেই।খুব শীঘ্রই ধোয়াশাগুলো খোলাসা হবে।কষ্ট করে আরেকটু ধৈর্য ধরার অনুরোধ রইলো।গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক!ভুলগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আর আমার জন্য দোআ করবেন।]